১৩ আগস্ট ২০১৭, রবিবার, ৯:৫১

১৯ জেলায় হঠাৎ বন্যা

রেলপথ-সড়কে পানি

বন্যায় ডুবে গেছে রেললাইন। বন্ধ হয়ে গেছে পঞ্চগড়-ঠাকুরগাঁও রুটের ট্রেন। গতকাল সকালে পঞ্চগড়ের নয়নিবুরুজ ও কিসমত স্টেশনের মাঝামাঝি এলাকা থেকে তোলা ছবি। ছবি : কালের কণ্ঠ
টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে আবার দেশের ১৯ জেলার বিভিন্ন স্থান বন্যাকবলিত হয়েছে। এতে লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে রেল ও সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা মারাত্মক ব্যাহত হয়েছে। ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় রেললাইনের ওপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। একাধিক জায়গায় রেললাইন এক থেকে পাঁচ ফুট পানির নিচে রয়েছে। ফলে ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড় রুটে চলাচলকারী ট্রেন বন্ধ আছে।
রেলপথ মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, রেললাইন থেকে পানি অপসারিত হলে এবং লাইন সংস্কার শেষে এই রুটে ট্রেন চালানোর ব্যবস্থা করা হবে।
জানা যায়, পঞ্চগড় থেকে ঠাকুরগাঁওয়ের মধ্যে নয়নিবরুজ ও কিসমত স্টেশনের মাঝামাঝি এলাকায় রেললাইনের পাথরসহ বিভিন্ন উপকরণ পানির তীব্র স্রোতে ভেসে গেছে। কোনো কোনো এলাকায় পাথর-মাটি সরে গিয়ে দুই থেকে পাঁচ ফুট পর্যন্ত গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রায় দুই কিলোমিটার রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুই জেলার মধ্যে রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
এদিকে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে আছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর। গত শুক্রবার দুপুর থেকে তলিয়ে আছে স্থলবন্দরের কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন অফিস এবং ব্যবসায়ীদের অফিস। এ কারণে বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ও যাত্রী পারাপার ব্যাহত হচ্ছে।
স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফোরকান আহম্মেদ খলিফা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে জাতীয় শোক দিবস ও ভারতের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আগামী ১৫ আগস্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরের ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তবে ওই সময়ে যাত্রী পারাপার অন্য দিনের মতোই স্বাভাবিক থাকবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আখাউড়া স্থলবন্দর ঘেঁষে ভারত থেকে একটি খাল এসেছে। শুক্রবার দুপুর থেকে ওই খাল দিয়ে পানি বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে বন্দরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হাঁটুসমান পানি জমে যায়। শনিবার বিকেল নাগাদ এ পরিস্থিতি বিরাজমান ছিল।
স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আজ (গতকাল) সকালের দিকে মাছ রপ্তানি করা হয়। কিন্তু ভারতীয় অংশেও পানি থাকায় অন্য পণ্য রপ্তানিতে ব্যাঘাত ঘটে। পানি না কমলে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। ’
পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে টানা বৃষ্টিতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার পরিবার। খাগড়াছড়ি, দীঘিনালা ও বাঘাইছড়ির নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সাজেক ও লংগদুর সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। সাজেকে আটকা পড়েছে পর্যটকদের শতাধিক গাড়ি। রংপুরের গঙ্গাচড়ায় ২৯ গ্রাম তলিয়ে পানিবন্দি রয়েছে ২৫ হাজার পরিবার। নীলফামারীতে তিস্তাসহ জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে সব নদীর পানি। কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমারসহ প্রধান প্রধান নদ-নদীতে পানি দ্রুতগতিতে বাড়ছে।
সিলেট জেলার চারটি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। সুনামগঞ্জের পাঁচ উপজেলায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গ্রামীণ রাস্তাঘাট, বাজার ডুবে গেছে। প্রবল বর্ষণে শেরপুর, জামালপুর, চাঁদপুরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে হাজারো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এদিকে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের বগুড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত মহাস্থানগড় সেতুর জরুরি মেরামতকাজের কারণে গতকাল রাত ৮টা থেকে আজ সকাল ১০টা পর্যন্ত সেতুর ওপর দিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। জরুরি সার্ভিস ও ছোট আকারের যানবাহনকে মহাস্থানগড় বাজার-শিবগঞ্জ-আমতলী-মোকামতলা সড়ক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে। এ সড়ক ব্যবহারকারীদের সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। বিস্তারিত আমাদের আঞ্চলিক অফিস, নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে—
