১৭ আগস্ট ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১১:৩২

জিটুজিতে চাল কিনতে পারছে না সরকার

উচ্চমূল্যের কারণে সরকার টু সরকার (জিটুজি) পর্যায়ে চাল কিনতে পারছে না সরকার। বাংলাদেশে চালের সংকট রয়েছে- এমন সংবাদ আন্তর্জাতিক বাজারে পৌছে যাওয়ার কারণেই মূলত সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে চাল উৎপাদনকারী শীর্ষ কয়েকটি দেশ টনপ্রতি দাম ৫০ থেকে ১৫০ ডলার বাড়িয়ে দিয়েছে। খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বদরুল হাসান মানবজমিনকে বলেন, জিটুজি ভিত্তিতে চাল কিনতে থাইল্যান্ডের টিম বাংলাদেশ ঘুরে গেছে। এখন তাদের সঙ্গে পত্রালাপ চলছে। তবে কম্বোডিয়ার টিম বাংলাদশ সফর করে গেছে। আশা করছি পজেটিভ কিছু রেজাল্ট হবে। ভারতসহ আরও দুয়েকটি দেশের সঙ্গে পত্রালাপ চলছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, থাইল্যান্ড, ভারত ও মিয়ানমার টন প্রতি চালের দাম বেশি হাঁকছে। এ কারণে জিটুজি পর্যায়ে চাল কেনার প্রক্রিয়া থেমে গেছে। কারণ আন্তর্জাতিক বাজার দরের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা ছাড়া সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা চাল কেনার সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, থাইল্যান্ডের সরকারের কাছ থেকে দুই লাখ টন চাল কেনার আশা নিয়ে গত ৫ই জুলাই ব্যাংকক যান খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বদরুল হাসান ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আতাউর রহমান। চাল কেনার বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা করে আসেন তারা। এরই অংশ হিসেবে থাইল্যান্ডের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল ২৩শে জুলাই বাংলাদেশ সফরে আসে। এ সফরে বাংলাদেশের সরকারি প্রতিনিধিদল থাইল্যান্ডের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করে। তবে বৈঠকে থাইল্যান্ড সরকারের পক্ষ থেকে চালের দাম বেশি চাওয়া হয়। এ কারণে দুই দেশের মধ্যে চাল কেনার বিষয়ে কোনো মতৈক্য হয়নি। এরপরই থাইল্যান্ড থেকে চাল কেনায় দৃশ্যত কোনো অগ্রগতি হয়নি। খাদ্য অধিদপ্তর চাল কেনার প্রস্তাবটি চিঠি চালাচালিতে সীমাবদ্ধ করে রেখেছে। খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চাল ও গমের মজুদ এখন তলানিতে রয়েছে। মজুদ কম থাকায় সরকারি পর্যায়ে ১২ লাখ টন চাল কেনার টার্গেট করা হয়েছে। এর মধ্যে জিটুজি পদ্ধতিতে ভিয়েতনাম থেকে আড়াই লাখ টন চাল কিনছে সরকার। এ চাল ধাপে ধাপে দেশে আসছে। অন্যদিকে দরপত্রের মাধ্যমে দুই লাখ টন চাল কেনার চুক্তি করেছে খাদ্য অধিদপ্তর। সব মিলিয়ে সাড়ে চার লাখ টন চাল কেনার চুক্তি হয়েছে। বাকি এক লাখ টন চাল অনুমোদন প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এছাড়া এক লাখ টন চালের দরপত্র আহবান করা হয়েছে। সব মিলিয়ে আরও ছয় লাখ টন চাল কেনা হবে। দরপত্রের মাধ্যমে চাল কিনতে সময় বেশি লাগবে এ বিবেচনায় জিটুজি ভিত্তিতে চাল কেনার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ মাসের প্রথম দিকে চাল কিনতে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল কম্বোডিয়া যায়। এর ফলোআপ হিসেবে কম্বোডিয়ার টিম বাংলাদেশ সফর করে গেছে। এ সফরে জিটুজি পর্যায়ে আড়াই লাখ টন আতপ চাল কেনার বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। এদিকে ভারতের রাষ্ট্রীয় একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও চাল কেনার জন্য চিঠি চালাচালি করছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। তবে দাম বেশি চাওয়ায় এ বিষয়ে সরকার কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না। এর আগে জিটুজি পদ্ধতিতে ভিয়েতনাম থেকে আড়াই লাখ টন চাল কেনার সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে দুই লাখ টন আতপ ও ৫০ হাজার টন সিদ্ধ চাল রয়েছে। আতপ চাল কিনতে ৭১৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা ও সিদ্ধ চাল কিনতে ১৯৫ কোটি পাঁচ লাখ টাকা লাগছে। সবমিলিয়ে আড়াই লাখ টন সিদ্ধ ও আতপ চাল কিনতে ৯০৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা সরকারি কোষাগার থেকে যাচ্ছে। এরই মধ্যে ভিয়েতনামের সঙ্গে চুক্তিকৃত বেশিরভাগ চাল দেশে এসে পৌঁছেছে।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=79148&cat=2/