ঢাকার শনির আখড়ায় দেবধোলাই খাল এভাবেই হারিয়ে গেছে দখলদারদের পেটে।
৫ আগস্ট ২০১৭, শনিবার, ১২:২৭

► ৪০০ দখল দারের থাবা ►ঢাকা ডুবছে বারবার

খাল যেন পৈতৃক সম্পত্তি

সামান্য বৃষ্টি হলেই এখন জলাবদ্ধতা দেখা দেয় রাজধানীতে। রাজপথ থেকে অলিগলি তলিয়ে যায়। কারণ আগে রাজধানীর চারপাশে যেসব খাল দিয়ে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশিত হতো সেগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। খাল দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে আবাসিক ভবন, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। যে যেভাবে পেরেছে দখল করেছে। এ তালিকায় রাজনীতিক, প্রভাবশালী ব্যক্তি, ব্যবসায়ী, পাড়া-মহল্লার সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, এমনকি সরকারি সংস্থা ও কর্মকর্তারাও রয়েছেন। অনেক জায়গায় খাল দখলের পর তার ওপর স্থাপনা নির্মাণ করে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। উদ্ধারের প্রসঙ্গ তুললেই কর্তৃপক্ষ বারবার খাল দখলমুক্ত করার আশ্বাস দেয়। আর বছরের পর বছর ধরে এ কাজের জন্য এক সংস্থা আরেক সংস্থার ওপর দায় চাপায়, কিন্তু খাল উদ্ধার হয় না।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নামিদামি ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে অনেকেই খাল দখল করে বাসাবাড়ি বানিয়ে বসবাস করছে। কেউ কেউ খালের এক পাশে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান করে অন্য পাশে বাসা বানিয়েছে।

অনেকে ছোট-বড় বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে সেগুলো বাণিজ্যিকভাবে ভাড়া দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সংস্থার এসএ, আরএস ও সিটি জরিপে যেখানে খাল দেখানো হয়েছে বাস্তবে সেখানে বহু আগেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বহুতল ভবন নির্মাণ করেছে। শুধু নন্দীপাড়া-ত্রিমোহনী খালেই রয়েছে প্রায় ১৮০ জন দখলদার। কাটাসুর খালে কবরস্থানের জন্য কমপক্ষে ১০ বিঘা জমি দখল করে নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে রাজধানীর খালগুলোতে কমপক্ষে চার শতাধিক দখলদারের নাম মিলেছে কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধানে।
ঢাকা মহানগরীতে বিদ্যমান খালের সংখ্যা ৪৩টি। সব খালের মালিকানা ঢাকা জেলা প্রশাসনের। এর মধ্যে ঢাকা ওয়াসা রক্ষণাবেক্ষণ করে ২৬টি। ঢাকা জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে আটটি খাল। এ ছাড়া রাস্তা, বক্স কালভার্ট, ব্রিক সুয়্যার লাইনের মাধ্যমে বিকল্পভাবে পানি নিষ্কাশনের জন্য রয়েছে আরো ৯টি খাল। তবে সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ঠেলাঠেলি চলে ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসনের মধ্যে। যদিও দখল হয়ে যাওয়া খাল উদ্ধারের দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের।

খাল দখল বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র (ডিএসসিসি) মোহাম্মদ সাঈদ খোকন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দখলদাররা খালে পাঁচ থেকে ১০ তলা ভবনও করে ফেলেছে। এসব খাল উদ্ধার করা কিছুটা কঠিন। ঢাকা ওয়াসাকে শুধু বড় বড় প্রকল্প নিয়ে ব্যস্ত থাকলে চলবে না। জনগণকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দিতে হলে নগরীর খালগুলোর দিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। নন্দীপাড়া খালে অবৈধ স্থাপনা আমরা উচ্ছেদ করে দিয়েছি। কথা ছিল ওয়াসা খালটি পরিষ্কার করে পানির প্রবাহ নিশ্চিত করবে। তারা সেটি করেনি। সেখানে পানি আটকে থাকে। ’

পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনকে দেওয়া হচ্ছে—এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাঈদ খোকন বলেন, ‘৪০-৪৫ বছরের সমস্যা। হঠাত্ আমাদের ওপর দিয়ে দিলে তো হবে না। দায়িত্ব আসতেই পারে। তবে সেখানে আইনি জটিলতা থাকলে তা পরিবর্তনের ব্যাপারে আলোচনা হতে পারে। ’

ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. সাইদুজ্জামান বলেন, ‘রাজধানীর খালগুলোতে দখলদারদের বিস্তারিত তথ্য আমরা সংগ্রহ করেছি। এখন বড় আকারে উচ্ছেদ অভিযানের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। খুব দ্রুতই আমরা খালগুলো থেকে দখলদার উচ্ছেদ করব। ’

ঢাকা উত্তর সিটি সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেসবাহুল ইসলাম বলেন, ‘ডিএনসিসি এলাকায় থাকা খালগুলো নিয়ে আমরা বিস্তারিত সার্ভে করেছি। খালগুলো অবৈধ দখল আর ময়লায় ভরাট হয়ে থাকায় পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে, এমন দৃশ্য ফুটে উঠেছে। সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা পেলে ডিএনসিসি খালে থাকা অবৈধ স্থাপনা ভেঙে দিতে পারে। তবে এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করার ওপর জোর দিতে হবে। ’

সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায়, দখলদাররা খালগুলোকে পৈতৃক সম্পত্তির মতো ব্যবহার করছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দখলদার পাওয়া গেছে নন্দীপাড়া-ত্রিমোহনী খালে। যাত্রাবাড়ীর ধলপুর খাল থেকে উত্পত্তি হয়ে মাণ্ডা, রাজারবাগ, নন্দীপাড়া মৌজার ভেতর দিয়ে নন্দীপাড়া-ত্রিমোহনী সড়কের পাশ দিয়ে উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়ে নাসিরাবাদ-নন্দীপাড়া খালের সঙ্গে ত্রিমোহনীতে মিলিত হয়েছে এ খাল। আবর্জনা ও বর্জ্যে এরই মধ্যে সেটি ভরে গেছে। খালের ওপর ঘর তুলে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছে। অন্তত ১৮০ জন দখলদার মিলে ভাগজোখ করে দখল করে নিয়েছে খালটি। তাদের মধ্যে মাদারটেক সরকারপাড়ার বাসিন্দা মো. আলমের একচালা টিনের ঘরে রুটির দোকান, হাবিবুল্লার লাইব্রেরি, জাকির হোসেন বাবুর দুটি অটোমোবাইল দোকান, নোমানের দুটি চায়ের দোকান, পলাশের জুতা ও ইলেট্রনিকসের দোকান, মজিবুর রহমানের ফার্নিচারের দোকান, বাবুর ব্যবসায়িক চেম্বার, ইদ্রিস আলীর চায়ের দোকান, ছালেহ আহমেদের দুটি মুদির দোকান, মালেক ভাণ্ডারীর দোকান, ইয়াদ আলীর চায়ের দোকান, কবির উদ্দিনের চায়ের দোকান, হাফিজুরের টেইলার্স, ইউনুস মোল্লার সবজির দোকান, হাশেম মেম্বারের কাপড়ের দোকান, সুজাত ভাণ্ডারীর চটপটির দোকান, হানিফের সবজির দোকান, শাহ আলমের কাপড়ের দোকান, টগর মিয়ার চায়ের দোকান, খোকা মিয়ার বাসা, মাইন উদ্দিনের চায়ের দোকান, বাচ্চুর গ্যারেজ, আবুলের চায়ের দোকান, টগরের চায়ের দোকান, সাঈদের পিঠার দোকান, বাদশার চায়ের দোকান, নন্দীপাড়া মসজিদ, আকরামের গ্রিলের দোকান, জাকিরের চায়ের দোকান, আমেনা বেগমের ডেকোরেটর, আলী আকবরের মুরগির দোকান, হুমায়ুনের মুদির দোকান, ফয়েজুলের মুদির দোকান, রহমান আলীর ফার্মেসি, মনিরের