১৪ আগস্ট ২০১৭, সোমবার, ১০:২০

সিএসআরে নজরদারি

এক বছরে ৫৬ ব্যাংকের ব্যয় ৫০০ কোটি টাকা

সামাজিক দায়বদ্ধতা বা সিএসআর কাজে গেল বছরে দেশে কার্যত ৫৬ ব্যাংক ব্যয় করেছে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুযারি থেকে জুন) ব্যয় করেছে ২৮১ কোটি টাকা এবং পরের ছয় মাসে (জুলাই থেকে ডিসেম্বর) ব্যয় করেছে ২১৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জলবায়ু খাতে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সিএসআর ব্যয় নিয়ে নানা অনিয়ম পাওয়া যাচ্ছে। যেমন, নতুন ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফার ১০ শতাংশ ব্যয় করার অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনো কোনো ব্যাংক শতভাগেরও বেশি ব্যয় করেছে সিএসআর খাতে। এ কারণে সিএসআর ব্যয়ের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকগুলোর সিএসআর অর্থ ব্যয়ে নানা ধরনের অনিয়মের তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আসছে। কোনো কোনো ব্যাংক নিট মুনাফা না করলেও সিএসআর ব্যয়ে অতি উৎসাহী হয়ে পড়েছে। আবার কোনো কোনো ব্যাংকের পরিচালকদের বিরুদ্ধে সিএসআর অর্থ ব্যয়ে অস্বচ্ছতার প্রমাণ মিলছে। এসব অনিয়ম ঠেকাতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর সিএসআর কার্যক্রমের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। যেসব খাতে ব্যাংকগুলো সিএসআর অর্থ ব্যয় করছে তা তদারকি করা হচ্ছে। এ জন্যই খাত ভিত্তিক তথ্য নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে যেসব তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে এসেছে ওই সব তথ্যের ভিত্তিতে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। কোনো ব্যাংকের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে সর্বনি¤œ ৫০ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে।
তবে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সিএসআর কাজে বড় ধরনের অনিয়ম হচ্ছে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুনির্দিষ্ট কিছু প্রমাণও ইতোমধ্যে পেয়েছে। যেমন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে কয়েকটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালকেরা নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে সিএসআর এ অর্থ ব্যয় করার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
তবে মাঠপর্যায়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাদের কাজ তাদের করতেই হবে। সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের। প্রাথমিকভাবে যাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম শনাক্ত করা হচ্ছে তাদেরই জবাব দিতে বলা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মতো সরকারি ব্যাংকগুলোতেও সিএসআর অর্থ ব্যয় অনিয়মের চিত্র পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জনগণের টাকায় যেখানে ব্যাংকগুলোকে মূলধন যোগান দেয়া হচ্ছে, সেখানে ব্যাংকগুলোর সিএসআর-এর নামে অনেকটা হরিলুট হওয়ার প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব অনিয়মের কারণে এর আগে অর্থমন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সরকারি ব্যাংকগুলোকে সিএসআর কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।
এ দিকে মুনাফা না করেও কোনো কোনো ব্যাংক সিএসআর অর্থ ব্যয় করছে। কোনো কোনো ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অমান্য করে অতিরিক্ত সিএসআর করছে। যেমন নতুন প্রজন্মের কয়েকটি ব্যাংকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী কোনো ব্যাংক তার নিট মুনাফার ১০ শতাংশ অর্থ সিএসআরে (সামাজিক দায়বদ্ধতামূলক কাজ) ব্যয় করতে হবে। কিন্তু ২০১৬ সালে নতুন প্রজন্মের এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ২০৫ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় করেছে যা খুবই অস্বাভাবিক। এ ছাড়া ২০১৫ সালে ইউনিয়ন ব্যাংক ৯৯ শতাংশ, মিডল্যান্ড ব্যাংক ৯২ শতাংশ ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ৩৫ শতাংশ ব্যয় করেছে। ২০১৪ সালে এনবিআরবি গ্লোবাল ৪৯ শতাংশ, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ৩৭ শতাংশ এবং ইউনিয়ন ব্যাংক ১৫ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেছে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/243970