৬ আগস্ট ২০১৭, রবিবার, ১০:৪৮

একটি মাইল স্টোন রায় : আত্ম-বিশ্লেষণ ও নতুন যাত্রার দিক-নির্দেশনা

ষোড়শ সংশোধনী সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের যে রায় প্রকাশিত হয়েছে সেই রায়ে মানুষ প্রথমে জেনেছিলেন যে, ষোড়শ সংশোধনী বাতিল হয়েছে এবং বিচারপতিদের বিচাররের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে আবার ন্যাস্ত করা হয়েছে। আরো জানা গিয়েছিল যে অধস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রণের ভার সরকারের নিকট থেকে বের করে এনে সুপ্রিম কোর্টের হাতে অর্পিত হবে। সেটি ছিল সংক্ষিপ্ত রায়। কয়েক দিন আগে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। রায়ের কলেবর ৭৯৯ পৃষ্ঠা অর্থাৎ ৮০০ পৃষ্ঠা। রায়ে যে সব পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে সেসব পর্যবেক্ষণের পর উন্নত এবং সুসভ্য দেশ হলে সরকার আর ক্ষমতায় থাকতো না। স্বেচ্ছায় তারা পদত্যাগ করতো। কিন্তু আমাদের দেশে সেই ট্র্যাডিশন নেই। সুপ্রিম কোর্টের এসব পর্যবেক্ষণ সরকারের ভিত্তিতে আঘাত করেছে। এতদিন ধরে এসব কথা বিরোধী শিবিরের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল। তখন বিরোধী দলের এসব অভিযোগ এই বলে উড়িয়ে দেয়া হচ্ছিল যে এই ধরনের অভিযোগ বিরোধী দলের মুখ থেকে তো আসবেই। এছাড়া বিরোধী দলসমূহও এসব গুরুতর অভিযোগ নিয়ে শক্তভাবে মাঠে নামতে পারেনি। সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী দলের এসব অভিযোগ সেমিনার সিম্পোজিয়াম গোল টেবিল এবং মানব বন্ধনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। ফলে এই সব অভিযোগ নিয়ে বিরোধী দল সরকারের ক্ষমতার ভিত্তি মূলে কোনো ঝাঁকি দিতে পারেনি।

এবার একই ধরনের অভিযোগ করেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত, অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এ ব্যাপারে সরকার কি বলে সেটি শোনার এবং জানার জন্য জনগণ গভীর আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছেন।
পর্যবেক্ষণে প্রদত্ত সুপ্রিম কোর্টের অভিমত অত্যন্ত মারাত্মক। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বলেছে যে বাংলাদেশে মানবাধিকার বিপন্ন, দুর্নীতি লাগামহীন, জাতীয় সংসদ অকার্যকর, কোটি কোটি মানুষ মৌলিক স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত এবং প্রশাসনে অব্যবস্থাপনা চরমে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত বলেছেন, প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে অপরাধের মাত্রা এবং প্রকৃতি পরিবর্তিত হচ্ছে। জনগণের জীবন এবং নিরাপত্তা চরম অনিশ্চয়তায় নিক্ষিপ্ত হচ্ছে। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যর্থ হচ্ছে। এসবের সাকুল্য ফলাফল এই হয়েছে যে, এই সমাজ পঙ্গু হয়ে গেছে। এটি এমন একটি সমাজ হয়ে গেছে যেখানে একজন ভাল মানুষ ভালো কিছুর স্বপ্ন দেখে না। কিন্তু খারাপ লোক আরো সুবিধা আদায় করার জন্য আরো অস্থির হয়ে পড়েছে।
এমন একটি পরিস্থিতিতে দেশের প্রধান নির্বাহী দুর্বিনীত এবং অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়েন এবং আমলা তন্ত্র কোনো সময়ই যোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করে না।
সুপ্রিম কোর্টের ঐ পর্যবেক্ষণে আরো বলা হয়, স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরেও আমরা কোনো সরকারী প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে সমর্থ হইনি। সেখানে কোনো চেকস এ্যান্ড ব্যালান্স নেই। সেখানে তদারকি করার কোনো মেকানিজম নেই। ফলে যারা ক্ষমতায় আছে তারা ক্ষমতার অপব্যবহারে জড়িত হচ্ছে। এর ফলে তারা উদ্ধত এবং ক্ষমতার নির্বিচার প্রয়োগে জড়িয়ে পড়ছে।
