ত্রাণের নৌকা দেখলে এভাবেই ছুটে আসেন জামালপুরের বন্যাকবলিত মানুষ
১৮ আগস্ট ২০১৭, শুক্রবার, ৮:২৯

অর্ধাহারে দিন কাটছে বন্যা দুর্গত মানুষের

দেশের বিভিন্ন নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। সারা দেশে পানিবন্দী মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। আশ্রয়কেন্দ্র, বাঁধ, উঁচু স্থান ও আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নেয়া, হাজার হাজার মানুষ খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কটে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। সরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের চেয়ে খুবই কম। ফলে প্রায় অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটছে তাদের। এ দিকে শেরপুরে বন্যার পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে।দেশের বিভিন্ন নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। সারা দেশে পানিবন্দী মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। আশ্রয়কেন্দ্র, বাঁধ, উঁচু স্থান ও আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নেয়া, হাজার হাজার মানুষ খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কটে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। সরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের চেয়ে খুবই কম। ফলে প্রায় অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটছে তাদের। এ দিকে শেরপুরে বন্যার পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে।নওগাঁ সংবাদদাতা জানান, প্রতি ঘণ্টায় প্রায় এক সেন্টিমিটার করে বাড়ছে নদীর পানি। উজান থেকে নেমে আসা পানিতে নওগাঁর আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার ২১৫ সেন্টিমিটার এবং ছোট যমুনা নদী নওগাঁ পয়েন্টে বিপদসীমার ৮০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নওগাঁ সদর উপজেলার ইকরতারায় এলাকাবাসীর গত তিন ধরে চেষ্টা সত্ত্বেও ছোট যমুনা নদীর বাঁধ প্রায় ১০০ ফিট ভেঙে যাওয়ায় নতুন করে ফতেপুর, বোয়ালিয়া, তিলকপুর ও পাশের বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার ইউপির বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় জনসাধারণ ও বিজিবি, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন বাঁধটি মেরামতের। মান্দা উপজেলায় আত্রাই নদীর দুইটি স্থানে মূল বাঁধ এবং ১০টি স্থানে বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়ে ৯ উপজেলার প্রায় ৪০টি ইউনিয়নের শত শত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ছোট যমুনা নদীর ফাড ওয়ালের আউটলেট দিয়ে পানি প্রবেশ করে নওগাঁ শহরের বিভিন্ন এলাকায় তলিয়ে গেছে। জেলায় প্রায় আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। প্রায় ৫০ হাজার একর ফসলি জমির ক্ষতি হয়েছে। প্রায় এক হাজার পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। নওগাঁ সদর মান্দা, মহাদেবপুর, রানীনগর, আত্রাইসহ জেলার বিভিন্ন বাঁধের ৩০টি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ রয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড নওগাঁর নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন জানান, আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার ২১৪ সেন্টিমিটার এবং ছোটযমুনা নদী নওগাঁ পয়েন্টে বিপদসীমার ৮০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আত্রাই নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় দুই নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অন্তত ৩০টি  পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। আতঙ্কে রয়েছেন বন্যাকবলিত এলাকার লাখ লাখ মানুষ। বর্তমানে অসহায় পরিবারগুলো বিশ্ব বাঁধে, স্কুলে ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো সরকারি সাহায্য বা ত্রাণ তাদের কাছে না পৌঁছায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। জেলা প্রশাসক ড. মো: আমিনুর রহমান বলেছেন, জেলায় ২০টি আশ্রয় শিবির খোলা হয়েছে। এ পর্যন্ত পাঁচ লাখ টাকা ও ১০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে এক লাখ টাকা ও ১০০ টন চাল ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।