৪ আগস্ট ২০১৭, শুক্রবার, ১১:১৩

অন্তঃসত্ত্বাকে গণধর্ষণের অভিযোগ যুবলীগ নেতাসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে

অন্তঃসত্ত্বা এক তরুণীকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে যশোরের অভয়নগর থানা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ সাইফারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে সাংবাদিক সম্মেলন করে এই অভিযোগ করেন ঘটনার শিকার তরুণী।
সাংবাদিক সম্মেলনে ওই তরুণী দাবি করেন, তার বাবা অনেক আগেই মারা গেছেন। চার বোনের মধ্যে তিনজনের বিয়ে হয়ে গেছে। মেয়েটি ও তার মা একটি ঘর ভাড়া নিয়ে অভয়নগরে থাকেন। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। নানা বাধা পেরিয়ে চলতি বছর তিনি ৪ দশমিক ৮০ জিপিএ নিয়ে এসএসসি পাস করেছেন। মাঝে কয়েক বছর পড়ালেখা বন্ধ ছিল। যশোরের অভয়নগরের জনি সরদারের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। অভয়নগরে হোটেল আল সেলিমের মালিক জনি। প্রেমের সম্পর্কের সুবাদে ২০১৫ সালের ১০ অক্টোবর জনি তাকে হোটেলে ডেকে নিয়ে মৌলভির মাধ্যমে কলেমা পড়িয়ে ও কয়েকটি স্ট্যাম্পে সই নিয়ে বলেন যে তাদের বিয়ে হয়ে গেছে। এরপর থেকে তারা দাম্পত্য সম্পর্ক রক্ষা করতেন।
তরুণীটির অভিযোগ, চলতি বছর তিনি অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর জনি তাকে গর্ভপাত করানোর জন্য চাপ দিতে থাকেন। গত ১০ জুন তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে গর্ভপাত করানোর চেষ্টা করেন জনি। তিনি যখন তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা, তখন গত ৭ জুলাই মীমাংসার কথা বলে তাকে জনির হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রথমে গর্ভপাত করানোর চেষ্টা হয়। পরে জনি, শেখ সাইফার, সুমন, আজিম মোল্যা ও রুবেল মোল্যা তাকে ধর্ষণ করেন। তিনি অভয়নগর থানায় গেলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। এরপর নানা চাপে মাকে নিয়ে তিনি প্রথমে যশোর ও পরে ঢাকায় চলে আসেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে তরুণীর সঙ্গে তার মা ও কয়েকজন তরুণ উপস্থিত ছিলেন। ওই তরুণেরা নিজেদের ঘটনার শিকার তরুণীর প্রতিবেশী ও এলাকার লোক বলে পরিচয় দেন। তাদের অভিযোগ, তরুণীকে সাহায্য করতে গিয়ে এলাকায় টিকতে না পেরে তারা ঢাকায় এসেছেন। ধর্ষকেরা সবাই সরকারদলীয় নেতাদের কর্মী হিসেবে এলাকায় পরিচিত।
মুদি ব্যবসায়ী পরিচয় দেয়া তরুণদের একজন বলেন, হোটেল আল সেলিমের পাশেই তার দোকান। তিনি মাঝেমধ্যেই ওই হোটেলের নিচতলায় যান টয়লেট ব্যবহার করতে। সেদিন গিয়ে ওপর থেকে কান্নার শব্দ পান। এরপর দোতলার একটি কক্ষের সামনে গিয়ে কান্নার জোর শব্দ শুনে কৌতূহলবশত দরজা ধরতেই সেটি হালকা ফাঁকা হয়ে যায়। ভেতরে তিনি এক তরুণীকে দেখেন। পরে জনি তাকে তাড়িয়ে দেন। পরে মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে বের হলে তিনি পুরো ঘটনা জানতে পারেন। কিন্তু ঘটনা জেনে মেয়েটির পাশে দাঁড়ানোর সাহস হয়নি তার। তবে মেয়েটিকে তিনি থানায় যেতে বলেছিলেন। মেয়েটি থানায় গেলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। পরে মেয়েটিকে মামলা করতে সাহায্য করতে গেলে অভিযুক্ত ধর্ষণকারীরা তার দোকানটাই বন্ধ করে দেন। তিনিও পালিয়ে ঢাকায় চলে আসেন।
বিষয়টি নিয়ে গত ২৮ জুলাই যশোরেও সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলেন ওই তরুণী।
থানা-পুলিশ তরুণীর মামলা না নিলে তিনি যশোর আদালতে দুটি মামলা করেন। ব্যাভিচারের অভিযোগে প্রথমে তিনি জনি সরদারের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে জনি, শেখ সাইফার, সুমন, আজিম মোল্যা ও রুবেল মোল্যাকে আসামী করে আদালতে আরেকটি মামলা করেন ওই তরুণী।

 

http://www.dailysangram.com/post/294653-