৯ আগস্ট ২০১৭, বুধবার, ১০:২৮

সাতরাস্তায় ফের ট্রাক রাজত্ব!

দুই বছর আগেও তেজগাঁও-সাতরাস্তা দিয়ে রাতের বেলা কেউ আসা যাওয়ার সাহস পেতেন না। কারণ সন্ধ্যার পর এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করলে পড়তে হতো ছিনতাইকারীদের কবলে। এমনকি মাঝেমধ্যে ছিঁচকে ছিনতাইকারী-মাদকসেবীরা দিনের বেলাও হানা দিতো পথচারী ও রিকশা যাত্রীদের ওপর। পরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক পৃষ্ঠা ৮ কলাম ১

জায়গাটি দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নেন। ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসের শেষ দিকে ট্রাক স্ট্যান্ডটি উদ্ধারে গিয়ে মালিক-শ্রমিকদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন মেয়র। পরে শক্ত অবস্থান নিয়ে তেজগাঁও সাতরাস্তা সড়কটি অবৈধ দখলমুক্ত করে সেটিকে দৃষ্টিনন্দন করার উদ্যোগ নেন মেয়র। এ উদ্যোগ বাস্তবায়নের পর বদলে যায় এ সড়কের চিত্র। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সড়কে যাতায়াতকারীরা প্রশংসা করেছেন সিটি করপোরেশনের উদ্যোগের। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে ফের তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড সংলগ্ন রেলগেট-সাতরাস্তা সড়কে আবার রাখা হচ্ছে গাড়ি। ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও পিকআপের দখলে চলে যাচ্ছে এই সড়কের দুই পাশ। গতকাল সরজমিন গিয়ে দেখা যায় ব্যস্ততম এই রাস্তার দুই পাশে ছোট-বড় ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান রাখা। কোথাও কোথাও দুই সারি করেও রাখা হয়েছে গাড়িগুলো। ফলে এই রাস্তার অর্ধেক দখল হয়ে গেছে। এবং পুনরায় সেই চিরচেনা রূপ আবার ফুটে উঠছে। প্রায় একশ’ ফুট প্রশস্ত এই সড়ক ধরে ফার্মগেট ও কারওয়ান বাজার এলাকা থেকে তেজগাঁও মহাখালী ও বনানীর দিকে যাওয়া যায়। গুলশান-নিকেতনে যাওয়ার সহজ রাস্তা এটি। এই রাস্তা ব্যবহার করে তেজগাঁও এলাকার তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়, একটি মেডিকেল কলেজ, জাতীয় নাক-কান-গলা ইনস্টিটিউট ও কয়েকটি গণমাধ্যমের প্রধান কার্যালয়সহ বহু সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যাওয়া-আসা করেন। এ ছাড়া সড়কটি ফার্মগেট ও তেজগাঁও এলাকার অন্তত ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের প্রধান সড়ক। কিন্তু উচ্ছেদের পর কিছুদিন এই রাস্তায় স্বস্তি ফিরলেও ধীরে ধীরে আবার এই এলাকা দিয়ে চলাচলকারীদের ভোগান্তি শুরু হয়ে যাচ্ছে। এই রাস্তা দিয়ে নিয়মিত চলাচলকারী তেতজুরী বাজার এলাকার বাসিন্দা হুমায়ুন আহমেদ জানান, মেয়র উচ্ছেদ করার পর কিছুদিন বেশ স্বস্তি ছিল। গত কয়েক মাস ধরে আবার রাস্তার দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে, কোথাও এলোমেলোভাবে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান রাখা হচ্ছে। সাতরাস্তা এলাকার আরেক বাসিন্দা আলম জানান, সারিবদ্ধভাবে যে ট্রাক-ভ্যান রাখা হচ্ছে তার আড়ালে কিছু মাদকসেবী মাদক সেবন করে। এছাড়া চালকরা ট্রাকের ভেতরে শুয়ে বসে সময় কাটায়। তবে চালকরা বিষয়টি মানতে নারাজ। তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রধান সড়কে রাখার বিষয়টি অস্বীকার করেন। শুধুমাত্র ভেতরে জায়গা না পেলে কিছুক্ষণের জন্য তারা রাস্তায় গাড়ি রাখেন বলে জানান। প্রধান সড়কে ছোট ট্রাক রেখে বিশ্রাম নেয়া অবস্থায় শহীদুল নামের এক চালক জানান, ট্রাক রাখার নির্ধারিত জায়গা না থাকার কারণে বাইরে গাড়ি রেখেছেন। তবে ভেতর থেকে কোনো গাড়ি বের হলে তখন সরিয়ে নেবেন। কাভার্ড ভ্যানের চালক আনিসুর রহমান জানান, দিনের বেলা কিছু ট্রাক-ভ্যান রাখা হয়। তবে রাতে কোনো গাড়ি এখানে রাখা হয় না।
বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান ড্রাইভার্স ইউনিয়নের সভাপতি তালুকদার মো. মনির জানান, মন্ত্রী এবং মেয়রের কড়া নির্দেশ আছে রাস্তার উপর কোনো গাড়ি রাখা যাবে না। এছাড়া রাস্তার পাশে সাইনবোর্ডে লেখা আছে রাস্তায় গাড়ি রাখলে ১ হাজার টাকা জরিমানা। তিনি জানান, যদি ভেতরে জায়গা পাওয়া না যায় তবে রাস্তার পাশে অনেকে গাড়ি রাখে। কিন্তু সেটা বেশি সময় না। এছাড়া যদি দিনের বেলা গাড়ি রাখে তাদের কে জরিমানা করা হয়। ইতোমধ্যে অনেক চালককে জরিমানা করা হয়েছে। এবং রাস্তায় গাড়ি রাখার জন্য বেশ কিছু গাড়ির গ্লাসও ভেঙে দেয়া হয়েছে। এরপরও কিছু চালক এবং বাইরে থেকে আসা নতুন কিছু চালক না বুঝে রাস্তায় গাড়ি রাখে। বাংলাদেশ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হুসেন আহমদ মজুমদার জানান, তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ডে ছোট বড় সব মিলিয়ে প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার গাড়ি আছে। কিন্তু এতো গাড়ির তুলনায় পার্কিং স্থান খুবই অল্প। তাই পার্কিং করার মতো পর্যাপ্ত স্থান না থাকার কারণে কিছু গাড়ি রাস্তার পাশে রাখা হয়। অনেক সময় রাস্তায় গাড়ি রেখে অনেক চালক অপেক্ষা করেন অন্য গাড়ি বের হলে পার্কিং করবেন। রাতের বেলা যেসব গাড়ি এখানে পার্কিং করে রাখা হয় সেগুলো বিভিন্ন স্থান থেকে পণ্য বোঝাই করে অফিস থেকে চালান এবং রাস্তায় খরচের টাকা নিতে এখানে এসে ভিড় করে। কিছুক্ষণ থাকার পর আবার চলে যায়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, অবৈধ পার্কিং উচ্ছেদে সিটি করপোরেশন নিয়মিত অভিযান চালিয়ে আসছে। সংশ্লিষ্ট থানাকে চিঠি দিয়ে অবৈধ পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা আছে। সড়ক পার্কিং মুক্ত রাখার দায়িত্ব ট্রাফিক পুলিশের। এক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে এই এলাকার দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট পান্না আক্তার বলেন, গাড়ি সাধারণত ওই সড়কে রাখা হয় না। যদি রাখা হয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ট্রাফিক সদস্যরা সরিয়ে দেন। ওই এলাকায় দুইজন কর্মকর্তা দিনে পালা করে দায়িত্ব পালন করেন।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=77901&cat=2/