বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের প্রধান সড়ক। ছবিটি গতকাল সকালে তোলা :নয়া দিগন্ত
১৩ আগস্ট ২০১৭, রবিবার, ১০:০০

বন্যা ও বর্ষণে তলিয়ে গেছে দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা

ভারতের গজল ডোবার সব গেট খুলে দেয়া হয়েছে

গত কয়েক দিনের টানা ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে সারা দেশের নদনদীর পানি বাড়ছে। অনেক জেলায় নদনদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বন্যা পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন লাখ লাখ মানুষ। বিশেষ করে নি¤œাঞ্চলের মানুষের বাড়িঘরে পানি উঠায় তাদের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। এসব এলাকার শত শত পরিবার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নিচ্ছে। নদীর পানিতে তীব্র স্রোত সৃষ্টি হওয়ায় বেড়েছে নদীভাঙন। অনেক স্থানে রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। রেল লাইন তলিয়ে যাওয়ায় পঞ্চগড়-ঠাকুরগাঁও রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। রোপা আমন ক্ষেত ও বীজতলা তলিয়ে যাওয়ায় বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকেরা। পানিতে ভেসে গেছে শত শত পুকুরের মাছ।
সিলেট ব্যুরো জানায়, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর টানা বর্ষণে সিলেটের চার উপজেলা কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কানাইঘাটের কয়েকটি ইউনিয়নের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এসব এলাকার রাস্তা-ঘাট তলিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। এ দিকে সুরমা-কুশিয়ারা নদীর তিনটি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পাওয়া তথ্য মতে, গতকাল শনিবার বিকেল ৩টায় কানাইঘাটে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১১৬ সেন্টিমিটার, সিলেটে সুরমা নদী বিপদসীমার ১৬ সেন্টিমিটার এবং শেওলায় কুশিয়ারা নদী বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বন্যার কারণে দেশের সর্ববৃহৎ পাথর কোয়ারী ভোলাগঞ্জ, বিছনাকান্দি, জাফলং ও লোভাছড়া পাথর কোয়ারীতে বন্ধ রয়েছে পাথর উত্তোলন কার্যক্রম। ফলে বেকার হয়ে পড়েছেন এর সাথে জড়িত কয়েক হাজার শ্রমিক।
পাহাড়ি ঢলে সীমান্ত নদী পিয়াইন ও সারি নদীর পানি উপচে গোয়াইনঘাট উপজেলার বেশির ভাগ নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সালুটিকর-গোয়াইনঘাট এবং সারি-গোয়াইনঘাট সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। পানি উঠায় যাওয়ায় শনিবার বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ ছিল। এ ছাড়া সাড়ি, বড়গাং নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় জৈন্তাপুরের নিচু গ্রামগুলোও তলিয়ে গেছে। হাওরাঞ্চলেও বন্যার সৃষ্টি হয়েছে।
সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উপজেলার লোভা পাথর কোয়ারীতে পাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। তা ছাড়া বড়চতুল, লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ও পশ্চিম, রাজাগঞ্জ ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম বন্যাকবলিত হওয়ায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন নিচু এলাকার বাসিন্দারা। কোম্পানীগঞ্জের উপজেলা সদরসংলগ্ন একটি রাস্তা ও কাঁঠালবাড়ি রাস্তা প্লাবিত হয়েছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিস জানায়, গতকাল শনিবার সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সিলেটে ১১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ ও তাহিরপুর সংবাদদাতা জানান, প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সুরমাসহ সুনামগঞ্জের সব ক’টি নদনদীর পানি বাড়ছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন কয়েক উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ। রোপা আমনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় কয়েকটি উপজেলার সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়া-আসা