শেরপুর সংবাদদাতা জানান, ব্রহ্মপুত্র ও দশআনী নদীতে আকস্মিকভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় শেরপুর সদর উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের ৪০ গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এসব গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। বিস্তীর্ণ এলাকার উঠতি পাট, রোপা আমন বীজতলা, সবজি ও আউশ-আমন আবাদ পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যার পানিতে ডুবে বেতমারী ও কামারেরচর ইউনিয়নে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে।শেরপুর-জামালপুর মহাসড়কের পোড়ারদোকান এলাকায় ডাইভারশন সড়কের ওপর দিয়ে তিন-চার ফুট উচ্চতায় প্রবল বেগে পানি প্রবাহিত হওয়ায় ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে জামালপুর ও টাঙ্গাইল হয়ে রাজধানী ঢাকা এবং উত্তরবঙ্গের সাথে শেরপুরের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।জেলা প্রশাসক ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, তিনি বন্যাদুর্গতদের মধ্যে ১৫ টন চাল ও নগদ ৫০ হাজার টাকা বিতরণ করেছেন। জেলার পাঁচ উপজেলায় অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তবে আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো কেউ আসেনি। তিনি আরো জানান, বন্যার কারণে যাদের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের তালিকা প্রস্তুত করে বিনামূল্যে টিন বিতরণ করা হবে।গাইবান্ধা সংবাদদাতা জানায়, গাইবান্ধায় কোনো কোনো নদীর পানি সামান্য কমলেও সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। এ দিকে করতোয়া নদীর পানি বৃহস্পতিবার গোবিন্দগঞ্জের তরফকামাল, তরফমনু, চষকপাড়া, চক গোবিন্দ ও কাইয়াগঞ্জ এলাকায় গোবিন্দগঞ্জ-ফুলবাড়ি-দিনাজপুর উপমহাসড়কের ওপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হওয়ায় গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে গেছে। যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বন্যাকবলিত সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা, গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ি ও সদর উপজেলার দুই লাখ ৮৪ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। মোট ৯০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে ফুলছড়ি উপজেলাতেই ৬৩টি। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষ গাদাগাদি হয়ে রাত কাটাচ্ছে। জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল জানান, বন্যাকবলিতদের জন্য ৬২৬ টন চাল ও ১৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা বন্যাদুর্গত এলাকায় বিতরণ করা হয়েছে।সিরাজগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, উজান থেকে নেমে আশা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীতে অস্বাভাবিকভাবে পানি বেড়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার যমুনার পানি বিপদসীমার ১৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। দ্রুত পানি বৃদ্ধির ফলে কাজিপুর, বেলকুচি, চৌহালি, শাহজাদপুর ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ৪৮টি ইউনিয়নের তিন শতাধিক গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। ১৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে এ পর্যন্ত ছয় হাজার ৬২৩ জন মানুষ আশ্রয় গ্রহণ করেছে। বন্যাকবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব। নদী-তীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড জেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো নজরদারিতে রেখেছে। জেলা ত্রাণ অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলা পাঁচটি উপজেলার ৭৭ হাজার ৮০০ পরিবারের তিন লাখ ৪০ হাজার ৭০০ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ১২ লাখ ৪০ হাজার টাকা ও ১৮২ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে।