৮ আগস্ট ২০১৭, মঙ্গলবার, ৩:২১

চোখের সামনেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে চেনা জগৎ

এ কে এম শাহনাওয়াজ : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

অভিযোগটি অনেক পুরনো। একই সূত্রে অবক্ষয়ের ধারাটিও চলছে অনেক দিন থেকে। আমরা নিরীহ কলাম লেখকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করে বহুবার লিখেছি- লিখছি। বলেছি বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানচর্চা ও জ্ঞান সৃষ্টির চারণভূমি। মেধাবী শিক্ষক ছাড়া শিক্ষা ও গবেষণা মুখ থুবড়ে পড়বে। আমরা চৌকস মেধাবী শিক্ষার্থী তৈরি করতে পারব না। জ্ঞানচর্চার রাজ্যে অন্ধকার নেমে আসবে। কিন্তু অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। দিন দিন শুধু মন্দের দিকে গেছে পরিস্থিতি। পরে বুঝেছি এসব লেখাকে কেউ কেয়ার করবে না। কারণ শাসন করার তো কেউ নেই। সরকারের উচ্চতম পর্যায় পর্যন্ত প্রকৃত সত্যটি সবার জানা। বরঞ্চ এক ধরনের অনুমোদন দেয়া আছে। হাজার মেধাবী হলেও রাজনৈতিক আত্মীয়তা না মিললে শিক্ষক হিসেবে সে প্রার্থী অযোগ্য হয়ে যাবে মুহূর্তেই। নিজ দলের সমর্থক আর রূঢ়ভাবে বলতে গেলে দলীয় ক্যাডার একাডেমিক বা সার্টিফিকেটে যোগ্য না হলেও নির্বাচকমণ্ডলীর বিচারে শিক্ষক হওয়ার সার্টিফিকেট পেয়ে যাবে। এ শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র নয়- বাংলাদেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছবি।


তবে মানতে হবে, কাছে থেকে দেখা সত্যের সঙ্গে অনেক নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে। আমরা জেনে ও দেখে আসছি- বলা যায় বাস্তবতার কশাঘাতে এক রকম মেনেও নিয়েছি যে, ভালো ফলাফলই একমাত্র বা কোনো মাপকাঠিই নয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার। ক্ষমতাবান দলীয় শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ কেমন, উপাচার্যের দল তুষ্ট কিনা এসব নিশ্চিত হতে হবে। নিয়োগ পেলে ক্লাসে এ নবীন শিক্ষক কতটুকু ভূমিকা রাখবে সেটি বড় কথা নয়, ক্যাডারের সামর্থ্য প্রয়োগ করে উপাচার্য ও তার দলকে সুরক্ষা করতে পারবে কিনা এটিই হচ্ছে বড় বিবেচ্য বিষয়। তবে নির্বাচনে প্রথমকে বাদ দিয়ে ১৯তম প্রার্থীকে নিলেও প্রার্থীর আবেদন করার ন্যূনতম যোগ্যতা থাকত বলেই জানি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তান্তে দেখা গেল বিজ্ঞপ্তিতে দেয়া শর্ত পূরণ না করেও তেমন প্রার্থী শিক্ষক হয়ে গেছেন। এটি অভিনব। নতুন ধরনের স্খলন। সাধারণ নিয়ম হচ্ছে শর্তপূরণ না করলে প্রাথমিক নিরীক্ষায় তেমন আবেদনপত্র বাতিল হয়ে যায়। আবার কখনও কোনো কারণে নিরীক্ষকের চোখ এড়িয়ে গেলেও নির্বাচকমণ্ডলীর কাছে প্রার্থীর কাগজপত্র গেলে তারা দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং তা বাতিল হয়ে যায়। এখানে দেখা গেল পুরোটাই গোটা চক্রের সমন্বিত সহযোগিতাতেই হয়েছে। তেমন একজনকে শেষ পর্যন্ত মহামান্য আদালত অপসারণ করলেন।

দিন দুই আগে টিভি টকশোতে সাফাই গাইতে গিয়ে একজন সহকর্মী বললেন, ‘নির্বাচকমণ্ডলীর সামনে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট প্রার্থী কথাই বলতে পারেন না। তাহলে তাকে নিয়োগ দেবেন কেমন করে!’ হায়রে দুর্ভাগা ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট! আর চৌকস হয়ে যাচ্ছে দলীয় ক্যাডার ও ১৯তম ক্রমিকের প্রার্থী!

