২১ আগস্ট ২০১৭, সোমবার, ৯:০৯

চাল নিয়ে অস্থিরতা

মজুদ, জিটুজিতে আমদানি ও স্থানীয় বাজার থেকে চাল সংগ্রহের চিত্র নিয়ে সরকারি মহলে অস্থিরতা চলছে। এরই মধ্যে চালের শুল্ক কমিয়ে ২ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। এরপরও বাজারে চালের দাম কমেনি। তবে চাল নিয়ে সরকারের অস্থিরতা রয়েছে এমন কথা মানতে নারাজ খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। তিনি মানবজমিনকে বলেন, চালের মজুদ বা সরকার টু সরকার পর্যায়ে চালের আমদানি নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। ভিয়েতনামের সঙ্গে চুক্তিকৃত এবং টেন্ডারের মাধ্যমে কেনা চাল সরকারি গুদামে আসতে শুরু করেছে। তাই কোনো সমস্যা হচ্ছে না। কম্বোডিয়ার সঙ্গে আড়াই লাখ টন চাল কেনার চুক্তি হয়েছে। আশা করছি আগামী কয়েক দিনের মধ্যে চালের বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসবে। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি গুদামে চালের মজুদ গত ১০ বছরের মধ্যে এখন সর্বনিম্ন। সরকারি গুদামে চাল রয়েছে প্রায় দুই লাখ টন। অথচ ২০১১ সালের এই দিনে চালের মজুদ ছিল প্রায় দশ লাখ টন। ২০১২ সালে ছিল ৬ লাখ ৯৯ হাজার টন। ২০১৩ সালে ছিল ৬ লাখ ৫৮ হাজার টন। ২০১৪ সালে ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার টন। ২০১৫ সালে ছিল ৬ লাখ ৯৬ হাজার টন। এবারই প্রথম চালের মজুদ নিম্নপর্যায়ে নেমে এসেছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গেল সপ্তাহে চাল আমদানির শুল্ক কমিয়ে ২ শতাংশ করা হয়। এরপর ভারত থেকে কম শুল্কে চাল আমদানি হলেও পাইকারি বাজারে এর তেমন প্রভাব পড়ছে না। আমদানি শুল্ক প্রতি কেজি ৬ টাকা কমলেও দেশের বাজারে চালের দাম কমেছে মাত্র ৩ টাকা। ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে চালের আমদানি শুল্ক কমিয়ে দেয়ার খবরে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা চালের রপ্তানি মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। যে চাল কিছুদিন আগে প্রতি টন ৩৯০ থেকে ৪০০ ডলারে আমদানি করা হতো সেই একই চাল এখন ভারত থেকে আমদানি হচ্ছে ৪২০ থেকে ৪৩০ ডলারে। অর্থাৎ প্রতি টন চাল ৩০ ডলার করে বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এর আগে দেশের খোলাবাজারে ভোক্তা পর্যায়ে চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে গত ২০শে জুন চালের আমদানি শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করে সরকার। পাশাপাশি সংকট উত্তরণে আমদানিকারকদের জন্য বিনা জামানতে চাল আমদানির সুযোগ করে দেয়া হয়। এছাড়া ৩ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটিও পুরোপুরি তুলে নেয়া হয়। এতে প্রতি কেজি চালের দাম ৬ থেকে ৭ টাকা কমবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু ১৯শে জুন থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলেও এর কোনো প্রভাবই বাজারে পড়েনি। এভাবে শুল্ক কমানোর কারণে দুই দফা ভোক্তা পর্যায়ে তেমন কোনো প্রভাব পড়ছে না বলে মনে করেন সাধারণ চাল ব্যবসায়ীরা। এ কারণেও সরকারের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা কাজ করছে। এদিকে উচ্চমূল্যের কারণে সরকার টু সরকার (জি টু জি) পর্যায়ে চাল কিনতে পারছে না সরকার। বাংলাদেশে চালের সংকট রয়েছে এমন সংবাদ আন্তর্জাতিক বাজারে পৌঁছে যাওয়ার কারণেই মূলত সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে চাল উৎপাদনকারী শীর্ষ কয়েকটি দেশ টন প্রতি দাম ৫০-১৫০ ডলার বাড়িয়ে দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, থাইল্যান্ড, ভারত ও মিয়ানমার টন প্রতি চালের দাম বেশি হাঁকছে। এ কারণে জিটুজি পর্যায়ে চাল কেনার প্রক্রিয়া থেমে গেছে। কারণ আন্তর্জাতিক বাজার দরের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা ছাড়া সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা চাল কেনার সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, থাইল্যান্ডের সরকারের কাছ থেকে দুই লাখ টন চাল কেনার আশা নিয়ে গত ৫ই জুলাই থাইল্যান্ডের ব্যাংকক যান খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বদরুল হাসান ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আতাউর রহমান। চাল কেনার বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা করে আসেন তারা। এরই অংশ হিসেবে থাইল্যান্ডের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল ২৩শে জুলাই বাংলাদেশ সফরে আসে। এ সফরে বাংলাদেশের সরকারি প্রতিনিধি দল থাইল্যান্ডের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করে। কিন্তু ফলাফল শূন্য। এরপর এ মাসের প্রথম দিকে চাল কিনতে খোদ খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল কম্বোডিয়া যান। এর ফলোআপ হিসেবে কম্বোডিয়ার টিম বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। এ সফরে জিটুজি পর্যায়ে আড়াই লাখ টন আতপ চাল কেনার বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। যদিও এটা সিদ্ধান্ত হতে আরো কয়েক দিন সময় লাগবে। সব মিলিয়ে জিটুজিতে চাল কেনা নিয়েও অস্থিরতায় আছে সরকার। এমনটা মানতে নারাজ খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, জিটুজিতে চাল পেতে আমাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। ১২ লাখ টন চাল কেনার টার্গেট নিয়ে এগুচ্ছি আমরা। এর মধ্যে জি টু জি পদ্ধতিতে ভিয়েতনাম থেকে আড়াই লাখ টন চাল কিনছে সরকার। এ চাল ধাপে ধাপে দেশে আসছে। কম্বোডিয়া থেকে আড়াই লাখ টন আতপ চাল কেনার চুক্তি হয়েছে। সরকারি অনুমোদন শেষে চুক্তিকৃত চাল আসতে শুরু করবে।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=79774&cat=3/