৭ আগস্ট ২০১৭, সোমবার, ১১:২৩

২ হাজার কোটি টাকা পানিতে

চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র আরেফিন মিরপুরের মনিপুর স্কুলে পড়ে। তখন বেলা সাড়ে তিনটা। ছুটি হওয়ামাত্র স্কুল থেকে বেরোতেই বুকসমান পানি। ও একা না। সামনে-পেছনে আরও অনেক শিশু। মা-বাবা কোথায়? রোজ ভ্যানে করে পাইকপাড়ার বাসায় ফেরে আরেফিন। আজ ভ্যান আসেনি। রিকশাও নেই। বাসায় যাবে কী করে? স্কুলব্যাগ ভিজে গেছে। চোখ ভিজে আসে অনেক বাচ্চার। আরেফিনেরও।

৩ আগস্ট দুপুরে দেড় ঘণ্টার বৃষ্টিতে পানি জমে যায় ওই স্কুলের আশপাশে। ভোগান্তির বর্ণনা দেন আরেফিনের বাবা—স্টেডিয়াম এলাকা, আহমেদ নগর, পাইকপাড়া পুরো এলাকা দুই থেকে তিন ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। সাধারণত বাসায় ফিরতে লাগে আধঘণ্টা, লাগল দেড় ঘণ্টা।

২ আগস্ট বিকেল সোয়া চারটা। মাত্র আধঘণ্টার বৃষ্টি। ডুবে গেছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা। কাকরাইলে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের মাঠে প্রায় দুই ফুট পানি। প্রথম শ্রেণির ছাত্র রণবীর মায়ের সঙ্গে গোপীবাগের বাসায় ফিরবে। রিকশা নেই, থাকলেও যাবে না। ময়লা পানিতে দাঁড়িয়ে আছে রণবীর। অনেক কষ্টে উঠল ‘রংধনু’ বাসে, সঙ্গে মাও। না, দাঁড়ানোর মতো জায়গাও নেই। তা-ও যেতে হবে। জলজট আর যানজটে একাকার ঢাকা শহর। বাস চলছে না। অনেক কসরত করে রংধনু যখন ইত্তেফাকের মোড়ে পৌঁছাল, ঘড়িতে তখন রাত ৮টা বাজতে ১০ মিনিট বাকি। ১০ মিনিটের রাস্তা প্রায় তিন ঘণ্টা লাগল। রণবীরের মা বললেন, এ রকম দুর্ভোগ কারও যেন না হয়।

এসব গল্প নয়, বাস্তবতা। বন্যা নয়, বৃষ্টি হলেই ঢাকার স্কুলের শিশু শিক্ষার্থী আর অভিভাবকেরা দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। ২ আগস্টের ভোগান্তি নিয়ে আরেক শিশুর মা বললেন, সকালে তো স্কুলে যাওয়ার সময় বৃষ্টি ছিল না। কে জানে আধা ঘণ্টার বৃষ্টিতেই সব ডুবে যাবে। রাজধানীর পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থার এই হাল তাঁকে ক্ষুব্ধ করেছে। তাঁর প্রশ্ন, সরকার কি কিছুই করবে না?