আরেকটি অবিশ্বাস্য ভয়ানক কাণ্ড ঘটেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি ছাড়াই নাকি একাধিক প্রার্থী ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ডের’ শিক্ষক হয়ে গেছেন। অবশ্য এরও জবাব এসেছে। ইঞ্জিনিয়ারিং বিদ্যা বলে স্নাতকোত্তর প্রার্থী পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে...। শুনে আমার জানতে ইচ্ছে হল, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ আইনে তা পারমিট করে কি? নয়তো বিভাগ, অনুষদ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডভান্স স্টাডিজ, একাডেমিক কমিটি এবং সবশেষে সিন্ডিকেটে ওই বিশেষ বিভাগের জন্য নতুন নিয়ম পাস করা হয়েছিল কিনা। না হলে তো নিয়োগটি অবৈধ হয়ে যায়।

প্রশ্ন তো আরও আছে। এ অশুভ রাজনীতির শাখা-প্রশাখা ইউজিসি পর্যন্ত কি ছড়িয়ে আছে? মাথার ওপর ইউজিসি থাকতে দুটি পদের জন্য বিজ্ঞাপন দিয়ে ৯ জন নিয়োগ পায় কেমন করে? আমার জানা মতে অমন নিয়োগ না দেয়ার ব্যাপারে ইউজিসির একটি নির্দেশনাও আছে। আমি জানি না এ ৯টি পদ ওই বিভাগে ছিল কিনা। যে কোনো ক্যাটাগরির যোগফলে ৯টি পদ থাকলে না হয় গোঁজামিল দিয়ে পদ পূরণ করা হল। তারপরও এটি স্বাভাবিক নিয়মের ব্যতিক্রম। এক্ষেত্রে ইউজিসির খবরদারি করার কথা। আর যদি পদ না থাকে, তাহলে পদ সৃষ্টি করতে হবে ইউজিসিকে। বিশেষ ক্ষেত্রে ঘটনাটি হজম করার জন্য ইউজিসি যদি তড়িঘড়ি পদ সৃষ্টি করে দেয় তবে এ প্রতিষ্ঠানটি গণমাধ্যম বা আইনি তদন্তের বাইরে থাকতে পারে না। অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা এত বড় আইনের লঙ্ঘন শুনিনি। জানি না তদন্ত করলে ঝুলি থেকে অমন কালো বিড়াল সব অঞ্চল থেকেই বেরোবে কিনা।

টকশোটিতে এরও জবানবন্দি দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে অনেক সময় কোনো বিভাগে শিক্ষক সংকট হয়ে যায়। নতুন করে বিজ্ঞাপন দেয়া সময় সাপেক্ষ, তাই...। তাহলে রেওয়াজ অনুযায়ী এক-আধ জন সুপারিশ পাওয়ার কথা। তাই বলে ২ জনের বিপরীতে ৯ জন! এমন কথা ক’জন শুনেছেন আমি জানি না।

স্থূলভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে কলঙ্কিত করা শুরু হয়েছে ১৯৯০-এর পর থেকে। ক্ষমতার রাজনীতির খপ্পরে পড়ে গেছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। রাজনৈতিক দলগুলো গণতন্ত্রকে দুর্বল করে দিয়েছে অনেক আগেই। মাঠে রাজনীতি করা প্রাজ্ঞ রাজনীতিকরা এখন অপাঙ্ক্তেয়। জনকল্যাণ করে জনগণের মনোরঞ্জনের মাধ্যমে নির্বাচনে জনসমর্থনে ক্ষমতায় আসবে তেমন আত্মবিশ্বসী এখন কোনো দলই নয়। তাই রুদ্রাক্ষের মালার মতো ‘জনগণ’ জপমালা কণ্ঠে নিয়ে অর্থ আর পেশিশক্তিকেই একমাত্র নির্বাচনে জেতার পথ বিবেচনা করছেন। তাই প্রকৃত রাজনীতিকরা সাইড লাইনে চলে গেলেন আর ব্রিফকেস বোঝাই টাকা নিয়ে দলে নাম লেখালেন ব্যবসায়ী ও আমলা। তারাই সাংসদ হতে থাকলেন। এ বাস্তবতায় বড় দলগুলো গণতন্ত্রের পথ ধরে সদর রাস্তায় হাঁটার সাহস হারিয়ে ফেলল। দলীয় শক্তি বৃদ্ধি এবং নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে ক্যাডারতন্ত্র গুরুত্ব পেল। আর এর অন্যতম চারণভূমি হিসেবে বেছে নিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। কাগজ-কলমে বলা হয় বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান। ব্যবহারিক ক্ষেত্রে পুরোটাই ফাঁকা বুলি। সরকারের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর প্রবল। বলা হয় ১৯৭৩-এর বিশ্বদ্যিালয়ের আইন দিয়ে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় চলে। কিন্তু যে কোনো পর্যায়ে নির্বাচন হলে (মাঝেমধ্যে দু-একটা ব্যতিক্রম বাদ দিলে) সবসময়েই সরকারসমর্থিত দল জেতে। এজন্য পরিকল্পনামাফিক প্রকৃত মেধাবী শিক্ষকের বদলে ভোটার শিক্ষক নিয়োগ হতে থাকে। যদি সামনে কোনো নির্বাচন থাকে আর অংকের হিসাবে ভোট ঘাটতি দেখা যায় তখন একটি পদের বিপরীতে অনেকজন নিয়োগ পেয়ে যায়। অথবা তাতেও ঝুঁকি থেকে গেলে রাতারাতি নতুন বিভাগ খোলা হয়। আর অতি জরুরি বিবেচনায় ৫ জন শিক্ষক নিয়োগ পান। হয়তো তখনও বিভাগের দফতরের জন্য কোনো ঘর পাওয়া যায়নি। শিক্ষকদের বসার কোনো জায়গা নেই। তাতেই বা কী!