সর্বোচ্চ আদালতের ঐ রায়ে বিচার বিভাগ সম্পর্কেও আলোকপাত করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে এই অন্তহীন চ্যালেঞ্জের মুখেও বিচার বিভাগই একমাত্র বিভাগ যেটি তুলনামূলকভাবে এখনও তাদের স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করার চেষ্টা করছে। এই বিভাগটিও ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছে। তৎসত্ত্বেও তারা পানির ওপরে তাদের নাক রাখার চেষ্টা করছে।
তবে বিচার বিভাগও এমন পরিস্থিতিতে দীর্ঘকাল স্বতন্ত্র সত্তা বজায় রাখতে পারে না। আজও উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগ ও নির্বাচন সম্পর্কে কোনো আইন প্রণীত হয়নি। পর্যবেক্ষণে বলা হয়, বিচার বিভাগকে শক্তিশালী করার পরিবর্তে নির্বাহী বিভাগ এটিকে পঙ্গু করার চেষ্টা করছে। আর যদি এমনটি ঘটে তাহলে সেটি দেশের জন্য সর্বনাশা পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
॥ দুই ॥
পূর্ণাঙ্গ রায়ে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি সম্পর্কেও পর্যবেক্ষণ রয়েছে। বলা হয়েছে যে রাজনৈতিক ক্ষমতার আর একটি মাত্রা হলো রাষ্ট্র ক্ষমতা। এই ক্ষমতা এখন গুটিকয়েক ব্যক্তির একচেটিয়া ক্ষমতায় পরিণত হয়েছে। ক্ষমতা গুটিকয়েক ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত হওয়ার এই আত্মঘাতী প্রবণতা দিনের পর দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্ষমতার লিপ্সা প্লেগ রোগের মতো। একবার যদি সেটি শুরু হয় তাহলে সেটি সব কিছুকে গ্রাস করে ফেলে। বলা বাহুল্য, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য কোনো সময়ই এটি ছিল না। আমাদের পূর্ব পুরুষগণ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছেন, ক্ষমতার দানব সৃষ্টি করার জন্য লড়াই করেননি।
তাদের পর্যবেক্ষণে দুইটি সামরিক শাসনেরও তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে স্বাধীনতার পর ক্ষমতা লোভীদের অশুভ আঁতাত দেশটিকে দুইবার ব্যানানা রিপাবলিক বা কদলী প্রজাতন্ত্রে পরিণত করেছিল।
পর্যবেক্ষণে বলা হয়, রাজনীতি আজ আর সকলের জন্য অবাধ নয়। এটি হয়ে গেছে এখন একটি বাণিজ্যিক বিষয়। রাজনীতিকে এখন চালনা করছে অর্থবিত্ত। রাজনীতির গতিপ্রবাহ এবং গন্তব্য এখন নির্ধারণ করছে অর্থ। এখন আর প্রতিভা নয়, ক্ষমতাই সমস্ত সরকারী প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণ করে। ইতিহাসের লিখন এই যে আমাদের অবিচল মনোভাব এবং অদম্য স্পিরিটের বলে আমরা একটি সামরিক শক্তির কবল থেকে দেশকে মুক্ত করতে সমর্থ হয়েছি। কিন্তু সেই মুক্ত দেশে আমরা নিজেরাই নিজেদের কাছে পরাজিত হয়েছি। ভারতের মতো একটি দেশ, যেখানে গণতন্ত্র, আমলা তন্ত্র এবং বিচার বিভাগ পরিপক্বতা অর্জন করেছে, সেখানেও সংসদ সদস্য ও আমলাতন্ত্রের তীব্র সমালোচনা করা হয় এবং উচ্চ ও নিম্ন আদালতের বিচারকগণের আংশিক সমালোচনা হয়।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, সরকারী দল পার্লামেন্টের ভেতরে এবং বাইরে সব সময় উচ্চ কন্ঠে প্রচার করে বেড়ায় যে, উচ্চ ও নিম্ন আদালতকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা সব সময় প্রেসিডেন্ট এবং পার্লামেন্টের ছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এই ক্ষমতা প্রেসিডেন্ট এবং পার্লামেন্টের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে দেন। এটি সত্যের বিরাট অপলাপ। কারণ ১৯৭২ সালের সংবিধানেও আদালতসমূহকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা ছিল উচ্চ আদালতের হাতে। ১৯৭২ সালের সংবিধানের ১১৬ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “বিচার কর্ম বিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচার বিভাগীয় অধস্তন