১৮ আগস্ট ২০১৭, শুক্রবার, ৭:৪৩

সংবিধান, সার্বভৌমত্বওইসলাম

সার্বভৌমত্ব (Soveriegnty) নিয়ে ইউরোপে বিতর্ক শুরু হয় ফরাসি বিপ্লবের আগে-পরে। এই বিবাদের মূল কথা ছিল, সার্বভৌম কে, রাজা না প্রজা (জনগণ)? শেষ পর্যন্ত স্বীকৃত হয় যে, প্রকৃত সার্বভৌম শক্তি হচ্ছে জনগণ।
ইউরোপে এ বিতর্ক কখনো হয়নি যে, সার্বভৌম কে, সৃষ্টিকর্তা না জনগণ? স্রষ্টার সার্বিক ক্ষমতা বা উচ্চতা সম্পর্কে কোনো বিতর্ক ছিল না।
বেশির ভাগ দেশের সংবিধানে জনগণ সার্বভৌমÑ এ কথা লেখা থাকে না বা লেখা নেই। যেমনÑ যুক্তরাষ্ট্র, যুুক্তরাজ্য এসব দেশের জনগণ সার্বভৌম, এ কথা লেখা নেই। এটা উহ্য থাকে বলে ধরে নেয়া হয়।


সার্বভৌমত্ব সম্পর্কে অস্টিনের ধারণা যে, সার্বভৌমের ক্ষমতা অসীম; তা ভাগ করা যায় না, তা পরিত্যক্ত হয়েছে। এ রকম ধারণা জনগণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় না। জনগণের সীমাবদ্ধতা আছে। অস্টিনের ধারণা যদি মানা হয় তাহলে অসীম ক্ষমতার অধিকারী কোনো মানবিক সত্তা হতে পারে না। তা কেবল স্রষ্টাই হতে পারেন।
ইসলামের ইতিহাসে ‘সার্বভৌম’ শব্দের ব্যবহার বিংশ শতাব্দীর আগে হয়নি। ইসলামের ইতিহাসে ধরে নেয়া হয়েছে যে, আল্লাহ হচ্ছে ‘মালিকুল মুলক’ (রাষ্ট্রের মালিক), ‘মালিকিন নাস’ (জনগণের শাসক) ‘লিল্লাহি মুলকুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদে’ (আল্লাহর জন্য পৃথিবী ও আকাশমণ্ডলের মালিকানা বা সার্বভৌমত্ব)।
কেবল আধুনিককালে ইসলামি সংবিধানে আল্লাহ তায়ালার সার্বভৌমত্বের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যেমনÑ ইরান, পাকিস্তান, সুদান, মৌরিতানিয়ার সংবিধানে। এ কথাও বলা হয়েছে যে, জনগণই আমানত হিসেবে সব দায়িত্ব পালন করবে।

আল্লাহর সার্বভৌমত্বের উল্লেখ থাকা জরুরি নয় যদি মেনে নেয়া হয় যে, রাষ্ট্রের কোনো আইন ও কাজ ইসলামবিরোধী হবে না। যেমন, মদিনা রাষ্ট্রের সংবিধান বা মদিনার সনদে উল্লেখ ছিল না যে, আল্লাহ এই রাষ্ট্রের সার্বভৌম শক্তি। তবে মদিনার সনদে উল্লেখ ছিল, কোনো মতবিরোধ হলে আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশ মোতাবেক তা নিরসন করা হবে।
আমাদের দেশে একটি ইসলামি দলের রেজিস্ট্রেশন এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাতিল করে দিয়েছে যে, সে দলের গঠনতন্ত্রে আল্লাহর সার্বভৌমত্বের কথা বলা হয়েছে, যদিও সে দল দেশের সংবিধান মেনে চলার কথাও উল্লেখ করেছে। প্রত্যেক বিশ্বাসীর জন্য স্রষ্টার চূড়ান্ত কর্তৃত্ব সর্বস্বীকৃত। বাংলাদেশে অবিশ্বাসী কয়েক হাজারমাত্র হতে পারে। সুতরাং কোনো ইসলামি দলের রেজিস্ট্রেশন এ কারণে বাতিল করা কোনোভাবেই সঙ্গত হয়নি।
তবে আল্লাহর সার্বভৌমত্বের কথা দলের সংবিধানে উল্লেখ করতেই হবে, তা জরুরি নয়। আল্লাহর চূড়ান্ত ক্ষমতা বা সার্বভৌমত্ব কারো স্বীকৃতির ওপর নির্ভরশীল নয়।
আমি আশা করি, সব রাজনীতিবিদ, দল, আইনজ্ঞ ও বিচারক বিষয়টি ভেবে দেখবেন।
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/244915