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা চিন্তাভাবনা করে শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নির্বাচন করে নিয়োগ কমিটি গঠন করেন। প্রথমে বিবেচনা করা হয় মনোনীত শিক্ষক তার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত কিনা। দ্বিতীয় বিবেচনা থাকে উপাচার্য আর দলীয় শিক্ষকরা যে প্রার্থীকে শিক্ষক বানাতে চাইবেন তাতে যাতে নির্বাচকমণ্ডলী সায় দেন। সামান্য তদন্তেই এ সত্য স্পষ্ট করা যায়। দেখা যাবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরেফিরে কয়েকজন চেনামুখই সিলেকশন কমিটিতে থাকেন। এর যে ব্যতিক্রম হয় না তেমন নয়। মেরুদণ্ড সোজা, সর্বজনশ্রদ্ধেয় শিক্ষকও কোনো কোনো কমিটিতে থাকেন। তবে ব্যতিক্রম তো কখনও নিয়ম হতে পারে না।

এভাবেই রাজনৈতিক হীনস্বার্থে বিশ্ববিদ্যালগুলো জ্ঞানচর্চার তপোবনের পরিবর্তে ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে। এ সংকটটি ভিসি নিয়োগের রাজনীতিকরণ থেকে শুরু হয়েছে। একসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরকে আলাদা করে চেনাতে হতো না। নিজ পাণ্ডিত্যে আর ব্যক্তিতে সর্বজনমান্য ছিলেন তারা। অবশ্য এখন যারা ভিসি হন তারা যে পণ্ডিত নন তা বলতে চাচ্ছি না। তবে দেশবরেণ্যদের আর এ অঞ্চলে তেমন দেখা যায় না। ক্ষমতার ছাত্র রাজনীতি যখন থেকে সন্ত্রাস আর রাহাজানিতে আটকে গেল, তখন থেকে মেধাবী আর মননশীল ছাত্ররা রাজনীতিবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল। আবার দলীয় শিক্ষক-রাজনীতি যখন রাজনৈতিক নেতৃত্বের ‘হিজ মাস্টার্স ভয়েজ’ হয়ে যেতে থাকল তখন মেধাবী ব্যক্তিত্বসম্পন্ন শিক্ষকদের অনেকে দলীয় রাজনীতি থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে চাইলেন। এরা এ অপরাধে ক্যাম্পাসে সাধারণত অনেকটা কোণঠাসা ও একা হয়ে পড়েন।

