১১ আগস্ট ২০১৭, শুক্রবার, ১১:৪৬

বাড়ি বাড়ি না গিয়েও তথ্য সংগ্রহের কাজ সমাপ্ত : বিপুলসংখ্যক নাগরিক ভোটার হতে পারেননি

ভোটার তালিকা হালনাগাদের জন্য তথ্য সংগ্রহ ২৫ জুলাই শুরু হয়ে গত ৯ আগস্ট শেষ হয়। নির্ধারিত সময়ে তথ্য সংগ্রহকারীরা বাড়ি বাড়ি যাননি বলে অভিযোগ করেছেন ভোটার হতে আগ্রহী তরুণ-তরুণীরা। বরাদ্দ থাকার পরও প্রচার চালায়নি সংশ্লিষ্টরা। ইসির কেন্দ্র ও মাঠপর্যায়ের অনেক কর্মকর্তা দায়সারা মনোভাব দেখিয়েছেন। তথ্য সংগ্রহের জন্য কর্মীদের নির্দিষ্ট স্থানে যারা নিজ আগ্রহে এসেছেন, তাদের তথ্যই নেয়া হয়েছে। এসব কারণে ১৮ বছর হয়েছে এমন বিপুলসংখ্যক তরুণ-তরুণী ভোটার হতে পারেননি। বিদ্যমান তালিকা থেকে মৃতদের নামও যথাযথভাবে বাদ দেয়া হয়নি। এর পরও ভোটার তালিকা হালনাগাদে সফলতার দাবি করেছেন নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। গতকাল আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে এ দাবি করেন তিনি। ইসি সচিব বলেন, কোনো তথ্য সংগ্রহকারীর বিরুদ্ধে বাড়ি বাড়ি না যাওয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, এ পর্যন্ত নতুন ভোটার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ২৪ লাখ ৩৭ হাজার ৩৩১ জন। মৃত ভোটার কর্তন হয়েছে ১৩ লাখ ৩৩ হাজার দু’জন। ভোটার স্থানান্তর আবেদন করেছেন ৬০ হাজার ৮৭৬ জন। নতুন ভোটারের টার্গেট ছিল ৩৫ লাখ। এর মধ্যে ৭০ ভাগ অর্জিত হয়েছে। শতকরা হিসেবে টার্গেট ছিল ৩ দশমিক ৫ শতাংশ, যার মধ্যে অর্জিত হয়েছে ২ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০ আগস্ট থেকে তথ্য প্রদানকারীদের নিবন্ধন শুরু হবে। এ কাজে ৫৫ হাজার তথ্য সংগ্রহকারী ও ১১ হাজার সুপারভাইজার নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। প্রতিটি বিভাগে, জেলা, উপজেলায় কমিটি কাজ করেছে। ব্যাপক পোস্টার, হ্যান্ডবিল বিলি করেছি। মোটামুটি টার্গেট যেটা আশা করেছিলাম তার চেয়ে বেশি অর্জন করেছি।
তথ্য সংগ্রহকারীদের বাড়ি বাড়ি না যাওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হেলালুদ্দীন বলেন, আমরা যদি এমন অভিযোগ পাই সুনির্দিষ্টভাবে ওই এলাকার যিনি আছেন তথ্য সংগ্রহকারী তার বিরুদ্ধে আমরা অ্যাকশন নেব। কেউ যদি আমাদের বলে এখানে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য কেউ আসেননি তার বিরুদ্ধে আমরা অ্যাকশন নেব। প্রতি বছর একটা টার্গেট থাকে। আমরা নির্দিষ্ট পরিমাণ তথ্য সংগ্রহ করে থাকি। যতটুকু আমরা পেয়েছি আমরা সন্তুষ্ট।
তথ্য সংগ্রহের সময় বাড়ানো হবে কি না এ প্রসঙ্গে ইসি সচিব বলেন, কমিশনের এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেই। ভোটার হওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় আছে। নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করলে তাদের ভোটার করা হবে। সব সময় তারা ভোটার হতে পারবে।
তিনি আরো বলেন, ২০১৫ সালে অপ্রাপ্তবয়স্ক যাদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল তাদের ২০১৮ সালের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। গত ২৫ জুলাই প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা ময়মনসিংহে এ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।
ইসি জানিয়েছে, তথ্য সংগ্রহ শেষে ২০ আগস্ট নিবন্ধন কেন্দ্রে কম্পিউটার ডাটা এন্ট্রি কাজ তিন ধাপে শুরু হবে। প্রথম ধাপে ১৮৩টি উপজেলায় ২২ দিনে, দ্বিতীয় ধাপে ২১৬টি উপজেলায় ২৮ দিনে, তৃতীয় ধাপে ১১৮টি উপজেলায় ২১ দিনে, মোট ৫১৭টি উপজেলায় নিবন্ধনের কাজ সম্পন্ন করা হবে। এটি শেষ হবে ৫ নভেম্বর। ২৫ নভেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত উপজেলা থানা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে ভোটার এলাকা স্থানান্তরের আবেদন গ্রহণ এবং মৃত ভোটারের নাম কর্তন করা যাবে। এরপর ২ জানুয়ারি হালনাগাদকৃত খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। দাবি, আপত্তি ও সংশোধনের জন্য দরখাস্ত দাখিলের শেষ তারিখ ১৭ জানুয়ারি। দাবি, আপত্তি ও সংশোধন নিষ্পত্তির শেষ তারিখ ২২ জানুয়ারি। দাবি, আপত্তি ও সংশোধনীর জন্য দাখিলকৃত দরখাস্তের ওপর গৃহীত সিদ্ধান্ত সন্নিবেশনের শেষ তারিখ ২৭ জানুয়ারি। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে ৩১ জানুয়ারি।
২৪ আগস্ট থেকে রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপ শুরু
রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সংলাপ প্রসঙ্গে হেলালুদ্দীন আহমদ জানান, ২৪ আগস্ট বেলা ১১টায় বিএনএফ এবং বেলা ৩টায় বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, ২৮ তারিখ বেলা ১১টায় বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ও বেলা ৩টায় খেলাফত মজলিস, ৩০ আগস্ট বেলা ১১টায় বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও বেলা ৩টায় জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি জাগপার সঙ্গে সংলাপ হবে। ঈদের পরে কাদের সঙ্গে সংলাপ হবে তা পরে জানানো হবে।
বড় দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের সময় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কমিশন ঠিক করেছে তালিকার শেষে যেসব নিবন্ধিত দল রয়েছে তাদেরকে আগে ডাকা হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সর্বোচ্চ ১০ জন আলোচনায় অংশগ্রহণ করবে। আমরা কোনো এজেন্ডা দেইনি। তারা খোলামেলা সব বিষয়ে আলোচনা করবে। শুক্রবারের মধ্যে তাদের কাছে চিঠি পৌঁছে যাবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সীমানা পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে একজন নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে কমিটি করা হয়েছে। উনি বৃহস্পতিবারও সভা করেছেন। আশা করছি আগস্টের মধ্যে একটা সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে। নির্বাচনী এলাকা, ভোটার সংখ্যা, জনসংখ্যা, ছিটমহল সব কিছু মাথায় রেখেই করা হবে। বড় শহরগুলোর জনসংখ্যা চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/243104