১০ আগস্ট ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১০:১১

বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬৫০ কোটি টাকা

বেসিক ব্যাংকের আর্থিক পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত রয়েছে। গত এক বছরে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ও হার উভয়ই বেড়েছে। কিন্তু আদায় কমে গেছে। সরকার মূলধন ঘাটতি মেটাতে কয়েক দফা অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু তাতেও ব্যাংকটিতে পরিস্থিতির পতন থামছে না। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত জুন শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ৭ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৬ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬৩৮ কোটি টাকা, যা শতকরা হিসেবে প্রায় ৫৩ ভাগ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণÑ যে সব ঋণ নবায়ন করা হয়েছিল ওই ঋণ আদায় না হওয়ায়। অপর দিকে অনেকেই ঋণ নবায়ন করার পর মিল কারখানা চালু করেছিল। কিন্তু দুদকের ভয়ে আবার তাদের অনেকেই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ফলে তারা ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। সবমিলে সামগ্রিক খেলাপি ঋণ বেড়ে গেছে।
ব্যাংকটির সামগ্রিক চিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গত তিন মাসেই (এপ্রিল-জুন) ব্যাংকটি খেলাপি ঋণ অবলোপন করেছে ২১৩ কোটি টাকা। কিন্তু অবলোপনকৃত ঋণের বিপরীতে এক টাকাও আদায় হয়নি। আর তিন মাসে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করেছে ২৯১ কোটি টাকা।
কিন্তু আদায়ের হার আগের মতো বাড়েনি। এক পরিসংখ্যান মতে, গত তিন মাসে খেলাপি ঋণ আদায় হয়েছে মাত্র ৬০ কোটি টাকা, আর অশ্রেণীকৃত ঋণ আদায় হয়েছে ৭৮৭ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলাউদ্দীন এ মজীদ গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, প্রধান দু’টি কারণে খেলাপি ঋণ বেড়ে গেছে। এর একটি কারণ হলো খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রতি বছরই সুদ আরোপ হচ্ছে। বছর শেষ হলেই আরোপিত সুদ মূল খেলাপি ঋণের সাথে যুক্ত হয়ে সামগ্রিক পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। অপর দিকে, গত আমলে যেসব ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল ওইসব ঋণের একটি বড় অংশ বেনামি বা ভুয়া প্রকল্পে বিতরণ করা হয়েছিল। এসব ঋণের স্বীকৃতি দেয়ার জন্য ওইসব ঋণ পুনঃতফসিল করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। এতে আদায় কিছুটা বেড়েছিল। কিন্তু পুনঃতফসিলকৃত ঋণের কিছু অংশ আদায় না হওয়ায় ওইসব ঋণ আবার নতুন করে খেলাপি হচ্ছে। সবমিলিয়ে খেলাপি ঋণ বেড়ে গেছে। তবে নতুন করে ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে খুবই সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। গ্রাহকের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা যাচাই- বাছাই শেষে বিতরণ করায় নতুন বিতরণ করা ঋণ আর খেলাপি হচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, খেলাপি ঋণ কাক্সিত হারে আদায় না হলেও গত বছর (২০১৬) ব্যাংকটি পরিচালন মুনাফা দেখিয়েছে ১৫ কোটি টাকা।
বেসিক ব্যাংককে ঋণের বিপরীতে আয় করতে হলে আমানতের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি সুদে ঋণ দিতে হবে। কেননা আমানতের বিপরীতে যে ব্যয় হচ্ছে খেলাপি বাদ দিয়ে বাকি ঋণের বিপরীতে তার চেয়ে বেশি আয় করতে হবে। আমানতের খরচ তোলা তো দূরের কথা, উল্টো ঋণের গড় সুদহারের তুলনায় আমানতে বেশি খরচ হচ্ছে ব্যাংকটির। এতে গত বছরের অনেক মাসে এই ব্যাংক আমানতের গড় যে সুদহার ছিল, ঋণ বিতরণ করেছে তার চেয়ে কম সুদে।
ঋণ ও বিনিয়োগের বাইরে ব্যাংকগুলোর আয়ের আরেকটি উৎস কমিশন ও চার্জ থেকে পাওয়া অর্থ। নানা অনিয়ম নিয়ে ব্যাপক আলোচনায় থাকায় দেশের বাইরে বেশির ভাগ ব্যাংক এখন আর সরাসরি বেসিক ব্যাংকের এলসি নিচ্ছে না। যে কারণে ব্যাংকটি এখন সোনালীসহ বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি খুলছে। ফলে কমিশন বা চার্জ থেকেও তেমন আয় হয় না। আবার খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। আর এ প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয় ব্যাংকের আয় খাত থেকে অর্থ এনে। ব্যাংকটি বিভিন্ন খাত থেকে যে আয় করছে খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ করতেই তার একটি বড় অংশ চলে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে সামগ্রিকভাবে ব্যাংকটির আয়ের ওপর প্রভাব পড়ছে।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/242847