আদালতসমূহের দায়িত্ব পালনে রত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল-নির্ধারণ, পদোন্নতি দান নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা ও ছুটি-মঞ্জুরিসহ) ও শৃঙ্খলা বিধান সুপ্রিম কোর্টের ওপর ন্যাস্ত থাকিবে।” প্রথম আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধান প্রণয়ন করে এই ক্ষমতা বিচার বিভাগের ওপর ন্যাস্ত করেন। কিন্তু সেই একই প্রথম আওয়ামী লীগ সরকার সুপ্রিম কোর্টের নিকট থেকে এই ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে প্রেসিডেন্টের ওপর ন্যাস্ত করে। এটি ঘটেছিল ১৯৭৫ সালের জানুয়ারি মাসে। সংবিধানের ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বাকশাল করে এই ক্ষমতা সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী প্রেসিডেন্টের হাতে ন্যাস্ত করা হয়। শেখ মুজিবর রহমান এতদিন ছিলেন প্রধান মন্ত্রী। কিন্তু ৭৫ সালে ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে শেখ মুজিব বাকশাল গঠন করলে নিজেই প্রেসিডেন্ট হন এবং প্রেসিডেন্টের হাতে বিচার বিভাগের ঐসব ক্ষমতা গ্রহণ করেন।
এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের ষোড়শ সংশোধনী রায়ে বলা হয়েছে যে, অধস্তন আদালতের ওপর নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের হাতে দেয়ার ফলে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো লঙ্ঘিত হয়েছে। সংবিধানে বলা হয়েছে যে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবিধানের মৌলিক কাঠামো। সেই স্বাধীনতা যদি অন্যের হাতে চলে যায় তাহলে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো লঙ্ঘিত হয়। তাই ষোড়শ সংশোধনী সংবিধান পরিপন্থী। তাই সংবিধানের ৪র্থ সংশোধনীও সংবিধান পরিপন্থী। ষোড়শ সংশোধনী রায়ে বলা হয়, “এই সংশোধনী (৪র্থ সংশোধনী) সংবিধানের মৌলিক কাঠামো লঙ্ঘন করে তাই প্রেসিডেন্টের হাতে এই ক্ষমতা অর্পণ সংবিধানের বিরোধী।” সংবিধানের ১১৬ এবং ১১৬(ক) অনুচ্ছেদ অক্ষত রেখে এবং একই সাথে অনুচ্ছেদ ৯৬ প্রতিস্থাপন করে বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ পঙ্গু করা হয়েছে। এর ফলে প্রধান বিচারপতির জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে।
॥ তিন ॥
আদালত আরো বলে যে ক্ষমতা গ্রহণের আগে সংসদ সদস্যদের এই বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত ছিল যে তারা যে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন আদতেই তারা সেই দায়িত্ব পালনের যোগ্য কিনা? রায়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা লিখেছেন, সংসদের সার্বভৌম ক্ষমতা নিয়ে ভুল ধারণা রয়েছে সংবিধানে। সার্বভৌম হচ্ছেন শুধু জনগণ এবং সর্বময় হচ্ছে সংবিধান। বাকি সব প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা নেহাতই সংবিধানের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের হাতিয়ার মাত্র। আমাদের সংবিধানে সার্বভৌম ক্ষমতা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়নি।
রায়ে তিনি লিখেছেন, সংসদীয় গণতন্ত্রে মন্ত্রিসভার আধিপত্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। সংসদের কার্য প্রণালিতে কার্যত একক আধিপত্য থাকে মন্ত্রিসভার। ক্ষমতাসীন দল যা চায় সংসদে বেশিরভাগ সদস্য তাকেই সমর্থন করেন। সংসদের পুরো নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রিসভার হাতে। সংসদে কী আলোচনা হবে সেই সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রিসভাই। যখন এটা নিয়ে আলোচনা হয় তখনও কত সময় নিয়ে আলোচনা হবে এবং কী নিয়ে আলোচনা হবে তাও নির্ধারণ করে মন্ত্রিসভা। শেষ পর্যন্ত যেসব বিল সংসদের মাধ্যমে পাস হয় তা মন্ত্রিসভা হয়েই সংসদে আসে। স্বার্থান্বেষী ও সংগঠিত গোষ্ঠীগুলো তাদের স্বার্থ আদায়ে মন্ত্রীদের অব্যাহতভাবে চাপ দিতে থাকে, যাতে আইনে তাদের স্বার্থ রক্ষা হয়।
