উচ্চ আদালতের রায়ের পর থেকেই বিশ্বজিতের পরিবার শুধু বিস্ময়ই প্রকাশ করেনি, তাদের কান্না আরো বেড়ে গেছে। মা কল্পনা রানী দাস বিশ^জিতের ভাস্কর্যের সামনে বিলাপ করেই চলছেন। বাবা অনন্ত দাস ছেলের স্মৃতিগুলো মনে করে কখনো ভাস্কর্যের সামনে আবার কখনো পূজো ঘরের সামনে গিয়ে নীরবে চোখের পানি ফেলছেন। তারা কোনোভাবেই উচ্চ আদালতের এ রায় মেনে নিতে পারছেন না।
বিশ^জিত দাস প্রতি বছর পূজায় বাড়ি আসত; কিন্তু গত পাঁচ বছর ধরে আর আসে না। বিশ^জিতের মা নিহত ছেলের ছবির এলবাম হাতে নিয়ে বিশ^জিতের ভাস্কর্যের কাছে দাঁড়িয়ে বিলাপ করতে করতে বলেন, পাঁচ বছর আগে বিশ^জিতকে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে, এটি দেশের সব মিডিয়ায় প্রচার হয়েছে। সবাই তা দেখেছে। আমরা বুক ভরা আশা নিয়ে খুনিদের ফাঁসির রায় দেখার জন্য পাঁচ বছর অপেক্ষা করেছি।
রোববার উচ্চ আদালত ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রফিকুল ইসলাম শাকিল ও রাজন তালুকদারের ফাঁসির রায় বহাল রাখে এবং মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চারজনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও দুইজনকে খালাস প্রদান করেন। নি¤œ আদালতে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ১৩ আসামির মধ্যে ১১ জনের ব্যাপারে আদালত কোনো মন্তব্য করেননি। আপিল করা দুই আসামিকে উচ্চ আদালত খালাস দিয়েছেন।
এ রায় ঘোষণা শোনার পর থেকেই বিশ^জিতের পরিবার হতাশ হয়ে পড়েছেন। এ রায় তারা মানেন না। তারা সরকারের কাছে সঠিক বিচার পাওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেন, নি¤œ আদালতের রায় বহাল রেখে বিশ^জিতের খুনিদের ফাঁসি দেয়া হোক।
বিশ^জিতের বাবা অনন্ত দাস ছেলের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, বিশ^জিত বাড়ি থেকে শেষবারের জন্য যায় নিহত হওয়ার এক সপ্তাহ আগে। যাওয়ার সময় বিশ^জিতকে ডেকে বলছিলাম বাবা আমার শরীরটা বেশি ভালো না। আবার এসে আমাকে দেখবি কি না জানি না। তুই ভালোভাবে চলা ফেরা করিস। এর এক সপ্তাহ পরেই বিশ^জিত আমাদের সবাইকে রেখে না ফেরার দেশে চলে গেল। অথচ আমি আজো বেঁচে আছি। এ কথা বলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
তিনি আরো বলেন, বিশ^জিত বাড়ি এলে তার বন্ধু- বান্ধবরা এসে ভিড় জমাতো। ছোট ছোট ছেলে মেয়েদেরকে চকোলেট কিনে দিয়ে ওদের সাথে আনন্দ করত। বিশ^জিত ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলা পছন্দ করত। সে বাড়ি এসে একটুও স্থির থাকত না। সব সময় বন্ধুদের নিয়ে খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকত। তিনি সরকারের কাছে নি¤œ আদালতের রায় বহাল রেখে বিশ^জিতের খুনিদের ফাঁসি দেয়ার দাবি করেছেন।