রাঙামাটিতে টানা বৃষ্টিতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার পরিবার। তবে এবার বড় ধরনের কোনো ভূমিধসের ঘটনা ঘটেনি। গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে যোগাযোগব্যবস্থা। গত শুক্রবার দুপুরের পর থেকে বন্ধ ছিল রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়ক এবং রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়ক। রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের ঘাগড়া আর্মি ক্যাম্প এলাকায় পার্শ্ববর্তী পাহাড় ধসে প্রধান সড়কে মাটি নেমে আসে। তবে বন্ধ হয়ে যাওয়া সড়ক যোগাযোগ দ্রুত চালু করে সওজের কর্মীরা। ফলে এই সড়কে হালকা যানবাহন চলা শুরু হলেও ভারী যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
খাগড়াছড়ি দীঘিনালা ও বাঘাইছড়ির নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সাজেক ও লংগদুর সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। সাজেকে আটকা পড়েছে পর্যটকের শতাধিক গাড়ি। গত দুই দিনের টানা বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে দীঘিনালার মেরুং ও কবাখালী ইউনিয়নের চার শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। ছোট মেরুং বাজারসহ দীঘিনালা-লংগদু সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ রয়েছে লংগদুর সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ। পাহাড় ধসে চাপা পড়েছে পাঁচটি বসতঘর। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে উপকূলীয় ৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকার অন্তত ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিতে ডুবে আছে এসব গ্রামের বাড়িঘর, রাস্তাঘাট। এতে অনেক ঘরেই দুই দিন ধরে রান্নার চুলা জ্বলেনি। ফলে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এসব এলাকার মানুষকে। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।
এ ছাড়া কর্ণফুলী ও হালদাপারের গ্রামগুলোসহ চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার প্রায় ৩০টি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে সহস্রাধিক পরিবার। বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগব্যবস্থা। এ ছাড়া সদ্য লাগানো আমনের চারা আর বীজতলা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম হোসেন রেজা বলেন, ‘আমি নোয়াপাড়া, পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের অনেক প্লাবিত গ্রাম ঘুরে দেখেছি। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হবে। ’
সিরাজগঞ্জে বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনা নদীর পানি দ্বিতীয় দফায় বৃদ্ধি পেয়ে বিপত্সীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দ্বিতীয় দফায় পানি বৃদ্ধির কারণে নতুন করে চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। রংপুরের গঙ্গাচড়ায় ২৯ গ্রাম তলিয়ে পানিবন্দি রয়েছে ২৫ হাজার পরিবার। ডালিয়ার বন্যা পূর্বাভাস সর্তকীকরণ কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপত্সীমার চার সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও রাত ১২টার পর তা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে।
নীলফামারীতে তিস্তাসহ জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত সব নদীর পানি উপচে ও বৃষ্টির পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে কৃষিজমি ও ফসল। পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলের অনেকের বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। অন্যদিকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে জেলা শহরের বাবুপাড়া, প্রগতিপাড়া, সওদাগরপাড়ার দুই শতাধিক বাড়িতে পানি ঢুকেছে।
ঠাকুরগাঁওয়ে প্রবল বর্ষণে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যায় ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বিশেষ করে সদর উপজেলার কলেজপাড়া এলাকায় টাঙ্গন নদীর পার্শের ডিসি বস্তি, মুজিবনগর, খালপাড়া ও ঘনিমহেশপুর, কুজিশহর এলাকার বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। বেশ কয়েকটি এলাকায় পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী।
কুড়িগ্রামে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৫০ হাজার মানুষ। কুড়িগ্রাম সদরের হলোখানা, পাঁচগাছি, ভোগডাঙ্গা, যাত্রাপুর, মোগলবাসা; উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ; নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ, নুনখাওয়া; ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা, ভাঙ্গামোড় ও শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের অনেক গ্রামে পানি ঢুকে ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। প্রায় ৫০টি স্কুলে পানি ওঠায় পাঠদান বন্ধ হয়ে গেছে। ডুবে গেছে গ্রামীণ সড়ক।
গাইবান্ধায় গত তিন দিনের টানা বর্ষণে ব্রহ্মপুত্রসহ প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে সুন্দরগঞ্জে তিস্তা, গাইবান্ধা সদরে ব্রহ্মপুত্র, ফুলছড়ি ও সাঘাটায় যমুনা এবং গোবিন্দগঞ্জে করতোয়া নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চল ও বিস্তীর্ণ চর এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে।
পঞ্চগড়ে টানা ভারি বর্ষণ ও উজানের পানিতে আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। এতে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এদিকে পানির তীব্র স্রোতে রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পঞ্চগড় থেকে ঠাকুরগাঁও পর্যন্ত রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। জেলা প্রশাসন পরিস্থিতির সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখতে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খুলেছে।
