১০ আগস্ট ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৯:৪৯

অন্য দৃষ্টি

তালিকা থেকে গণতন্ত্র বাদ

জসিম উদ্দিন রানা

উন্নতি, প্রগতি, স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের উঁচু মানের এক মূল্যবোধের কথা বলে গণতন্ত্র। এমন পবিত্র এক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের কারণে গণতন্ত্র বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে গণতন্ত্রের দুর্বলতা হচ্ছে, পদ্ধতি হিসেবে এটি এতটাই দুর্বল নিজেকে রক্ষা করতে পারছে না। এর ফুটো গলিয়ে এমন অনেকে ঢুকে পড়ছেন যাদের সাথে গণতন্ত্রের উচ্চ মূল্যবোধের সাথে কোনো সম্পর্ক পাওয়া যাচ্ছে না। গণতন্ত্রের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রাষ্ট্র আমেরিকা নিজেই এমন একজনের হাতে ধরাশায়ী হয়ে গেছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন এমন একজন শাসক, যার কথা ও কর্মকাণ্ডের সাথে গণতন্ত্রের মিল খুব কম।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একজন ধনকুবের। বিপুল অর্থসম্পদ তিনি আর্তমানবতার সেবায় খরচ করেছেন এমন খবর জানা নেই। মানবসেবা করেছেন এমন কোনো নজির পাওয়া যায়নি। তার ব্যাপারে খবর হচ্ছে, নিউ ইয়র্কের আন্ডারগ্রাউন্ড জগতে তার শক্তিশালী অবস্থান ছিল। তিনি রেসলিংয়ের সাথে যুক্ত ছিলেন। প্রতিদ্বন্দ্বীদের ওপর তিনি নিষ্ঠুরতা চালাচ্ছেন, ভিডিওতে এমন দেখা গেছে। সীমাহীন ভোগ ও আনন্দ-ফুর্তি করতে তিনি ভালোবাসেন। হোয়াইট হাউজে স্বল্প বিনোদন তার পোষাচ্ছে না। ফলে তিনি প্রেসিডেন্টের ভবন ছেড়ে প্রায়ই ছুটে যাচ্ছেন বিনোদন কেন্দ্রে।
একটি বড় দলের নমিনেশন নিয়ে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। সাদা মানুষের আলাদা মর্যাদা, খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের বিশেষ অবস্থান এবং দেশীয়দের অধিকার বিষয়ে মনগড়া কিছু কথা বলে তিনি ভোটারদের নিজের দিকে টানেন। এসব কথার আনেকগুলো যে মিথ্যা এর মধ্যে তিনি প্রমাণ করেছেন। ক্ষমতা আছেন মাত্র আট মাস। এরমধ্যে সবচেয়ে প্রকট আকারে দেখা দিয়েছে মিথ্যা বলার প্রবণতা। গণতন্ত্রের উচ্চ মানবীয় লক্ষ্য অর্জন কিভাবে সম্ভব হবে এ ধরনের একজনের মিথ্যুকের মাধ্যমে, বিশ্ববাসী তাই হতবাক। বিশেষ করে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী গণতান্ত্রিক দেশটির প্রেসিডেন্টের যদি এই অবস্থা হয়।
আমেরিকান বর্তমান প্রেসিডেন্ট কতটা নিচে নেমেছেন সাম্প্রতিক মিথ্যা বলার উপর্যুপরি ঝোঁক দেখলে আমরা বুঝতে পারব। যদিও এসব মিথ্যা তিনি বলেছেন বলে স্বীকার করেননি। লাস্ট উইক টুনাইট যুক্তরাষ্ট্রের একটি স্যাটায়ার টিভি শো। সাপ্তাহিক সংবাদের ওপর ভিত্তি করে এইচবিও চ্যানেলে শেষরাতে অনুষ্ঠানটি হয়। জনগুরুত্ব খবর নিয়ে ব্যঙ্গ বিদ্রƒপ করার কারণে এর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে রয়েছে। সবশেষ এই শো-এর ইউটিউব দর্শক ছিল দুই কোটি ৩৮ লাখ ২১ হাজার। এটি ছিল ৮ আগস্ট সকালের হিসাব। এইচবিওতে এটি প্রদর্শিত হয় ৬ আগস্ট শেষরাতে। বিষয় ছিল মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বাগাড়ম্বর।
