৫ আগস্ট ২০১৭, শনিবার, ২:২৯

সরকারি প্রতিষ্ঠানের দখলে ১০ খাল

শুধু প্রভাবশালী ব্যক্তি বা তাদের প্রতিষ্ঠানই নয়, রাজধানীর খাল দখলে সরকারি প্রতিষ্ঠানও পিছিয়ে নেই। সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খাল ভরাট করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছে, আবাসিক এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া খাল প্লট আকারে বরাদ্দ দিয়েছে। কিছু জায়গায় খাল ভরাট করে বানানো হয়েছে রাস্তা। বাসাবো, নন্দীপাড়া, খিলগাঁও, রামচন্দ্রপুর, কাটাসুর, সেগুনবাগিচা, ধোলাইখাল, বেগুনবাড়ী, রূপনগর, বাউনিয়াসহ মোট ১০টি খাল সরকারি সংস্থার দখলের কবলে পড়েছে।

পরিবেশবাদীদের দাবি, রক্ষকের ভূমিকায় থাকা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সুযোগ পেলেই খাল দখল করেছে। তাই সরকারি এসব স্থাপনা অপসারণ করে খালের স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত করা উচিত।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, ‘রাজধানীর খালগুলো যারা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে আছে, তারাই বিভিন্ন সময় দখল করেছে। সরকারি বহু স্থাপনা খালের ওপর নির্মিত হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান যখন দখলদারের ভূমিকায় চলে যায়, তখন অন্য ব্যক্তিরা দখলে আরো উৎসাহ পায়। আমাদের দাবি খালে যেসব সরকারি স্থাপনা করা হয়েছে, তা অপসারণ করা হোক। ’

গত ১ আগস্ট জলাবদ্ধতা নিরসনে করণীয় ঠিক করতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে একটি সভা হয়।

সেখানে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান জানান, খালের ওপর সিটি করপোরেশনের করা প্রায় ১৫ কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। খালের ওপর বক্স কালভার্টের নামে পান্থপথ, সেগুনবাগিচা, ধোলাইখাল ও রামচন্দ্রপুর খালে এসব রাস্তা নির্মিত হয়েছে। ’
ঢাকা ওয়াসার খালের তালিকায় রয়েছে রামচন্দ্রপুর খাল। খালের মালিকানায় থাকা ঢাকা জেলা প্রশাসনের তালিকায়ও এ খালের নাম রয়েছে। কিন্তু জেলা প্রশাসনের খালসংক্রান্ত কাগজপত্রাদি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, রামচন্দ্রপুর ১ নম্বর খতিয়ানে আরএস ২০৯০ ও সিটি জরিপ ৯৮০৯, ১১১৫৫, ১১৫৫৬ দাগে ৩ দশমিক ২৪ একর খালের জমিতে রায়ের বাজার কবরস্থান করা হয়েছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন প্রায় ৫৪৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে এটি নির্মাণ করেছে। একইভাবে আরএস ১৯১১, সিটি জরিপ ১১৬৫৪ ও ৭২৬২ দাগে ২ দশমিক ৬৩ একর খালের জমিতে খ্রিস্টান কবরস্থান করা হয়েছে। একই খালের জমির আরএস ১৭৬ ও সিটি জরিপ ৮৪১২ দাগে দশমিক ৭২ একর জমিতে ২০০ মিটার অংশেই ৩০ ফুট জায়গা ভরাট করে রাস্তা তৈরি করেছে সিটি করপোরেশন।

কাটাসুর খাল দখল করে ট্রাকস্ট্যান্ড ও গরুর হাট বসানো হয়েছে। নন্দীপাড়া-ত্রিমোহনী খালে আরএস ১৫৩৬৪ দাগে জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ ইজারার মাধ্যমে একটি মার্কেট করে ২৬টি দোকান নির্মাণ করেছে। একই খালের ওপর ২০টি দোকানের আরেকটি মার্কেট করেছে ঢাকার জেলা পরিষদ।

পরিবাগ খালটির শাহবাগ মোড় থেকে বেগুনবাড়ী খালে মিশেছে। এর দৈর্ঘ্য দশমিক ৫০ কিলোমিটার, প্রস্থ প্রায় ৩৫ ফুট। খাল হিসেবে অধিগ্রহণ হওয়ায় এর ওপর দিয়ে রাস্তা করেছে সরকার। আর পানি নিষ্কাশনের জন্য বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু আশপাশে বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনার কারণে এ খালের পানি খুব একটা নিষ্কাশিত হয় না।

কোতোয়ালি রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনারের (ভূমি) অফিস সূত্রে জানা যায়, ধোলাইখাল বর্তমানে ধোলাইখাল রাস্তা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। রাস্তার শেষ অংশে সূত্রাপুর মৌজার ১৩৫৫৫ নম্বর দাগটির আংশিক ও ১৪২৩৫ নম্বর দাগটি খাল হিসেবে প্রবহমান রয়েছে। কাটাসুর খাল দখল করে সুলতানগঞ্জ মৌজার আরএস ১ নম্বর খতিয়ানে ৯২ দাগে রায়ের বাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী কলেজ নির্মাণ করা হয়েছে।

একসময় খিলগাঁও এলাকার সি-ব্লকে জলাশয় ছিল। এর সংযোগ ছিল বাসাবো খালের সঙ্গে। কিন্তু বিভিন্ন সময় সরকারের পক্ষ থেকে এ জলাশয় ভরাট করে প্রথমে টিঅ্যান্ডটির এক্সচেঞ্জ অফিস স্থাপন করা হয়। এরপর কিছু অংশ আবাসিক প্লট তৈরি করে বরাদ্দ দেওয়া হয়। একইভাবে তিলপাপাড়ার পেছনের খালের বড় অংশ ভরাট করে খেলার মাঠ এবং কিছু অংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেগুনবাগিচা খালের ওপর দিয়ে রাস্তা করেছে সিটি করপোরেশন।

সরেজিমনে গিয়ে দেখা যায়, পূর্ব দোলাইরপাড়ে কুতুবখালী খালের একাংশ ভরাট করে দনিয়া রোড চওড়া করছে ডিএসসিসি। কুতুবখালী খালের প্রস্থ ছিল প্রায় ৫০ ফুট, গভীরতা ছিল আট ফুট। বিভিন্ন সময় দখল হওয়ায় খালের পূর্ব দোলাইরপাড় অংশের প্রস্থ এখন ৩০ ফুটে ঠেকেছে। এ খালের দোলাইরপাড়ের দনিয়া রোডে ওয়াসার পানির পাম্প পর্যন্ত কুতুবখালী খালের ১২ থেকে ১৫ ফুট বাঁশ ও টিন দিয়ে বেড়া দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি অংশে পাইলিং করছে শ্রমিকরা।

রাজধানীর রূপনগর খালের আংশিক দখল করে রাস্তা নির্মাণ করেছে সিটি করপোরেশন। বাউনিয়া খালের ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভাসানটেক পুনর্বাসন প্রকল্প ও জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের জয়নগর প্রকল্পের জন্য আংশিক দখল করা হয়েছে।

http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2017/08/05/527925