রাজধানীর বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য বিশেষ করে তরিতরকারির দাম বেড়েই চলেছে -সংগ্রাম
১২ আগস্ট ২০১৭, শনিবার, ২:২০

পেঁয়াজের দাম আকাশচুম্বী নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন

নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন। সবজিসহ সবজিনিসপত্রের দামই আকাশচুম্বী। লাগামহীনভাবে বেড়েই চলছে পেঁয়াজের দাম। গত দুই সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৩০ টাকা বেড়ে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ভারতীয় পেঁয়াজও বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়। পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে অতি বৃষ্টিকে দায়ী করছে ব্যবসায়ীরা। এদিকে পেঁয়াজের দাম কমানোর লক্ষ্যে মিসর থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, সবজি, মাছসহ সব ধরনের পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এ দাম বাড়ার জন্য অব্যাহত বৃষ্টিপাতকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। সপ্তাহের ব্যবধানে দেশী পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা দরে। এর আগে গত দুই সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৩০ টাকা। দুই সপ্তাহ আগে দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকা কেজি। এছাড়া আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা দরে।
পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি সম্পর্কে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ জানিয়েছেন, দেশের চাহিদা মেটাতে সাধারণত ভারত থেকে নাসিক জাতের পেঁয়াজ আমদানি করা হয়ে থাকে। তবে সম্প্রতি ভারতে বন্যার কারণে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। তবে বিকল্প স্থান হিসেবে তুলনামূলক কম দামে মিসর থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে আর মিসরের সেই পেঁয়াজ অল্প সময়ের মধ্যে দেশের বাজারে আসবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
মন্ত্রী জানান, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মিসর থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ ছাড় করণের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া আসন্ন ঈদ উল আযহায় চামড়ায় ব্যবহার এবং ভোজ্য লবণের চাহিদা মেটানোর জন্য ৫ লাখ মেট্রিক টন লবণ আমদানির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। দেশের চলমান ২৩২ টি মিলকে ২১৫০ মেট্রিক টন করে লবণ আমদানির অনুমতি প্রদান করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
এদিকে গত সপ্তাহের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে কাঁচা মরিচ। কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা দরে। এছাড়া কেজি প্রতি দেশী রসুন ১০ টাকা বেড়ে ১১০ টাকা, ভারতীয় রসুন ১৩০ টাকা, আলু কেজিপ্রতি ২ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৪ টাকা দরে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, টানা বৃষ্টির কারণে আড়তে পেঁয়াজ, রসুন ও আলু সংরক্ষণে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উৎপাদন পর্যায়ের কৃষকরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে এর প্রভাব পড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে পেঁয়াজ ও কাঁচা মরিচে।
ব্যবসায়ী আরিফ বলেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে টানা বৃষ্টির কারণে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। কারণ পেঁয়াজ নষ্ট হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাইকারি ব্যবসায়ীরা। দুর্যোগপূর্ণ এই অবস্থা চলতে থাকলে পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম আরও বেড়ে যাবে।
তবে গত সপ্তাহের দামেই স্থিতিশীল রয়েছে অধিকাংশ মুদি পণ্যের দাম। কেজি প্রতি ছোলা ৮০ টাকা, দেশী মুগ ডাল ১৩০ টাকা, ভারতীয় মুগ ডাল ১২০ টাকা, মাসকলাই ১৩৫ টাকা, দেশী মসুর ডাল ১২৫ টাকা, ভারতীয় মসুর ডাল ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। দারুচিনি ৩৬০ টাকা, জিরা ৪৫০ টাকা, শুকনা মরিচ ২০০ টাকা, লবঙ্গ ১৫০০ টাকা, এলাচ ১৬০০ টাকা, চীনের আদা ১৪০ টাকা এবং ক্যারালা আদা ১১০ টাকা, হলুদ ১৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ভোজ্য তেলের দাম আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। ব্র্যান্ড ভেদে ৫ লিটারের বোতল ৫৩০-৫৪০ টাকা, প্রতি লিটারে ১-২ টাকা বেড়ে ১০৭ টাকা থেকে ১০৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কাঁচা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বেগুন কেজি প্রতি ৬০-৮০ টাকা, শিম ১২০ টাকা, হাইব্রিড টমেটো ১৬০ টাকা, দেশী টমেটো ১০০ টাকা, শশা ৬০ টাকা, চাল কুমড়া ৫০-৫৫ টাকা, কচুর লতি ৬০-৬৫ টাকা, পটল ৫০-৫৫ টাকা, ঢেঁড়স ৫০-৫৫ টাকা, ঝিঙ্গা ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০-৫৫ টাকা, করলা ৫০-৫৫ টাকা, কাকরোল ৫০ টাকা, পেঁপে ৪০-৫০ টাকা, কচুরমুখী ৫০-৫৫ টাকা, আমড়া ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
প্রতিটি ফুলকপি ৩৫ টাকা, বাঁধাকপি ৩০ টাকা এবং লেবু হালি প্রতি ২০ থেকে ৪০ টাকা, পালং শাক আঁটি প্রতি ২০ টাকা, লালশাক ২০ টাকা, পুঁইশাক ৩০ টাকা এবং লাউশাক ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চালের বাজারে দেখা গেছে, মোটা স্বর্ণা চাল প্রতি কেজি ৪২-৪৩ টাকা, পারিজা চাল ৪২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মিনিকেট (ভালো মানের) ৫৪ টাকা, মিনিকেট (সাধারণ) ৫২ টাকা, বিআর-২৮ ৪৮ টাকা, সাধারণ মানের নাজিরশাইল ৫০ টাকা, উন্নত মানের নাজিরশাইল ৫২ টাকা, পাইজাম চাল ৪৮ টাকা, বাসমতি ৫৩ টাকা, কাটারিভোগ ৭২-৭৩ টাকা এবং পোলাও চাল (পুরাতন) ১০০ টাকা, (নতুন) ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাছের বাজারে দেখা গেছে, আকার ভেদে প্রতি কেজি রুই মাছ ২৫০-৩৫০ টাকা, সরপুঁটি ৩৫০-৪৫০ টাকা, কাতলা ৩৫০-৪০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৪০-১৮০ টাকা, সিলভার কার্প ২০০-২৫০ টাকা, চাষের কৈ ২৫০-৩৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাঙ্গাস প্রতি কেজি ১৫০-২৫০ টাকা, টেংরা ৬০০ টাকা, মাগুর ৬০০-৮০০ টাকা, প্রকার ভেদে চিংড়ি ৪০০-৮০০ টাকা, প্রতিটি ইলিশ ৬০০-৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, প্রতি কেজি ইলিশের দাম রাখা হচ্ছে ১২০০ টাকা।
এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে ছোট দেশী মুরগির দাম আগের বাড়তি দামে প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ টাকা দরে। এছাড়া ব্রয়লার মুরগি ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। লেয়ার মুরগি ২২০ টাকা এবং পাকিস্তানি লাল মুরগি ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি গরুর মাংস ৫০০ টাকা এবং খাসির মাংস ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

 

http://www.dailysangram.com/post/295814-