অনুষ্ঠানের উপস্থাপক জন ওলিভার এক সাক্ষাৎকারে জানাচ্ছেন ট্রাম্প একজন ডাহা মিথ্যাবাদী। ২০১৫ সালে ট্রাম্প টুইট করেন, ‘জন ওলিভার লোক পাঠিয়ে তার একঘেয়েমিপূর্ণ অজনপ্রিয় অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান। সময় ও শক্তি ক্ষয় ছাড়া অন্য কিছু হবে না দেখে তাকে আমি ‘ধন্যবাদ’ জানিয়ে বিদায় দেই।’ অর্থাৎ তার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের ব্যাপারে ট্রাম্প না করে দেন।
ওলিভার জানাচ্ছেন ‘সেটা ছিল একটা মিথ্যা’। তিনি বলেন, ‘আমরা কখনো তাকে আমন্ত্রণ জানাইনি। এ ব্যাপারে আমি আমার প্রত্যেক স্টাফের সাথে আলাদা করে কথা বলেছি। আমি তাদের সবাইকে জিজ্ঞেস করেছি তাদের কেউ এ ব্যাপারে ট্রাম্পের সাথে বলেছেন কি না। সবাই আমাকে জানিয়েছেন তাদের কেউ এ ব্যাপারে তার সাথে কোনো কথা কখনো বলেননি। সুতরাং সেটা ছিল একটা স¤পূর্ণ মিথ্যা।’ ২০১৫ সাল আর ২০১৭ সাল সম্পূর্ণ ভিন্ন। ওই সময় ট্রাম্প সাধারণ একজন ধনকুবের মাত্র। এখন তিনি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি। ওই সময় ট্রাম্পের মিথ্যাচারের কারণ হচ্ছে ‘আঙ্গুর ফল টক’। অর্থাৎ একটি জনপ্রিয় টকশোতে অংশ নেয়ার সুযোগ না পাওয়ায় বিদ্বেষপূর্ণ নেতিবাচক মন্তব্য করেন। ট্রাম্পের মিথ্যাঝড়ে সব যখন ওলট-পালট, তখন অনুষ্ঠানটির উপস্থাপক জনও যেন এ কথাটি ফাঁস করে দিয়ে তাদের সাথে শামিল হলেন।
একজন প্রেসিডেন্ট মিথ্যা বলে ব্ল্যাকমেইল করতে চাচ্ছেন, এমনটি ইতিহাসে নজিরবিহীন। অন্তত গত সপ্তাহে এ ধরনের দু’টি ঘটনা তিনি ঘটিয়েছেন। সপ্তাহের শুরুতে ট্রাম্প জানালেন সীমান্ত এলাকায় কড়াকড়ি বেড়ে যাওযায় মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট টেলিফোনে তার অভিবাসন নীতির প্রশংসা করেছেন। ট্রাম্পের ওই বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টা পর মেক্সিকো জানাল, সাম্প্রতিক সময়ে দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে টেলিফোনে আদৌ কোনো কথাবার্তা হয়নি। এর পরপরই হোয়াইট হাউজ এক বিবৃতিতে জানাল ‘ভুল হয়ে গেছে’ টেলিফোনে নয়; কয়েক সপ্তাহ আগে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে তাদের মধ্যে এ বিষয়ে কথা হয়। এই সংশোধনী দেয়ার পর মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট নতুন করে যদি জানান, ওই সম্মেলনে ট্রাম্পের সাথে তার কোনো কথা হয়নি। তখন হয়ত ট্রাম্পের অফিস একটু অগ্রসর হয়ে বলবে মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট বিস্মৃতপ্রবণ, তিনি ভুলে যান।