প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরকার গত সাড়ে আট বছরে দুই হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে। আওয়ামী লীগের দুই সরকারের আমলে এই অর্থ খরচ হয়ে গেলেও বড় কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়নি। পাম্পস্টেশন, নর্দমা নির্মাণ ও মেরামত, খাল-বক্স কালভার্ট খনন ও পরিষ্কার করার মতো ছোটখাটো কাজে এই টাকা ব্যয় হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখা যাচ্ছে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর গত সাড়ে আট বছরে জলাবদ্ধতা দূর করতে তিনটি সংস্থা মোট ১ হাজার ৯৯৬ কোটি খরচ করে। এর মধ্যে ঢাকা ওয়াসা ৬১৮ কোটি, ঢাকা সিটি করপোরেশন (ভাগ হওয়ার আগে ও পরে) ১ হাজার ২৭০ কোটি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ১০৮ কোটি টাকা খরচ করে বলে সংস্থাগুলোর নথি থেকে জানা যায়।
এই অর্থ খরচ হলেও রাজধানীর জলাবদ্ধতা কমেনি, উল্টো বেড়েছে। মাঝারি মাত্রার বৃষ্টিতেই তলিয়ে যাচ্ছে ঢাকার বেশির ভাগ রাস্তাঘাট। সর্বশেষ ৩ আগস্ট বেলা সোয়া দুইটা থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টায় ১২৩ মিলিমিটার বৃষ্টিতে অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকা মতিঝিলেও প্রায় দুই ফুট পানি জমে। পানি ওঠে সচিবালয়েও। আগের দিন বেলা একটার দিকে আধা ঘণ্টার বৃষ্টিতেও একই চিত্র দেখা যায়। গত ২৬ জুলাই সকাল থেকে ৬ ঘণ্টায় ৫৬ মিলিমিটার বৃষ্টির পর নটর ডেম কলেজের সামনে কোমরপানি জমেছিল। পরদিন সকালেও পানি জমে ছিল ফকিরাপুল, বাসাবো মাঠ, টিকাটুলি কামরুন্নেসা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে, ডেমরার আমুলিয়া, পাইটি প্রভৃতি এলাকায়।
একটি নমুনা
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নিজস্ব বরাদ্দ থেকে হাটখোলা আনসার ক্যাম্প সড়ক ও পার্শ্ববর্তী গলিতে ২০১৫ সালে এবং এ বছর দুই দফায় নর্দমা নির্মাণ করা হয়। মোট খরচ ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা। ২ আগস্ট বিকেল সাড়ে চারটা থেকে আধা ঘণ্টার বৃষ্টি হয়। এর প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পর রাত সাড়ে আটটার দিকে ওই সড়কে গিয়ে দেখা যায়, হাঁটুসমান পানি। এলাকার দোকানপাটেও পানি। অনন্যা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর নামের একটি দোকানঘরে পানি আটকাতে আগেই ইট-সিমেন্টের পাকা বাঁধ দেওয়া হয়েছিল। এর ওপর দিয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। মালিক এরশাদ রহমান বলেন, এত টাকা খরচ করে কী লাভ হলো? গত এপ্রিল থেকে যতবারই ভারী বৃষ্টি হয়েছে, পানি জমে গেছে।
এক নজরে ছয়টি খাল
ঢাকা ওয়াসার পরিষ্কারকরণ কর্মসূচির তালিকায় ২২টি খাল ছিল। এতে খরচ করা হয়েছে প্রায় দুই কোটি টাকা। ৩ ও ৪ আগস্ট পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় গিয়ে কাছাকাছি চারটি খাল দেখে মনে হয়েছে, দীর্ঘদিন পরিষ্কার করা হয়নি। দেয়ালবেষ্টিত মান্ডা খাল ও জিরানি খাল যেন আবর্জনার ভাগাড়। বাসাবো খালে কচুরিপানা ভর্তি। মান্ডা খালটি কোথাও আবর্জনায় ভর্তি, কোথাও নিচু জায়গার সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। গড়ে উঠেছে দোকানপাট। মান্ডা সেতুর কাছে জিরানি, সেগুনবাগিচা, বাসাবো এবং মান্ডা খালের মোহনা চেনাই যায়নি।
মিরপুর মাজার রোডের পাশে কল্যাণপুর ‘চ’ খালের মাঝখানের অবস্থা চরের মতো। অথচ খালটি কিছুদিন আগেই খনন করা হয়েছে বলে ঢাকা ওয়াসার পরামর্শক এ কে এম শহীদউদ্দিন জানান। তাঁর দাবি, খালটি পরিষ্কার করা হলেও চারপাশের বাড়িঘর থেকে ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভরাট করা হয়েছে। এর আগে আদাবর এলাকায় রামচন্দ্রপুর খাল এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, খালের মধ্যে আবর্জনার স্তূপ। এমনকি বাঁধাই করা পাড়ও আবর্জনায় ঢাকা।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক পানি ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ মো. মুজিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি নিজে ঘুরে দেখেছেন। অনেক এলাকায় খালের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। খাল ছাড়াও ঢাকা শহরে পুকুরসহ যত সরকারি-বেসরকারি জলাধার ছিল, প্রায় সবই ভরাট হয়ে গেছে। খাল ও জলাধারগুলো রক্ষা করা গেলে হাতিরঝিলের মতোই ফল পাওয়া যেত।
