৯ আগস্ট ২০১৭, বুধবার, ১০:৩১

বগুড়ার সেই মেয়েটি রাজশাহীর সেফ হোমে

‘বন্দিজীবন চাইনি, এমন জানলে মামলা করতাম না’

বগুড়ায় ধর্ষণের শিকার ছাত্রীকে আদালতের নির্দেশে রাজশাহী মহানগরের সেফ হোমে এবং নির্যাতনের শিকার তার মাকে নগরীর ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে ডিবি কার্যালয় থেকে কঠোর নিরাপত্তায় মেয়েটিকে রাজশাহীতে পাঠানো হয়। এ সময় বারবার তাকে ভেজা চোখ মুছতে দেখা গেছে।
মেয়েটি প্রথম আলোকে বলেছে, হাসপাতালে ১১ দিন মা-মেয়ে একসঙ্গে ছিল। সোমবার রাতে মায়ের সঙ্গে ছিল ডিবি কার্যালয়ে। নির্যাতন-লাঞ্ছনার পরও মায়ের কাছাকাছি থাকায় মনে সাহস ছিল। কিন্তু এখন আলাদা থাকতে হবে, পরিবার ছেড়ে বন্দিজীবন কাটাতে হবে। এটা ভেবে তার কান্না পাচ্ছে। সে বলে, ‘নির্যাতনের শিকার হয়ে বিচার চেয়েছি। বন্দিজীবন চাইনি। এমন জানলে মামলা করতাম না। তার চেয়ে শহর ছেড়ে কোথাও চলে যেতাম। কেউ আমার কষ্ট বুঝত না। এখন আমার পড়াশোনার কী হবে? আমার কলেজে ভর্তির কী হবে? এভাবে সেফ হোমে বেশি দিন রাখলে দম বন্ধ হয়ে মরে যাব।’
প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানিয়ে সে বলে, ‘আমাকে বাঁচান। আমি মুক্তভাবে বাঁচতে চাই। পড়াশোনা করতে চাই।’
মেয়েটির মা বলেন, ‘মেয়েকে ছেড়ে একা থাকতে খুব কষ্ট হবে। মেয়েটা আমার কাছে থাকলে এত কষ্টের মধ্যেও শান্তি পেতাম।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বগুড়া সদর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আবুল কালাম আজাদ বলেন, মেয়েটিকে রাজশাহী মহানগরীর সেফ হোমে এবং তার মাকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
গত সোমবার বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে মা-মেয়েকে হাজির করা হয় বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-১ এবং শিশু আদালতের বিচারক ইমদাদুল হকের এজলাসে। এরপর দুজনের নিরাপত্তা হেফাজতের আবেদন করে পুলিশ। রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মো. আমানুল্লাহ মা-মেয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আবেদন করেন। কিন্তু মা-মেয়ে দুজনই পরিবারের কাছে যেতে চায়। এ পর্যায়ে আদালত মেয়েটির বাবার বক্তব্য শুনতে চান। মেয়েটির বাবা আদালতে হাজির হয়ে বলেন, তাঁর নিজের কোনো বাড়ি নেই। স্ত্রী-কন্যার নিরাপত্তা দিতে পারবেন না।
পরে আদালত মেয়েটিকে রাজশাহী সেফ হোমে এবং মাকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
গত ১৭ জুলাই মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন বগুড়ার শহর শ্রমিক লীগের নেতা তুফান সরকার। পরে ২৮ জুলাই তুফান সরকারের স্ত্রী আশা সরকার এবং তাঁর বড় বোন নারী কাউন্সিলর এবং তুফানের ক্যাডাররা নির্যাতন চালিয়ে মা-মেয়ের মাথা ন্যাড়া করে দেয়। এ ঘটনায় মা বাদী হয়ে ওই রাতেই মামলা করেন।

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1282201/