৮ আগস্ট ২০১৭, মঙ্গলবার, ৩:২৫

সড়কে চলা দায়

নিত্যদিন দুর্ঘটনা

গত ৫ আগস্ট রাজবাড়ী শহরের বিনোদপুর গ্রামের বাসিন্দা সরকারি কর্মকর্তা ফারুক উদ্দিন বিয়ে করতে যাচ্ছিলেন ফরিদপুর। বিয়ের মাইক্রোবাসের বহরটি সদর উপজেলার আলাদীপুর পার হওয়ার পর আটকে যায়। সেখানে একটি গাড়ি উল্টে গিয়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। উপায় না পেয়ে মাত্র তিন কিলোমিটার রাস্তা পার হওয়ার জন্য যানবাহনগুলোকে গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ১০ কিলোমিটার ঘুরতে হয়েছে। গাড়ি উল্টে পড়ার এমন ঘটনা নিত্যদিনের। দৌলতদিয়া-কুষ্টিয়া মহাসড়কের রাজবাড়ী সদর উপজেলার বিভিন্ন অংশের অবস্থা এতটাই খারাপ যে, তা আর যানবাহন চলাচলের উপযোগী নেই। বিকল্প পথ না থাকায় বাধ্য হয়ে এ সড়কে চলছে যানবাহন। ফলে যাত্রীসাধারণকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এ মহাসড়ক দিয়ে ঢাকা, ফরিদপুর, যশোর, বরিশাল, খুলনা, পাবনা, কুষ্টিয়ার বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করে থাকে। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে সড়কের এ বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। ফলে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পথচারী, যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের। সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ১০ চাকার ভারী যান চলার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ মহাসড়কটি পুনর্নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পযন্ত।

দৌলতদিয়া-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক এই মহাসড়কের রাজবাড়ী সদর উপজেলার গোয়ালন্দ মোড় থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত রাস্তার বিভিন্ন অংশের অবস্থা খুবই খারাপ। গোয়ালন্দ মোড় পার হতেই রাস্তার ভাঙন শুরু। আলাদীপুর, শ্রীপুর, কল্যাণপুর, ফেলুর দোকান এবং রাজবাড়ী শহরের বড়পুলের রাস্তায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে যানবাহন চালানোর কোনো উপায়ই নেই। বৃষ্টি এলেই পানি জমে যান চলাচল আরও কঠিন হয়ে পড়ে। ভাঙাচোরা রাস্তার কারণে প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। ভারসাম্য না রাখতে পারায় গাড়ি উল্টে মাঝে মধ্যেই খাদে পড়ছে। ঝাঁকুনিতে সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে যায়। বছর দেড়েক আগে দায়সারাভাবে সড়ক সংস্কার করা হলেও পরে আবার একই অবস্থার সৃষ্টি হওয়ায় মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে সংস্কার কাজের সঠিক মান নিয়েও। ভাঙাচোরা স্থানগুলোতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ ইট, বালু, খোয়া দিয়ে মেরামত করলেও দু'দিন পরই তা আবার ধসে যায়।

এ মহাসড়ক সংলগ্ন শহীদ ওহাবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তোরাপ আলী মণ্ডল জানান, গোয়ালন্দ মোড় থেকে ভাঙনের শুরু। এরপর রাজবাড়ী শহর পর্যন্ত ৯০ ভাগ রাস্তাই খারাপ। অসুস্থ রোগী বা সন্তানসম্ভবা মায়েদের এ রাস্তা দিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। রাজবাড়ী বাজার থেকে বড়পুল হয়ে নতুন বাজার পর্যন্ত এ মহাসড়কে নিয়মিত চলাচলকারী অটোরিকশা চালক জনি জানান, রাস্তার অবস্থা এতই খারাপ যে ভারসাম্য রাখাই কঠিন হয়ে পড়ে। কখন যে উল্টে পড়ে যায় এ ভয়ে থাকেন তিনি। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো গাড়ি উল্টে পড়ছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, সংস্কারের কিছুদিন পরই সড়কটি বেহাল দশায় পরিণত হয়। রাস্তা ভাঙাচোরা থাকার কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। তারা দ্রুত এই মহাসড়কটি যানবাহন চলাচলের উপযোগী করার দাবি জানিয়েছেন।

রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম ভাঙাচোরা রাস্তার কারণে জনগণের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে সমকালকে বলেন, ৬০ থেকে ১০০ টন ওজনের ১০ চাকার ভারী ট্রাক চলাচলের কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি একটি উন্নয়ন

প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় গোয়ালন্দ মোড় থেকে শিয়ালডাঙ্গী পর্যন্ত পুরো ৪৫ কিলোমিটার রাস্তা পুনর্নির্মাণ

করা হবে।

 

http://bangla.samakal.net/2017/08/08/314949