ত্রয়োদশ সংশোধনীর বিষয়ে প্রধান বিচারপতি লিখেছেন, ‘সংখ্যাগরিষ্ঠের রায়ে আপিল বিভাগ মত দিয়েছিলেন যে, দুটি সংসদীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে। তবে শর্ত হল, বিলুপ্ত হওয়া ৫৮(ক) অনুচ্ছেদের ৩ ও ৪ দফা অনুযায়ী সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কিংবা আপিল বিভাগের সর্বশেষ অবসর প্রাপ্ত বিচারপতিকে প্রধান উপদেষ্টা পদে নিয়োগ করা যাবে না। প্রধান বিচারপতি লিখেছেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন যদি কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়া স্বাধীনভাবে নিরপেক্ষ না হয়, তাহলে গণতন্ত্র বিকশিত হতে পারে না। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ছাড়া গ্রহণযোগ্য সংসদও প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। তাই আমাদের নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং সংসদ শিশু অবস্থায় রয়ে গেছে। জনগণ এ দু’টি প্রতিষ্ঠানের ওপর আস্থা অর্পণ করতে পারছে না। এ দু’টি প্রতিষ্ঠান যদি জনগণের আস্থা ও শ্রদ্ধা অর্জনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ থেকে বিরত থাকে, তাহলে কোনো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে না।
ঐ রায়ের পর্যবেক্ষণে আরো বলা হয়, কোনো একজন ব্যক্তি দ্বারা কোনো একটি দেশ বা জাতি তৈরি হয়নি। আরো বলা হয় যে, রাজনীতি এখন আর মুক্ত নয়। এটি এখন বাণিজ্যে পরিণত হয়েছে।
বলা হয় যে ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৭২ সালের সংবিধানে সরকার ফিরে যাচ্ছিল। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে যে ১৯৭২ সালের সংবিধানে ফিরে যাওয়ার কথা বলে পার্লামেন্টে এবং পার্লামেন্টের বাইরে জনগণের মনোভাব নিয়ে খেলা করা হয়েছে। তারা মুক্তিযুদ্ধের সেন্টিমেন্টকে ব্যবহার করে সস্তা রাজনীতি করছিলেন। আরো বলা হয় যে এসব যুক্তি হলো সস্তা বাহবা নেয়ার জন্য এবং জনগণের অনুভূতি নিয়ে খেলা করার জন্য। এসবের পেছনে কোনো যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায় না।
শেষ করার আগে দুটি কথা বলা দরকার। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়কে প্রাজ্ঞ বিজ্ঞ লোকদের কেউ কেউ বাংলায় বলেছেন, ঐতিহাসিক রায়, কেউ কেউ বলেছেন যুগান্তকারী রায়। ইংরেজিতে কেউ কেউ বলেছেন ল্যান্ড মার্ক জাজমেন্ট, কেউ কেউ বলেছেন মাইল স্টোন জাজমেন্ট। ওপরে এতক্ষণ ধরে রায়ের যেসব অংশ বিশেষ উদ্ধৃত করা হলো সেখান থেকে মনে হতে পারে যে এটি শুধুমাত্র সরকারের সমালোচনামূলক একটি রায়। একথা ঠিক যে সরকারের প্রচুর সমালোচনা রয়েছে এই রায়ে। কিন্তু যদি সময় নিয়ে ঠান্ডা মাথায় ৭৯৯ পৃষ্ঠার এই রায় পড়া যায় তাহলে দেখা যাবে যে শুধু সরকারের সমালোচনা নয়, বরং রাজনৈতিক ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় দীর্ঘ দিন ধরে যে সব রোগ বাসা বেঁধে আছে সেগুলো দূর করে একটি স্বচ্ছ এবং স্বাস্থ্যকর রাজনীতির ব্যবস্থাপত্র এই রায়। আমাদের দুর্ভাগ্য যে অর্থ মন্ত্রীর মতো একজন অশতিপর বৃদ্ধ, প্রবীণ ও লেখা পড়া জানা একজন আমলা কাম রাজনীতিবিদ এই রায় নিয়ে ফালতু কথা বলতে পারেন। তিনি বলেছেন, ষোড়শ সংশোধনী যত বার বাতিল করা হবে আমরা (অর্থাৎ তার দল আওয়ামী লীগ) তত বার সেটি পাস করবো। অর্থমন্ত্রী মানুষের উক্তিকে কথায় কথায় বলেন, “রাবিশ”। এখন মানুষ যদি অর্থ মন্ত্রীর ঐ উক্তিকে বলেন রাবিশ তাহলে তাকে দোষ দেয়া যাবে কি?
asifarsalan15@gmail.com

http://www.dailysangram.com/post/294912-