ছোট কাজে শত শত কোটি টাকা খরচ করা হলেও ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের মতে, প্রয়োজনের তুলনায় খুব বেশি টাকা খরচ করা হয়নি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকায় জলজট কমাতে হলে আরও অনেক টাকা লাগবে। এবার বড় প্রকল্পে হাত দেওয়া হবে। খালগুলোকে সচল রাখতে ব্যক্তিমালিকানার জায়গা অধিগ্রহণ করে আড়াই শ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
বক্স কালভার্ট দিয়ে পানি যাচ্ছে না
পানিনিষ্কাশনে ঢাকা ওয়াসার ৩৭০ কিলোমিটার গভীর নর্দমা বা ড্রেনেজ লাইন রয়েছে। গত প্রায় আড়াই বছরে ওয়াসা নতুন কোনো নিষ্কাশন নর্দমা (স্টর্ম ড্রেনেজ লাইন) নির্মাণ করেনি। খাল রয়েছে ৮০ কিলোমিটার। বক্স কালভার্ট ১০ কিলোমিটার। ড্রেনেজ বিভাগের নথি থেকে জানা যায়, খাল, নর্দমা ও বক্স কালভার্ট পরিষ্কারে ২০০৯ সাল থেকে ঢাকা ওয়াসা সরকারের অনুন্নয়ন (রেকারিং) খাত থেকে পাঁচ কোটি করে টাকা পাচ্ছে। এবার পেয়েছে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে আরও ৪০ কোটি টাকা চেয়েছে। নিজ তহবিল থেকে খরচ করা হচ্ছে আরও ১৫ কোটি টাকা।
বক্স কালভার্টের ভেতরের আবর্জনা জমায় পানি যাচ্ছে না। আবর্জনা ও খাল পরিষ্কারের জন্য গত বছর প্রায় চার কোটি টাকায় এক্সকাভেটর ও গ্রেভার যন্ত্র কেনা হয়। গত বছরই সেগুনবাগিচা বক্স কালভার্ট থেকে ১৪ হাজার মেট্রিক টন আবর্জনা তোলা হয়। এ বছর জুলাই পর্যন্ত ৯ হাজার মেট্রিক টন আবর্জনা তোলা হয়। খরচ করা হয়েছে ৫০ লাখ টাকা। নগরের আরামবাগ, ফকিরাপুল, নয়াপল্টন, কাকরাইল, শান্তিনগর ও রাজারবাগ এলাকার নর্দমার পানি এই বক্স কালভার্ট পথে কমলাপুর জনপথ পাম্পস্টেশন পথে বালু নদীতে যায়। এপ্রিল থেকে ঢাকায় যেদিনই বৃষ্টি হচ্ছে, এসব এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা পানি জমে থাকতে দেখা যাচ্ছে। গত ১২ ও ২৬ জুলাই দুই দিনই দুপুরে মাঝারি আকারের বৃষ্টি হয়। বৃষ্টিতে এসব এলাকায় কোমরসমান পানি জমে। ফকিরাপুলে পরদিন সকাল পর্যন্ত পানি জমে থাকে।
নগরে ঢাকা ওয়াসার পাম্পস্টেশন রয়েছে তিনটি। এগুলোর মধ্যে রামপুরা পাম্পস্টেশন চালু হয় ২০১৫ সালে। চীনের সিএমসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির মাধ্যমে এটি স্থাপনে ১৩৩ কোটি টাকা খরচ হয়। গত বছরের জুনে ১০৫ কোটি টাকায় চালু হয় জনপথ (কমলাপুর) পাম্পস্টেশন। কল্যাণপুর পাম্পস্টেশন স্থাপিত হয় ১৯৯৩ সালে। ২০১০ সালে প্রায় ১০০ কোটি টাকায় এই পাম্পকে আরও শক্তিশালী করা হয়।
ভাগ হওয়ার পরও একই প্রকল্প উত্তর ও দক্ষিণে
ঢাকা সিটি করপোরেশন ভাগ হয় ২০১১ সালের ডিসেম্বরে। তার পরও একেকটি প্রকল্পের আওতায় সারা ঢাকাতেই নর্দমা নির্মাণ ও মেরামতকাজ হয়। ২০০৯ থেকে ’১৪ পর্যন্ত নিষ্কাশনকাজে খরচ হয়েছে ৪০৬ কোটি টাকা। যেসব এলাকায় নর্দমা নির্মাণ ও মেরামত হয় সেগুলো হচ্ছে—বিমানবন্দর সড়ক, মিরপুর, আমিনবাজার, মহাখালী ও পুরান ঢাকা, জয়কালী মন্দির, যাত্রাবাড়ী, ধোলাইখাল, মালিবাগ বাজার, মগবাজার, ধানমন্ডি ২৭ নম্বর, লালবাগ, কালুনগর, মিরপুরের কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, চিড়িয়াখানা রোড, নিকুঞ্জ-২, উত্তরা প্রভৃতি। কিন্তু প্রায় প্রতিটি এলাকাতেই জলাবদ্ধতা বেড়েছে।
ডিএসসিসি খরচ করে ৪১৪ কোটি টাকা
