৮ আগস্ট ২০১৭, মঙ্গলবার, ৫:১৩

১০ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ দুর্ভোগে মিরপুরবাসী

ফিরোজা খাতুন একজন গৃহিণী। স্বামী-সন্তান নিয়ে বসবাস করেন মিরপুরের রূপনগর আবাসিক এলাকায়। সকালে ভাত তরকারি চুলায় দিয়ে দুই ছেলে মেয়েকে স্কুলে পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এর মাঝে ভাতের চুলায় বারবার পরখ করছেন রান্না হয়েছে কিনা। ভাত, তরকারি প্রায় অর্ধেক সিদ্ধ হয়েছে এমন সময় দেখেন গ্যাসের চুলা নিভে গেছে। প্রথমে ভাবছিলেন হয়ত বাতাসে চুলা বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু ভালোভাবে খেয়াল করে দেখেন পাইপলাইনেই গ্যাস নেই। ছেলেমেয়েদের খাবারের জোগাড় করতে ছোটেন হোটেলে। কিন্তু হোটেলেও দেখেন দীর্ঘ লাইন। আরেক হোটেলেও গিয়ে দেখেন একই অবস্থা। অবশেষে প্রায় ঘণ্টা খানেক লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে রুটি আর তরকারি এনে ছেলেমেয়েকে খাওয়ান ও নিজে খান। ফিরোজা বেগম জানান, গ্যাস বন্ধ থাকবে এমন সংবাদ আগে জানতে না পারায় তিনি গতকাল চরম দুর্ভোগে পড়েন। একদিকে ছেলেমেয়েকে স্কুলে পাঠাতে পারেননি, পাশাপাশি অর্ধেক সিদ্ধ ভাত তরকারি নষ্ট হয়ে গেছে।
ফিরোজা খাতুনের মতো গতকাল মিরপুর ও এর আশপাশের এলাকার অনেকেই এ দুর্ভোগে পড়েন। জানা গেছে, মেট্রোরেলের কাজের জন্য গতকাল মিরপুর এলাকায় ১০ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। আগের দিন এ সংবাদ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করা হয়। কিন্তু অনেকেই ব্যস্ততার মধ্যে তা খেয়াল করেননি। ফলে এক টানা ১০ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকার দুর্ভোগ পোহান অনেকেই।
তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, মেট্রোরেলের কাজ চলার কারণে গতকাল সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মিরপুর ও এর আশপাশের কিছু এলাকায় গ্যাস থাকবে না। গ্যাস সরবরাহ বন্ধ ছিল এমন এলাকার মধ্যে মিরপুর ১, ২, ৬, ৭, ১০, ১১, ১২, ইস্টার্ন হাউজিং, রূপনগর, আরামবাগ, আলোকদি, ক্যান্টনমেন্ট ও এর আশপাশের এলাকা। এ সময় এসব এলাকার আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্পকারখানা ও সিএনজি স্টেশনে সরবরাহ ব্যাহত হবে।
রাজধানীরবাসীর কাছে বিদ্যুৎ সঙ্কটের পাশাপাশি গ্যাস সঙ্কট যেন অনেকটা সহনীয় ঘটনা। কিন্তু কিছু কিছু সঙ্কট যখন অস্বাভাবিক আকার ধারণ করে তখন তা অসহনীয় পর্যায়ে চলে যায়। রাজধানীর বলা চলে প্রাণকেন্দ্র্র মিরপুর ও এর আশপাশের এলাকার মানুষ গতকাল এক টানা ১০ ঘণ্টা গ্যাসবিহীন কাটানোর দুর্ভোগ এর আগে আর পড়েননি। কখনো গ্যাস, কখনো পানি, আবার কখনো বিদ্যুৎ না থাকার দুর্ভোগ পোহান। গত প্রায় দেড় বছর ধরে মেট্রোরেলের কাজের কারণে এ সঙ্কট আরো তীব্র আকার ধারণ করে।
মীরপুরের পীরের বাগ এলাকার হাসান আজাদ নামক এক বাসিন্দা নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, এমনিতেই এ এলাকায় গ্যাসের চাপ কম। এর ওপর গতকাল মেট্রোরেলের নামে ১০ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন তারা। সামর্থ্যবানরা রাইস কুকার, কেউ বা সিলিন্ডার দিয়ে রান্নার কাজ সেরেছেন। সমস্যায় পড়েছেন নি¤œœবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা। হোটেলগুলোতে দীর্ঘ লাইন। সবশ্রেণীর মানুষ হোটেলে ঝুঁকে পড়ায় খাবারের দামও বাড়িয়ে দেয় হোটেল মালিকেরা। প্রতিটি আটার রুটি যেখানে পাঁচ টাকা বিক্রি করা হয়, সেখানে গতকাল তা ১০ টাকায় বিক্রি হয়। ১০ টাকার ভাজি বিক্রি করা হয় ১৫ টাকা থেকে ২০ টাকা।
মীরপুর সাংবাদিক আবাসিক এলাকার হালিমা আক্তার নামক এক গৃহিণী বলেন, সব কিছু আয়োজন করে দুপুরে রান্না ঘরে যান। কিন্তু চুলায় গ্যাস না থাকায় তিনি রান্না করতে পারেননি। ফ্রিজে থাকা ঠাণ্ডা খাবার খেতে হয় তাদের। সবচেয়ে বেকায়দায় পড়েছেন তার শিশুসন্তানদের নিয়ে। শিশুকে বারবার খাবার দিতে হয়। কিন্তু পাইপ লাইনে গ্যাস না থাকায় বাচ্চার খাবারের অনেক কষ্ট হয়।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/242412