বন্ধ করে দিয়েছেন অভিভাবকেরা। জেলার সাতটি উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা স্থগিত রাখা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও গত কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতে সুনামগঞ্জে বন্যাপরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার পরিমাপ অনুযায়ী সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। শনিবার বিকেল ৩টায় সুনামগঞ্জ শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ২০৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিক ভুইয়া জানান, জেলার সুরমা, কুশিয়ারা, খাশিয়ামারা, রক্তি, বৌলাইসহ জেলার সব ক’টি নদ-নদীর পানি বাড়ছে।
এ দিকে সুরমা নদীতে পানি বাড়ায় শহরতলির এলাকায় পানি ঢুকে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: বায়োজীদ খান বলেন, সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, দোয়ারাবাজার, দিরাই ও ধর্মপাশা উপজেলার শনিবার ও রোববারের দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা স্থগিত রাখা হয়েছে। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নিজাম উদ্দিন জানান, জেলার সাতটি উপজেলার অর্ধশতাধিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বন্যার পানি উঠায় আজ পর্যন্ত ক্লাস স্থগিত করা হয়েছে। পাহাড়ি ঢল ও বন্যার পানিতে কয়েক শ’ পুকুরের মাছ ভেসে গেছে বলে জানিয়েছেন মাছচাষিরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক জাহেদুল হক জানান, রোপণ করা আমন ধান তলিয়ে গেছে। দু-এক দিনের মধ্যে পানি না কমলে ব্যাপক ক্ষতি হবে। তিনি জানান, এ পর্যন্ত জেলার তাহিরপুর, দোয়ারা বাজার, বিশ্বম্ভরপুর ও সদর উপজেলার প্রায় ১৮৭৫ হেক্টর রোপাআমন নিমজ্জিত হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান জানান, জেলার ১১টি উপজেলায় তিন মেট্রিক টন করে জি আর চাল ও শুকনো খাবারের জন্য ১০ হাজার টাকা করে জি আর ক্যাশ দেয়া হয়েছে।
ছাতক (সুনামগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, ছাতকে আকস্মিক বন্যায় বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গত চার দিনের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার নি¤œœাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সুরমা, পিয়াইন, চেলা, ধলাই ও মরাচেলাসহ পাহাড়ি নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে রোপা আমন ক্ষেত ও বীজতলা তলিয়ে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বিপুল কৃষক। সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিসার কে এম বদরুল হক জানান, বন্যায় রোপা আমন ও বীজতলার অনেক ক্ষতি হয়েছে।
জৈন্তাপুর (সিলেট) সংবাদদাতা জানান, প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে জৈন্তাপুরের নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে অনেক গ্রামের। টানা কয়েক দিনের অতিবর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় জৈন্তাপুরের নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়ে অনেক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানবন্দী এলাকায় প্রশাসন কিংবা জনপ্রতিনিধিদের পরিদর্শন করতে কিংবা পানিবন্দীদের কাছে ছুটে যেতে দেখা যায়নি।
পঞ্চগড় সংবাদদাতা জানান, পঞ্চগড় জেলার সব ক’টি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নদীর দুই পাড়ের শতাধিক গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পৌরএলাকাসহ বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হওয়ায় এসব এলাকার মানুষ মালামাল ও গবাদিপশু নিয়ে বিভিন্ন স্কুল-কলেজে আশ্রয় নিয়েছেন। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে শিশু নারীসহ বন্যাদুর্গতরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ভেসে গেছে অনেক পুকুরের মাছ।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পঞ্চগড় সদর ও তেঁতুলিয়া উপজেলা। তলিয়ে গেছে বসতবাড়ি, আমন ক্ষেত, রাস্তাঘাট। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি উঠায় সাময়িক ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তেঁতুলিয়া উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের ভেরসা নদীর ওপর নির্মিত ভেরসা প্রকল্পের একটি গেট ভেঙে গেছে। দেবীগঞ্জ ও আটোয়ারী উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। পঞ্চগড় রেল লাইনের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