পঞ্চগড় রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশনমাস্টার বজলুর রহমান বলেন, প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্টরা ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন ঠিক করতে কাজ করছেন। তবে কখন যোগাযোগ স্বাভাবিক হবে তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।
লালমনিরহাটের নিম্নাঞ্চল দ্বিতীয় দফায় প্লাবিত হয়েছে। তিস্তা ও ধরলার পাশাপাশি স্থানীয় সানিয়াজান ও শিঙ্গিমারী নদীর পানিও বেড়ে বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে লাখখানেক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
দিনাজপুরে ২৮ ঘণ্টায় ৩৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ভারি বৃষ্টিতে শত শত একরের ফসলি জমি, নিম্নাঞ্চল এবং অভ্যন্তরীণ সড়ক-মহাসড়ক তলিয়ে গেছে। ঘরবাড়ি ছেড়ে নদীর বাঁধসহ নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ৮০০ পরিবার।
সিলেট জেলার চারটি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। বন্যাকবলিত উপজেলাগুলো হচ্ছে গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলা। বন্যায় এসব উপজেলার অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জেলার প্রধান নদীগুলোর পানি বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একাধিক উপজেলায় রাস্তাঘাট ডুবে গিয়ে যোগাযোগব্যবস্থা বিঘ্নিত হচ্ছে। টানা বর্ষণের কারণে পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।
হবিগঞ্জে খোয়াই নদের পানি দ্রুত গতিতে বেড়ে চলেছে। গত শুক্রবার রাত ১০টায় খোয়াই নদের পানি বিপত্সীমার ৯০ সেন্টিমিটার বেশি ছিল সকাল ৯টায় তা বেড়ে হয়েছে ১৯৫ সেন্টিমিটার। হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী এম এল সৈকত জানান, পানি বৃদ্ধি ও প্রবাহ একসময় দ্রুত হলেও বর্তমানে ভারত সীমান্তের বাল্লা এলাকায় তা কমছে। ভারত থেকে বাঁধ খুলে দেওয়ায় খোয়াই নদের পানি দ্রুত বাড়তে থাকে। এখনো বৃষ্টি হচ্ছে। তবে ভারত থেকে পানি না এলে বিপদ কেটে যাবে।
সুনামগঞ্জে পাঁচ উপজেলায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গ্রামীণ রাস্তাঘাট, বাজার ডুবে গেছে। ভেঙে গেছে বিভিন্ন উপজেলা সদরের অনেক সড়ক। সাত উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো প্লাবিত হওয়ায় ৮৯৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরীক্ষা দুই দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক ৩১২টি বিদ্যালয়ে দুই দিনের জন্য ক্লাস স্থগিত করা হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্তবর্তী অন্তত ২০টি গ্রাম টানা বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পানিতে তলিয়ে আছে। গতকাল দিনভর এসব এলাকায় পানি আরো বেড়েছে। ইতিমধ্যে আইনমন্ত্রীর নির্দেশনায় ওই সব এলাকায় জরুরি ত্রাণ কার্যক্রম চালানো হয়েছে। তবে পানি না কমায় এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক রয়ে গেছে। অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে আখাউড়া স্থলবন্দরের সরকারি, বেসরকারি অফিস। পানি উঠেছে আখাউড়া-আগরতলা সড়কে। এ সড়কের পাশ দিয়েই ভারত থেকে একটি খাল এসেছে, যা উপচে সড়কে পানি উঠেছে।
শেরপুরে কয়েক দিনের ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নালিতাবাড়ী উপজেলার ভোগাই, চেল্লাখালী নদীর পানি বেড়েছে। গত শুক্রবার মধ্যরাতে ভোগাই নদীর হাতিপাগার, নয়াবিল, শিমুলতলা, খালভাংগা, নিজপাড়া, ঘাকপাড়া, মণ্ডলিয়াপাড়া এলাকায় এবং চেল্লাখালী নদীর গোল্লারপাড় এলাকায় কমপক্ষে ১৩ জায়গায় নদীতীর রক্ষাবাঁধ ভেঙে গেছে। ফলে পৌরসভাসহ ছয়টি ইউনিয়নের বিস্তৃীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
জামালপুরে আবারও বন্যার পানি বিপত্সীমা অতিক্রম করেছে। গত কয়েক দিনের ভারি বৃষ্টিতে যমুনা নদীতে হুহু করে পানি বাড়ছে। এতে যমুনার তীরবর্তী দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি দ্রুত অবনতি হচ্ছে। দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী উপজেলার অভ্যন্তরীণ নদী-নালা ও খাল-বিল ভরে অসংখ্য বাড়িঘরে পানি উঠেছে। ইতিমধ্যেই জেলার ইসলামপুরের চিনাডুলি, বেলগাছা, সাপধরী, নোয়ারপাড়া, কুলকান্দি, পাথর্শী এবং দেওয়ানগঞ্জের চুকাইবাড়ী ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
চাঁদপুরে শুক্রবার রাত থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত টানা ভারি বর্ষণে শহরের বিস্তীর্ণ এলাকা হাঁটুপানিতে তলিয়ে গেছে। শহরের প্রধান কয়েকটি সড়ক, মাঠ পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছে শহরবাসী। গতকাল বিভিন্ন বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদরাসায় শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম ছিল। শহরের নাজিরপাড়া, প্রফেসরপাড়া, পালপাড়া, আদালতপাড়া এবং রহমতপুর কলোনিতে হাঁটুপানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।

http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2017/08/13/531075