যাত্রাবাড়ীতে যানজটের এ দৃশ্য নিত্যনৈমিত্তিক। ছবিটি গতকাল দুপুরে তোলা : নয়া দিগন্ত
৮ আগস্ট ২০১৭, মঙ্গলবার, ৫:১৫

খোঁড়াখুঁড়ির ধীরগতি

ভয়াবহ যানজট যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের প্রবেশপথে

রাস্তার দক্ষিণ পাশে চলছে ড্রেন নির্মাণকাজ। পাশেই মাটি আর ভাঙা ইট-পাথর স্তূপ করে রাখা। আর তার পাশ দিয়েই হেঁটে দনিয়ার দিকে যাচ্ছিলেন এক পথচারী। হঠাৎ থমকে দাঁড়ালেন তিনি। একটি যাত্রীবাহী বাসের চাকা খাদে পড়লে কাদাপানি ছিটকে পড়ে ওই পথচারীর গায়ে। গতকাল বেলা ১২টা ৫০ মিনিটে কাজলা মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের প্রবেশপথে এ ঘটনা ঘটে।
সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ওই প্রবেশমুখ থেকে যাত্রাবাড়ীতে ঢুকতে প্রতি ৫ মিনিটে তিনটি গাড়ি অতিক্রম করছে। কিন্তু মিনিটে ওই প্রবেশমুখে এসে দাঁড়িয়ে যায় বেশ কিছু যানবাহন। এর মধ্যে চালকদের আগে যাওয়ার প্রবণতা তো আছেই। ফলে সৃষ্টি হয় যানবাহনের জটলা, যা বেলা ১টা ২০ মিনিটে শনিরআখড়া পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছায়। বিড়ম্বনা ও ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রী সাধারণকে। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয় রোগীবহনকারী পরিবহন ও স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের। গতকাল সরেজমিন কাজলার প্রবেশমুখে এমন অবস্থা দেখা গেছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দুই কারণেই মূলত এই প্রবেশমুখে যানজটের সৃষ্টি হয়। প্রথমত সরু খানাখন্দে ভরা রাস্তা, দ্বিতীয়ত রায়েরবাগ থেকে কাজলা পর্যন্ত গাড়িগুলো লেন পরিবর্তন করার কারণে যানজট লেগেই থাকে। অর্থাৎ ফ্লাইওভারে ওঠার গাড়িগুলো দক্ষিণ পার্শ্বে এবং নিচ থেকে চলাচল করা গাড়িগুলো উত্তর পার্শ্বে বার বার লেন পরিবর্তেন করে। এতে কাজলার ওই প্রবেশমুখের সরু রাস্তায় ঢুকলেই জটলার সৃষ্টি হয়।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের গেটের দুই পাশে কাজলা ও দক্ষিণ কুতুবখালী সড়ক সংস্কারে দীর্ঘ দিন ধরে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। সড়কের পাশে ড্রেন নির্মাণের কাজও চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। সরু এ সড়ক খানাখন্দে ভরা। ঠিকাদারের স্বেচ্ছাচারিতায় সড়ক সংস্কার ও ড্রেন নির্মাণকাজে গতি নেই। ফলে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট।
বিকল্প রাস্তা না থাকায় খাদ-গর্তের মধ্য দিয়েই বিপজ্জনকভাবে চলাচল করে ৩৮ রুটের বাস, ট্রাক, ট্যাংকলরি, কাভার্ড ভ্যানসহ সব ধরনের যানবাহন। যত্রতত্র আটকে পড়ে গাড়ি, যান চলাচলের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাও সেখানে অকার্যকর। রাস্তাঘেঁষা ফাঁকা জায়গায় আরো আগেই অস্থায়ী দোকানপাট বসিয়ে দখল করা হয়ে গেছে। ভুক্তভোগীদের মতে সময়মতো সংস্কার না হওয়া এবং যানচলাচলে চরম বিশৃঙ্খলার কারণে অভিশপ্ত সড়কে পরিণত হয়েছে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের সড়ক। ট্রাফিক পুলিশ বলছে, দুই পাশের রাস্তা মেরামত না হওয়া পর্যন্ত এ পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব নয়। রাস্তা সংস্কার ও ড্রেন নির্মাণ শেষ হলেই এই পথে আর যানজট থাকবে না বলে জানিয়েছেন ট্রাফিক পুলিশের ডেমরা জোনের এসি আলী আকবর শরীফ।