বাগমারা (রাজশাহী) সংবাদদাতা জানান, বাগমারায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। পানির প্রবল চাপে পাঁচটি স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে ছয়টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। কোমর পর্যন্ত পানি উঠেছে ১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। ডুবে গেছে বিভিন্ন সড়ক। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগব্যবস্থা। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন ছয় ইউনিয়নের ৪০ হাজার মানুষ। দ্রুত গতিতে বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় আরো কয়েকটি স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকির মুখে রয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে সেগুলো ভেঙে গিয়ে নতুনভাবে আরো বিভিন্ন এলাকা বন্যাকবলিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে বাঁধসংলগ্ন এলাকায় বসবাসকারী লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সরেজমিন বন্যাকবলিত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পানির প্রবল চাপে বৃহস্পতিবার সকালে বীরকয়া এলাকার বটতলা ঘাটে, উত্তর বীরকয়া, সোনাবিলা, জোলাপাড়া হাটসংলগ্ন এবং গোবিন্দপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন বাঁধসহ পাঁচটি স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে গোবিন্দপাড়া, সোনাডাঙ্গা, নরদাশ, শুভডাঙ্গা, বাসুপাড়া ও দ্বীপপুর ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। বন্যার পানি ওঠায় অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকিউল ইসলাম বলেন, দ্রুত গতিতে বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় আরো কয়েকটি স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকির মুখে রয়েছে।সাঘাটা (গাইবান্ধা) সংবাদদাতা জানান, সাঘাটা উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি সামান্য কমলেও উপজেলার পশ্চিম অঞ্চলের কাটাখালী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বোনারপাড়া, কচুয়া ও কামালেরপাড়া ইউনিয়নের বেশির ভাগ গ্রাম তলিয়ে গেছে। ফলে বন্যার্তদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিত বাসিন্দাদের এবং বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের মধ্যে এখনো পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী পৌঁছেনি। অন্যদিকে, গো-চারণভূমিগুলো পানির নিচে তলিয়ে যাওয়া গো-খাদ্যের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে বিপাকে পড়েছে খামারি মালিকেরা। শরীয়তপুর সংবাদদাতা জানান, পদ্মার পানি বৃদ্ধির ফলে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুরের উত্তর তারাবুনিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান স্টেশন এলাকায় চরাঞ্চলে নদীভাঙনের ফলে গৃহহীন হয়ে পড়েছে অর্ধশতাধিক পরিবার। ভাঙনকবলিত লোকজন নিজেদের ঘরবাড়ি ও আসবাবপত্র নিয়ে বিপাকে পড়েছে। তারা কেউ পাশের উঁচু রাস্তায় ও আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার রাত থেকে আকস্মিক ভাঙনের ফলে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তবে কোনো ধরনের সরকারি বা বেসরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে ত্রাণ বা সাহায্য সহযোগিতা পায়নি ভাঙনকবলিত লোকজনগুলো। স্থানীয় গনি মাঝি ও রশিদ বেপারি বলেন, গত সোমবার রাতে হঠাৎ করে ভাঙা শুরু হয়। আমাদের সারা জীবনের স্মৃতি পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নুরুল ইসলাম খান বলেন, আমার ৪০ বছর আগের বাড়ি পদ্মায় ভেঙে নিয়ে গেছে। এখন অন্যের জমিতে পানির মধ্যে ঘর তুলেছি।জয়বাহার ও মমতাজ বেগম বলেন, বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ার পর রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছি।রাবেয়া বেগম বলেন, এত ভাঙার পরও আমরা কোনো সাহায্য সহযোগিতা পাইনি। আমাদের দেখার কেউ নেই।ধামইরহাট (নওগাঁ) সংবাদদাতা জানান, নওগাঁর ধামইরহাটে ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে বন্যা পরিস্থি’তি অবনতি ঘটেছে। প্রধান সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জেলা সদরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। আট হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় সামান্য কিছু ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে।গত কয়েক দিন ধরে বৃষ্টিপাত না হলেও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে ধামইরহাট উপজেলার সর্বত্র বন্যা পরিস্থিতি অবনতি ঘটছে। উপজেলার আত্রাই নদীর পাঁচটি পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে পুরো উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আত্রাই নদীর পশ্চিম অঞ্চলে পানি সামান্য কমলেও পূর্বদিকের নি¤œাংশে পানি বাড়ছে। উপজেলার আটটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইসরাফিল হোসেন বলেন, চার হাজার ৬০টি পরিবারের ৩১ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত সাত হাজার ৫৫০ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় মানুষদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।শিবালয় (মানিকগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, যমুনার পানি আরিচা পয়েন্টে ১২ ঘণ্টায় ছয় সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বিপদসীমার ৭২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ পয়েন্টে বিপদসীমা স্তর হচ্ছে ৯ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় উপজেলার আরিচা ফেরি-লঞ্চ টারমিনাল, পিসিপোল কারখানা, পাটুরিয়া ৪নং ফেরি ঘাট, জাফরগঞ্জ বেড়িবাঁধ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আরিচা-পাটুরিয়া, নিহালপুর-জাফরগঞ্জ সড়কের কয়েক স্থানে পানি উঠায় যানবাহন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। জাতীয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড আরিচা পিসিপোল কারখানায় নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া, আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি-লঞ্চ, কার্গো-নৌকা চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।নি¤œœাঞ্চলের বন্যাকবলিত লোকজন গৃহপালিত পশু-পাখি নিয়ে বিপাকে পড়েছে। চরাঞ্চলে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় শনিবার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অর্ধসাময়িক পরীক্ষা শুরুর কথা থাকলেও তা স্থগিত করা হয়েছে। সরিষাবাড়ী (জামালপুর) সংবাদদাতা জানান, সরিষাবাড়ীতে গতকাল বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। ভেঙে পড়েছে সরিষাবাড়ী তারাকান্দি ভুয়াপুর হয়ে ঢাকার সাথে যোগাযোগের একমাত্র রাস্তা। সরিষাবাড়ীর সাথে ঢাকার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে পড়েছে যমুনা সার কারখানার উৎপাদিত সার সরবরাহ। পৌর এলাকায় পা রাখার শুকনো জায়গা নেই। শুধু পানি আর পানি। সব মিলে সরিষাবাড়ী উপজেলার সার্বিক চিত্র যেন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। চাহিদা অনুযায়ী এলাকায় ত্রাণের অভাব বলে জানান ভুক্তভোগীরা। বিশেষ করে এ উপজেলায় বিশুদ্ধ পানি, গো-খাদ্য ও পানি বাহিত নিরাময় ওষুদের সরবরাহ জরুরি হয়ে উঠেছে।শিবচর (মাদারীপুর) সংবাদদাতা জানান, পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মায় পানি বেড়েছে আট সেন্টিমিটার। পানির তোড়ে মাদারীপুরের শিবচরের পদ্মাবেষ্টিত জনবিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের কাঁঠালবাড়ি ও চরজানাজাতে ব্যাপক নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীভাঙনে বিলীন হয়েছে কাঁঠালবাড়ির কাউলিপাড়া দারুল উলুম কওমি মাদরাসাসহ শতাধিক বাড়িঘর। ঘরবাড়ি স্থাপনা সরিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছেন আক্রান্তরা। হুমকিতে রয়েছে এ দুই ইউনিয়নের একাধিক স্কুল, একটি ইউনিয়ন পরিষদসহ শত শত ঘরবাড়ি। আড়িয়াল খাঁ নদের পানিও বৃদ্ধি পেয়ে গত কয়েক দিনে ব্যাপক নদীভাঙন শুরু হয়েছে। অনেকের ঘরেই পানি ঢুকে পড়ে বন্যাকবলিতরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: ইমরান আহমেদ বলেন, বন্যা ও নদীভাঙন এলাকায় ত্রাণ তৎপরতা শুরু করা হয়েছে।