৮ আগস্ট ২০১৭, মঙ্গলবার, ৩:২৬

পেঁয়াজে ঈদের ঝাঁজ

কেজিতে দাম বেড়েছে ১৬ টাকা

কোরবানির ঈদ সামনে রেখে দেশের ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে ঝাঁজ বাড়ছে পেঁয়াজের। গত সপ্তাহে পাইকারিতে আমদানি করা যে পেঁয়াজের দাম ছিল প্রতি কেজি ২২ থেকে ২৪ টাকা, বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৩৬ থেকে ৩৮ টাকায়। অর্থাৎ মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে কেজিতে প্রায় ১৬ টাকা। এর প্রভাব পড়েছে খুচরা পর্যায়েও। খুচরায় প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৪ টাকায়। এক সপ্তাহ আগেও এর দাম ছিল ২৮ থেকে ৩০ টাকা। নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ভোক্তারা। ভারতের বাজারে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি, বন্যায় ফলন কম হওয়া এবং সম্প্রতি খাতুনগঞ্জে জলাবদ্ধতার ফলে প্রচুর পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এর দাম বাড়ছে বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা।

স্বাভাবিক সময়ে খাতুনগঞ্জে প্রতিদিন প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ ট্রাক আমদানি করা পেঁয়াজ আসে। বর্তমানে তা নেমে এসেছে ৪০ থেকে ৫০ ট্রাকে। এর রফতানি মূল্যও কেজিপ্রতি ছয় রুপি বাড়িয়ে ২০ থেকে ২২ রুপি করা হয়েছে।

খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক

মুহাম্মদ জামাল হোসেন সমকালকে বলেন, 'বাজারে ভারত থেকে আসা পেঁয়াজের পরিমাণও বর্তমানে অনেক কমে গেছে। সেখানকার বাজারেও এর দাম বাড়ছে। অন্যদিকে জুলাই মাসে কয়েক দফা জলাবদ্ধতায় খাতুনগঞ্জের আড়তে মজুদ করে রাখা অধিকাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। পেঁয়াজের দামও তাই কয়েক গুণ বেড়েছে।' কাঁচামাল ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিসও বলেন, 'ভারতে অতিবৃষ্টি ও বন্যায় পেঁয়াজের একটি বড় অংশই নষ্ট হয়ে গেছে। এতে সেখানকার বাজারেই এর দাম বেড়েছে। রফতানি মূল্যও বেড়েছে। সরবরাহ স্বাভাবিক হলে দাম কমে আসবে।'

ব্যবসায়ীরা জানান, সরবরাহ অনেক বেশি থাকায় ফেব্রুয়ারি-এপ্রিলের দিকে খাতুনগঞ্জে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম একপর্যায়ে কমে সর্বনিম্ন ৮ থেকে ১০ টাকায় নেমে এসেছিল। গত সাত মাসে এ পেঁয়াজের দাম খাতুনগঞ্জে ১০ থেকে সর্বোচ্চ ২০ টাকা পর্যন্ত ছিল। অর্থাৎ আমদানি করা পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীলই ছিল। তবে চলতি মাসেই হঠাৎ এর দাম বেড়ে ৩৮ টাকা পর্যন্ত ঠেকেছে। বর্তমানে খাতুনগঞ্জে ভারতের নাসিক অঞ্চলের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৬ থেকে ৩৮ টাকায়। ভারতীয় ইন্দোর জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৩ থেকে ৩৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল কেজিপ্রতি ২০ থেকে ২২ টাকা।

খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজ বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স বারো আউলিয়ার ম্যানেজার রাজীব চৌধুরী সমকালকে বলেন, 'সপ্তাহের ব্যবধানে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ১৫ থেকে ১৬ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সরবরাহও অনেক কমেছে। শুনেছি, আগামী সপ্তাহে পাকিস্তান ও মিসর থেকে কিছু পেঁয়াজ আসবে। এতে বাজারের অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হবে।' খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজ বিক্রেতা গোপাল চৌধুরী বলেন, 'পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে না এলে আসন্ন কোরবানির ঈদে তা ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে।' চট্টগ্রাম নগরের কাজীর দেউড়ি, ফিরিঙ্গি, বক্সিরহাট, কর্ণফুলী, বহদ্দারহাটসহ আরও কয়েকটি খুচরা বাজার সরেজমিনে দেখা গেছে, ভারতীয় পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সদরঘাট থেকে ফিরিঙ্গি বাজারে আসা ক্রেতা সুবশ্রী দাশ বলেন, 'যে পেঁয়াজ গত সপ্তাহে ২০ টাকা কেজি দরে কিনেছি, তা কিনতে হচ্ছে ৪০ টাকায়। আমাদের মতো নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের চাহিদামতো বাজার করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।'

বিক্রেতা মো. ইমরুল বলেন, 'পাইকারিতে কয়েকদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। খুচরাতেও এর প্রভাব পড়েছে।' ক্যাবের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন সমকালকে বলেন, 'আইনগত জটিলতায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা না হওয়াও দাম বাড়ার আরেকটি কারণ। মনিটরিং কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে পেঁয়াজের দাম কমে আসবে।'

 

http://bangla.samakal.net/2017/08/08/315100