পঞ্চগড় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: মিজানুর রহমান জানান, শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত পঞ্চগড় ২৯০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ভেরসা প্রকল্প ঠিক করতে টেকনিক্যাল টিম পাঠানো হয়েছে।
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক অমল কৃষ্ণ মণ্ডল জানান, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে প্রয়োজন অনুযায়ী শুকনো খাবার, চাল ও নগদ টাকা বিতরণের জন্য পৌরমেয়র ও পাঁচ উপজেলার ইউএনওদের বলা হয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ ও টাকা চেয়ে ঢাকায় ফ্যাক্সবার্তা পাঠানো হয়েছে।
তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) সংবাদদাতা জানান, গত মঙ্গলবার থেকে টানা বর্ষণে তেঁতুলিয়ায় বিভিন্ন নদীর পানি বাড়ায় নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। নদীর আশাপাশে ফসলের ক্ষেত ও বাড়িঘরে দেখা দিয়েছে অব্যাহত ভাঙন। তিস্তা নদীর বাঁধের গেট খোলে দেয়ায় এসব নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর পানি বাড়ায় তেঁতুলিয়া-বাংলাবান্ধা মহাসড়কের পশ্চিম পাশের সরকারপাড়া, ভাদ্রুবাড়ি, কাশিবাড়ি, রণচণ্ডি গ্রামবাসী আতঙ্কে রয়েছে। তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার অফিস সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে শনিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ৩২৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে।
আটোয়ারী (পঞ্চগড়) সংবাদদাতা জানান, কয়েক দিনের টানা বর্ষণে পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার কিছু এলাকার লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। এ দিকে ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় রেলপথের নয়নীবুরুজ এলাকায় ৫০২/১ থেকে ৫০৪/৫ এলাকা পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার রেলপথ ডুবে যাওয়ায় ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
ঠাকুরগাঁও রেল স্টেশন মাস্টার মনসুর আলী জানান, উত্তরবঙ্গ মেইল সকাল ১০টায় ঠাকুরগাঁও থেকে দিনাজপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু ওই ট্রেনটি পঞ্চগড় রেল স্টেশনে আটকে থাকায় তা দিনাজপুর অভিমুখে যেতে পারেনি। দ্রুতযান শাটল সকাল ৭.৫৫ মিনিটে পঞ্চগড়ের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা এবং কাঞ্চন এক্সপ্রেস ছেড়ে যাওয়ার কথা সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে। কিন্তু রেলপথ তলিয়ে যাওয়ায় ওই ট্রেন দুইটি ঠাকুরগাঁও স্টেশনে অবস্থান করছে। সারা দেশের সাথে ঠাকুরগাঁওয়ের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে।
এ ছাড়া অব্যাহত ভারী বর্ষণে তোড়িয়া ভায়া নিতুপাড়া-ফকিরগঞ্জ বাজার সড়কের শিঙ্গিয়া ব্রিজসংলগ্ন রাস্তা, নিতুপাড়া-শিঙ্গিয়া কাঁচারাস্তাসহ গোটা উপজেলার প্রায় ২০টি রাস্তা ভেঙে উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ মো: আব্দুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন সুলতানা, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: তৌহিদুল ইসলাম ও সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বাররা ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা ও ব্রিজ সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন।
