১৮ আগস্ট ২০১৭, শুক্রবার, ৮:১৩

ত্রাণ অপ্রতুল : যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত

বাঁধ ও সড়ক ভেঙে চরম দুর্ভোগ

নতুন করে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত * ২২ জেলায় সড়ক ও ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি * রাজশাহী ও সিরাজগঞ্জসহ কয়েকটি জেলার বাঁধ ঝুঁকির মুখে * ২১ আগস্ট থেকে রাজধানীর পূর্বাঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা * চার জেলায় আরও ৮ জনের মৃত্যু * দেখা দিয়েছে নানা রোগবালাই

টাঙ্গাইল, জামালপুর ও জয়পুরহাটসহ উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের সাত জেলায় বাঁধ ও সড়ক ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া রাজশাহী শহররক্ষা বাঁধসহ আরও বেশ কয়েকটি বাঁধ প্রবল ঝুঁকিতে রয়েছে। এতে বন্যাকবলিত জেলাগুলোতে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এদিকে বন্যায় ২২ জেলার অভ্যন্তরীণ সড়ক ও ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে ব্রহ্মপুত্র এবং মেঘনা অববাহিকায় ভারত থেকে পাহাড়ি ঢলের পানি আসা কিছুটা বন্ধ হয়েছে। এতে সীমান্ত লাগোয়া কয়েকটি জেলায় বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। কিন্তু এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে খাবার, বিশুদ্ধ পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও গোখাদ্যের অভাব। পানি কমলেও বন্যার্ত মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। পাশাপাশি গৃহপালিত পশু গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়েও বিপাকে পড়েছেন তারা। নিজেদের থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত করতেই ত্রাহি অবস্থা, সেখানে এগুলো নিয়ে কী করবেন। অনেকে তাই ‘পানির দরে’ বিক্রি করে দিচ্ছেন গবাদিপশু। এর মধ্যে নানা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। কোথাও কোথাও সরকারিভাবে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। এদিকে বৃহস্পতিবার বন্যার পানিতে পড়ে মারা গেছে শিশুসহ আরও আটজন। এ নিয়ে এক মাসের বন্যায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২৬ জনে।

এদিকে উত্তরাঞ্চলের বন্যার পানি নেমে আসছে মধ্য ও দক্ষিণ-মধ্যাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায়। এ ব্যাপারে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইমেইলে বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল ইসলাম যুগান্তরকে জানান, ‘এই মৌসুমের দ্বিতীয় দফার এই বন্যা এখন পর্যন্ত ২৭ জেলাকে আক্রান্ত করেছে। তবে পদ্মার পানি বাড়লেও ব্রহ্মপুত্র এবং মেঘনার পানি নামতে থাকায় এখন আর ১৯৮৮ সালের মতো দীর্ঘমেয়াদি হওয়ার আশঙ্কা নেই। তবে ২১ আগস্ট নাগাদ বালু নদীর পানি বিপদসীমা পার করলে ঢাকা শহরের পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।’

অধ্যাপক ইসলাম বলেন, ‘বন্যার উন্নতির আশার সঙ্গে নদীভাঙনের মতো দুর্ভোগ অবশ্য উঁকি মারছে। এ বছর নদীর তীরভাঙন বড় আকার ধারণ করতে পারে। এটাই হবে দুর্যোগের পরবর্তী ধ্বংসাত্মক দিক।’

যুগান্তর ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

টাঙ্গাইল, গোপালপুর ও ভূঞাপুর : তারাকান্দি-ভূঞাপুর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ বুধবার মধ্য রাতে ভেঙে গেছে। ফলে গোপালপুরের নিন্মাঞ্চলগুলোতে প্রবেশ করেছে যমুনার পানি। ইতোমধ্যে উপজেলার সোনামুই, ভাদাই, হরিষা, মোহাইলসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। নিমজ্জিত হয়েছে উপজেলার ২ হাজার একশ’ হেক্টর জমির রোপা আমন ধানের জমি। রাতে গ্রামের মসজিদের মাইকে মাইকে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার খবর প্রচার করে জনসাধারণকে সতর্ক করা হয়। বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় টাঙ্গাইলের গোপালপুর, ভূঞাপুর, ঘাটাইল, কালিহাতী, বাসাইল, টাঙ্গাইল সদর ও সখীপুর উপজেলার কিয়দংশের দিকে ধেয়ে আসছে পানি। এসব এলাকা যে কোনো সময় বন্যা কবলিত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বন্যার পানিতে ডুবে কালিহাতীতে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। যমুনায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বুধবার বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব-জামালপুর রেললাইনের কালীবাড়ী নামক স্থানে পানি উঠে। ফলে রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে বুধবার রাতে তারাকান্দি-ভূঞাপুর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গোপালপুরের নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

