১৮ জুলাই ২০১৭, মঙ্গলবার, ১১:৩৪

রোডম্যাপ নয় ইসির কাজ লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি

বিশেষজ্ঞদের অভিমত

রোডম্যাপ নয়, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি ইসির কাজ। সবার জন্য সমান নির্বাচনী পবিবেশ সৃষ্টি করতে না পারলে এই রোডম্যাপ বা কর্মপরিকল্পনা দিয়ে কিছুই হবে না। কর্মপরিকল্পনায় যে সাতটি করণীয় উল্লেখ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সেটাকে যদি তারা কিছুটা হলেও বাস্তবায়ন করতে পারে তাহলে আশা করা যায়। কিন্তু তফসিল ঘোষণার তিন মাসে তারা কী লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করবেন? এমনই অভিমত ব্যক্ত করেছেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকেরা। তাদের মতে, ইসি যেটা ঘোষণা করেছে সেটা তাদের রুটিন কাজ। এখানে বিশেষত্ব বলতে কিছুই নেই। জাতীয় সংসদ বহাল রেখে আরেকটি সংসদ নির্বাচন কিভাবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। যেখানে চলমান সংসদের এমপিরা নির্বাচনী প্রচারণায় গাড়ি ও পতাকা ব্যবহার করবে, অন্যরা পারবে না। এটা কি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড? আর সিইসি যে বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কিছু আছে। সরকারেরও কিছু আছে। এটা ইসির একার নয়। এই বক্তব্যের সাথেও বিশ্লেষকেরা একমত হতেও পারেননি।
ড. তোফায়েল আহমেদ
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদের মতে, ইসি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছে এটা তাদের রুটিন কাজ। নতুন কিছু না। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য করতে ইসির কর্মপরিকল্পনায় আমি বিশেষ কিছু পাইনি। যেহেতু আগের নির্বাচনগুলো নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তিনি বলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি বা রাজনৈতিক দলগুলো যে এখন মিটিং করতে পারছে না এতে তাদের কিছু করার নেই বলে যে মন্তব্য সিইসি করেছেন এটার সাথে আমি একমত না। তাদের অনেক কিছুই করার আছে। ইসি সরকারকে বলবে কেন রাজনৈতিক দলগুলোকে মিটিং মিছিল করতে দিচ্ছে না। তাদের প্রো-অ্যাক্টিভ হতে হবে।
তিনি বলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ যদি এখন তৈরি করতে না পারে তাহলে তফসিল ঘোষণার পর তিন মাসে কিভাবে করবে তারা। তিনি বলেন, ভোটার তালিকা প্রস্তুত ও হালনাগাদ করা, সীমানা নির্ধারণ করা এটা তাদের রুটিন কাজ। আইনের কাঠামো পর্যালোচনা ও সংস্কারের যে কথা বলা হয়েছে, সেখানে তারা আইনের কী সংস্কার করবে। ইসির আইনে সেনা মোতায়েন যুক্ত হবে কি না সেটা?
ড. দিলারা চৌধুরী
বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপিকা ড. দিলারা চৌধুরীর মতে, জাতীয় সংসদ বহাল থেকে নির্বাচন হয়, এটা কোনো দেশে আমি দেখিনি। মন্ত্রী-এমপিরা সরকারি গাড়ি, পতাকা ব্যবহার ও পুলিশি নিরাপত্তা নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাবেন তাহলে কিভাবে সেখানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হয়। এখানে নির্বাচন কিভাবে হবে তা নির্বাচন কমিশনের ওই রোডম্যাপ বা কর্মপরিকল্পনা দিয়ে হবে না। এটা হবে ক্ষমতাসীন দলের সরকার প্রধানের ইচ্ছার ওপর ভিত্তি করে। তিনি বলেন, একটা সংসদ ভেঙে দিয়ে, মন্ত্রিসভা ভেঙে দিয়ে জাতীয় নির্বাচন হবে এটাই যৌক্তিক। কিন্তু এসব বহাল রেখে কিভাবে ইসি একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করবেন। ইসির এসব রোডম্যাপ দিয়ে কিছুই হবে না।
তিনি বলেন, সারা বছর দেশে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকে না। আর ইসি ওই তিন মাসে কী লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করবেন। সবার জন্য সমান নির্বাচনী পবিবেশ সৃষ্টি করতে না পারলে এ রোডম্যাপ বা কর্মপরিকল্পনা দিয়ে কিছুই হবে না।
ড. ইফতেখারুজ্জামান
যে রোডম্যাপ নির্বাচন কমিশন দিয়েছে তা বাস্তবায়ন হলে ভালো হবে বলে মনে করছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, আইনের চোখে নিরপেক্ষভাবে ইসি দায়িত্ব পালন করতে পারলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে। ইসিকে আইনিভাবে অনেক ক্ষমতাও দেয়া হয়েছে। তবে সেটা তারা কতটা প্রয়োগ করতে পারবে তা দেখার বিষয়।
ড. ইফতেখারুজ্জামানের মতে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য সরকারের ভূমিকা তো থাকবেই। তবে এখানে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা হলো মুখ্য। ইসি যদি বলে দায়িত্বটা তাদের না তাহলে এ বক্তব্য স্ববিরোধী হবে। আইনগতভাবে ইসির সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব রয়েছে। এখানে কেন্দ্রীয় ভূমিকা ইসিকে পালন করতে হবে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/236676