৮ আগস্ট ২০১৭, মঙ্গলবার, ৫:১৮

ঘুরে বেড়ালেও আসামিরা পুলিশের খাতায় পলাতক

বিশ্বজিৎ হত্যা

বিশ্বজিৎ হত্যায় সাজাপ্রাপ্ত ছাত্রলীগ ক্যাডাররা গ্রেফতার হচ্ছে না। উচ্চ আদালত তাদের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন। কিন্তু দণ্ডপ্রাপ্তদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে কেউ কেউ রাজধানীতে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়। রাজনৈতিক বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগ দেয়। টেন্ডারবাজি করে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে। তবে তারা পুলিশের খাতায় পলাতক।
২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বরের ঘটনা। বিএনপি জোট আহূত অবরোধ কর্মসূচি চলাকালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় বিশ্বজিৎকে। প্রকাশ্য দিবালোকে ছাত্রলীগের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কিছু নেতাকর্মী এই ঘটনা ঘটায়। ঘটনার পরদিন সূত্রাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জালাল উদ্দিন বাদি হয়ে অজ্ঞাত ২০-২৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। দুর্বৃত্তরা শত শত লোকের চোখের সামনে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। মানুষ এই নির্মম ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে। বিভিন্ন মিডিয়ায় দুর্বৃত্তদের ছবি প্রকাশিত হয়। কিন্তু এরপরও পুলিশ তাদের নাম উল্লেখ না করেই এই মামলা করে। পরবর্তীতে তদন্তকারীরা আসামিদের ছবি ও ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্ত করেন। এই ঘটনায় ২০১৩ সালের ৫ মার্চ ছাত্রলীগের ২১ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক তাজুল ইসলাম। চার্জশিটে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মী রফিকুল ইসলাম সাকিল, মো: কাইয়ুম মিয়া টিপু, এইচ এম কিবরিয়া, রাশেদুজ্জামান শাওন, মাহফুজুর রহমান নাহিদ, আজিজুর রহমান, রাজন তালুকদার, ইউনুছ আলী, ওবায়দুল কাদের তাহসিন, আজিজুর রহমান, আলাউদ্দিন, ইমরান হোসেন, মোস্তফা, আল আমিন, সাইফুল ইসলাম, রফিক, আজিজুল হক, কামাল, পাভেল, এমদাদুল হক ও কামরুল হাসানকে অভিযুক্ত করা হয়। এরা সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। কেউ কেউ বিভিন্নপর্যায়ে ছাত্রলীগের পদ প্রত্যাশীও ছিল। চার্জশিট প্রদানের আগেই সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়। এরা হলো রফিকুল ইসলাম শাকিল, মাহফুজুর রহমান নাহিদ, রাশেদুজ্জামান শাওন, এইচ এম কিবরিয়া, কাইউম মিয়া টিপু, সাইফুল ইসলাম ও এমদাদুল হক। এদের মধ্যে মাহফুজুর রহমান, রফিকুল ইসলাম, রাশেদুজ্জামান ও এমদাদুল হক এমদাদ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী প্রদান করে। জবানবন্দীতেই তারা স্বীকার করে কিভাবে তারা বিশ্বজিৎকে হত্যা করেছে।
২০১৩ সালের ২ জুন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কারাগারে থাকা আটজন ও পলাতক অপর ১৩ আসামিসহ মোট ২১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। ওই দিনই পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। বিচারিক কার্য সম্পাদনের পরে ওই বছরের ১৮ ডিসেম্বর এই মামলায় আটজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং বাকি ১৩ জনকে যাবজ্জীবন সাজা প্রদান করা হয়।
এ দিকে উচ্চ আদালত আটজনের মধ্যে শাকিল ও রাজনের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন। ১৫ জনকে যাবজ্জীবন সাজা প্রদান করেন এবং চারজনকে খালাস প্রদান করেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই মামলায় রাজন তালুকদার, খন্দকার ইউনুস আলী, তারেক বিন জোহর ওরফে তমাল, আলাউদ্দিন, ওবায়দুল কাদের, ইমরান হোসেন, আজিজুর রহমান, মীর নূরে আলম লিমন, আল আমিন শেখ, রফিকুল ইসলাম, মনিরুল হক পাভেল, কামরুল হাসান ও মোশারফ হোসেন গ্রেফতার হয়নি। এদের মধ্যে কামরুল হাসান প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়ায়। কয়েক মাস আগেও সে এক সাংবাদিককে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। রাজধানীর মতিঝিল ও পল্টন এলাকায় প্রায়ই তাকে দেখা যায়। রাজন তালুকদার এখন কলকাতায় অবস্থান করছে বলে একাধিক সূত্র বলেছে। তবে প্রায় সে ঢাকায় আসে। তার বন্ধুদের কয়েকজন বলেছেন, রাজনকে মাঝে মধ্যে ফেসবুকে পাওয়া যায়। ইমরান, পাভেল ও আলাউদ্দিনসহ কয়েকজন পুরান ঢাকাতেই বসবাস করছে বলে জানা যায়। মাঝে মধ্যে তাদের ক্যাম্পাসের আশপাশেও দেখা যায় বলে একাধিক সূত্র জানায়। এরা নিয়মিত ছাত্রলীগের কয়েক শীর্ষ নেতার সাথে যোগাযোগ করে আসছে। রফিক ও আলাউদ্দিন গোপনে পরীক্ষা দিয়ে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অনেকে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশের খাতায় তারা পলাতক।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/242426