জামালপুর, মাদারগঞ্জ, দেওয়ানগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী : যমুনা নদীর পানির তোড়ে পাকা সড়ক ভেঙে ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বুধবার গভীর রাতে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার আওনা ইউনিয়নের স্থল গ্রাম এলাকায় তারাকান্দি যমুনা সার কারখানা-ভুয়াপুর সড়কে এ ঘটনা ঘটেছে। জানা যায়, উত্তরাঞ্চলে সড়ক যোগাযোগের ও পরিবহনের জন্য যমুনা নদীর তীরবর্তী তারাকান্দি যমুনা সার কারখানা-ভুয়াপুর একমাত্র সড়ক। এ পাকা সড়কে গত ৪-৫ দিন ধরে উপজেলার স্থল গ্রাম এলাকা থেকে পিংনার নরপাড়া পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার জুড়ে একাধিক স্থানে পানির লিকেজ দেখা দিয়ে আসছে। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে সড়ক ভাঙনের চরম আতংক দেখা দেয়। এ সড়কের লিকেজ বন্ধ করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সড়ক ও জনপদের লোকজন রাত দিন কাজ করে আসছে। এর পাশাপাশি ঘাটাইল সেনানিবাসের সেনা সদস্যরাও এলাকায় অবস্থান করে আসছেন। এর মধ্যে হঠাৎ করে বুধবার রাত ১টার দিকে স্থল গ্রাম এলাকা লিকেজের ফলে যমুনা নদীর পানির তোড়ে প্রায় ৬০ ফুট পাকা সড়ক ভেঙে নিয়ে যায়।

জয়পুরহাট : জেলার আক্কেলপুর উপজেলার তুলসীগঙ্গা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের মাদারতলী ঘাট এলাকার প্রায় ২০ ফুট অংশ ভেঙে গেছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাঁধটি মেরামত শুরু করেছে স্থানীয় এলাকাবাসী। দীর্ঘদিন থেকে সংস্কার না থাকায় বন্যায় পানির প্রবল চাপে তুলসীগঙ্গা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ফাটলও দেখা দেয়। জেলা পানি উন্নয়ন বিভাগের সহকারী বিভাগীয় প্রকৌশলী একেএম নজমুল হাসান জানান, সকালে নদীর পানি কিছুটা কমলেও বর্তমানে তা আবার বাড়তে শুরু করেছে।

গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) : রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বুধবার রাতে গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের কাটাখালী-তেনাপচা সড়কটি পানির চাপে ভেঙে গিয়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে অন্তত ১০ হাজার বিঘা জমির বোরো ধান। সরেজমিন দেখা গেছে, দেবগ্রাম ইউনিয়নের আঞ্চলিক পাকা সড়কের পূর্ব তেনাপচা এলাকায় পানির প্রবল চাপে ভেঙে গেছে। অন্তত ২শ’ মিটার এলাকা দিয়ে তীব্র গতিতে পানি প্রবেশ করছে। পানির তোড়ে সড়ক সংলগ্ন আ. রাজ্জাক মোল্যার বাড়িঘর বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়াও সড়ক ভেঙে পানি প্রবেশ করায় গোয়ালন্দ পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড প্লাবিত হয়েছে। এতে করে শত শত একর জমির ফসল বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।