রংপুর অফিস জানায়, এ দিকে মাত্র এক মাস যেতে না যেতেই আবার দ্বিতীয় দফা বন্যার কবলে রংপুর অঞ্চলের মানুষ। ভারত কর্তৃক গজলডোবার সব ক’টি গেট খুলে দেয়ায় তিস্তায় তীব্র স্রোত আছড়ে পড়েছে বাংলাদেশ অংশের লালমনিরহাটের ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে এই পয়েন্টে তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ২৯ সেন্টিমিটার। ব্যারাজ রক্ষায় ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে তিস্তার ভাটিতে হুহু করে ঢুকছে পানি। ভেঙে গেছে জলঢাকার শৌলমারী বাঁধ। ফলে তিস্তা অববাহিকার ১৫২ কিলোমিটার এলাকার চরাঞ্চল ছাড়াও নদী তীরবর্তী নি¤œাঞ্চলে গ্রামের পর গ্রাম তলিয়ে যাচ্ছে। হাজার হাজার হেক্টর ভুট্টা, আমন ক্ষেত, পাটসহ ফসলি জমি এখন তিস্তার পানির নিচে। শত শত পুকুর তলিয়ে লাখ লাখ টাকার মাছ চলে গেছে বাইরে। শুধু রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার দিস্তা তীরবর্তী ১১টি ইউনিয়নেই অন্তত অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। তারা চরম দুর্ভোগে পড়লেও সরকারি-বসরকারি কোনো তরফেই তাদের কাছে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো সহযোগিতা পৌঁছেনি।
ডালিয়া তিস্তা ব্যারাজ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজার রহমান নয়া দিগন্তকে জানান, গজলডোবার সব ক’টি গেট খুলে দেয়ায় শুক্রবার রাতে হঠাৎ করেই ব্যারাজের উজানে ভয়াবহ রকম পানি বৃদ্ধি পায়। একসময় ব্যারাজ পয়েন্টে পানি ৫২ দশমিক ৬৫ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে, যা বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপরে। এতে ব্যারাজের সব ক’টি জলকপাট খুলে দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। শনিবার বেলা ৩টায় এই পয়েন্টে পানি কমেছে পেয়ে ৫২ দশমিক ৫৩ অর্থাৎ বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। তিনি জানান, এই ভয়াবহ পানিবৃদ্ধির কারণে ভাটিতে রংপুর অঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চল ও নি¤œাঞ্চলের গ্রামগুলো প্লাবিত হয়ে যাচ্ছে।
এ দিকে পানি বৃদ্ধির কারণে নীলফামীরর জলঢাকার শৌলমারীতে তিস্তার বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় পানি গঙ্গাচড়ার নোহালী ইউনিয়ন দিয়ে প্রবেশ করে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। এতে গঙ্গাচড়া উপজেলার ৪০টি গ্রামের ২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ভেসে গেছে শতাধিক পুকুর ও মৎস্য খামারের কয়েক লাখ টাকার মাছ। তলিয়ে গেছে আমন ক্ষেতসহ বিভিন্ন সবজি ক্ষেত। পানিবন্দী মানু বিভিন্ন উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। তিস্তার পানি ডালিয়ায় ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও গঙ্গাচড়ায় ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামের ধরলা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্রসহ সব নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সেতু পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্লাবিত হয়ে পড়েছে নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী, কুড়িগ্রাম সদর, ফুলবাড়ী, চিলমারী, রৌমারী, রাজিবপুর ও উলিপুর উপজেলার নি¤œাঞ্চলের প্রায় ৫০টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।
তলিয়ে গেছে জেলার ৫০ ইউনিয়নের রোপা আমনসহ মওসুমি ফসল। মানুষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পাকা সড়কে আশ্রয় নিচ্ছেন। জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহম্মদ ফেরদৌস খান জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ রয়েছে। জেলায় ২৫টি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৪৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।