শ্রীবরদী (শেরপুর) সংবাদদাতা জানান, শ্রীবরদী উপজেলার ভেলুয়া ও খড়িয়া কাজির চর ইউনিয়নের প্রায় ৩০টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছে সহস্রাধিক মানুষ। সঙ্কট দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের। কৃষি অফিসের তথ্য মতে, ভেলুয়া ইউনিয়নে ৬২৫ হেক্টর রোপা আমন ধান ক্ষেত পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে ও ৩৭৫ হেক্টর রোপা আমন ধানক্ষেত আংশিকভাবে পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। নষ্ট হয়েছে ২০ হেক্টর জমির সবজি জাতীয় ফসল বেগুন, ঢেঁড়স, করলা, পটোল, ধুন্দুল, কুমড়া ও কাঁকরল। তা ছাড়া, ১১৫টি পুকুর বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও পানি উঠেছে। এতে করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।জামালপুর সংবাদদাতা জানান, জামালপুরে যমুনার পানি এখনো বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি ১৪ সেন্টিমিটার কমলেও গতকাল বৃহস্পতিবার বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপদসীমার ১২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। জেলা সদরসহ সাতটি উপজেলার ৫৫টি ইউনিয়নে ছয় লক্ষাধিক বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ চরমে। বন্যাদুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সেই সাথে গো-খাদ্যের সঙ্কটসহ গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বানভাসি কৃষক। ঘরবাড়ি ছেড়ে অসংখ্য বানভাসি মানুষ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে পাঁচ হাজারের বেশি পুকুরের মাছ। যমুনার ভাঙনে জেলার দেওয়ানগঞ্জের বরখাল এলাকার শতাধিক বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়েছে। এ দিকে বন্যাদুর্গত এলাকায় প্রয়োজনের চেয়ে অত্যন্ত কম ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বানভাসি মানুষ। দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) সংবাদদাতা জানান, দেওয়ানগঞ্জে ব্রহ্মহ্মপুত্র ও যমুনার পানি কমতে শুরু করলেও দুর্ভোগ কমেনি বন্যার্তদের। ঘরে খাবার নেই, গোখাদ্য নেই, শুকনো জায়গা নেই, ফসল ডুবে গেছে, নেই পর্যাপ্ত ত্রাণসাহায্য। নিদারুণ কষ্টে আছেন বন্যার্তরা। উপজেলার একটি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়নের ৭০-৮০ ভাগ ফসল ও বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলার বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের ফারাজীপাড়া গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলামের ছেলে আব্দুল লতিফ (১৭) পানিতে ডুবে মারা গেছে। দেওয়ানগঞ্জ তারাটিয়া সড়কের বাহাদুরাবাদ কান্দির গ্রামে প্রধান সড়ক ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। জিল বাংলা চিনিকলের পূর্বাংশের ৩ শ’ ফুট দেয়াল পানির স্রোতে ভেসে গেছে। দেওয়ানগঞ্জ খোলাবাড়ী সড়কের মধুর বাড়ি ব্রিজ ভেঙে গেছে। পৌরসভার চর কালিকাপুর গ্রামের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে শত শত পরিবার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। বন্ধ হয়ে রয়েছে দেওয়ানগঞ্জ-জামালপুর রেলযোগাযোগ। উপজেলা পরিষদের সব সরকারি কার্যালয়ে পানি। ঠাকুরগাঁও সংবাদদাতা জানান, গত ছয় দিনের টানা বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলে ঠাকুরগাঁও জেলার হাজার হাজার মানুষ অসহায় অবস্থায় রয়েছে। বিশেষ করে উপশহর এলাকায় টাঙ্গন নদীর পাড়ে হঠাৎ বস্তি-মাদরাসা পাড়া, কলেজপাড়ার নতুন বস্তি, এসিল্যান্ড পাড়ার সাতশতাধিক পরিবার নিজের ভিটে-মাটিতে ফিরতে পারছে না। ফলে শহর-গ্রামের রাস্তায় গিয়ে তাঁবুতে থাকতে হয় তিন শতাধিক মানুষকে। এ দিকে জেলার পীরগঞ্জ উপজেলায় বৈরচুনা গ্রামে ১২০ আদিবাসী পরিবার রাস্তায় দিন কাটাচ্ছে। বন্যায় জেলায় আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে হাজার মানুষ। শত শত ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। রাস্তায় ও ট্রেনের লাইনে পানি উঠেছে। নষ্ট হয়েছে আমন ক্ষেত। ফলে হাজার লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ও কলেজ-বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। শনিবার থেকে বন্যার্তদের উদ্ধারে নেমেছে জেলা প্রশাসন, ইএসডিও, ফায়ার ব্রিগেড এবং পুলিশ-বিজিবি বাহিনী। বস্তিতে অনেকের মত ডুবে গেছে খোরশেদের ভিটেবাড়ি। সাত দিন পার হলেও বাসায় ফিরতে পারেননি তিনি। পরিবারের চার সদস্য নিয়ে মহাসড়কের পাশে অন্যদের মত তাঁবু টানাতে হয়েছে তাকেও। ঘর থেকে তেমন কিছু বের করে আনতে পারেননি। খোরশেদের মতো একই অবস্থা সফিকুল, অতুল, বাসন্তী, দিপালী, নুর মোহাম্মদ, মনসুর, আজিজ, সোলায়মান, মুসা, মন্টু, রোকন, বাবুল, আনোয়ারসহ ১২০টি পরিবারের। খোলা আকাশের নিচে তারা পরিবার নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।দুর্গত অনেকের অভিযোগ, চুরি গেছে তাদের শেষ সম্বল দু’টুকরো কাপড়। শনিবালা বয়সে বৃদ্ধ। নদীর পাড়ে জীবন কেটেছে বহুকাল। ভিটেমাটি গেলেও দিশেহারা হয়ে পড়েননি। শত বিপদের মধ্যেও মাছ ধরছেন বিক্রির জন্য। আয় হবে দুটো পয়সা। নাতিদের মুখে হাসি ফুটবে। কুষ্টিয়া সংবাদদাতা জানান, হু হু করে বাড়ছে পদ্মা ও গড়াই নদীর পানি। কুষ্টিয়ায় এই দুই নদীর পানি একেবারে বিপদসীমার কাছাকাছি চলে এসেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা নদীর পানি হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে ২৭ সেন্টিমিটার এবং পদ্মার নদীর প্রধান শাখা গড়াই নদীর পানি বেড়ে শহরের গড়াই রেলওয়ে ব্রিজ পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই। এ দিকে গতকাল সকালে শহরের মহানগর ট্যাগ এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শহর রক্ষা বাঁধের মাত্র তিন ফুট নিচে অবস্থান করছে গড়াইয়ের পানি। নদীসংলগ্ন বসতবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে। দিন-রাত আতঙ্কে রয়েছেন নদীর তীরবর্তী মানুষ। কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহেদুল ইসলাম জানান, উজানের পানি আসায় পদ্মা ও গড়াইয়ের পানি বাড়ছে। গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) সংবাদদাতা জানান, গোয়ালন্দে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। পদ্মা নদীর গোয়ালন্দ পয়েন্টে বিপদসীমার ৯২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পাউবো সূত্র। বুধবার রাতে উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক সংলগ্ন কাটাখালী আঞ্চলিক পাকা সড়কের পূর্ব তেনাপচা এলাকায় অন্তত ২ শ’ মিটার ভেঙে মাঠের হাজার বিঘা জমির ফসল, মুরগির ফার্ম ও শত শত মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। নতুন করে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়েছে। দৌলতদিয়া ইউনিয়নের প্রায় ৯০ শতাংশ এলাকা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। অনেক পরিবারই অন্যত্র চলে গেছে। সিংড়া (নাটোর) সংবাদদাতা জানান, সিংড়ায় আত্রাই নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের তিন শতাধিক বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় আত্রাই নদী তীরবর্তী জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সিংড়া পৌর এলাকাসহ শেরকোল, ডাহিয়া, কলম, তাজপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এ দিকে পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সিংড়া-বলিয়াবাড়ি স্থানীয় সড়কের যান চলাচল। জিও ব্যাগ দিয়ে অনেক স্থানে সড়ক রক্ষার চেষ্টা করছে সড়ক বিভাগ। আত্রাই নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে প্রায় ২৬টি সুতিজাল পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করছে। আত্রাই (নওগাঁ) সংবাদদাতা জানান, আত্রাইয়ে ছোট যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় মালিপকুর