১৪ আগস্ট ২০১৭, সোমবার, ১০:১৮

দরপত্র ছিনিয়ে নিল ছাত্রলীগ যুবলীগ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতাল

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালের ছয়টি কাজের দরপত্র ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। সংশ্লিষ্টরা জানান, তাদের বাধা ও ছিনিয়ে নেয়ার মুখে বিক্রি হওয়া ২২৫টি দরপত্রের মধ্যে মাত্র ১৮টি জমা পড়েছে। কয়েকজন ঠিকাদার অভিযোগ করেন, পছন্দের লোককে কাজ পাইয়ে দিতে জেলা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা শনিবার রাতে সমঝোতার কথা বলে অধিকাংশ ঠিকাদারের কাছ থেকে দরপত্র সংগ্রহ করেন। তাদের মধ্যে দু-একটি দরপত্র জমা দেয়া হয়েছে। আর যারা তাদের কাছে না দিয়ে রোববার জমা দিতে আসেন তাদের আর দরপত্র জমা দিতেই দেয়া হয়নি।


হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ওষুধপত্র, সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি, লিলেন সামগ্রী, গজ-ব্যান্ডেজ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও রাসায়নিক সামগ্রী ইত্যাদি কেনা ও মেরামতের জন্য ২০ জুলাই এ দরপত্র আহ্বান করা হয়। অর্ধশতাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছয়টি কাজের বিপরীতে ২২৫টি দরপত্র কেনে। এর মধ্যে ছয়টি কাজের জন্য ছয়টি গ্রুপের তিনটি করে দরপত্র জমা পড়েছে।

রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সরেজমিন দেখা যায়, হাসপাতাল চত্বরে এবং হাসপাতাল এলাকার ভেতরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নার্সিং ইন্সটিটিউটের প্রধান ফটকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বসে রয়েছেন। হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয়ের বাইরে রাখা দরপত্র জমা দেয়ার বাক্সের ওপর বসে আছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এর সামনে জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সালাহউদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন অবস্থান করছেন। হাসপাতাল চত্বরের কোথাও পুলিশ দেখা যায়নি। এ সময় বেশ কয়েকজন ঠিকাদারের দরপত্র ছিনিয়ে নিতে দেখা যায়। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্বে থাকা সহকারী পরিচালক শফিকুল ইসলামের সঙ্গে এসব বিষয়ে কথা বলতে গেলে ছাত্রলীগ সভাপতি মাসুম বিল্লাহ সেখানে আসেন। তিনি বলেন, আমাদের এক কর্মী অসুস্থ। তাই নেতাকর্মীরা হাসপাতালে অবস্থান করছেন। টেন্ডার সম্পর্কে আমরা কিছু জানি না। দরপত্র জমা দেয়ার বাক্সের ওপরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বসে ছিলেন জানালে তিনি বলেন, সাংবাদিকরা তো অনেক কিছুই দেখেন। জেলা মহিলা যুবলীগের এক নেত্রী জানান, আমি দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে ছয়টি দরপত্র কিনেছিলাম। পরে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাকর্মীরা কাজটি সমঝোতা করা হবে বলে শনিবার রাতে পুরাতন জেলরোড এলাকার দ্য আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গনে ঠিকাদারদের নিয়ে আলোচনায় বসেন। রাত ১০টা থেকে শুরু হয়ে মধ্যরাত পর্যন্ত আলোচনা হয়েছিল। তাদের কথামতো আমি আর দরপত্র জমা দেইনি। ঢাকার ঠিকাদার মো. মহসিন উদ্দিন যুগান্তরকে জানান, আমি ও আমার বন্ধু সাজ্জাদ মুন্সি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ট্রুপিক্যাল এন্টারপ্রাইজ ও আহমেদ এন্টারপ্রাইজের নামে ১২টি দরপত্র কিনি। শুক্রবার মাসুম বিল্লাহসহ কয়েকজন শনিবার রাতে শহরের আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গনে গিয়ে দরপত্র জমা দিতে বলেন। পরে আমি সেখানে পাঠালে তারা দরপত্রগুলো জমা নেয়। সেখানে ছাত্রলীগের সভাপতি মাসুম বিল্লাহ, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হেলাল উদ্দিন, দফতর সম্পাদক তানজিল আহমেদ, প্রচার সম্পাদক সৈয়দ নজরুল ইসলাম, যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সালাহউদ্দিন, শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ছিলেন।

মহসিন উদ্দিন আরও জানান, আলোচনার সময় জানানো হয় কয়েকটি ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে ৫৬ লাখ টাকা নেয়া হয়েছে। দরপত্র কেনার পর যেসব ঠিকাদার কাজ পাবেন না তাদের মাঝে ৪০ লাখ টাকা ভাগ করে দেয়া হবে। তিনি আরও জানান, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বাধার কারণে সকালে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিতে পারিনি। পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাব বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছি। তিনি পুনরায় দরপত্র আহ্বানের দাবি জানান।

এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হেলাল উদ্দিন যুগান্তর জানান, এসব বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তাছাড়া আমি ঠিকাদার না। পাশাপাশি শারীরিকভাবে অসুস্থ, তাই ঘর থেকে কম বের হই। আর জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক সৈয়দ নজরুল ইসলাম রোববার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে যুগান্তরকে জানান, আমি কোনো ঠিকাদারি করি না। এছাড়া আমি শিডিউল কিনিও না কিংবা ড্রপও করি না। হাসপাতালের সহকারী পরিচালক শফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে জানান, দরপত্র জমা না দিতে পারা প্রসঙ্গে কেউ আমার কাছে অভিযোগ করেনি। বাইরের অবস্থা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাইরে দেখার দায়িত্ব আমার নয়। পুলিশ পাঠানোর জন্য দরখাস্ত দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসাইন জানান, পুলিশ পাঠানোর জন্য ওসি সদরকে বলা হয়েছিল।

http://www.jugantor.com/news/2017/08/14/148089/