১৫ আগস্ট ২০১৭, মঙ্গলবার, ১২:২০

১৫ হাজার হজযাত্রীর ভিসা এখনো অনিশ্চিত

ভিসার জন্য আর মাত্র তিন দিন বাকি থাকলেও এখনো ভিসা হয়নি ১৯ হাজার হজযাত্রীর। এর মধ্যে ১৫ হাজার হজযাত্রীর ভিসার জন্য পাসপোর্টই জমা হয়নি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাসপোর্ট জমা না দিলে তাদের ভিসা পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। আর ১৬টি এজেন্সি এ পর্যন্ত একজন হজযাত্রীকেও সৌদি আরবে পাঠায়নি। এ দিকে গত ২২ দিনে সৌদি আরবে মোট হাজী গেছেন ৬৫ হাজার ৩১৯ জন। বাকি ১২ দিনে আরো ৬১ হাজার ৮৭৯ জনকে সৌদি পাঠাতে হবে। এতে শেষ দিকে ফ্লাইট নিয়ে চরম সঙ্কট দেখা দেয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, এ বছর বাংলাদেশ থেকে মোট হজযাত্রী যাবেন এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। এসব হজযাত্রীর জন্য আগামী ১৭ আগস্ট পর্যন্ত ভিসার আবেদন করা যাবে। কিন্তু গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত সৌদি দূতাবাস থেকে মোট ভিসা পাওয়া গেছে এক লাখ সাত হাজার ৮৬০ জনের। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় চার হাজার ৯ জনের এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ তিন হাজার ৭১০ জনের। এতে গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত ১৯ হাজার ৩৩৮ জনের ভিসা হয়নি। তবে গতকাল সারা দিনে আরো কিছু ভিসা হয়েছে বলে হজ অফিস জানিয়েছে। ইতোমধ্যে ভিসার জন্য লজমেন্ট/মোফ সেন্ট করা হয়েছে এক লাখ ১৯ হাজার ৩৭১ জনের এবং মোট ডিও ইস্যু করা হয়েছে এক লাখ ১০ হাজার ৭১০ জনের।
জানা যায়, এখনো প্রায় ১৫ হাজার হজযাত্রীর ভিসার জন্য পাসপোর্টই জমাই হয়নি। আর ১৬টি এজেন্সি এখনো একজনও হজযাত্রী পরিবহন করেনি। গতকাল এ ১৬টি এজেন্সিকে হজ অফিসে ডেকে পাঠায় ধর্ম মন্ত্রণালয়। কিন্তু তাদের অনেকেই গতকাল হজ অফিসে হাজির হননি। তবে উপস্থিতিদের মধ্যে মাত্র পাঁচটি এজেন্সি তাদের হজযাত্রীদের পাসপোর্ট হজ অফিসে জমা দিতে সম্মত হয়েছে। যাদের হাজীর সংখ্যা এক হাজারের মতো হতে পারে। জানা যায়, অনেক বেসরকারি এজেন্সি তাদের হাজীদের অনুকূলে ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেন। এ লোন হলো কাগজ মাত্র। কিন্তু এখন তাদের বিমানের টিকিট কাটতে পে-অর্ডার দিতে হবে। কিন্তু তাদের কাছে কোনো টাকা নেই। এ কারণে অনেক এজেন্সি হাজীদের ভিসা হলেও তাদের বিমানের টিকিট না কাটায় তারা সৌদি যেতে পারছেন না।
এ দিকে জানা যায়, অনেক হজ এজেন্সি হাজীদের জন্য সৌদি আরবে বাড়িভাড়া করেছে ২০ আগস্টের পর। ফলে এখন অনেক ফ্লাইট খালি যাচ্ছে। এতে ২০ আগস্টের পর বিমানের ওপর ব্যাপক চাপ পড়বে। এ ছাড়া বাতিল হওয়া ফ্লাইটের ক্ষতি পোষাতে বিমান ১৪টি স্লট পেলেও ইতোমধ্যে তার দু’টি বাতিল হয়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত বিমান মন্ত্রণালয়। এ জন্য গতকাল রাজধানীর কুর্মিটোলায় বিমানের প্রধান কার্যালয়ে এক জরুরি সভা করে বিমান। পরে বেসামরিক বিমান পরিবহনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন সাংবাদিকদের বলেন, ২০ আগস্টের পর যে চাপ সৃষ্টি হবে, তা সামাল দিতে প্রয়োজনীয় এয়ারক্র্যাফট পাওয়া যেমন দুষ্কর হবে, তেমনি অতিরিক্ত স্লটও পাওয়া যাবে না। তাই বিপর্যয় এড়াতে ভিসা হয়েছে, এমন হজযাত্রীদের সৌদি আরবে পাঠাতে হজ এজেন্সিগুলোকে দায়িত্ব নিতে হবে।
মন্ত্রী আরো বলেন, হজযাত্রীর অভাবে ইতোমধ্যে বিমানের ২২টি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে; যা বিমানকে আর্থিক ক্ষতি ও ইমেজ সঙ্কটের মুখোমুখি করেছে। এর দায় বিমানের ছিল না। তবুও ন্যাশনাল ফ্ল্যাগ ক্যারিয়ার হিসেবে হজযাত্রীদের পরিবহন নিশ্চিত করতে বিমান প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এ জন্য হজ ফ্লাইটের সময়সীমা ২৬ আগস্ট থেকে বাড়িয়ে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত করতে সৌদি আরবের ‘জেনারেল অথোরিটি অব সিভিল অ্যাভিয়েশন’-এর প্রতি অনুরোধপত্র প্রেরণ করা হবে। নতুন পাওয়া ১৪টি স্লটের অতিরিক্ত আরো সাতটি স্লট পরিচালনা করতে আগস্ট থেকে বিমানের আবুধাবির দু’টি, ব্যাংককের তিনটি, দোহার পাঁচটি, দুবাইয়ের একটি, কাঠমান্ডুর দু’টি, কুয়ালালামপুরের একটি, লন্ডনের তিনটি, মাসকাটের একটি, রিয়াদের তিনটি ও দাম্মামের দু’টি ফ্লাইট বাতিল অথবা কমিয়ে আনা হবে। সেই সাথে মালয়েশিয়া থেকে লিজকৃত একটি এয়ারক্র্যাফট ২০ আগস্ট থেকে হজযাত্রী পরিবহন করবে বলে তিনি জানান।
সভায় বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব এস এম গোলাম ফারুক, বিমান বোর্ডের চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) এনামুল বারী, বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম জিয়াউল হক, বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোসাদ্দেক আহমেদ, হজ ক্যাম্পের পরিচালক সাইফুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

 

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/244243