নীলফামারী সংবাদদাতা জানান, তিস্তা নদীর পানি নীলফামারীর ডালিয়া তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তায় পানি বৃদ্ধির কারণে জেলার ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার নি¤œাঞ্চল ও চরের গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছে। শনিবার সকালে পানির চাপে জলঢাকায় তিস্তা সেচ প্রকল্পের কাঁঠালী ও দেশীবাড়ী নামক স্থানে ১০০ ফুট সেচ ক্যানেল ভেঙে গেছে। এতে জলঢাকার প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন তলিয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেচ ক্যানেল ভেঙে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের পূর্বখড়িবাড়ি মৌজার তিনটি গ্রামের এক হাজার পরিবারের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। ১৫টি পরিবারের বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। ৫০টি পরিবার বসতঘর সরিয়ে নিয়েছে বলে জানান ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহিন। ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের ঝাড় সিংহের চর গ্রামের ৭৪৫টি পরিবারের ঘরবাড়িও তলিয়ে গেছে বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ খান।
লালমনিরহাট সংবাদদাতা জানান, তিস্তা নদীর পানি বাড়ার ফলে লালমনিরহাটের নদীতীরবর্তী এলাকায় নতুন করে দেখা দিয়েছে বন্যা। নদীর দোয়ানী ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে পাউবো কন্ট্রোল রুম সূত্র জানিয়েছে। এ ছাড়া ভারী বর্ষণে জেলার ছোট-বড় সব ক’টি নদীর পানিও বৃদ্ধি পেয়েছে।
ডালিয়া (দোয়ানী ব্যারাজ) পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, পানি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিস্তা ব্যারাজের সব গেট খুলে দেয়া হয়েছে।
রাঙ্গামাটি সংবাদদাতা জানান, গত দুই দিনের ভারী বর্ষণে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় রাঙ্গামাটির পর্যটনের ঝুলন্ত সেতু পানিতে তলিয়ে গেছে। রাঙ্গামাটি পর্যটন করপোরেশন ব্যবস্থাপক আলোকময় চাকমা জানান, কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে ঝুলন্ত ব্রিজ ডুবে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পর্যটকদের জন্য ব্রিজের পারাপার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
এ দিকে বাঘাইছড়ির উপজেলার কাচালং নদীর পানির প্রবাহ বেড়ে নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পৌর এলাকাসহ বাঘাইছড়ির ৫টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় প্রায় দেড় হাজার লোককে ৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে উপজেলা প্রশাসন। কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা কমাতে কাপ্তাই স্লিপওয়ের ১৬টি গেট খুলে দিয়ে ৩৬ হাজার কিউসেক পানি ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।
ফুলছড়ি (গাইবান্ধা) সংবাদদাতা জানান, ফুলছড়ি উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়ছে। এতে তলিয়ে গেছে উপজেলার নি¤œাঞ্চলের বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, ফসলি জমি ও সবজি ক্ষেত। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ। বন্যা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন নদীতীরবর্তী কয়েক হাজার মানুষ। ব্রহ্মপুত্র নদবেষ্টিত ফুলছড়ি উপজেলার এরেন্ডাবাড়ী, ফজলুপুর, গজারিয়া, উড়িয়া, কঞ্চিপাড়া ও ফুলছড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ফুলছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল গফুর মণ্ডল জানান, নদীভাঙনে বসতভিটা হারানো পশ্চিম গাবগাছি, উত্তর খোলাবাড়ি ও বাজে ফুলছড়ি গ্রামের তিন শতাধিক পরিবার নিচু এলাকায় বসবাস করায় গ্রাম তিনটি প্লাবিত হয়েছে।
সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) সংবাদদাতা জানান, সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় আবারো নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়ে হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অনেকেই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। পানিবন্দী মানুষের দুঃখকষ্ট লাঘবে সরকারি-বেসরকারি কোনো সংস্থা এগিয়ে আসেনি।
সৈয়দপুর (নীলফামারী) সংবাদদাতা জানান, গত দুই দিনের বৃষ্টিতেই সৈয়দপুরের পাড়া-মহল্লা ও বাজার তলিয়ে গেছে তিন ফুট পানি নিচে। জলাবদ্ধতার শিকার লোকজন বলছেন, পৌর কর্তৃপক্ষ নামমাত্র ২-৩টি রাস্তা সংস্কার করলেও দ্রুত পানি নিষ্কাশনের কোনো ড্রেনই নির্মাণ করেনি। এ ছাড়া শহর থেকে পানি নিষ্কাশনে যেসব ছোট ড্রেন রয়েছে সেগুলো পরিষ্কার করা হয়নি।