মুদির দোকান, খুরশিদ আলমের চায়ের দোকান, সবজির দোকান (বারেক, আতাউর, জাহাঙ্গীর, ছালাম, মাইদুল, মুসলেম মিলে দিয়েছে), কাশেমের পানের দোকান, আবুল হাশেমের মাছের দোকান, রইছ মিয়ার পানের দোকান, জমির মিয়ার ফলের দোকান, কাদিরের মুদির দোকান, কবিরের মাংসের দোকান, বিল্লালের চায়ের দোকান, রিপনের গ্যারেজ, নন্দীপাড়া মহিলা ক্লাবের পক্ষে ফার্মেসি, আজিজের চায়ের দোকান, নজরুলের চায়ের দোকান, মতি মিয়ার সেলুন, মোহাম্মদ আলীর চায়ের দোকান, শাহাদাত্ হোসেনের সেলুন, হারেছের গ্যারেজ, শাহজাহানের গ্যারেজ, সফিকুলের গ্যারেজ, জাতীয় পার্টির স্থানীয় কার্যালয়, সিদ্দিক মোল্লার গ্যারেজ, আবু বক্করের চায়ের দোকান, সাঈদের গ্যারেজ, মোক্তারের মুদির দোকান, কুদ্দুসের গ্যারেজ, মফিজুলের গ্যারেজ, নাছিরের বাসা, নন্দীপাড়া যুবসংঘের পক্ষে মুদি দোকান, মিছির আলীর গ্যারেজ, নন্দীপাড়া ক্রীড়া সংঘ, আব্দুল হকের চায়ের দোকান, মীর জাহাঙ্গীরের ফার্মেসি, মোশারফের গ্যারেজ, মোফাজুল হোসেনের সেলুন, মুদির দোকান (রাসেল, নাছির, মহসিনের), সাগরের সবজির দোকান, মেজুর চায়ের দোকান, কাজলের সবজির দোকান, গিয়াস উদ্দিনের চায়ের দোকান, ইয়াকুবের গ্যারেজ, জোহর আলীর চায়ের দোকান, চান মিয়ার হোটেল, আইয়ুব খানের সবজির দোকান, চায়ের দোকান (উমর আলী, ঝর্ণা বেগম, শাহজাহান, বসির, কাশেম, মাইন উদ্দিনের), ছিদ্দিকের সেলুন, মোহাম্মদ আলী ও তাহেরের সবজির দোকান, শহীদুল্লার মাংসের দোকান, উসমানের মুরগির দোকান, আবির ও খুরশিদের দুটি চায়ের দোকান, আলীর খাবার হোটেল, নৌকা সমিতি, মিজানের হোটেল, সুমনের মোবাইল রিচার্জ দোকান, দেলোয়ারের খাবার হোটেল, ডা. মাহমুদা আক্তারের ফার্মেসি, জসিমের সবজির দোকান, ফলের দোকান (শহিদউল্লাহ, সালাউদ্দিন, সামছুন, বাবুলের), হারুনের পানের দোকান, আলমগীর ও ইব্রাহিমের দুটি মুদির দোকান, আক্তার উদ্দিনের ফলের দোকান, সাজ্জাদের মোবাইল রিচার্জ দোকান, লতিফ ও রহিমের দুটি ফার্নিচারের দোকান, চায়ের দোকান (এনামুল, সৌরভ, আওলাদ, সায়েদুলের), নাইমের চালের দোকান, সজিবের পানের দোকান, বাতেনের দোকান, সফিকের ফলের দোকান, ইরফানের মোবাইলের দোকান, নাজির হোসেনের ফার্মেসি, মাইন উদ্দিনের গ্যারেজ, রুবেলের মুদির দোকান, আলেক মিয়ার মুদির দোকান, আমিরের চায়ের দোকান, দ্বীন ইসলামের চায়ের দোকান, বাবুলের গ্যারেজ, আনোয়ারের চায়ের দোকান, বাবুলের মুরগির দোকান, হানিফের মুদির দোকান, আওলাদের সবজির দোকান, আজগর ও জাহাঙ্গীরের দুটি চায়ের দোকান ও দেলোয়ারের মুদির দোকান রয়েছে। এ ছাড়া স্বপন, মাসুম, আবুল কালাম, তাহের, বসির মিয়া, আনোয়ার, মালেক ভাণ্ডারী, হাবিবুর ও জেলা পরিষদ মার্কেট এবং পরিষদ মার্কেট মসজিদ কমিটির পক্ষে অর্ধশত দোকান নির্মাণ করা হয়েছে।

