১৪ আগস্ট ২০১৭, সোমবার, ১০:১২

টিকিট সিন্ডিকেটের কারণে বিমানের হজ ফ্লাইট বাতিল

যাত্রীসংকটের কারণে এখন পর্যন্ত ২১টি হজফ্লাইট বাতিল করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এছাড়া সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের চারটি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। হজ এজেন্সি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর 

শীর্ষস্থানীয় ক’জন কর্মকর্তা ও কয়েকটি নামি এজেন্সি মনে করছে, বিমানের ফ্লাইট বিপর্যয়ের নেপথ্যে রয়েছে টিকিট সিন্ডিকেটের কারসাজি। তাদের কারসাজির কারণেই বিমানের হজফ্লাইটগুলো বাতিল হয়েছে। বিমানের প্রায় ৬০ কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর হজের সময় একশ্রেণির অসাধু ট্রাভেল এজেন্সি টিকিট সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত বুকিং দিয়ে টিকিটের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে হজ এজেন্সিদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেয়। আর হজযাত্রী প্রস্তুত করেও ভিসা পায় না অনেক এজেন্সি। বিমান সূত্রে জানা গেছে, এ বছর টিকিট বিক্রির শুরুতেই বাংলাদেশ বিমানের বরাদ্দকৃত সব টিকিট মাত্র ১০৪টি এজেন্সিকে দিয়ে দেয়া হয়। অথচ হজ কার্যক্রমে ৬ শতাধিক এজেন্সি অংশ নিয়েছে। ১২ই জুলাইয়ের পর আর কাউকে টিকিট দেয়া হয়নি। বিমানের টিকিট বুকিং করে রেখেছে অথচ হজযাত্রী প্রস্তুত করতে না পারায় বিমানের ফ্লাইট বাতিল করতে হচ্ছে। সুষ্ঠুভাবে সব এজেন্সির কাছে কোটা অনুযায়ী বিমানের টিকিট বিক্রি করলে হজফ্লাইটের এ ধরনের বিপর্যয় হতো না বলে মনে করছে এজেন্সিগুলো। এ বিষয়ে হাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা ইয়াকুব শরাফতী সৌদি আরব থেকে মুঠোফোনে মানবজমিনকে বলেন, বিমান ১২ই জুলাইয়ের মধ্যেই ১০৪টি এজেন্সিকে সব টিকিট দিয়ে দিয়েছে। ১৩ তারিখ গিয়ে অনেক এজেন্সি বিমানের টিকিট পায়নি। বাধ্য হয়েই আমরা সৌদিয়ার টিকিট নিয়েছি। হজ কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে ৬ শতাধিক এজেন্সি, অথচ বিমান ১০৪টি এজেন্সিকে সব টিকিট দিয়ে দিয়েছে। এখন বিমানের ফ্লাইট বাতিল হচ্ছে কেন? ওই সকল এজেন্সি ও বিমানের কিছু কর্মকর্তা এজন্য দায়ী। বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমি বিমানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে জোরালো অনুরোধ করছি। এদিকে বিমান জানিয়েছে, গতকাল পর্যন্ত তারা ২৭ হাজার ৮৪৪ জন হজযাত্রী পরিবহন করেছে। এছাড়া সাউদিয়া এয়ারলাইন্স পরিবহন করেছে ৩১ হাজার ২৭৮ জনকে। সব মিলিয়ে গতকাল পর্যন্ত হজ করতে সৌদি আরব গেছেন ৫৯ হাজার ১২২ জন। গতকাল বিমান পাঁচটি ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। এর মধ্যে দুটি ফ্লাইট চট্টগ্রাম থেকে সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বলেন, ভিসা জটিলতায় যাত্রীসংকটের কারণে বাংলাদেশ বিমান ও সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের হজফ্লাইট বাতিল ঘোষণা করতে হয়েছে। হজ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় মোট হজযাত্রীর সংখ্যা ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। হজযাত্রীদের সৌদি আরবে যাত্রার প্রথম ফ্লাইট পৌঁছে ২৪শে জুলাই। শেষ ফ্লাইট ২৮শে আগস্ট। ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে ৬ই সেপ্টেম্বর ও শেষ ফিরতি ফ্লাইট ৫ই অক্টোবর। এ বছর চাঁদ দেখা সাপেক্ষে হজ অনুষ্ঠিত হবে ১লা সেপ্টেম্বর।
আটকে পড়া হজযাত্রীদের পাঠাতে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ
অব্যস্থাপনা, ভিসা জটিলতা ও ফ্লাইট বিপর্যয়ের কারণে আটকে পড়া হজযাত্রীদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সৌদি আরবে পাঠাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে হজযাত্রায় অব্যবস্থাপনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তদন্ত কমিশন গঠনে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে গতকাল বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব ও হজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) মহাসচিবসহ পাঁচ জনকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে আদেশে। হজযাত্রায় অব্যবস্থাপনা তদন্তে কমিশন গঠনের নির্দেশনা চেয়ে পরিবেশ ও মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে গতকাল হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় একটি রিট আবেদন করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। আদেশের পর সাংবাদিকদের তিনি জানান, সৌদি সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে ভিসা জটিলতা দ্রুত নিরসনের জন্য আদালত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন।
এবার বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করার সুযোগ পাওয়ার কথা থাকলেও ভিসা জটিলতা, মোয়াল্লেম ফি বৃদ্ধি, টানা দ্বিতীয়বারের মতো হজযাত্রীদের ক্ষেত্রে ভিসা ফি বৃদ্ধি এবং বাসা ভাড়ায় বিলম্বের কারণে শনিবার পর্যন্ত মোট ৫৮ হাজার ৩৬১ জন সৌদি আরবে পৌঁছেছেন। এখনো ৬৮ হাজার ৮৩৭ জন সৌদি আরবে হজে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য অনুযায়ী, ভিসার আবেদনের সঙ্গে হজযাত্রীদের জন্য সৌদি আরবে বাসা ভাড়া করার তথ্য দিতে হয়। শেষ সময়ে বাসা ভাড়া করলে কম খরচে পাওয়া যাবে এমন আশায় এজেন্সিগুলো বিলম্ব করার কারণে ভিসা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের অভিযোগ। গত ২৪শে জুলাই ফ্লাইট শুরুর পর পর্যাপ্ত যাত্রী না পাওয়ায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনসের ২৭টি হজফ্লাইট বাতিল হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে হজযাত্রীদের জন্য বিমানের বাড়তি ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা হলেও নির্ধারিত সময়ে সবাইকে সৌদি আরবে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে কিনা এ নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=78733&cat=2/--