নামক স্থানে আত্রাই-সিংড়া সড়ক, পাঁচুপুর বেড়িবাঁধ ও পাঁচুপুর-সিংড়া রোড ভেঙে আত্রাই উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সেই সাথে উপজেলার অর্ধশত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। এ বিষয়ে আত্রাই উপজেলা শিক্ষা অফিসার রোখসানা আনিছা জানান, বন্যায় ৪৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অপর দিকে সাতটি মাদরাসা ও উচ্চবিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। রাজশাহী ব্যুরো জানায়, জেলার মোহনপুর উপজেলার ভীমনগর এলাকায় শিবনদীর বেড়ি বাঁধের ভাঙন রোধ করতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। পাঁচ দিন অতিবাহিত হলেও বাঁধের ভাঙন রোধে কোনো পদক্ষেপই কাজে আসেনি। উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন ও কেশরহাট পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে উঠতি ফসলের ক্ষতির পাশাপাশি পানিবন্দী হয়ে পড়েছে চার শ’ পরিবার। কয়েকটি এলাকার কৃষকদের পানবরজ ক্ষতিগ্রস্ত ও পুকুরের মাছের ভেসে গেছে। স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করলেও তেমন কোনো ত্রাণ পাননি বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা। অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।মোহনপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা জানান, ভীমনগর বেড়ি বাঁধ ভেঙে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত দুই হাজার ৮৬৬ হেক্টরের ফসল প্লাবিত হয়েছে। বেশি ক্ষতি হয়েছে রোপা-আমন, রোপা-আউশ, পটোল, পানবরজ, করলা, বাঁধাকপি, ফুলকপিসহ বিভিন্ন সবজি ক্ষেত। মোহনপুর উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় ধুরইল, ঘাসিগ্রাম ও মৌগাছি ইউনিয়নের ২৩টি পুকুর প্লাবিত হয়েছে। রাজশাহী পাউবোর একটি সূত্র জানায়, শিব নদীর বেড়িবাঁধের ভাঙা স্থান মেরামতে কাজ চলছে। বগুড়া অফিস ও সারিয়াকান্দি সংবাদদাতা জানান, সারিয়াকান্দিতে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকায় তিন হাজার ৬০০ হেক্টরের ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। অন্য দিকে বাঙ্গালী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। দ্বিতীয় দফা বন্যায় সারিয়াকান্দিতে ১১৯ জন মৎস্যচাষির ১২৭টি পুকুর তলিয়ে গেছে বলে মৎস্য কর্মকর্তা মাহফুজার রহমান জানান। দ্বিতীয় দফা বন্যার ফলে সারিয়াকান্দির দক্ষিণ এলাকার পল্লী বিদ্যুতের চার শতাধিক আবাসিক মিটার বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ সারিয়াকান্দি এলাকার এজিএম কে এম সেকেন্দার আবু জাফর জানান, দক্ষিণ এলাকায় ছয় হাজার গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বেলা ১১টায় উপজেলা পরিষদ চত্বরে সদরসহ কয়েকটি ইউনিয়নের বন্যাদুর্গত এক হাজার ৫০০ পরিবারের মধ্যে ওয়ান ব্যাংক চাল, ডাল, চিনি, চিঁড়া ও তেল বিতরণ করে। মানিকগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, মানিকগঞ্জে বন্যার পানি বাড়ছেই। বৃহস্পতিবার যমুনার পানি বিপদসীমার ৭২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। জেলার পদ্মা-যমুনা তীরবর্তী দৌলতপুর, ঘিওর, শিবালয় ও হরিরামপুর উপজেলার চরাঞ্চলের প্রায় ৩০ হাজার লোক পানিবন্দী হয়ে দুর্ভোগের মধ্যে দিন পার করছেন। ধসে যাওয়ার আশঙ্কায় আরিচা থেকে অন্বয়পুর হয়ে পাটুরিয়া রোডে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। বন্যার পানির চাপে আরিচা-পাটুরিয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের এলাচিপুর এলাকায় ফাটল দেখা দিয়েছে, অন্বয়পুর এলাকায় বাঁধ উপচিয়ে ভেতরে পানি প্রবেশ করছে। এলাকাবাসী বালুর বস্তা ফেলে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করছেন। কোরবানি সামনে রেখে যারা গরু পালন করেছেন তারা এখন মহাবিপদে রয়েছেন। জানা গেছে, বন্যার কারণে জেলার ৭২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাস বন্ধ রয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আলেয়া ফেরদৌসি শিখা বলেন, যেসব বিদ্যালয় বন্যাপ্লাবিত হয়েছে সেগুলোর ১৯ আগস্টের পরীক্ষা স্থগিত রাখা হবে।মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো: নাজমুছ সাদাত সেলিম বলেন, বন্যাকবলিত দৌলতপুর উপজেলায় ২০ মেট্রিক টন চাল এবং দেড় লাখ টাকা, শিবালয় ও হরিরামপুর উপজেলায় ১৭ মেট্রিক টন করে চাল ও নগদ এক লাখ টাকা করে বিতরণ জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। নবাবগঞ্জ (ঢাকা) সংবাদদাতা জানান, দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলার পদ্মা নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চরাঞ্চলের পানিবন্দী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এ পর্যন্ত পানিবন্দী হয়েছে প্রায় ২০ হাজার পরিবার। ডুবে আছে স্কুল, রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি। হুমকিতে রয়েছে দোহার-নবাবগঞ্জ-মানিকগঞ্জের কাশিয়াখালী বেড়িবাঁধ। দোহারে ২৩টি ও নবাবগঞ্জে দু’টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে ডুবে যাওয়ায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। নারিশা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম পদ্মার ভাঙনের কবলে পড়ায় সেখান থেকে অন্যত্র যাচ্ছে ওই সব পরিবার। ফসল ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় গোখাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট ও ভালনারেবিলিটি স্টাডিজের শিক্ষক গওহার নাইম ওয়ারা বলেন, টানা বৃষ্টি হচ্ছে। ২১ আগস্ট অমাবস্যা। অন্য দিকে আসামে বড় ধরনের বন্যা হচ্ছে। এই পানি নেমে আসতে তিন চার দিন সময় লাগবে। ব্রহ্মপুত্র ও পদ্মা অববাহিকায় পানি বাড়ছে। পদ্মার পানি এখনো বিপদসীমা অতিক্রম না করলেও পানি যেভাবে বাড়ছে, তাতে ১৯ তারিখের মধ্যে এ সীমা অতিক্রম করতে পারে। দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম আল-আমীন বলেন, প্রতিটি ইউনিয়নে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।টাঙ্গাইল সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। জেলার কালিহাতীতে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ১১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানিতে নতুন করে অন্তত ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে জেলার কয়েক লাখ মানুষ। তারা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তবে দুর্গত এলাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কোনো সরকারি সাহায্য পৌঁছেনি। এ দিকে টাঙ্গাইলের ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলোতে পানি উন্নয়ন বোর্ড মেরামত কাজ চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে জেলার ১৪৭ টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় চলে এসেছে বন্যার পানি। এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে পুরান ভূঞাপুর রোড বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি যাতে মহাসড়কে উঠতে না পারে এ জন্য এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে বালুর বস্তা ফেলে বাঁধ দেয়া হয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, টাঙ্গাইল অংশের যমুনা ও ধলেশ^রী নদীসহ কয়েকটি শাখা নদীর পানি ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কালিহাতী উপজেলার হাতিয়া বাঁধ ভেঙে গোহালিয়াবাড়ী, সল্লা, দশকিয়া ইউনিয়ন, এলেঙ্গা পৌরসভার কিছু অংশ প্লাবিত হয়েছে। ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়কের কাউয়ামারা এলাকায় বাঁধ ভেঙে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে ভূঞাপুর ও গোপালপুর উপজেলার নি¤œাঞ্চল। বন্ধ হয়ে গেছে রেল ও সড়ক যোগাযোগ। দ্বিতীয় দফার এ বন্যায় নিমজ্জিত হয়েছে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি। টাঙ্গাইলের জেলা প্রসাশক খান মোহাম্মদ নূরুল আমীন বলেন, টাঙ্গাইল সদর ও ভূঞাপুর উপজেলায় বন্যাকবলিত এলাকায় দুই লাখ টাকার শুকনা খাবার ও ১০ টন চাল জরুরি ভিত্তিতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/244991