দলীয় বা ভোটার নবীন শিক্ষকরা তল্পিবাহক হতে থাকলেন রাজনৈতিক গুরু শিক্ষকদের। এদের অনেকেই আর শিক্ষক হয়ে উঠতে পারলেন না। মেধা কর্ষণের অভাবে যেমন ক্লাসরুম ভীতি পেয়ে বসল, আবার দলীয় শিক্ষক-রাজনীতি ঠিক রাখতে গিয়ে সময় সংকটও দেখা দিল। তাই ক্রমেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকদের ক্লাস না নেয়া মহামারীর রূপ নিচ্ছে। একজন শিক্ষার্থী শিক্ষকের সবচেয়ে বড় মূল্যায়নকারী। ক্লাস ফাঁকি দেয়া শিক্ষকরা যখন শিক্ষার্থীদের সামনে মাথা উঁচু করে হেঁটে যান, দেখে আমি খুব বিস্মিত হই। সম্প্রতি কোনো এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ফাঁকি প্রসঙ্গ নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সত্য তুলে ধরেছিল। বিস্ময়ের বিষয় হচ্ছে এতে লজ্জিত হওয়ার বদলে অপমানিত হয়েছেন শিক্ষকরা। ছাত্রদের ওপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ব্যক্তিগত জরিপে দেখেছি, আমাদের যুগে যখন মেধা বিচার ছাড়া শিক্ষক হওয়ার অন্য কোনো পথ ছিল না, সেসময়ের শিক্ষকরা এবং এ পর্বে কপালগুণে রাজনৈতিক বিবেচনা ছাড়া এবং নিজ মেধায় যারা শিক্ষক হতে পেরেছেন, আনন্দের সঙ্গেই তারা ক্লাস নেন- গবেষণা করেন। আর নানা গলিপথে যারা শিক্ষক হয়েছেন তাদের অল্পসংখ্যক শিক্ষক হওয়ার চেষ্টা করেন। বাকিরা রাজনৈতিক ক্যাডারের মতো নানা সুযোগ-সুবিধার পেছনে ছুটতে থাকেন। ক্লাস তাদের টানে না। গবেষণা আর পড়াশোনোর সঙ্গে একটি শত্রুতার সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

খোদ প্রধান বিচারপতি বলেছেন, শিক্ষক নিয়োগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার ঐতিহ্য হারিয়েছে। কিন্তু এমন স্খলনের দায় কার? এক যুগেরও আগে আমি একটি হলের প্রভোস্টের দায়িত্ব পালন করেছিলাম। সে সময়ে কাগজে একটি কলাম লিখি। সেখানে বলেছিলাম, অনেকেই প্রশ্ন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই যে ছাত্রসংঘাত হয়, আপনারা কি তা বন্ধ করতে পারেন না? উত্তরে আমি বলি, না, পারি না। কারণ ক্ষমতার রাজনীতিতে যুক্ত ছাত্রদের নিয়ন্ত্রণের জাদুকাঠি এখন আর আমাদের হাতে নেই। রিমোট কন্ট্রোল ধরা আছে ক্যাম্পাসের বাইরে দলীয় রাজনীতিকদের হাতে। পুতুলকে নাচাবেন না থামাবেন তা তারাই ভালো জানেন। এখন অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। রাজনীতি, শিক্ষানীতি সবকিছুর রিমোট কন্ট্রোল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের ও ভেতরের রাজনীতিকদের হাতেই। ফলে এখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে তাকালে দেখা যাবে সরকারি দলের ছাত্র ছাড়া দাপুটে আর কোনো রাজনৈতিক দলের ছাত্রদের কোনো অস্তিত্ব নেই। ক্ষমতার বনিবনার দ্বন্দ্বে নীল দলের শিক্ষকরা যেমন দুই ভাগ হয়ে যান, তেমনি সরকারি দলের ছাত্ররাও আন্তঃদলীয় কোন্দলে জড়িয়ে পড়ে- মাথা ফাটাফাটি করে।

এসব বাস্তবতায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা ও গবেষণার অধোগতির দায় প্রায় পুরোটাই নিতে হবে ক্ষমতার পথে ছুটে চলা বা ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা দলীয় মানুষদের। হয়তো এসব করে তাদের রাজনৈতিক লাভ হয়; কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য ও একাডেমিক শৃঙ্খলা ধ্বংস হয়ে যায়। একটি দেশে উচ্চশিক্ষার এ অধঃপতন জাতিকে পঙ্গু করে দেবে। অসুস্থ রাজনীতি এভাবেই মেধাবী জনশক্তি তৈরির পথ বন্ধ করে দিচ্ছে। বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক অগ্রযাত্রার পথকে করছে বাধাগ্রস্ত। এ থেকে রক্ষা পেতে দায়িত্বশীল রাজনীতিকদেরই এগিয়ে আসতে হবে।

এ কে এম শাহনাওয়াজ : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

shahnaway7b@gmail.com

 

http://www.jugantor.com/sub-editorial/2017/08/08/146292/