সিরাজগঞ্জ ও শাহজাদপুর : প্রবল বর্ষণে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নাজুক হয়ে পড়ায় সিরাজগঞ্জবাসী বাঁধ ভাঙার আতংকে রয়েছেন। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েও স্বস্তি পাচ্ছে না তারা। কখন বাঁধ ভাঙে, আর কখন পাত্তারি গোটাতে হয় এই চিন্তায় তারা অস্থিরতার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলোর কোথাও কোথাও পানি চুইয়ে আসছে বলেও জানান শহরবাসী। অনেকে ইট-বালু-সিমেন্ট কিনে বাসা-বাড়িতে পানি ঢোকার পথ বন্ধ করার জন্য আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে বেলকুচি উপজেলায় বন্যার পানিতে ডুবে নিরব (৬) ও হযরত আলী (৮) নামে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া উল্লাপাড়ায় ফাহিম ইসলাম নামে আরেক শিশু পানিতে পড়ে মারা গেছে। এদিকে শাহজাদপুর উপজেলার জামিরতা ও পোরজনা বাজার ২ ফুট পানিতে ডুবে গেছে।

কুড়িগ্রাম, রৌমারী, চিলমারী ও উলিপুর : বৃহস্পতিবার সকালে চিলমারী উপজেলার কাচকোল দক্ষিণ ওয়ারী এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের ডান তীর রক্ষা প্রকল্পে ধস নামে। এতে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নজরুল ইসলামের বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। হুমকির মুখে রয়েছে জাহানারা, আলিমুদ্দিন ও ইলিমুদ্দিনের বাড়ি। চিলমারী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে হঠাৎ করে তার বাড়ির একটি ঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেলে তিনি অপর ৩টি ঘর দ্রুত সরিয়ে নেন। এদিকে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। এখনও ঘরে ফিরতে পারেননি দুর্গতরা। ত্রাণ অপ্রতুল হওয়ায় দুর্গম অঞ্চলে পৌঁছেনি খাদ্য সহায়তা। সীমাহীন দুর্ভোগে পড়া অসহায় মানুষকে দেখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ কুড়িগ্রামে আসছেন। উলিপুরে পানিতে ডুবে নাজমুল হক (৭) ও ইমরান আলী নামে দু’জন মারা গেছে।

রংপুর ও তারাগঞ্জ : ত্রাণ পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে বদরগঞ্জ উপজেলা মধুপুর ইউনিয়নের নাওপাড়া গ্রামের আবদুল কাদের বলেন, ‘কয়দিন ধরি কাম-কাজ নাই বাহে। পানিবন্দি হয়া হামরা না খায়া আছি। কায়ো সাহায্য দিবার আইসে নাই।’ দামোদরপুর ইউনিয়নের আমরুলবাড়ী এলাকায় একটি বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া সাবিনা খাতুন (৫৫) বলেন, ‘বাবা মোর থাকার মাটির ঘরটা ভাঙি নদীত ভাসি গেইছে। তোরা মোর নামটা নেখি (লিখে) নিয়া যাও। যদি কায়ো সাহায্য দিয়া যায়..।’ পৌরশহরের গরুহাটি, থানাপাড়া, মাস্টারপাড়া, জাদুনগর, শাহপাড়াসহ অন্তত ১৫টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়াও মধুপুর, বিষ্ণুপুর, রাঁধানগর লোহানীপাড়া, গোপালপুর, কালুপাড়া ও গোপিনাথপুর ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি। তারাগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

তিস্তাপারে গাইড বাঁধে দুর্দশা : নীলফামারীর তিস্তাপার থেকে মো. মোস্তফা আবিদ জানান, তিস্তার পানি নেমে গেলেও বসতভিটা হারিয়ে ৫ শতাধিক পরিবার গাইড বাঁধে আশ্রয় নেয়। বৃহস্পতিবার সেখানে দেখা যায়, তিস্তার ভাঙন ও পানিবন্দি পরিবারের সদস্যরা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের মাঝে দেখা দিয়েছে নানা রোগবালাই। বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট। বিশেষ করে অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। এসব পরিবারের সদস্যরা জানান, কখনও খেয়ে কখনওবা না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন তারা। সরকারের পক্ষ থেকে যা ত্রাণ পাচ্ছেন, তা দিয়ে সংসার চলে না। সংসারে সদস্য অনেক, কিন্তু ত্রাণ যৎসামান্য।