বয়স্কাউটের এক জমায়েতে ট্রাম্প রাজনৈতিক বক্তব্য দেন। এর আগে কোনো আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বয়স্কাউটের সম্মেলনে এমন রাজনৈতিক বক্তব্য রাখেননি। নিয়ম ভঙ্গের জন্য স্কাউটের পক্ষ থেকে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক প্লাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার হয়ে যাওয়ায় এক বিবৃতিতে সংগঠনটির পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। বিষয়টি আরো অস্বাভাবিক হয়ে যায় ট্রাম্প যখন বাড়তি ক্রেডিট নিতে গেলেন। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সাথে এক সাক্ষৎকারে ট্রাম্প দাবি করেন, বয়স্কাউটদের প্রধান ফোনে তাকে জানিয়েছেন, তার সে ভাষণ ছিল ইতিহাস সেরা। এরপর সংগঠনটির মুখপাত্র জানান, এ রকম কোনো টেলিফোন তাদের কেউ করেননি। আবারো হোয়াইট হাউজ বিবৃতি দিলো, টেলিফোনে নয়; মুখে মুখে অনেকে সে বক্তৃতার প্রশংসা করেছেন।
প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার রক্ষায় ট্রাম্প কতটা আন্তরিক সেটা ইতোমধ্যে প্রকাশ হয়ে পড়েছে। রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে ‘গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট’ ট্রাম্প আসলে সৎ কি না তাও প্রমাণ হয়ে গেছে। প্রায় প্রত্যেকটি ছুটি বা অবকাশ যাপনের সময় ট্রাম্প সমালোচনা করেছেন এর আগের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার। তার অবকাশ যাপনকে ইস্যু করে একটি রাজনৈতিক ফায়দা আদায়ের চেষ্টা তিনি অব্যাহতভাবে করে গেছেন। ২০১১ সালের ১৫ আগস্ট ট্রাম্প টুইট করেন, ‘গতকাল বারাক ওবামা গলফ খেলেছেন। এখন তিনি যাচ্ছেন ১০ দিনের ছুটি কাটাতে। কাজের দারুণ নৈতিকতা!’ ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে তিনি টুইট করেন, ‘ক্রিসমাসে গোয়েন্দাদের থেকে আলাদা হয়ে পরিবার নিয়ে প্রেসিডেন্ট ওবামা নিজের এলাকা হাওয়াই যাচ্ছেন ১৭ দিনের ছুটি কাটাতে। ’ প্রেসিডেন্ট ওবামা প্রথম আট মাসে অবকাশ কাটান ১৫ দিন। একই সময়ে ট্রাম্প অবকাশ কাটাচ্ছেন ৫৩ দিন।
২০১৪ সালের অক্টোবরে ট্রাম্প টুইট করেন, ‘সারা দেশ থেকে ছুটে আসা ব্যক্তিদের সাথে প্রেসিডেন্ট ওবামার ইবোলা মহামারী নিয়ে জরুরি বৈঠক করার কথা থাকলেও তিনি গলফ খেলার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন!’ ২০১৬ সালে নিজের নির্বাচনী প্রচারণার সময় বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট হলে গলফ খেলার মতো সময় আমার হাতে থাকবে না।’ গত শুক্রবার তিনি হোয়াইট হাউজ ছেড়ে অবকাশে গেছেন। ছুটির দিনগুলো কাটবে নিউজার্সিতে নিজেরই গলফ কাবে। এর মধ্যে এই গলফ কাবেই তার করা এক মন্তব্য নিয়ে তোলপাড় চলছে। ওই সময় কাবে তার সতীর্থদের বলেন, ‘হোয়াইট হাউজ একটি ভাগাড়’। তিনি এটিকে ‘রিয়েল ডাম্প’ বলে মন্তব্য করেছেন। ময়লা আবর্জনা ও পরিত্যক্ত জিনিস যেখানে ফেলা হয় তাকে ইংরেজিতে ডাম্প বলা হয়। ওই সময় তিনি এও মন্তব্য করেন যে, কাবের সদস্যারা তার কাছে ‘আপন’। এ ব্যাপারে একটি স্পোর্টস ম্যাগাজিনে এক দীর্ঘ নিবন্ধ ছাপা হয়েছে। কাকতালীয়ভাবে হোয়াইট হাউজে এখন ‘মেরামত’ কাজ চলছে। আর তিনি অবসর কাটাচ্ছেন নিজের গলফ কাবে। ওবামাকে তিনি যে জন্য দোষী সাব্যস্ত করছিলেন ঠিক সে কাজটি আরো বহুগুণে বেশি করে করছেন এই আমেরিকান প্রেসিডেন্ট।