এ ব্যাপারে সৈয়দপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ জিয়াউল হক জিয়া বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে পৌর কর্তৃপক্ষ আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। অনেকে ড্রেনে ময়লা ফেলায় মাঝে মধ্যে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।
ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) সংবাদদাতা জানান, ভারী বর্ষণে প্লাবিত হয়ে গেছে ফুলবাড়ীর নি¤œাঞ্চল। উপচে গেছে শতাধিক পুকুর এবং তলিয়ে গেছে রোপা আমন ধানের ক্ষেত। তলিয়ে গেছে নি¤œাঞ্চলের আমন ধান ক্ষেত। গতকাল উপজেলার দৌলতপুর, শিবনগর, খয়েরবাড়ী, বেতদিঘী ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, গত দুই দিনের ভারী বর্ষণে নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ভরে গেছে ফুলবাড়ী শাখা যমুনা নদীও। ওই অঞ্চলের ধানক্ষেতগুলো এখন পানির নিচে। অনেক এলাকায় বন্ধ হয়ে পড়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ।
নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, নাগেশ্বরী পাগলীর ব্রিজের দুই ধার ভেঙে সাতটি ইউনিয়নের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নাগেশ্বরী সদর বাজার রোড ও নাগেশ্বরী থেকে ঢাকাগামী পাকা রাস্তা তলিয়ে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দুধকুমার, গংগাধর, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। ভেসে গেছে পাঁচ শতাধিক মৎস্য ঘেরের মাছ।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায় ২০ হাজার ৫২০ হেক্টর জমির সদ্য লাগানো আমন রোপা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান সরকার জানান, সবেমাত্র কৃষকেরা আমন রোপা লাগানো শেষ করেছেন আর এর মধ্যেই বন্যার পনিতে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
দিনাজপুর সংবাদদাতা জানান, দিনাজপুরের নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বর্ষণ চলতে থাকলে বন্যার আশঙ্কাও রয়েছে। ডুবে গেছে রাস্তাঘাট, পুকুর, জলাশয় ও ফসলি জমি। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পুনর্ভবা ও আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার এক সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার বেশ কিছু প্লাবিত হয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
গতকাল শহরের বালুয়াডাঙ্গা, হঠাৎপাড়া, চাউলিয়াপট্টি, লালবাগ, রামনগরসহ বিভিন্ন এলাকাগুলো প্লাবিত হয়েছে। মানুষের বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকের শোয়ার ঘরেও পানি ঢুকেছে। অনেক বাড়িতে চুলা জ্বলেনি বলেও জানা গেছে। শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংস্কার না করায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন জানান, জেলার প্রধান নদী আত্রাইয়ে ৩৯ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার বিপদসীমা, বর্তমানে ৩৯ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পুনর্ভবা নদীতে ৩৩ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার বিপদসীমা, বর্তমানে ৩২ দশমিক ১ সেন্টিমিটার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। দিনাজপুর আবহাওয়া অধিদফতরের উচ্চপর্যবেক্ষক সহিদুল ইসলাম জানান, বৃষ্টিপাতের বর্তমান পরিস্থিতি আরো দু-এক দিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে তিনি জানান।
গাইবান্ধা সংবাদদাতা জানান, গাইবান্ধা জেলার সাত উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ২৪ ঘণ্টার টানা বর্ষণে ব্যবসায় বাণিজ্যসহ জনজীবন স্থবির হয়ে পড়ছে। শুক্রবার সকাল থেকে কোথাও কখনো সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। দিনব্যাপী মেঘলা আকাশের ঝলকানির বিকট শব্দে আতঙ্কিত মানুষের এ দিক সে দিক ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে। সেই সাথে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিপাতের কারণে প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া অনেকে ঘর থেকে বের হয়নি।