বগুড়া : সারিয়াকান্দিতে বানভাসি মানুষ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, চরাঞ্চলের উঁচু জায়গা ও বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাসাঠাসি করে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের দিন কাটছে অনাহারে-অর্ধাহারে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি, পয়ঃনিষ্কাশন, খাদ্য সংকট ও গো-খাদ্যের অভাব। সরকারিভাবে এ পর্যন্ত দুর্গতদের মাঝে ৫০ টন চাল ও ২ হাজার পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। দুর্গত মানুষ ত্রাণের জন্য হাহাকার করছেন। এদিকে ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে সারিয়াকান্দি উপজেলার গোদাখালি ও ধুনট উপজেলার বানিয়াজানে আরও দুটি পয়েন্টে ফাটল ধরেছে।

নওগাঁ : বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় সদর উপজেলার ইকরতাড়া গ্রামে বন্যা নিয়ন্ত্রণ পাউবো বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়। স্থানটি লোকজন, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস বাঁশ, কাঠ ও বালুর বস্তা দিয়ে বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করছে। বাঁধটি ভেঙে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জেলার বন্যাকবলিত এলাকার অসহায় পরিবারগুলো বাঁধ, স্কুল ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। এখনও অধিকাংশ বন্যার্তের কাছে কোনো ত্রাণ না পৌঁছায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। এদিকে বন্যায় গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছেন খামারিরা।

শেরপুর : ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সদর উপজেলার চরাঞ্চলের ৬টি ইউনিয়নের ৩০টি গ্রামের নিন্মাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বুধবার কামারের চরের শাহাব্দীর চর গ্রামে বন্ধুদের সঙ্গে বন্যার পানিতে গোসল করতে গিয়ে পানিতে ডুবে কোরআনে হাফেজ হানিফ উল্লাহ (১৬) মারা গেছে। অপরদিকে বেতমারী এলাকায় বন্যার পানিতে পড়ে নাঈম নামের ৪ বছরের এক শিশু মারা গেছে।

পাবনা : জেলার ৫টি উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অন্তত এক লাখ মানুষ। জেলায় শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠেছে। এর মধ্যে ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যার পানিতে সাগরকান্দী ও নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের চরাঞ্চলের শত শত একর বোনা আমন, আউশ ও সবজি তলিয়ে গেছে। গৃহপালিত পশু রাখার অসুবিধাসহ গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।

দিনাজপুর : বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন বলেছেন, সরকারের অন্যান্য ইউনিটগুলোর মতো বিজিবিও বন্যার্ত মানুষের পাশে থাকতে চায়। এ জন্য তারাও কাজ করে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের সীমান্তগ্রাম বনগাঁওয়ে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণকালে এসব কথা বলেন তিনি।

শিবচর (মাদারীপুর) : পানির তোড়ে শিবচরের পদ্মা বেষ্টিত জনবিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের কাঁঠালবাড়ি ও চরজানাজাতে ব্যাপক নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। কাঁঠালবাড়ির কাউলিপাড়া দারুল উলুম কওমি মাদ্রাসাসহ শতাধিক বাড়িঘর নদী ভাঙনে আক্রান্ত হয়েছে। ঘরবাড়ি স্থাপনা সরিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছেন স্থানীয়রা।

অন্যান্য জেলার বন্যা পরিস্থিতি : দিনাজপুরে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এবারের বন্যায় এ জেলায় ২৫ জন মারা গেছে। গাইবান্ধায় বন্যার অবনতি হয়েছে। জেলার ২৫৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জলমগ্ন থাকায় দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা স্থগিত। ফরিদপুরে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে জেলা প্রশাসনের জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। লালমনিরহাটে পানি কমলেও বন্যাকবলিত মানুষের মাঝে দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। জেলার ৩২৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। ঠাকুরগাঁওয়ে বানভাসি মানুষের চিকিৎসা সেবা দিতে পাশে দাঁড়িয়েছে সেনাবাহিনী। নেত্রকোনার কলমাকান্দা-নেত্রকোনা সড়কে ৩ দিন ধরে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ জেলার দুর্গাপুরে বন্যার কিছুটা উন্নতি হলেও আক্রান্ত মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। মদনে কমিউনিটি ক্লিনিক ও স্কুলসহ ৫০ হেক্টর রোপা আমন পানিতে নিমজ্জিত। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে সড়ক ভেঙে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বুধবার রাতে উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের কাটাখালী-তেনাপচা সড়কটি ভেঙে যায়।

http://www.jugantor.com/first-page/2017/08/18/148901