ভাগ হওয়ার পর দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নর্দমা নির্মাণ ও মেরামত বাবদ ৪১৪ কোটি টাকা খরচ করে। এর মধ্যে নিজস্ব তহবিল থেকে ২০১২ থেকে গত জুন পর্যন্ত ১৫৩ কোটি খরচ করা হয়। মেগা প্রকল্পের আওতায় নর্দমা নির্মাণে ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। পুরানাপল্টন, বিজয়নগর, কাকরাইল, শান্তিনগর, রাজারবাগ, মৌচাক, মালিবাগসহ আশপাশের এলাকা ১২ কিলোমিটার নর্দমা নির্মাণে খরচ হয়ে গেছে ৪৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া নর্দমা পরিষ্কারের জন্য ১৮ কোটি টাকায় দুটি যন্ত্রও কেনা হয়েছে। প্রায় আট মাস এসব এলাকায় নর্দমা নির্মাণকাজে চরম জনভোগান্তি চলছে। কিন্তু বৃষ্টি হলেই এসব এলাকায় পানি জমে।
এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলী ফরাজী শাহাবুদ্দীন আহমেদ বলেন, পুরো কাজ শেষ হলে গ্রিড চালু হবে। জলাবদ্ধতাও কমে যাবে।
২০১৪ সালের এপ্রিলে মেয়র নির্বাচনের পর জুন থেকে এ বছরের জুন পর্যন্ত দুই বছরে ডিএসসিসি খরচ করেছে ১৭৭ কোটি টাকা। বিভিন্ন প্রকল্পে নির্মাণ ও মেরামত করা হয় ২৩৯ কিলোমিটার নর্দমা। যাত্রাবাড়ী থেকে নারায়ণগঞ্জ অভিমুখী নর্দমা নির্মাণে ২০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।
জানতে চাইলে ডিএসসিসির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, পানিনিষ্কাশনের দায়িত্ব ওয়াসার হলেও জলাবদ্ধতা দূর করতে ডিএসসিসি অনেক নর্দমা তৈরি করেছে। চলমান রয়েছে এবং সামনে হবে ২৮০ কিলোমিটার নর্দমা নির্মাণ। পরিষ্কার হচ্ছে ৩০৯ কিলোমিটার নর্দমা।
উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)
নর্দমা নির্মাণ ও উন্নয়নকাজে ডিএনসিসি ৪৫০ কোটি টাকা খরচ করেছে। এর মধ্যে ‘গুলশান-বনানী-বারিধারা রাস্তাঘাট-ফুটপাত ও নর্দমা নির্মাণ ও মেরামত প্রকল্পের’ বাজেট ২০০ কোটি টাকা। এখানে ২৫ কিলোমিটার নর্দমা নির্মাণে প্রায় ৭০ কোটি টাকার কাজ হয়েছে। ‘উত্তরা রাস্তাঘাট-নর্দমা-ফুটপাত ও নর্দমা নির্মাণ ও মেরামত প্রকল্পে’ গত দুই বছরে ১২০ কোটি টাকা বাজেটের মধ্যে নর্দমা নির্মাণে প্রায় ৩০ কোটি টাকার কাজ হয়। মিরপুর-মোহাম্মদপুর-প্রগতি সরণি-বাড্ডা-রামপুরা ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা-নর্দমা-ফুটপাত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে (আইটিআইপি) ৯৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। এর মধ্যে ৫০০ কোটি টাকার কাজ চলছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার নর্দমা নির্মাণে ১০০ কোটি টাকার কাজ হয়েছে।
এ ছাড়া ২০১২ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত পাঁচ অর্থবছরে নিজস্ব তহবিল থেকে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার কাজ হয়েছে। এত টাকা খরচ হলেও বৃষ্টি হলেই প্রগতি সরণির কিছু অংশে, নর্দা ও আশপাশের এলাকায় তীব্র জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। নর্দমা নির্মাণ ও উন্নয়নকাজ হলেও মিরপুরের কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, ১০ নম্বর, ১৩ নম্বর সেকশন এলাকায় মাঝারি বৃষ্টিতেই পানি জমে অচলাবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে।
জানতে চাইলে ডিএনসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ কুদরতউল্লাহ এ বিষয়ে বলেন, বাস্তবে যত টাকার কাজ হয়েছে, তত টাকা এখনো পরিশোধ করা হয়নি। পরিকল্পিতভাবে কাজ করায় গুলশানে এবার জলাবদ্ধতা হচ্ছে না। প্রগতি সরণিতে তিন কিলোমিটার নর্দমা করা হয়েছে। তবে কুড়িল উড়ালসড়ক নির্মাণের কারণে পানি যাওয়ার পথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়ায় নর্দায় জলাবদ্ধতা হচ্ছে। রাজউক বলেছে, এ সমস্যার সমাধান করবে।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা বাঁধের ভেতরে জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য গত বছর থেকে ৫৫৮ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিলেও এখনো কাজ শুরু হয়নি। ঢাকা কেন্দ্রীয় অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী ফখরুল ইসলাম বলেন, কাজটি কে করবে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত হতে দেরি হয়। পরে ঠিক হয়েছে এর কাজ সেনাবাহিনী করবে।

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1280106/