৯ আগস্ট ২০১৭, বুধবার, ১০:৩৬

বিমানের হজ্ব ফ্লাইট বির্পযয়ের নেপথ্যে টিকিট সিন্ডিকেট

হজ্ব ফ্লাইটের বিপর্যয় এখনো কাটেনি। প্রায় প্রতিদিনই বাতিল হচ্ছে ফ্লাইট। যাত্রী সংকটের কারণে এ পর্যন্ত ২১টি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। তারমধ্যে বিমানের ১৭টি ও সৌদিয়া এয়ারের ৪টি ফ্লাইট। বিমানের ফ্লাইট বিপর্যয়ের নেপথ্যে টিকিট সিন্ডিকেটের কারসাজি রয়েছে বলে মনে করছে হজ্ব এজেন্সিগুলো। এদিকে হজ্বের আগেই সৌদি আরবে ৫জন হজযাত্রী ইন্তিকাল করেছেন।

সূত্রমতে, প্রতি বছরই হজ্বের সময় একশ্রেণীর অসাধু ট্রাভেল এজেন্সি টিকিট সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত টিকিট বুকিং দিয়ে টিকিটের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে হজ্ব এজেন্সিদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেয়। আর হ্জযাত্রী প্রস্তুত করেও ভিসা পায় না অনেক এজেন্সি। এবছর টিকিট বিক্রির শুরুতেই বাংলাদেশ বিমানের বরাদ্দকৃত সকল টিকিট মাত্র ১০৪টি এজেন্সিকে দিয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ হজ্ব কার্যক্রমে ৬ শতাধিক এজেন্সি অংশ নিয়েছে। ১২ জুলাইয়ের পর আর কাউকে টিকিট দেয়া হয়নি। বিমানের টিকিট বুকিং করে রেখেছে অথচ হজ্বযাত্রী প্রস্তুত করতে না পারায় বিমানের ফ্লাইট বাতিল করতে হচ্ছে। সুষ্ঠুভাবে সকল এজেন্সির কোটা অনুযায়ী বিমানের টিকিট বিক্রি করা হলে হজ্ব ফ্লাইটের এ ধরনের বিপর্যয় হতো না বলে মনে করছে এজেন্সিগুলো।
এ বিষয়ে হজ্ব এজেন্সিজ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) এর সাবেক মহাসচিব এম এ রশিদ শাহ স¤্রাট বলেন, বিমান ১২ জুলাইয়ের মধ্যেই ১০৪টি এজেন্সিকে সব টিকিট দিয়ে দিয়েছে। ১৩ তারিখ গিয়ে আমার এজেন্সি মক্কা ট্যুরসই বিমানের টিকিট পায়নি। বাধ্য হয়েই আমরা সৌদিয়ার টিকিট নিয়েছি। হজ্ব কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে ৬শতাধিক এজেন্সি, অথচ বিমান ১০৪টি এজেন্সিকে সব টিকিট দিয়ে দিয়েছে। এখন বিমানের ফ্লাইট বাতিল হচ্ছে কেন? ওই সকল এজেন্সি ও বিমানের কিছু কর্মকর্তারা এ জন্য দায়ী। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি দাবি জানান।
এ বিষয়ে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বলেন, আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি কিছু এজেন্সি বেশি ব্যবসা করার জন্য এমনটি করেছে। কিন্তু এসব অন্যায় বরদাস্ত করা হবে না। আগামী দুই দিনের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান হবে।
তিনি বলেন, একজন হজযাত্রীও পরে থাকবে না। সবাই হজ্বে যাবে। কিছু এজেন্সি সময় মত রিপোর্ট না করার কারণে এই সমস্যা হয়েছে। এ ধরনের ৪৮টি এজেন্সিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের কঠোর নির্দেশনা দিয়েছি। আগামী ১০ তারিখ পর্যন্ত তাদের সময় বেধে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে তারা সমস্যার সমাধান না করলে তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।
এদিকে যাত্রী সংকটের কারণে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের আরো তিনটি হজ্ব ফ্লাইট বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। এই নিয়ে মোট হজ্ব ফ্লাইট বাতিলের সংখ্যা দাড়ালো ২১টি। এই মধ্যে ১৭টি বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের আর বাকি ৪টি সৌদি এয়ারলাইন্সের।
এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ।
তিনি বলেন, 'ভিসা জটিলতায় যাত্রী সংকটের কারণে বাংলাদেশ ও সৌদি বিমানের হজ্ব ফ্লাইট বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত মোট ২১টি ফ্লাইট বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে গত শুক্রবারের দুটি ফ্লাইট রয়েছে যা আমরা সময় পরিবর্তন করেছিলাম। কিন্তু সে দুটিও বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিমান বাংলাদেশ সূত্রে জানা গেছে, ৮ আগস্ট মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা ২৫ মিনিটের (বিজি ১০৫১) ফ্লাইটটি বাতিল হয়েছে। তাছাড়া গত ৪ আগস্ট (শুক্রবার) যে দু’টি ফ্লাইট স্থগিত ঘোষণা ছিলো সেগুলোও বাতিল হয়েছে।
এছাড়াও, ৫ আগস্ট শনিবার সকাল ৮টা ৫৫ মিনিটের (বিজি-১০৩৭) ও গত ৩ আগস্ট বৃহস্পতিবার ভোর ৫টা ২৫মিনিটের (বিজি- ৩০৪১) ফ্লাইটি বাতিল করা হয়েছে। ২ আগস্ট বুধবার ভোর ৩টা ২৫মিনিটের (বিজি-৫০৩৩) ফ্লাইটটি বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। পহেলা আগস্ট মঙ্গলবার ভোর ৪টা ৫৫ মিনিটের (বিজি-৩০৩১), সকাল ৮টা ৫৫ মিনিটের (বিজি-৫০৩১), রাত ১১টা ৪৫মিনিটের (বিজি-৩০৩৩), রাত ১২টা ৫৫ মিনিটের (বিজি- ৭০৩১), রাত ১টা ২৫মিনিটের (বিজি- ১০৩১) এই ফ্লাইট চারটি বাতিল ঘোষণা করা হয়।
৩১ জুলাই সোমবার সকাল ১০টা ২৫ মিনিটের (বিজি- ৩০২৯) হজ্ব ফ্লাইট বাতিল করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। ৩০ জুলাই রোববার দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটের (বিজি- ১০২৭), রাত ১১টা ৫৫ মিনিটের (বিজি- ৫০২৭) হজ্ব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
২৯ জুলাই শরিবার সকাল ৬টা ৫৫ মিনিটের (বিজি- ৫০২৩), বিকেল ৫টা ৫৫ মিনিটের (বিজি- ১০২৫) হজ্ব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। গত ২৬ জুলাই বুধবার রাত ১১টা ২৫মিনিটের (বিজি- ৫০১৭) হজ্ব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
এর আগে শুক্রবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং সৌদি এয়ারলাইন্সের দুটি হজ্ব ফ্লাইট কম যাত্রী নিয়ে জেদ্দার উদ্দেশে রওনা দেয়।
প্রসঙ্গত, এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় মোট হজ্বযাত্রীর সংখ্যা ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। হজ্বযাত্রীদের সৌদি আরবে যাত্রার প্রথম ফ্লাইট পৌঁছে ২৪ জুলাই। শেষ ফ্লাইট ২৮ আগস্ট। ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে ৬ সেপ্টেম্বর ও শেষ ফিরতি ফ্লাইট ৫ অক্টোবর। এ বছর চাঁদ দেখা সাপেক্ষে হজ্ব অনুষ্ঠিত হবে ১ সেপ্টেম্বর।
অপরদিকে সৌদি আরবে ৫ জন হজ্ব যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন, বগুড়ার গাবতলী উপজেলার মো. আবদুস সামাদ (৬১), পাসপোর্ট নম্বর- বিএন ০৯৮৯০২১। গাইবান্ধা সদর উপজেলার ফুল মিয়া মণ্ডল (৬৩), পাসপোর্ট নম্বর- বিএন ০৪৯১৬৫৭, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার বাদশা হোসেন (৭৫), পাসপোর্ট নম্বর- বিএন ০৮৬৫৯০৯, ঢাকার বিল্লাল হোসেন, পাসপোর্ট নং - এজি ৪১৬৭৫৫৪, নাটোরের জাহাঙ্গীর কামাল, পাসপোর্ট নং- বিকে ০৩৯৩৬৩৯।

 

http://www.dailysangram.com/post/295301-