মোহাম্মদপুরের রামচন্দ্রপুর খালে আরএস ৫৯২ ও সিটি জরিপ ১০৯৪৬ দাগে ০.৪২ একর নবীনগর হাউজিংয়ের পক্ষে আমিন উদ দৌলা, আরএস ৫৯৫ ও সিটি জরিপ ১০৯৫২ দাগে ০.৪ একর নবীনগর হাউজিং, আরএস ১৮৭৪ ও সিটি জরিপ ১১১৯০ দাগে ০.৩০ একর রাস্তা ও নবীনগর হাউজিং, আরএস ১৮৮৩ ও সিটি জরিপ ১১২০২ দাগে ০.৬ একর জেমকন সিটির পক্ষে কাজী আহম্মেদ, আরএস ১৯১১ ও সিটি জরিপ ১১৬৫৪-৭২৬২ দাগে ২.৬৩ একর বেড়িবাঁধ খাল ও খ্রিস্টান কবরস্থান, আরএস ১৯৪১ ও সিটি জরিপ (৭২৪৩, ৭২৬০, ৭২৫৯, ৭২৫৮, ৭২৪৪, ৭২৭৬, ৭২৭৯) দাগে ০.৮০ একর মোহাম্মদী হাউজিং দখল করেছে। এ ছাড়া খালের ৩.২৪ একর জায়গা দখল করে কবরস্থান নির্মাণ করা হয়েছে। সুনিবিড় হাউজিং বিশাল এলাকা নিয়ে স্থাপনা তৈরি করেছে এ খালে।

কাটাসুর খালের ১ নম্বর মৌজার আরএস ১৯৬১ ও সিটি জরিপ (১০৭৩৭, ১০৭৩২, ১০৭৩০) দাগে ০.৬১ একর বালু দিয়ে ভরাট করেছেন আব্দুর রশিদ শিকদারের ছেলে ইউসুফ শিকদার। এ খালের সুলতানগঞ্জ মৌজায় ১ নম্বর খতিয়ানে আরএস ৯২ নম্বর দাগে রায়েরবাজার বেড়িবাঁধ এলাকার আব্দুল মালেক, জাহাঙ্গীর, খাইরুল ইসলাম, আলামিন, কালাম মোল্লা, ফারুক, ছালাম মোল্লা, স্বপন, মুরাহ আহম্মেদ, রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী কলেজ, ওমর ফারুক মিয়া, নূর হোসেন, হুসাইন আহম্মেদ, কালাম, মোসলেহ উদ্দিন পাটোয়ারী, শাহ আলম, বাবু ও নেওয়াজ হোসেন দখল করেছেন। আরএস ৯৩ দাগে হাশেম খান, হাই মৃধা, নূরুল আমিন, ইলিয়াছ খন্দকার, নূর মোহাম্মদ হাজি, মনোয়ার হোসেন, মিরাজুল ইসলাম, কদম আলী মৃধা, হারুন দেওয়ান, আব্দুল মান্নান, আবুল কালাম, ডা. ফয়েজ, মনির খান, জেবুন্নেছা ও শামীম খান দখল করে রেখেছেন।

কামরাঙ্গীর চর খালে টিনের ছাপরা তৈরি করে অবৈধ দখল জারি রেখেছেন কামাল উদ্দিন, মোসলেম উদ্দিন, ইসমাইল, কামাল মেম্বার, পান্না ব্যাটারির এমডি লোকমান মিয়া (টিনের ছাপরা, পানির ট্যাংক, দুটি ওভারব্রিজ, টিনশেড ঘর) ও তাইজ উদ্দিন।

