১১ আগস্ট ২০১৭, শুক্রবার, ১১:৫০

২৪ এজেন্সিকে শো’কজ করেও ফ্লাইট বিপর্যয় ঠেকানো যাচ্ছে না ॥ ২৫ হজ্ব ফ্লাইট বাতিল

হজ্ব¡¡ এজেন্সিদের কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়েও হজ্ব¡¡ ফ্লাইট বিপর্যয় ঠেকানো যাচ্ছে না। গত দু’দিনে ২৪টি এজেন্সিকে নোটিশ দেয়া হলেও ফ্লাইট বাতিল হওয়া অব্যাহত রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবারের আরো দু’টি ফ্লাইট বাতিল করেছে বাংলাদেশ বিমান। এ নিয়ে মোট হজ্ব¡¡ ফ্লাইট বাতিলের সংখ্যা দাঁড়ালো ২৫টি। এর মধ্যে ২১টি বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের আর বাকি ৪টি সৌদি এয়ারলাইন্সের। এদিকে হজ্ব¡¡যাত্রীদের যে কোন মূল্যে সৌদি আরব পাঠানোর ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছে হজ্ব¡¡ এজেন্সিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)। এ জন্য বিমানের বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করার জন্য দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ জানিয়েছেন, ‘ভিসা জটিলতায় যাত্রী সংকটের কারণে বৃহস্পতিবারের আরো দুটি হজ্ব¡¡ ফ্লাইট বতিল করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত মোট ২৫টি ফ্লাইট বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।’
বিমান বাংলাদেশ সূত্রে জানা গেছে, ১০ আগস্ট বৃহস্পতিবারের সকাল ৭টা ২৫মিনিটের (বিজি-১০৫৫), ১০টা ৫৫ মিনিটে (বিজি-৩০৫৫) ফ্লাইট দুইটি বাতিল করা হয়েছে।
ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বলেছে হজ্ব এজেন্সিগুলোর গাফিলতিতে একের পর এক ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। 'আমাদের কোনো ত্রুটি নেই। হজ্ব¡ এজেন্সিগুলোর গাফেলতির কারণেই ফ্লাইট বাতিল হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।'
তিনি আরো বলেন, ‘এখন থেকে আর কোন হজ্ব ফ্লাইট বাতিল হবে না। নিয়মিত হজ্ব ফ্লাইট সৌদি আরবের উদ্দেশে রওয়ানা দেবে। আমি একজন হজ্বযাত্রী রেখে সৌদি আরব যাব না।’
হজ্বের ফ্লাইটে বাধা সৃষ্টির অভিযোগে ২৪টি এজেন্সিকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার ৫ হজ্ব এজেন্সিকে এবং বুধবার ১৯ এজেন্সিকে শোকজ করা হয়।
এ বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে যুগ্ম-সচিব মো. হাফিজ উদ্দিন জানান, ‘আমরা গাফিলতির অভিযোগে মোট ৪৮ এজেন্সিকে দুই দিনের সময় বেঁধে দিয়েছিলাম। কিন্তু এর মধ্যে ৫টি এখনও তাদের কাজ শেষ করেনি।’
তিনি আরো বলেন, 'ইতিমধ্যে এই ৫ এজেন্সিকে শোকজ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর আগেও এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এবারো তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
হাফিজ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা এখনও এই ৫ এজেন্সির নাম প্রকাশ করবো না। এখনই যদি নাম প্রকাশ করি তাহলে হজ্বযাত্রীরা অতঙ্কিত হয়ে পরবে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে যখন শাস্তির ব্যবস্থা করবো তখন দেখবেন।’
গত বুধবার তাদের শোকজ করা হয়েছিল সে সব এজেন্সিগুলো হলো, - আজমল ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল (১৫৯ জন), গোল্ডেন ট্রাভেলস অ্যান্ড কার্গো সার্ভিসেস (২৫১ জন), ঢাকা হজ্ব কাফেলা অ্যান্ড ট্রাভেলস (১৮২ জন), হাবিব এয়ার ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস (২২০ জন), হা-মিম ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরস (১৫৪ জন), এমএএম ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর (১৫০ জন), এম/এস এম নুর ই মদিনা হাজি ট্রাভেলস (২০৮ জন), মাবরুর এয়ার ইন্টারন্যাশনাল (১৬৪ জন), মাহির হজ্ব সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্যুরস (১৭২ জন), মক্কা বাবে জান্নাত ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস (১৫৮ জন), মেছফালা ট্রাভেলস (২২৫ জন), এমএইচএম ওভারসিজ (১৮০ জন), পেনাং ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস (১৫১ জন), এম/এস মক্কা অ্যান্ড মদিনা ট্রাভেলস (২৬৫ জন), বদরপুর ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস (২৪১ জন),সাকের হজ্ব কাফেলা অ্যান্ড ট্রাভেলস (১৫৪ জন), মিম ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল (১৬৮ জন), তাওসিফ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস (১৫৫ জন) ও এম আলী ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেলস (২০৯ জন)।
কারণ দর্শানো নাটিশে বলা হয়েছে, গত ৮ আগস্ট ১৯ এজেন্সি মালিক/ অংশীদার/ পরিচালক/ চেয়ারম্যানদের ভিসা সংক্রান্ত সভায় উপস্থিত থাকার জন্য চিঠি ও টেলিফোনে অনুরোধ জানানোর পরও তারা উপস্থিত হননি। তাদের অনুপস্থিতির জন্য হজ্ব ব্যবস্থাপনায় বিঘেœর সৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে কেন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে না তা লিখিতভাবে ১০ আগস্টের মধ্যে জানাতে অনুরোধ জানানো হয়। অন্যথায় হজ্বযাত্রী প্রেরণে জটিলতা সৃষ্টি হলে তার দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট হজ্ব এজেন্টকে বহন করতে হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়ে হাবের মহাসচিব মো. শাহাদাত হোসাইন তসলিম বলেন, বাতিল হওয়া ফ্লাইটের হজ্বযাত্রীদের বিশেষ ব্যবস্থায় সৌদি পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ বিমানের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছি। যে ৪৮ এজেন্সিকে আমরা সময় বেধে দিয়েছিলাম তারা দুই একটা এজেন্সি বাদে সবাই তাদের কাজ মোটামুটি শেষ করে ফেলেছে।
তিনি বলেন, ফ্লাইট বাতিল হওয়া হজ্ব যাত্রীদের সৌদি পাঠানো নিয়ে কিছুটা শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে না। বিশেষ ব্যবস্থাপনায় যাত্রীদের সৌদি পাঠানো সম্ভব।
তাসলিম বলেন, এখন পর্যন্ত বিমান ১৪টি স্লটের বরাদ্দ পেয়েছে। বিমান বলছে ৮টি ব্যবহার করতে পারবে। কিন্তু বিশেষ ব্যবস্থাপনায় বাকি ৬টিও ব্যবহার করা সম্ভব। আমি বাংলাদেশ বিমানের প্রতি অনুরোধ জানাবো তারা যেন বিশেষ ব্যবস্থাপনায় যাত্রীদের সৌদি পাঠানোর ব্যবস্থা করে।
সৌদি পৌঁছেছেন ৫২ হাজার ৩৯ হজ্বযাত্রী
চলতি বছর পবিত্র হজ্ব পালনের উদ্দশ্যে বাংলাদেশ থেকে ৫২ হাজার ৩৯ জন হজ্বযাত্রী এখন পর্যন্ত সৌদি আরবে পৌঁছেছেন। এদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় গেছেন ৩ হাজার ৩৪০ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৪৮ হাজার ৬৯৯ জন।
জানা গেছে, বাংলাদেশ বিমানের ৭৩টি ও সৌদি এয়ারলাইন্সের ৮৫টিসহ মোট ১৫৮টি ফ্লাইটে এসব হজ্বযাত্রীরা সৌদি গেছেন। হজ্ব ক্যাম্প সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, ভিসা জটিলতায় যাত্রী সংকটে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও সৌদি এয়ারলাইন্স মোট ২৫টি হজ্ব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে ২১টি বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের আর বাকি ৪টি সৌদি এয়ারলাইন্সের।
এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় মোট হজ্বযাত্রীর সংখ্যা ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। হজ্বযাত্রীদের সৌদি আরবে যাত্রার প্রথম ফ্লাইট পৌঁছে ২৪ জুলাই। শেষ ফ্লাইট ২৮ আগস্ট। ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে ৬ সেপ্টেম্বর ও শেষ ফিরতি ফ্লাইট ৫ অক্টোবর। এ বছর চাঁদ দেখা সাপেক্ষে হজ্ব অনুষ্ঠিত হবে ১ সেপ্টেম্বর।

 

http://www.dailysangram.com/post/295662-