৮ আগস্ট ২০১৭, মঙ্গলবার, ৫:১১

পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেলেই জখম সিদ্দিকুরের চোখ

সাত পুলিশ দায়ী * ঘটনাস্থলে ছিলেন না এমন একজনের নাম প্রতিবেদনে!

শাহবাগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেল (কাঁদানে গ্যাস) তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সিদ্দিকুরের চোখে লেগেছে বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশের তদন্ত কমিটি। এ ঘটনায় সাত পুলিশ কর্মকর্তাকে দায়ী করে ডিএমপি কমিশনার বরাবর প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্ত কমিটি। কমিটির প্রধান ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার মীর রেজাউল আলম সোমবার প্রতিবেদন জমা দেন। প্রতিবেদনে দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।


রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার আশরাফুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। ডিএমপি কমিশনার স্যার দেশের বাইরে রয়েছেন। তিনি দেশে আসার পর এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানানো হবে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যুগান্তরকে জানান, গণমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেলেই সিদ্দিকুরের চোখে লেগেছে। এছাড়া দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা, ভুক্তভোগী ও ডাক্তারের সাক্ষাৎকারেও বিষয়টি উঠে এসেছে। তারা বলেন, ‘প্রতিবেদন তৈরির আগে ঘটনাস্থলে দায়িত্বপালনকারী বিভিন্ন পর্যায়ের ২০ জনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া ভুক্তভোগী সিদ্দিকুর রহমান ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে সাতজনের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে।’

প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘সংঘর্ষে পুলিশের কিছু সদস্য অতি উৎসাহী ও আক্রমণাত্মক হয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর টিয়ারশেল ছোড়েন। এ ঘটনায় শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু জাফর আলী বিশ্বাস ও পরিদর্শক (অভিযান) আবুল কালাম আজাদ ও কনস্টেবল সাইফুল ইসলামসহ সাত পুলিশের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে।’

সিদ্দিকুরের ওপর হামলার ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন- ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার মীর রেজাউল আলম (প্রধান), ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত উপকমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ ও রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) আশরাফুল আলম।

এ ঘটনায় পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রশাসন) নাবিদ কামাল শৈবালকে প্রধান করে আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি প্রতিবেদন প্রস্তুতের জন্য মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় চেয়েছে।

এদিকে আন্দোলনের সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন না এমন এক পুলিশ সদস্যের নাম তদন্ত প্রতিবেদনে এসেছে বলে জানা গেছে। ভিডিও ফুটেজেও ঘটনাস্থলে তার উপস্থিতির প্রমাণ মেলেনি। ওই সময়ে ওই কর্মকর্তা ছিলেন টিএসসি এলাকায়। ডিউটি রোস্টারেও তেমনটি দেখা গেছে।

উল্লেখ্য, ২০ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাতটি কলেজের শিক্ষার্থীদের শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পুলিশের-শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশের ছোড়া টিয়ারশেলে আহত হন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমান। এতে তার চোখে গুরুতর আঘাত লাগে। প্রথমে তাকে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইন্সটিটিউট এবং পরে সরকারি খরচে চেন্নাই পাঠানো হয়। সেখানে শংকর নেত্রালয়ে চিকিৎসাধীন সিদ্দিকুর। শুক্রবার তার অপারেশন করা হয়। শনিবার তার চোখের ব্যান্ডেজ খুললে বাম চোখে কিছুটা আলো দেখতে পান তিনি। তবে তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসেনি। তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসা না আসার ব্যাপারে আরও ২ মাস মন্তব্য করা যাবে না বলে জানিয়েছেন ভারতের চিকিৎসকরা।



http://www.jugantor.com/first-page/2017/08/08/146241/