নিজ দলের নেতাদের অনেকে তাকে ‘ধোঁকাবাজ’ বলে মন্তব্য করছেন। অ্যারিজোনা থেকে নির্বাচিত রিপাবলিকান সিনেটর জেফ ফেক রক্ষণশীলের বিবেক নামে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি বইতে ট্রাম্পকে ‘ধোঁকাবাজ’ ও ‘নকল রক্ষণশীল’ নামে অভিহিত করেছেন। ফেকের মতে, যে অর্থনৈতিক মূল্যবোধ ট্রাম্প প্রচার করেছেন তার ফলে আমেরিকা ও বিশ্বের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। বার বার টুইট করার বদলে দেশ শাসনে মন দিতে ট্রাম্পকে তিনি পরামর্শ দিয়েছেন। ট্রাম্প স্বাদেশিকতার জিগির তুলে ভোটারদের কাছে টেনেছেন। সেখানে গণতন্ত্র গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় ছিল না। তিনি নিজে এই ব্যবস্থাটির সুযোগ নিয়েছেন শুধু নির্বাচিত হওয়ার জন্য। তার কাছে গণতন্ত্র স্রেফ এতটুকু প্রয়োজন। তাই তার পররাষ্ট্র নীতিতে গণতন্ত্র বাদ যাচ্ছে। বাংলাদেশের একটি ইংরেজি পত্রিকা এ ব্যাপারে ‘ডেমোক্র্যাসি’ নট ইন মেনু’ শিরোনামে স্টেট ডিপার্টমেন্টের নতুন মনোভঙ্গির খবরটি ছেপেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রবিষয়ক কার্যক্রম পরিচালনা করে স্টেট ডিপার্টমেন্ট। বিদেশের সাথে চুক্তি সমঝোতা করা হয় এই বিভাগের পক্ষ থেকে। সাধারণত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হিসেবে বিভিন্ন দেশের পরিচিত বিভাগটিকে যুক্তরাষ্ট্রে স্টেট ডিপার্টমেন্ট নাম দেয়া হয়েছে। আমেরিকার হয়ে বিশ্ব নেতৃত্ব করায়ত্ত করার মূল কারিগর এ বিভাগ। বিগত অর্ধশতাব্দী ধরে এটি বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আলোচিত। হোয়াইট হাউজের পাশেই ওয়াশিংটনে এর সদর দফতর। অনেক দেশের ভাগ্য নির্ধারণে বিগত দিনে এই বিভাগ ভূমিকা রেখেছে। কোন দেশ কারা শাসন করবে, নেতা কে হবেন, ঠিক করে দিয়েছে তারা। যুক্তরাষ্ট্রের বিপুল সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তি এ কাজে ব্যয় হয়েছে। এই কাজ করতে গিয়ে দেশে দেশে সামরিক অভ্যুত্থান, হত্যা, খুন ও গুমের ঘটনাও ঘটেছে। পরবর্তীকালে উন্মুক্ত করা তথ্যে এসব কর্মকাণ্ডের খবর বের হয়েছে। মূলত সোভিয়েত ব্লককে ঠেকানোর জন্য এমন অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড বিশ্বব্যাপী চালানো হয়েছে।
এসব কার্যক্রম ন্যায় হোক কি অন্যায় হোক, তারা গণতন্ত্রের নামে করেছে। গণতন্ত্রকে তারা আসলে একটা দেবতার স্থান নিয়ে গিয়েছে। তাই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অনেক কিছুই করা হয়েছে। এর একটা ইতিবাচক দিক ছিল এর নামে জঘন্য কোনো কর্মকাণ্ড প্রকাশ্যে চালানো যেত না। আড়ালে-আবডালে চলত। কারণ গণতন্ত্র মানে সাম্য মৈত্রী স্বাধীনতা মানবাধিকার। সুতরাং খারাপ কিছু এর নামে করা যায় না। ট্রাম্পের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন স্টেট ডিপার্টমেন্টকে নির্দেশ দিয়েছেন এর লক্ষ্য উদ্দেশ্যকে নতুন করে সাজানোর জন্য। প্রধান মিশনগুলো থেকে গণতন্ত্রকে বাদ রাখার জন্য। এ নিয়ে তৈরি খসড়া প্রস্তাবনার পর্যালোচনা চলছে। তাই আমেরিকার পরারাষ্ট্র নীতিতে গণতন্ত্র প্রমোশনের উল্লেখ আর থাকছে না। ‘গণতন্ত্র’ নামটিকেই মুছে দেয়া হচ্ছে।