এনায়েতগঞ্জ মৌজায় রফিক রানার তিনতলা ভবনের একাংশ পড়েছে কালুনগর খালে। এ ছাড়া হাজি মিলনের সেমিপাকা টিনশেড ঘর, রুহুল আমীনের সেমিপাকা ঘর, মো. জোয়ার্দ্দারের তিনটি দোকান ও বাসা, নূরু মিয়ার তিনটি দোকান ও বাসা, রোকনের দোকান ও বাসা, আবুল মিয়ার দোকান, সবুজ মিয়ার সেমিপাকা দোকান ও বাসা, খালেকের দোতলা ভবন ও টিনশেড ঘর, আবুল বাশার বশিরের টিনশেড ঘর ও দোতলা ভবন, তাসলিমা খাতুনের একতলা সেমিপাকা ভবন, শামীম হোসেন বাবুলের দোতলা ভবন ও টিনের ছাপরা রয়েছে খালের ওপর। টিনের ছাপরা তুলেছেন মাছুম, সেলিম, পলি, আব্দুস ছামাদ, মজিবুর রহমান মজু, কে এম ছিদ্দিক আলী, আলম সরকার, ইকবাল, আনোয়ার হোসেন আনু, শরীফ, রনি মিয়া, জনি ও আলী হোসেন। এ খালের সিটি জরিপ ১০২৪ দাগে একটি বাউন্ডারি ওয়াল এবং ৪২০ দাগে ইঞ্জিনিয়ার মো. শহীদুল্লা নামের এক ব্যক্তির একতলা বিল্ডিং রয়েছে।

ইব্রাহিমপুর খালেরও একই অবস্থা। দুই পাড়েই অবৈধ স্থাপনা তুলে দখল করা হয়েছে। ইব্রাহিমপুর কালভার্ট এলাকায় অবস্থিত ঢাকা ওয়াসার পাম্প হাউসের পাশে খালের দক্ষিণ পাড় দখল করে টিনশেড ও আধাপাকা ঘর তোলা হয়েছে। আবার পাশেই আরেক অংশ ভরাট করে তৈরি করা হয়েছে রাস্তা। ৮৮ নম্বর হোল্ডিং ইব্রাহিমপুর রশিদ কমপ্লেক্সের পেছনের অংশে মাটি ভরাট হয়েছে। খালের কিনার ঘেঁষে ৮৯/৩ ইব্রাহিমপুর হোল্ডিং নম্বরে রয়েছে একটি পাকা স্থাপনা। একই অবস্থা ৮৩/১ হোল্ডিংয়েও। ইব্রাহিমপুর থেকে কচুক্ষেতের দিকে সামান্য এগোলেই চোখে পড়বে খালের ওপর রিকশার গ্যারেজ ও বস্তি। এ খালের হোল্ডিং নম্বর ১০৬০ ও ১০৬০/এ পাকা ভবনের একটি অংশও খালের ওপর রয়েছে।

রূপনগর খালটি মিরপুর কমার্স কলেজের পেছন থেকে শুরু হয়ে ইস্টার্ন হাউজিং খালের সঙ্গে মিলেছে। খালটি দৈর্ঘ্যে ১.৫০ কিলোমিটার, প্রস্থে ৩০ ফুট। এ খালের কয়েকটি অংশে অবৈধ দখল রয়েছে। সাংবাদিক আবাসিক এলাকার খাল কালশী রোড থেকে শুরু হয়ে পলাশনগরে এসে প্যারিস খালের সঙ্গে মিলেছে। এটির দৈর্ঘ্যে ০.৭৮ কিলোমিটার, প্রস্থ ২০ ফুট। খালের কালশী অংশে আয়তন ঠিক থাকলেও ডিএনসিসি ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মদিনানগর ও পলাশনগরের মধ্য দিয়ে চার ফুট সরু হয়ে মেহেদীবাগ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। মেহেদীবাগ এলাকায় স্থানীয় লোকজন মাটি ফেলে ভরাট করা ছাড়াও দেয়াল দিয়ে স্থায়ীভাবে খাল দখল করে রেখেছে। প্যারিস খালটি নিউ ডিএনসিসি মার্কেট সংলগ্ন প্যারিস রোড থেকে পলাশনগর এসে বাইশটেকি খালের সঙ্গে মিলেছে। এর দৈর্ঘ্য ০.৮৯ কিলোমিটার, প্রস্থ ২০ ফুট। অথচ বাস্তবে প্যারিস রোডের পাশে ১০ ফুট আর মেহেদীবাগে পাঁচ ফুট রয়েছে। দুই পাশে টিনের ছাপরা তুলে খাল দখল করা হয়েছে। বাইশটেকি খালটি সাংবাদিক খাল ও প্যারিস খালের পলাশনগরে মিলিত হয়ে বাইশটেকি ও পলাশনগরকে বিভক্ত করে মিরপুর-১৪-বাউনিয়া খালের সঙ্গে মিলেছে। এর দৈর্ঘ্য ০.৫২ কিলোমিটার, প্রস্থ ৩০ ফুট। বাইশটেকি খালের মাঝামাঝি একটি বড় আকারের পাকা ভবন রয়েছে। সেখানে খালটি মোটে আট ফুটে টিকে আছে। এ ছাড়া খালটির বেশ কিছু এলাকাজুড়ে ছোট-বড় আটটি স্থাপনা রয়েছে। মিরপুর-১৪-বাউনিয়া খালটি মিরপুর-১৪ মোড় থেকে শুরু করে বাউনিয়া বাঁধ, সাগুফতা আ/এ, বেড়িবাঁধ হয়ে তুরাগ নদে মিলেছে। এর দৈর্ঘ্য ২.৯২ কিলোমিটার, প্রস্থ ৬০ ফুট। এ খালের ভাসানটেক পুনর্বাসন কেন্দ্রের পেছনে রূপসী হাউজিংসহ পাঁচটি পাকা স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে খাল টিকে আছে প্রায় ১৮ ফুট। মাটিকাটা-বাউনিয়া খাল কালশী রোডের ব্লু-মুন রেস্টুরেন্টের পূর্ব পাশ থেকে শুরু করে কালশী ব্রিজের কাছে বাউনিয়া খালের সঙ্গে মিলেছে। এর দৈর্ঘ্য ০.৭৫ কিলোমিটার, প্রস্থ ২০ ফুট। এ খালের কালশী ব্রিজের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে বেশ কয়েকটি সাইনবোর্ড গেড়ে দখল করা হয়েছে। মাটি ফেলে ভরাট করছে প্রভাবশালী মহল। মহাখালী খালের নাখালপাড়া পাগলার পাড় ব্রিজ সংলগ্ন ও বায়তুস সালাম জামে মসজিদের একটি অংশ দখল হয়ে গেছে। এ ছাড়া নিকেতন ২ নম্বর স্লুইসগেট সংলগ্ন স্থানে মাটি ফেলে ভরাট করে দখল করা হয়েছে।

