২৯ জুলাই ২০১৭, শনিবার, ১০:৪৭

মোস্যাক ফনসেকার গোপন নথি : ফেঁসে গেছেন ৭২ রাষ্ট্রনেতা

কালো টাকা জমানোর নেশায় বিদ্ধ গোটা দুনিয়ার বড় বড় ব্যক্তিত্ব। সেখানে শুধু ধনী দেশগুলির পৃষ্ঠপোষকরাই নন, রয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্টের মতো ‘সর্বহারা’-র প্রতিনিধিরাও। তবে কি কালো টাকা জমানোর নেশা ভূগোলের সব বেড়ি-বাঁধনকেই ভেঙে দিল? 

২০১৬-র ৩ এপ্রিল, পানামার একটি ল’ ফার্মের ১ কোটি ১০ লক্ষ গোপন নথি ফাঁস হওয়ার ঘটনা অন্তত তেমনই জানিয়েছিল। বিশ্বের ধনী আর ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা কোন কৌশলে কর ফাঁকি দিয়ে গোপন সম্পদের পাহাড় গড়েছেন, ওই নথিতে বেরিয়ে এসেছে সেই তথ্য। কে নেই সেই অভিযোগের তালিকায়! অভিনেতা জ্যাকি চ্যাং, বিশ্বসেরা ফুটবলার লিওনে মেসি থেকে চীনের প্রেসিডেন্ট জি জিনপিং। বাদ যাননি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট, সৌদি আরবের বাদশারাও।
বিশ্বের যেসব প্রতিষ্ঠান গোপনীয়তা রক্ষার জন্য বিখ্যাত, পানামার এই মোস্যাক ফনসেকা তাদের মধ্যে অন্যতম। গত ৪০ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি তাদের ক্ষমতাশালী মক্কেলদের কীভাবে অর্থ পাচারে সহযোগিতা করেছে, নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর এবং কর ফাঁকি দেওয়ার পথ দেখিয়েছে— সেইসব মাথা ঘুরে যাওয়া তথ্য পাওয়া যাচ্ছে এইসব নথিতে। এই মক্কেলদের মধ্যে ৭২ জনের নাম পাওয়া গেছে, যারা কোনো না কোনো দেশের সাবেক বা বর্তমান রাষ্ট্রপ্রধান। সেই তালিকায় রয়েছেন ৫০০-র বেশি ভারতীয়। নিজেদের দেশে লুটপাট চালিয়ে টাকার কুমির হয়েছেন, এমন কিছু স্বৈরশাসকের নামও তালিকায় রয়েছে। মোস্যাক ফনসেকার সেই তালিকায় রয়েছেন মিসরের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক, লিবিয়ার সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান মোয়াম্মার গাদ্দাফি এবং সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ।
এইসব নথিতে বিলিয়ন ডলার পাচারের একটি চক্রের সন্ধান মিলেছে, যা পরিচালিত হয় একটি রুশ ব্যাংকের মাধ্যমে এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কয়েকজন ঘনিষ্ঠ সহযোগীও তাতে জড়িত বলে অভিযোগ।
নাম প্রকাশ করা হয়নি এমন একটি সূত্র থেকে মোস্যাক ফনসেকার ওই ১ কোটি ১০ লাখ নথি জার্মান দৈনিক সুয়েডয়েশ সাইটংয়ের হাতে এসেছিল।
এরপর সুয়েডয়েশ সাইটং সেইসব নথি ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টসকে (আইসিআইজে) দেয়। আইসিআইজে-এর কাছ থেকে সেসব নথি পেয়েছিল বিবিসি, গার্ডিয়ানসহ ৭৮টি দেশের ১০৭টি সংবাদমাধ্যম। এখনো চলছে এইসব নথির বিশ্লেষণ। সম্পদের তথ্য গোপন রেখে কর ফাঁকি দিতে মোস্যাক ফনসেকা কীভাবে হোমরা চোমরাদের সহযোগিতা করে আসছিল, তার বিবরণ পাওয়া গেছে। কালোটাকার পাহাড় গড়ার তালিকায় রয়েছেন গদিচ্যুত পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের তিন সন্তান— মারিয়াম, হাসান এবং হুসেনের নাম। বিদেশে ছাড়য়ে ছিটিয়ে থাকা অন্তত ৪টি বেআইনি সংস্থা রয়েছে এদের নামে। ‘অভিযোগের তীর’ রয়েছে চীনা প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধেও। অথচ, নিজের দেশে সর্বোচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট শি জিংপিং। দুর্নীতিবিরোধী এই অভিযানে দেশের শীর্ষ পদগুলোতে ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির এমন অনেক নেতা শাস্তিও পেয়েছেন। আর ফাঁস হওয়া নথিপত্রে সেই চীনের প্রেসিডেন্ট জি জিনপিং ও তার পরিবারের সদস্যদের বিদেশে গোপন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে বলে জানা গেছে। আরও অনেক নামি দামি লোকের মতো আর্জেন্তিনার ফুটবল তারকা লিওনে মেসির নামও পাওয়া গিয়েছে মোস্যাক ফনসেকার মক্কেলদের তালিকায়। ঘটনার পর আইসিআইজে-এর পরিচালক জেরার্ড রাইল বলেছিলেন, গত ৪০ বছরে মোস্যাক ফনসেকার দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের দলিল এইসব নথি। এতেই প্রমাণিত, সাধু হিসেবে পরিচিত ব্যক্তিরা মুখে সাধু কথা বলে কীভাবে কাঁড়ি কাঁড়ি কালোটাকা জমিয়েছেন।
সংবাদ সংস্থা

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/239760