নোয়াখালী সংবাদদাতা জানান, টানা ভারী বর্ষণে নোয়াখালীর ৯টি উপজেলার মধ্যে ৫টির বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ভেসে গেছে বহু মৎস্য খামার। জেলা সদর, বেগমগঞ্জ. সেনবাগ, সোনাইমুড়ী ও চাটখিল উপজেলার গ্রামের প্রায় শতভাগ রাস্তা ৯০ ভাগ বাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। জেলা শহর মাইজদীর সরকারি অনেক অফিস, বাসাবাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। নোয়াখালী পৌরসভার প্রায় সব ক’টি রাস্তা, সদর উপজেলার সব ক’টি ইউনিয়ন বিশেষ করে নেয়াজপুর ইউনিয়নের মাছিমপুর দক্ষিণ মাছিমপুর, দৌলতপুর শতভাগ বাড়িতে পানি উঠেছে।
কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা জানান, কমলগঞ্জ উপজেলায় ধলাই নদের প্রতিরক্ষা বাঁধের পুরনো দুইটি ভাঙন দিয়ে পানি প্রবেশ করছে ফসলি জমিতে। চারটি ইউনিয়নের ৩০০ হেক্টর জমির রোপা আমন পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। ধলাই নদীসহ সব পাাহাড়ি ছড়ার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বৃদ্ধি পেয়ে শনিবার সকালে মাধবপুর ইউনিয়নের শিমুলতলা গ্রাম এলাকায় ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের পুরনো ভাঙন দিয়ে ও কমলগঞ্জ ইউনিয়নের চৈতন্যগঞ্জ গ্রাম এলাকার ধলাই প্রতিরক্ষা বাঁধের পুরনো ভাঙন দিয়ে পানি দ্রুত প্রবেশ করছে ফসলি জমিতে।
রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে আবারো রাঙ্গুনিয়ায় বন্যা দেখা দিয়েছে। ১২ হাজার হেক্টর রোপা আমন পানির নিচে রয়েছে। শনিবার কর্ণফুলী নদীর চন্দ্রঘোনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের ফেরী পারাপার বন্ধ রয়েছে। চন্দ্রঘোনা-বান্দরবান সড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
মানিকছড়ি (খাগড়াছড়ি) সংবাদদাতা জানান, ভারী বর্ষণে মানিকছড়ির নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকটি পাহাড়ের ঢালুতে বসবাস করছে অর্ধশত পরিবার। এদের সরে যেতে এবং নিরাপদ স্থানে বসতি গড়তে প্রশাসন ইতোমধ্যে একাধিকবার সতর্ক করলেও তারা তাতে কর্ণপাত করছে না। গত ৭২ ঘণ্টার ভারী বর্ষণে এসব স্থাপনাগুলো হুমকির মুখে পড়েছে। পাহাড়ের পানি গড়িয়ে পড়ছে ঘরের ওপর! এভাবে ভারী বর্ষণ হতে থাকলে যেকোনো মুহূর্তে পাহাড়ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) সংবাদদাতা জানান, উপজেলায় দুই দিনের টানা ভারী বর্ষণে ও উজানের ঢলে বিভিন্ন নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের নিচু এলাকার বাড়িঘর ও ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ফলে পানিবন্দী বাড়ির লোকজন স্কলের বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছে। এসব তলিয়ে যাওয়া এলাকা পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মেহেদী হাসান। তিনি পানিবন্দী পরিবারগুলোকে সহায়তা প্রদানের জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দিয়েছেন।
হিলি (দিনাজপুর) সংবাদদাতা জানান, টানা বর্ষণ আর ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে প্লাবিত হয়েছে হিলি স্থলবন্দর ও এর আশপাশের এলাকা। তলিয়ে গেছে স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, টিঅ্যান্ডটি অফিসসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অফিস ও স্থাপনা। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে পৌর এলাকার ধরন্দা-ফকিরপাড়া, চণ্ডিপুর, কালিগঞ্জ, চুড়িপট্টি, মুন্সিপাড়া, পালপাড়াসহ পৌর এলাকার প্রায় ১০ হাজার মানুষ।
বৃষ্টির পানিতে চণ্ডিপুরসহ কয়েকটি এলাকার মাটির ঘর ভেঙে পড়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্লাসরুমে পানি প্রবেশ করায় ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস বন্ধ রয়েছে।
এ দিকে হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রফতানি কাজে ব্যবহৃত একমাত্র সিপি রোডসহ হাসপাতাল রোড, বাজার রোড এবং চামরমাথা মোড় সড়ক তলিয়ে গেছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে বন্দরের আমদানি-রফতানি কার্যক্রম।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/243666