১৯ আগস্ট ২০১৭, শনিবার, ১২:২৫

বাজারে গিয়ে ক্রেতার চোখ ছানাবড়া

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সোলায়মান শেখ। মাছ-গোশত কেনা প্রায় বন্ধই করে দিয়েছেন। ডাল, ডিম, আলুভর্তা তার পরিবারের নিত্য খাবার। কেনাকাটার ক্ষেত্রে মহল্লার মুদিদোকানই তার ভরসা। ‘মাস কাবারি’ বাকি খান। বেতন পেয়ে সাধ্যমতো পরিশোধ করেন। ফলে প্রতি মাসেই বাড়তে থাকে বকেয়া। পাওনার অঙ্ক বেড়ে যাওয়ায় লজ্জায় জানতেও চান না কোন জিনিসের কত দাম। গতকাল সরকারি ছুটির দিনে কিছুটা সময় পেয়ে তিনি গেলেন হাতিরপুল বাজারে। জিনিসপত্রের দাম দেখে তার দুই চোখ ছানাবড়া অবস্থা।

বাজার ঘুরে দেখতে পান, পেঁয়াজের কেজি ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। অথচ এক মাস আগেও ২৮ টাকায় পেঁয়াজ কিনেছেন তিনি। ২৮ শতাংশ থেকে কমতে কমতে চালের আমদানিশুল্ক ২ শতাংশে নামিয়ে আনার সংবাদ শুনেছেন সোলায়মান শেখ। কিন্তু চালের দামে তো এর কোনো প্রভাব পড়েনি। উল্টো সরু চালের দাম নতুন করে কেজিতে দুই টাকা বেড়েছে বলে জানান বিক্রেতারা। বাজারে গতকাল প্রতি কেজি সরু চাল ৫৮ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়।

 নয়া দিগন্তের সঙ্গে আলাপকালে সোলায়মান বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দামই বাড়তি। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তেল, সাবান, মরিচগুঁড়া, হলুদগুঁড়া প্রভৃতি শুকনা পণ্যের দাম প্রতিনিয়তই এক-দুই টাকা করে বাড়াচ্ছে। নানান অজুহাতে বাড়তে বাড়তে বছর শেষে কত টাকা বাড়ছে তার হিসাব ক্রেতারা রাখছেন না। আর বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বাড়াচ্ছেন চাল, ডাল, লবণ, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, মাছ, মুরগি, সবজি প্রভৃতির দাম। তিনি বলেন, জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে স্বল্প ও সীমিত আয়ের মানুষের পক্ষে টিকে থাকাই দায় হয়ে পড়েছে।

শুক্রবার রাজধানী ঢাকার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, বন্যার অজুহাতে সবজির দাম আরেক দফা বেড়েছে। একই অজুহাতে বেড়েছে সব ধরনের মাছের দাম। নদী-সমুদ্রে ইলিশ ধরা পড়ার সংবাদ গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার হলেও বাজারে দামের ওপর এর প্রভাব নেই বললেই চলে। উত্তরাঞ্চলের বন্যায় হাঁস-মুরগি মরে সাফ হয়ে গেলেও ঢাকায় দাম কমছে না। ঈদ ঘনিয়ে আসায় নতুন করে বাড়তে শুরু করেছে মসলার দাম। সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ৭ টাকা বেড়েছে। ডিমের দাম বেড়েছে প্রতি ডজনে ১০ টাকা। কাঁচামরিচের দাম ৮০ টাকা থেকে বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। ১০০ টাকার আদা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়।

বাজারে গতকাল আকার ভেদে প্রতি কেজি রুই মাছ ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, সরপুঁটি ৩৫০ থেকে ৪৫০, কাতলা ৩৫০ থেকে ৪০০, তেলাপিয়া ১৪০ থেকে ১৮০, সিলভার কার্প ২০০ থেকে ২৫০, চাষের কৈ ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি পাঙ্গাশ ১৪০ থেকে ২৫০ টাকা, টেংরা ৬০০, মাগুর ৬০০ থেকে ৮০০, প্রকার ভেদে চিংড়ি ৪০০ থেকে ৮০০, আকার ভেড়ে প্রতিটি ইলিশ ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বড় আকারের প্রতি কেজি ইলিশের দাম রাখা হচ্ছে ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকা।

খুচরা বাজারে গতকাল প্রতি কেজি বেগুন ৬০ থেকে ৮০ টাকা, সিম ১২০ থেকে ১৪০, টমেটো ১৫০ থেকে ১৬০, শসা ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, কচুরলতি ৬০ থেকে ৬৫, পটোল ৫০ থেকে ৬০, ঢেঁড়শ ৫০ থেকে ৬০, ঝিঙ্গা ৬০ থেকে ৭০, চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৬৫, করলা ৫০ থেকে ৬০, কাকরোল ৫০ থেকে ৫৫, পেঁপে ৪০ থেকে ৫০, কচুমুখী ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়। এ ছাড়া প্রতিটি লাউ ৫০ থেকে ৭০ টাকা, চালকুমড়া ৪০ থেকে ৫০, ফুলকপি ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০ থেকে ৪৫ এবং লেবুর হালি ২০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়। শাকের মধ্যে পালংশাকের আঁটি ২০ টাকা, লালশাক ২০, পুঁইশাক ৩০ এবং লাউশাক ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা যায়।

মুদিদোকানে গতকাল প্রতি কেজি ছোলা ৮৫ টাকা, দেশী মুগ ডাল ১৩০, ভারতীয় মুগ ডাল ১২০, মাসকলাই ১৩৫, দেশী মসুর ডাল ১২৫ এবং ভারতীয় মসুর ডাল ৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়। দেশী পেঁয়াজ ৩০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ২৮ টাকা, দেশী রসুন ১১০ টাকা এবং ভারতীয় রসুন বিক্রি হয় ১৩০ টাকা দরে। ব্র্যান্ড ভেদে ভোজ্যতেলের ৫ লিটারের বোতল ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে ৫৩০ থেকে ৫৪০, প্রতি লিটারে ১ থেকে ২ টাকা বেড়ে ১০৭ থেকে ১০৯ টাকায় বিক্রি হয়। ডিমের দাম বেড়েছে ডজনে ১০ টাকা। ৯৫ টাকার ডিম এখন ১০৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ব্রয়লার মুরগি ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা, লেয়ার মুরগি ২২০ এবং পাকিস্তানি লাল মুরগি ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি গরুর গোশত ৪৮০ থেকে ৫২০ টাকা এবং খাসির গোশত ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা যায়।

চালের বাজার ঘুরে দেখা যায়, আমদানি বেড়ে যাওয়ায় সরবরাহ বাড়লেও সরু চাল বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ২ টাকা বেশি দরে। বেড়ে যাওয়া দামেই বিক্রি হচ্ছে মোটা চাল। বাজারে গতকাল স্বর্ণা চাল ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা, পারিজা চাল ৪৩ থেকে ৪৪ টাকা দরে বিক্রি হয়। এ ছাড়া ভালো মানের মিনিকেট ৫৮ থেকে ৬০ টাকা, সাধারণ মিনিকেট ৫৪ থেকে ৫৫, বিআর-২৮ ৪৮, সাধারণ মানের নাজিরশাইল ৫০, উন্নত মানের নাজিরশাইল ৫৪ থেকে ৫৬, পাইজাম চাল ৪৮ থেকে ৫০, বাসমতি ৫৫ থেকে ৬০, কাটারিভোগ ৭২ থেকে ৭৫ এবং পোলাও চাল ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/245304