বরগুনার পাথরঘাটার লঞ্চঘাট এলাকায় খাল দখল করে পাইকারি মাছ বাজারের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে বহুতল ভবন। ছবিটি সম্প্রতি তোলা
৫ আগস্ট ২০১৭, শনিবার, ১২:১৭

বরগুনার পাথরঘাটা

খাল দখল করে মেয়রের ভবন!

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার লঞ্চঘাট এলাকায় খাল দখল করে পাইকারি মাছ বাজারের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণ করছে পৌর কর্তৃপক্ষ। জেলা প্রশাসন কিংবা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কোনো ধরনের বন্দোবস্ত কিংবা অনুমতি ছাড়াই এই স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ আছে, পৌর মেয়র আনোয়ার হোসেন আকন কোনো রকমের দরপত্র আহ্বান না করেই তড়িঘড়ি করে তিনতলা এই ভবন নির্মাণ করাচ্ছেন। মেয়র দাবি করেছেন, নিয়ম মেনেই তিনি ভবনটি নির্মাণ করছেন। পৌরসভার আয় বাড়াতে এই উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।

পাথরঘাটা পৌরসভা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পৌরসভার আয় বাড়াতে পৌর শহরের ক্ষুদ্র মাছ ব্যবসায়ী সমিতির নামে তিনতলা একটি ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয় পৌর পরিষদ। ভবনের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০ লাখ টাকা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ঠিকাদার বলেন, ভবন নির্মাণের জন্য কোনো প্রকার দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। কয়েকজন কাউন্সিলরের সমন্বয়ে ভবনটি নির্মাণ করছেন মেয়র। কাজটি দেখাশোনার ভার দেওয়া হয়েছে মোসাফফের হোসেন নামের একজন কাউন্সিলরকে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, পাথরঘাটা লঞ্চঘাটের পশ্চিম পাশে অন্তত সাত ফুট খাল ভরাট করে আরসিসি পিলারের ওপর ভবনটি নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে একতলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শেষ। দোতলার কাজ চলছে। ওই বাজারে মাছ ওঠানোর জন্য সাগর থেকে আসা ট্রলার নোঙর করতে জেটি নির্মাণ করা হবে বলে জানা গেছে। জেটি নির্মাণ হলে খালটি আরও সংকুচিত হয়ে যাবে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, নির্মাণাধীন ওই বাজারে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ পাইকারি বিক্রির জন্য পাথরঘাটা পৌর কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে আড়তদার নিয়োগ করে স্টল বরাদ্দ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আগামী মাসের শুরুর দিকে বাজারটি উদ্বোধনেরও কথা রয়েছে। খালের একাংশ দখল করে মৎস্য বাজারের মূল ভবন নির্মাণ করায় খালের নাব্যতা হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। এ ছাড়া পৌর মৎস্য বাজার শুরু হলে ওই ভবন ঘিরে আরও অনেক স্থাপনা নির্মাণ হবে। এতে খালটি আরও সংকুচিত হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এলাকার মৎস্য ব্যবসায়ীরা বলেন, নতুন নির্মাণাধীন এই বাজার থেকে আধা কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) পরিচালনাধীন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র রয়েছে। এই বাজারটি চালু করা হলে ওই অবতরণকেন্দ্রটি নির্জীব হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। এতে সরকার বিপুল রাজস্ব হারাবে।

জানতে চাইলে পাউবোর বরগুনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মশিউর রহমান বলেন, পাউবোর কাছ থেকে ওই জমির কোনো বন্দোবস্ত দেওয়া হয়নি। তা ছাড়া খাল দখল করে ভবন নির্মাণের জন্য পাউবোর অনুমতি নেই। বরং দখলমুক্ত করার নির্দেশনা রয়েছে। যদি এটা কেউ করে থাকে, তবে তা সম্পূর্ণ অবৈধ।

পাথরঘাটার পৌর মেয়র মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘পৌরসভায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য পৌরসভার আয়ের উৎস বাড়াতে ভবনটি নির্মাণকাজ হাতে নিয়েছি।’ দরপত্রে অনিয়মের বিষয়ে তিনি বলেন, নিয়ম মেনে দরপত্রের মাধ্যমেই ভবনটি নির্মাণ হচ্ছে। খাল দখল প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ‘ওই স্থানে পুরোনো মাছবাজার ছিল। খালে ভেঙে যাওয়ায় যতটুকু ভেঙেছে, ততটুকুই আমরা ভবন নির্মাণের জন্য নিয়েছি।’

বরগুনার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. নূরুজ্জামান গতকাল শুক্রবার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে সেখানে কোনো জমি কাউকে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়নি। খালের মধ্যে জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। সরকারি জমি অবৈধভাবে দখলে নিয়ে কেউ স্থাপনা নির্মাণ করে থাকলে তা অবৈধ। অবৈধ দখল উচ্ছেদে জেলা প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1277291