কাগজে-কলমে কল্যাণপুর প্রধান খাল এবং কল্যাণপুর ক, খ, ঘ, ঙ, চ খালসহ ছয়টি খাল রয়েছে। কল্যাণপুর ‘খ’ খালের উত্তরে টোলারবাগের হোল্ডিং নম্বর ৬/২২-বি ও ২০/৮ সংলগ্ন এলাকা মাটি ফেলে ভরাট করা হয়েছে। দক্ষিণ বিশিল হয়ে মাজার রোডের অংশে দখলের ফলে খাল বিলীন হওয়ার পথে। কল্যাণপুর ‘ঘ’ খালটি শেওড়াপাড়া (আনন্দবাজার) থেকে ৬০ ফুট রাস্তার ভাঙা রাস্তা পর্যন্ত। এর দৈর্ঘ্য ১.৫৬ কিলোমিটার, প্রস্থ ৯ থেকে ১২ ফুট। এ খালের ৪৪/৮/এ/১, ৪৪১/এ ও ৪৪০/২ শেওড়াপাড়া অংশে অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। কল্যাণপুর ‘চ’ খালের মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘর সংলগ্ন পশ্চিম পাশে একটি টিনশেড স্থাপন করে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। কালভার্টের ওপর বেশ কিছু অবৈধ দোকানও রয়েছে। এ খালের ওপর জিটিসিএল ভবনের একটি অংশ রয়েছে। এ ছাড়া রাজধানীর বাসাবো, মাণ্ডা, মেরাদিয়া-রামপুরা খালেও অবৈধ দখলদার রয়েছে।

ঢাকা ওয়াসার বোর্ড সদস্য হাসিবুর রহমান মানিক বলেন, ‘ওয়াসার জোনে তেমন লোকবল নেই। তারা দৈনিক ভিত্তিতে কোনো কাজ করছে না। মাঝেমধ্যে শ্রমিক নিয়ে কিছুটা পরিষ্কারের চেষ্টা করা হয়। তবে তা খুব একটা কাজে আসে না। খালগুলোসহ বক্স কালভার্ট পরিষ্কার না করার ফলে জলাবদ্ধাতা প্রকট হচ্ছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে ওয়াসা বোর্ডে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। ’

খাল নিয়ে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2017/08/05/527922