সারা দেশে গত সাত মাসে বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছেন ১৮০ জন। আহত হয়েছেন কয়েক শ’। বিশেষজ্ঞদের মতে, বজ্রপাতের সময় খোলা জায়গা, মাঠে-ময়দানে ও বিলে চলাচলের সময় বেশির ভাগ মানুষ বজ্রপাতের কবলে পড়ছেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো: মোহসীনের ‘বজ্রপাতে প্রস্তুতি ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে করণীয়’ শীর্ষক গবেষণা প্রবন্ধে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, ২০১১ সাল থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছেন এক হাজার ২৫৫ জন। চলতি বছরের সাত মাসে বজ্রপাতে মারা গেছেন ১৭৭ জন। এর মধ্যে গত মাসে অর্থাৎ জুলাইয়ে ১৫ জন, জুনে ৪৬ জন, এপ্রিলে ৫০ জন, মে’তে ৫৩ জন ও মার্চে ১৩ জন। তবে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে বজ্রপাতে কেউ মারা যাননি।
যুগ্মসচিব মো: মোহসীন নয়া দিগন্তকে বলেন, পৃথিবীতে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় এক শ’ বার বজ্রপাত হয়। অর্থাৎ প্রতিদিন ৮০ লাখ বার বজ্রপাত হচ্ছে সারা বিশ্বে। সতর্কতা অবলম্বনের পাশাপাশি গণমাধ্যমে বজ্রপাতের ভয়াবহতা তুলে ধরার কারণে বাংলাদেশে গত বছরের চেয়ে মৃতের সংখ্যা একটু কমেছে। তিনি বলেন, গত বছর সারা দেশে বজ্রপাতে মারা যান ২০৫ জন। এর মধ্যে মে মাসের চার দিনেই ৮১ জন প্রাণ হারান। তবে এবার বজ্রপাতে মারা যাওয়ার সংখ্যা সামান্য কমার ব্যাপারে তিনি বলেন, সরকারের পাশাপাশি গণমাধ্যমে বজ্রপাত নিয়ে ব্যাপক প্রচারণায় জনগণ সচেতন হয়েছে, এ জন্য এবারের বজ্রপাতে প্রাণহানির সংখ্যা কমে এসেছে।
তবে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এ ফারুখ নয়া দিগন্তকে জানান, বাংলাদেশে বজ্রপাত নতুন কোনো বিষয় নয়। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ বজ্রপাতের ঝুঁকির মধ্যেই আছে বা বলা চলে এ ব্যাপারে বাংলাদেশ দুর্যোগপ্রবণ। তিনি বলেন, এ বছরও বজ্রপাতে প্রাণহানি শুরু হয়েছে এবং মে’র ১৪ দিনে প্রায় ১০ জন বজ্রপাতে মারা গেছেন। আবহাওয়া অধিদফতরের বরাত দিযে তিনি বলেন, বজ্রপাতের বার্ষিক ও মাসিক তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মোটামুটিভাবে সারা বছরই কমবেশি বজ্রপাত হলেও মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত অধিক হারে বজ্রপাত হয়ে থাকে। তিনি বলেন, ২০০০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ১৫১ দিনে ৪৬৮টি বজ্রপাত হয়েছে, যা ১৯৮৫ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত গড়ে ১৪৫ দিনে ৪৩৯টি বজ্রপাত অপেক্ষা বেশি।
সতর্কতা জরুরি
ড. এম এ ফারুখ বলেন, অস্থিতিশীল মেঘে বিদ্যমান ধনাত্মক ও ঋণাত্মক চার্জ থেকে বিদ্যুৎ সঞ্চালনকালে বজ্রের সৃষ্টি হয় যা প্রচুর ঝলকানি দিয়ে পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়ে। অতি উচ্চমাত্রার এই বিদ্যুৎ সঞ্চালনকালে সামনে উপস্থিত যেকোনো প্রাণীর মৃত্যুই অতি সাধারণ ব্যাপার। তাই বজ্রপাতের সময় কিছুক্ষণ নিরাপদ স্থানে থাকা দরকার। কারণ লোকজন উন্মুক্ত বা খোলা জায়গায় চলাচলের কারণে বজ্রপাতে আক্রান্ত হচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণারত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আশরাফ দেওয়ান এবং সহকারী অধ্যাপক মো: ফারুক হোসেনের গবেষণায় উঠে এসেছে যারা কৃষিকাজে নিয়োজিত এমন ব্যক্তিদের প্রায় ৪০ ভাগই বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছেন গত ২৬ বছরে। কৃষিকাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের মধ্যে গত ২৬ বছরে এক হাজার ২২৫ জন বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছেন। অপর দিকে বাড়ি ফেরার পথে রাস্তায় অর্থাৎ উন্মুক্ত স্থান হওয়াতে বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছেন ৩৩২ জন। অপর দিকে মাছ ধরার সময় গত ২৬ বছরে বজ্রপাতে প্রাণ হারান ২৩৩ জন। আর ফুটবল খেলার সময় গত ২৬ বছরে বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছেন ৭১ জন। তাই খোলা জায়গা ছেড়ে একটু নিরাপদে থাকলে বজ্রপাত থেকে রেহাই মিলবে বলে বিশেষজ্ঞরা মত দেন।