৬ আগস্ট ২০১৭, রবিবার, ১০:৫০

জলবায়ু বিপর্যয়ের মুখে ইউরোপ

উষ্ণতাজনিত মৃত্যু বাড়বে ৫০ ভাগ * বছরে দেড় লাখ প্রাণহানির শঙ্কা

জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত দাবদাহে ইউরোপে এই শতাব্দীর শেষ ত্রিশ বছরে মৃত্যুর হার ৫০ ভাগ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ঠেকাতে কার্যকরী কিছু করা না হলে ২১০০ সালের মধ্যে চরম আবহাওয়ায় এই মহাদেশে প্রতি বছর ১৫২,০০০ মানুষ মারা যেতে পারে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ হুশিয়ারি দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ল্যানসেট প্ল্যানেটারি হেলথ সাময়িকীতে প্রকাশিত ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈরী আবহাওয়ায় যে পরিমাণ মানুষের মৃত্যু ঘটবে, তা বর্তমান মৃত্যুর তুলনায় ৫০ গুণ বেশি হবে। আবহাওয়াজনিত এই মৃত্যুগুলোর মধ্যে দাবদাহেই ৯৯ শতাংশ মানুষ মারা যাবে বলে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে। ইউরোপের দক্ষিণাঞ্চলগুলো এ পরিস্থিতির সবচেয়ে বড় শিকারে পরিণত হবে।


বিবিসি জানায়, ইতালিতে অবস্থিত ইউরোপিয়ান কমিশনের জয়েন্ট রিসার্চ সেন্টারের ওই গবেষণা প্রতিবেদনে যেসব তথ্য প্রকাশ পেয়েছে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাস করতে কিছুই না করা হলে ও চরম আবহাওয়ার জন্য দায়ী বিষয়গুলোর প্রভাব হ্রাস করতে নীতিগুলোর উন্নয়ন করা না গেলে যা ঘটবে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে তা হচ্ছে, প্রথমত, ১৯৮১ সাল থেকে ২০১০ সালের মধ্যে প্রতি বছর চরম আবহাওয়াজনিত কারণে মৃত্যুর সংখ্যা তিন হাজার থেকে বেড়ে ২০৭১ থেকে ২১০০ সালের মধ্যে প্রতি বছর ১,৫২,০০০ জনে দাঁড়াবে। দ্বিতীয়ত, চলতি শতাব্দীর শুরুতে যেখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ইউরোপের প্রতি ২০ জনের মধ্যে একজন ক্ষতিগ্রস্ত হতো তা বেড়ে প্রতি তিনজনের মধ্যে দু’জন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এবং তৃতীয়ত, শতাব্দীর শুরুতে উপকূলীয় বন্যায় প্রতি বছর ৬ জনের মৃত্যুর জায়গায় শতাব্দীর শেষ দিকে প্রতি বছর ২৩৩ জন করে মারা যাবে।

গবেষণায় সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে ও আইসল্যান্ডসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৮টি দেশে দাবদাহ, হঠাৎ শৈত্যপ্রবাহ, দাবানল, খরা, নদী ও উপকূলীয় বন্যা এবং ঝড়ের মতো আবহাওয়াজনিত সবচেয়ে মারাত্মক সাতটি প্রভাব বিশ্লেষণ করে দেখা হয়েছে। গবেষক দলটি ১৯৮১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত দেশগুলোর প্রাকৃতিক দুর্যোগের রেকর্ডগুলো পরীক্ষা করে জনগণের দুর্যোগ মোকাবিলার সামর্থ্য খতিয়ে দেখেছে। এরপর এ তথ্যগুলো আবহাওয়া পরিবর্তনের অগ্রগতি এবং জনসংখ্যার বৃদ্ধি ও অভিবাসনের সম্ভাব্য ফলাফলগুলোর সঙ্গে একত্র করে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে গবেষকেরা বলেছেন, প্রাপ্ত তথ্য মতে, ২১০০ সালের মধ্যে ইউরোপের দুই-তৃতীয়াংশ লোক আবহাওয়া সম্পর্কিত দুর্যোগের শিকার হবে। এর মানে বর্তমান সময়ের ২.৫ কোটি লোকের তুলনায় প্রতি বছর প্রায় ৩৫ কোটি লোক হুমকির সম্মুখীন হবে। এ সময়ের মধ্যে প্রচণ্ড দাবদাহে মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পাবে ৫৪০০ ভাগ। এছাড়া উপকূলীয় বন্যার হার ৩৭৮০ ভাগ, দাবানলের হার ১৩৮ ভাগ, বন্যার হার ৫৪ ভাগ এবং ঝড়ের হার বৃদ্ধি পাবে ২০ ভাগ। তবে শৈত্যপ্রবাহের মৃত্যুর হার ৯৮ ভাগ কমে যাবে। গবেষকরা মনে করছেন, কয়লা, জীবাশ্ম জ্বালানি ও গ্যাস পোড়ানোর ফলে যে পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হচ্ছে তাতে ২১০০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণতা তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাবে। এ গবেষণার অন্যতম গবেষক জিওভান্নি ফরজিয়েরি বলেন, ‘একুশ শতকে মানবস্বাস্থ্যের জন্য অন্যতম বড় হুমকি জলবায়ু পরিবর্তন। যদি বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির বিষয়টিকে জরুরি বিবেচনা করে সঠিক পদক্ষেপ নেয়া না যায়, তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়তে থাকবে। এ শতকের শেষ নাগাদ বার্ষিক ভিত্তিতে ইউরোপের ৩৫ কোটি অধিবাসীর ওপর ক্ষতিকর আবহাওয়ার প্রভাব পড়বে।’

এ গবেষণার খবর এমন সময় সংবাদমাধ্যমে এলো যখন জাতিসংঘে চিঠি পাঠিয়ে প্যারিসের জলবায়ু চুক্তি থেকে প্রত্যাহার প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রাণ-প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্যারিসের ‘কপ-২১’ জলবায়ু চুক্তিতে আমেরিকাসহ আরও ১৮৭টি দেশ মিলে অঙ্গীকার করে যে, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামিয়ে আনবে, শিল্পবিপ্লব শুরুর আগে উষ্ণতার হার যে স্তরে ছিল। এমনকি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি নামিয়ে আনতে চেষ্টা করবে দেশগুলো।

http://www.jugantor.com/ten-horizon/2017/08/06/145735/