২০ আগস্ট ২০১৭, রবিবার, ৯:২৮

শঙ্কার মধ্যে এবারের ঈদযাত্রা

শঙ্কার মধ্যে পড়েছে এবারের ঈদযাত্রা। ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে সড়ক ও নৌপথ। বন্যার কারণে কোনো কোনো এলাকার রাস্তাঘাট বিলীন হওয়ার উপক্রম। এ ছাড়া মহাসড়কে সৃষ্ট দীর্ঘ যানজটে যাত্রীসাধারণ প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ঈদের আগে পরে জনগণের এই ভোগান্তি চরম রূপ ধারণ করবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। কোরবানির ঈদে ঘরমুখো মানুষের পাশাপাশি থাকবে কোরবানির পশুবোঝাই ট্রাকের চাপ। যে কারণে ভোগান্তি আরো বাড়বে বলে সবাই আশঙ্কা করছেন। এ দিকে অনেকেই বলছেন, মহাসড়কের বেহাল অবস্থার কারণে এবারে বাড়তি চাপ পড়বে ট্রেনের ওপর। রাব

দেশের সড়ক-মহাসড়ক এখন খানাখন্দে ভরে গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, বিভিন্ন মহাসড়কে দেড় শতাধিক স্পটে খানাখন্দ রয়েছে। ঢাকা-মাওয়া, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-টাঙ্গাইল এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বহু স্থান খানাখন্দে ভরা। কোনো কোনো এলাকায় বড় বড় গর্ত হয়েছে। ফলে স্বাভাবিক সময়েই যাত্রীরা চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। কোরবানির ঈদে রাস্তার দু’দিক থেকেই চাপ থাকে। এক দিকে কোরবানির পশুবাহী ট্রাক এবং অপর দিকে ঘরমুখো মানুষের চাপ। ফলে এই সময়ে রাস্তায় আরো বেশি যানজট সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে স্থানে স্থানে খানাখন্দ এবং রাস্তা সংস্কারের ফলে দীর্ঘ যানজটের আশঙ্কা রয়েছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে এখন প্রতিদিনই যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এমনকি, এই যানজট রাজধানী পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছে। উত্তরার আব্দুল্লাহপুর থেকে এই যানজট গাজীপুর পার হতে কোনো কোনো দিন দুই থেকে তিন ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।
এ দিকে, ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের কেরানীগঞ্জ পার হতেই কোনো কোনো সময় দুই ঘণ্টার ওপর লেগে যাচ্ছে। ভুক্তভোগীরা বলেছেন, বাবুবাজার ব্রিজের ঢাল পার হয়েই যানজটে পড়তে হচ্ছে। এই যানজট থাকছে কেরানীগঞ্জ র্যা ব কার্যালয় পর্যন্ত। রাস্তার ওপর বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে এখানে। এই গর্তের মধ্যে পড়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। শামসুল আলম নামে এক গাড়িচালক বলেছেন, কোনো কোনো সময় এক কিলোমিটার এই রাস্তা পার হতে দুই ঘণ্টার বেশি সময় লাগছে। গাড়ির চাকা ঘুরতে চায় না। একটু টান দিলেই গাড়ির চাকা গর্তে আটকে যায়।

বিপ্লবী সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলী রেজা বলেছেন, দাউদকান্দি ও মেঘনা ঘাটের ওজন পরিমাপক যন্ত্র যানজটের সৃষ্টি করছে। এখানে মালভর্তি ট্রাকের ওজন মাপা হয়। কিন্তু মহাসড়কের ওপরেই এই স্কেল বসানোর ফলে একই লাইনে থাকা যাত্রীবাহী গাড়ি থামিয়ে রেখে মালবাহী ট্রাকের ওজন মাপা হয়। ফলে সেখানে যাত্রীবাহী গাড়ি অহেতুক দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। কোরবানির ঈদের আগে পশুবাহী ট্রাকের চাপ বাড়বে মহাসড়কে। তখন এই স্কেলের কারণে তীব্র যানজট হবে বলে আলী রেজা বলেন। তিনি এই স্কেল মহাসড়কের বাইরে স্থাপনের দাবি জানান। আলী রেজা বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় খানাখন্দের কারণে তীব্র যানজট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একই সাথে দুর্ঘটনারও শঙ্কা রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, রাস্তায় রাস্তায় তোরণ এবং গেট তৈরি করা হয় ঈদের সময়। এগুলোও যানজটের সৃষ্টি করে আসছে।
এ দিকে, বন্যার ফলে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের অনেক এলাকায় রাস্তাঘাট বিলীন হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে ওইসব এলাকার মানুষ ঈদে চরম দুর্ভোগের শিকার হবেন বলে আশঙ্কা রয়েছে। এ দিকে, বন্যার ফলে নদ-নদীর পানি এখন উপচে পড়ছে। অনেক নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। এই পানি কবে কমবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। ফলে নৌযান চলাচলে মারাত্মক বিঘœ সৃষ্টি হবে বলে অনেকেরই শঙ্কা। কোনো কোনো এলাকার নদীর সিগন্যাল বাতি ও বয়া ইতোমধ্যে ¯্রােতের তোড়ে বিলীন হয়ে গেছে। ওইসব নদ-নদীতে চলাচলকারী নৌযান ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। ঈদের আগে এই পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নৌযান চালক আনিছুল কবির বলেছেন, বন্যা এবং তীব্র ¯্রােতের কারণে অনেক সময় নদীর গতিপথও মুহূর্তে পরিবর্তন হয়ে যায়। ফলে সেখানে নৌযান চালানো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে।
এ দিকে, সড়ক বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেছেন, তারা চেষ্টা করবেন ঈদের আগে রাস্তার খানাখন্দ মেরামত করতে। ইতোমধ্যে কোথায় কোথায় খানাখন্দ আছে তা নির্ণয় প্রায় শেষপর্যায়ে। কোথাও কোথাও ইতোমধ্যেই মেরামতের কাজ শুরু হয়ে গেছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/245575