তিনি বলেন, ওই প্রবেশপথ থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত সড়কটি এমনিই সরু তার মধ্যে খানাখন্দ। তা ছাড়া দুই পাশের রাস্তা কেটে রাখা হয়েছে। বৃষ্টির জন্য একটু কাজ করে আবার করে না। এই অবস্থা চলছে দীর্ঘ দিন ধরে। সরেজমিনে দেখা গেছে, মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের দক্ষিণ পাশের রাস্তার যাত্রাবাড়ী থেকে কাজলার দিকে কিছু দূরে ড্রেনের কাজ শেষ হলেও রাস্তার ওপর থেকে মাটি ও ইট-পাথর এবং রড সরানো হয়নি। এ ছাড়া রসূলপুর আবাসিক এলাকার ১ নম্বর গেট থেকে উত্তর দনিয়া ৩০৬ নম্বর ভূঁইয়া কমপ্লেক্স পর্যন্ত কাজ চলছে ধীরগতিতে। ফ্লাইওভার গেট ও টোল প্লাজার দুই পাশে কাজলা ও দক্ষিণ কুতুবখালী এলাকার রাস্তাটি এমনিতেই সরু ও খানাখন্দে ভরা। আর এ সরু সড়ক সংস্কার ও পয়ঃনিষ্কাশনের ড্রেন নির্মাণের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি চলছে মন্থরগতিতে। এ ছাড়াও রাস্তার পাশেই মাটি আর ইটপাথর স্তূপ স্তূপ করে রাখা। ফলে খানাখন্দে ভরা এক লেনের পথ দিয়ে এক লাইনে চলছে বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কার, পিকআপ, পণ্যবাহী গাড়িসহ সব ধরনের যানবাহন। গতকাল ওই প্রবেশপথে দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে দেখা গেছে গড়ে প্রতি ৫ মিনিটে তিনটি গাড়ি যাত্রাবাড়ীর দিকে ঢুকতে পারছে। তাতে ঘণ্টায় যাত্রাবাড়ীর দিকে গাড়ি ঢুকতে পারে মাত্র ৩৬টি। অথচ ঘণ্টায় ওই প্রবেশমুখে যাত্রাবাড়ী ঢুকতে হাজির হয় কয়েক শ’ গাড়ি।
এ দিকে খানাখন্দের কারণে এক লাইনের সড়কে গতি কমিয়ে চালাতে হয় যানবাহন। সড়কের গর্তের মধ্যে যানবাহন পড়ে যন্ত্রাংশ ভেঙে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এতে করে যান চলাচল বন্ধ হয়ে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। ফ্লাইওভার গেটের দু’পাশ দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে ফ্লাইওভার দিয়ে চলাচলকারী যানবাহনও আটকা পড়ে। এতে যানজট আরো তীব্র হয়। এর মধ্যেই রয়েছে দেশের বৃহত্তম যাত্রাবাড়ীর মাছের আড়ত ও কাঁচা বাজার। ড্রেনের ময়লা পানি সড়কে এসে পড়ছে। দুর্গন্ধে চলাচলকারীদের দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম। নাকে-মুখে কাপড় দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয় গাড়িতে।
গতকাল বেলা দেড়টার দিকে দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সামনের রাস্তায় যানজটে পড়া সিএনজি চালক ইস্রাফিল জানান, সকালে গুলিস্তান থেকে সাইনবোর্ডের দিকে গিয়েছি কিন্তু তখন জ্যাম ছিল না। এখন শনিরআখড়া থেকে ২৫ মিনিটে এ পর্যন্ত এসে পৌঁছেছি। জ্যাম না থাকলে আসতে হয়তো এক মিনিটও লাগত না।
কাজলার বাসিন্দা আলম সিকদার জানান, যানজটে রাস্তা শুকনা থাকলে পায়ে হেঁটে যাত্রাবাড়ী মোড়ে যাওয়া যায়। কিন্তু বৃষ্টিতে হাঁটুপানি হয়ে যায়। রাস্তার দুই পাশে পাইকারি শাকসবজির ও মাছের বাজারের মাছের পচা পানি ও ড্রেনের পানি একাকার হয়ে যায়। তাই হাঁটা যায় না। অনেক সময় বাধ্য হয়ে হাঁটতে গেলেও দ্রুতগতিতে গাড়ি চলাচলের কারণে পচাপানি কাদাপানি ছিটকে এসে শরীর ভিজে যায়।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/242421