স্টেট ডিপার্টমেন্টের নতুন লক্ষ হবে, নিরাপত্তা, উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও বিশ্বব্যাপী আমেরিকান জনগণের স্বার্থ উদ্ধার। এখন থেকে আমেরিকা নিরাপদ ও সৃমদ্ধশালী বিশ্ব গড়ার জন্য কাজ করবে। এই পরাষ্ট্রনীতি আসলে কেমন হবে তার নমুনা আফগানিস্তানে সব বোমার মা বোমা ফেলা এবং সিরিয়া ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের মাধ্যমে আন্দাজ করা যায়। আবার উত্তর কোরিয়ার উপর্যুপরি আস্ফালনের জবাবের মধ্যেও লক্ষ্য করা যায়। পরারাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন উত্তর কোরিয়ার প্রতি নমনীয় করেছেন গলা। তিনি জানিয়েছেন উত্তর কোরিয়ার সাথে তাদের শত্রুতা নেই।
আমেরিকার বর্তমান পরিস্থিতি দেখলে এটাই প্রতীয়মান হয়, গণতন্ত্র পরাস্ত হতে চলেছে। দেবতার আসনে অধিষ্ঠিত গণতন্ত্র পিছু হটছে। আমাদের মতো দুর্বল গণতন্ত্রের দেশের দিকে তাকালে এই ব্যবস্থা চর্চা কতটা উপকার এনে দিতে পেরেছে তার হিসাব করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি উচ্চ আদালত প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে একটি রায় দিতে গিয়ে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। তিনি ওই রায়ে মন্তব্য করেছেন, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দাম্ভিকতা দেখানোর ক্ষেত্রে বাধা দেয়ার মতো কোনো নজরদারি প্রতিষ্ঠান নেই। পূর্বপুরুষেরা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চেয়েছিলেন, ক্ষমতার দৈত্য জন্ম দিতে চাননি। তার এ মন্তব্য থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় সাম্য মৈত্রী ও মানবাধিকার এ দেশে কোন পর্যায়ে রয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের মন্তব্য চমৎকার। তারা বলছেন, একটি মামলার রায় দিতে গিয়ে অপ্রয়োজনীয় মন্তব্য করা হয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, আমাদের দেশে এখন গণতন্ত্র রক্ষার জন্য মানুষের ওপর অত্যাচার নির্যাতন এমন কি হত্যার ঘটনা ঘটছে। শাসকেরা গণতন্ত্র রক্ষার অজুহাত ব্যবহার করে ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করছে। এসব ক্ষেত্রে গণতন্ত্র জনগণের জন্য না হয়ে অনেকটাই যেন শাসকদের জন্য হয়ে গেছে। এই গণতন্ত্র মূলত গুটিকতক মানুষের লোভ-লালসা ও ক্ষমতা উপভোগের মাধ্যম হয়েছে। প্রধান বিচারপতির দেয়া পর্যবেক্ষণ অপ্রাসঙ্গিক বলে মন্তব্য করা হচ্ছে; কিন্তু সেটা সত্য কি মিথ্যা সে মন্তব্য করা হচ্ছে না।
jjshim146@yahoo.com

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/242751