২৯ জুলাই ২০১৭, শনিবার, ১০:৩২

বিক্ষোভের আশঙ্কায় আল-আকসায় ফের নিষেধাজ্ঞা সংঘর্ষ শতাধিক হতাহত

জুমার নামাজকে কেন্দ্র করে আবারও উত্তাল হয়ে উঠেছে জেরুজালেমে অবস্থিত ইসলামের প্রথম কিবলা আল আকসা মসজিদ। বিভিন্ন নিরাপত্তা সরঞ্জাম প্রত্যাহারকে ইসরায়েলি বাহিনীর পরাজয় বিবেচনা করে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই মসজিদ প্রাঙ্গনে বিজয় উদযাপন শুরু করেন মুক্তিকামী ফিলিস্তিনিরা। সে সময় মসজিদে প্রবেশ করতে গেলে ইসরায়েলি পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রায় ১১৩ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। শুক্রবার উত্তাল বিক্ষোভের শঙ্কায় আবারও ৫০ বছরের কম বয়সী মুসলিমদের জন্য মসজিদ প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। এদিকে গত মঙ্গলবারের সংঘর্ষে আহত এক ফিলিস্তিনির মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এবারের সংঘর্ষে নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ জনে।

১৪ জুলাই নিরাপত্তার অজুহাতে আল-আকসার প্রবেশ পথে মেটাল ডিটেক্টর বসায় ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ৫০ বছরের কম বয়সী কাউকেও প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ফিলিস্তিনের দাবি, আল-আকসা দখলের পায়তারা হিসেবেই তারা এই ব্যবস্থা নেয়। তুমুল বিক্ষোভ আর প্রতিরোধের মুখে অবশেষে বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) মসজিদের প্রবেশ পথ থেকে নিরাপত্তা বেষ্টনী ও গেটগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়। সামাজিক মাধ্যম ও টেলিভিশনে আল-আকসার প্রবেশ পথ থেকে ইসরায়েলের নিরাপত্তা সরঞ্জাম সরিয়ে নেওয়ার খবর প্রকাশের পরই ফিলিস্তিনিরা জড়ো হতে শুরু করেন। ইসরায়েলের দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেমের বিভিন্ন এলাকার ফিলিস্তিনিরা আল-আকসা মসজিদের লায়ন্স গেট-এ জড়ো হয়ে বিজয় উদযাপন করেন।
ইসরাইলের পিছু হটার ঘটনায় আনন্দ উদযাপনে অংশ নেন প্রবীণ ধর্মীয় নেতারা। তারা প্রতিবাদকারীদের উদ্যমের প্রশংসা করেন। তবে সব ধরনের নিরাপত্তা প্রত্যাহারের আগে মসজিদের ভেতরে প্রবেশ না করতে সতর্ক করেন তারা। পরে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ও মসজিদ কর্তৃপক্ষের অনুরোধ মুসল্লিরা মসজিদে প্রবেশ করতে শুরু করেন। তবে প্রবেশ পথেই ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর মুখে পড়েন তারা। পুলিশ তাদের উপর রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মসজিদের প্রবেশ পথে মুসল্লিদের উপর স্টানগ্রেনেড ছোঁড়ে ইসরায়েলের পুলিশ। তাদের দাবি, ফিলিস্তিনিরা তাদের উপর পাথর নিক্ষেপ করলে গ্রেনেড ছুঁড়তে বাধ্য হয় তারা। ফিলিস্তিনের রেড ক্রস জানায়, এই ঘটনায় অন্তত ১০০ জন ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। পুলিশ তাদের উপর রাবার বুলেট ও লাঠি চার্জ করে। এতে অনেকের হাঁড় ভেঙে যায়।
বৃহস্পতিবারের সংঘর্ষের পর শুক্রবার আবারও আল আকসা প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত নেয় ইসরায়েলি প্রশাসন। আল-জাজিরার খবর থেকে জানা যায়, ৫০ বছরের কম বয়সী কোনও পুরুষকে আল-আকসা মসজিদে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে তারা। ইসরায়েলি পুলিশের মুখপাত্র মিকি রোজেনফিল্ড বলেন, শুক্রবার আল-আকসায় ফিলিস্তিনিরা বিক্ষোভ করতে পারেন এমন আশঙ্কায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তার দাবি, বৃহস্পতিবার রাত থেকেই মসজিদে অনেকে অপেক্ষা করছেন বিক্ষোভ করার জন্য। তারা বের হতে না চাওয়ায় পুলিশ তাদের জোর করে বের করে দিতে বাধ্য হয়েছে।
এদিকে আল-আকসাকে ঘিরে উত্তেজনায় পুলিশের গুলিতে আহত হওয়া আরও এক ফিলিস্তিনি যুবকের মৃত্যুর খবর দিয়েছে আল জাজিরা। মঙ্গলবার মুহাম্মদ কানন নামে ওই যুকের মাথায় গুলি করে ইসরায়েলি পুলিশ। তিনদিন পর বৃহস্পতিবার রাতে তাকে মৃত ঘোষণা করে চিকিৎসকরা।
আল আকসার সামনে বন্দুকধারীর হামলায় দুই ইসরায়েলি পুলিশ ও তিন সন্দেহভাজন নিহত হওয়ার পর ইসরায়েল মেটাল ডিটেক্টর ও অন্যান্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা স্থাপন করে। ইসরায়েলের পুলিশের দাবি, নিহতরা মসজিদের ভেতরে অস্ত্র লুকিয়ে রেখেছিল। মেটাল ডিটেক্টর স্থাপনের পর ধর্মীয় নেতারা মসজিদে প্রবেশে অস্বীকৃতি জানান। তারা দাবি করেন, এর মধ্য দিয়ে সহাবস্থানের নীতি ভঙ্গ করা হয়েছে। যে সহাবস্থানের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন ধর্মালম্বীদের প্রার্থনার সুযোগ রাখা হয়েছে। আল-আকসার পরিস্থিতি শান্ত করার করার সবপক্ষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানায় জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।

 

http://www.dailysangram.com/post/293761-