৩ আগস্ট ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১০:১৯

বিদেশের শ্রমবাজার থেকে দুঃসংবাদ আসছে বাংলাদেশীদের জন্য

মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে থেকে অর্ধ-শতাধিক বাংলাদেশী শ্রমিককে ধরে নিয়ে গেছে সে দেশের পুলিশ। গতকাল বুধবার দুপুরে মালয়েশিয়ান ইমিগ্রেশন পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়। এছাড়া দেশটিতে লাখ লাখ অবৈধ বাংলাদেশী রয়েছেন গ্রেফতারের আশঙ্কায়। আর বৈধভাবে মালয়েশিয়ায় ঢুকতে গিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন বাংলাদেশের মানবাধিকার কর্মী আদিলুর রহমানসহ আরও অনেকে। কেবল মালয়েশিয়ায় নয় বাংলাদেশীদের জন্য বিদেশে শ্রমবাজার সৌদিআরব, তুরস্ক, কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকেও একের পর এক দু:সংবাদ আসছে।
বিদেশের শ্রমবাজারে বাংলাদেশীদের জন্য দুঃসংবাদ বাড়ছে। বিদেশ থেকে বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে দিতে নানা রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। আর অবৈধভাবে অবস্থান করা শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনতে নতুন নতুন দেশ থেকে তালিকা ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে। বলা হচ্ছে, দ্রুত অবৈধ শ্রমিকদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করো। অন্যথায় ভিসা নিষিদ্ধসহ নানা বার্তা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা অবশ্য এ নিয়ে তেমন কোনো চিন্তা করছেন না। তারা বলছেন, বিভিন্ন দেশে যাওয়া ও ফিরে আসা রুটিন বিষয়। এখানে চিন্তিত বা দুঃসংবাদের কিছু নেই।
সৌদি সরকারের সাধারণ ক্ষমার আওতায় ৫০ হাজারের বেশি বাংলাদেশী শ্রমিক দেশে ফিরতে আবেদন করেছেন। গত ২৫ জুলাই সৌদি গেজেট এ খবর দিয়েছে। সৌদি গেজেটের সংবাদে বলা হয়েছে, প্রায় ৪৫ হাজার বাংলাদেশী তাদের স্বদেশে ফেরার প্রক্রিয়া সৌদি আরবেই সম্পন্ন করতে পেরেছে। এর মধ্যে ২০ হাজার বাংলাদেশী শ্রমিক সৌদি আরব ত্যাগ করেছে। অবৈধভাবে ইউরোপে যাওয়া বা বৈধ পথে ইউরোপে গিয়ে অবৈধ হয়ে পড়া ৯৩ হাজার বাংলাদেশীকে ফিরিয়ে আনার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া সংক্রান্ত স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরস এসওপি সাক্ষরের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অব্যাহত চাপের কারণে বাংলাদেশ সরকারকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
জানা গেছে, ইউরোপে থাকা বাংলাদেশীদের বিষয়ে ঢাকাকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তথ্য বা পরিসংখ্যান দেয়নি ব্রাসেলস। তবে ইউরোপীয় কমিশনের পরিসংখ্যান অধিদপ্তর ইউরোস্ট্যাট এ নিয়ে তথ্য প্রকাশ করে বলেছে, ইইউভুক্ত দেশগুলোয় ২০০৮ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত অবৈধভাবে প্রবেশ করেছেন মোট ৯৩ হাজার ৪৩৫ জন বাংলাদেশী। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবেশ করেন ২০১৫ সালে, ২১ হাজার ৪৬০ জন। ২০১২ সালে ইউরোপে যান ১৫ হাজার ৩৬০ জন বাংলাদেশী।
এদিকে অবৈধভাবে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টায় তুরস্কে গিয়ে আটকা পড়েছেন প্রায় ২০০০ বাংলাদেশী। তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আল¬ামা সিদ্দিকীকে উদ্ধৃত করে গত ৫ই জুলাই তথ্য অধিদপ্তর এ তথ্য জানিয়েছে। তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, তুরস্ক হয়ে যেসব বাংলাদেশী অবৈধভাবে ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করছেন তাদের রাষ্ট্রদূত এবং দূতাবাসের তরফে এরই মধ্যে সতর্ক করা হয়েছে। রাষ্ট্রদূত সরকারি মাধ্যমকে জানান, সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে ইরান, লেবানন ও জর্ডানে বৈধভাবে কর্মরত বাংলাদেশীদের অনেকের ইউরোপে অনুপ্রবেশের আশায় তুরস্কে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। আঙ্কারা দূতাবাস ও ইস্তাম্বুল কনস্যুলেটের হিসাব মতে, দেশটিতে এ মুহূর্তে ২০০০ বাংলাদেশী আটকা রয়েছেন।
তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, তুরস্কের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিদ্যমান অভিবাসন চুক্তির আওতায় ইউরোপে পাড়ি জমানো অসম্ভব, তাই এ ধরনের অপচেষ্টা অর্থহীন। সেখানে রাষ্ট্রদূতকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, বাংলাদেশী নাগরিকরা তুরস্কে বিভিন্ন সংঘবদ্ধ দলের খপ্পরে পড়ে অর্থের লোভে বিভিন্ন সন্ত্রাসমূলক কাজে জড়িত হচ্ছেন। এর আগে গত ৩০ জুন থেকে মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশী ধরপাকড় শুরু হয়। ধরপাকড়ের সময় এক হাজার অবৈধ বাংলাদেশী মালয়েশিয়াতে আটক হয়েছেন। গতকাল আবারো ধরপাকড়ের শিকার হয়েছেন বাংলাদেশীরা।
সূত্রে জানা গেছে, সৌদি আরব, কাতার, মালয়েশিয়া, তুরস্ক ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশের বাইরে কুয়েত ও ইরাকসহ আরো কয়েকটি দেশে বাংলাদেশীদের শ্রমবাজার ঝুঁকির মুখে রয়েছে।
বিদেশে বাংলাদেশীদের ধরপাকড়ের বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাভেদ আহমেদ বলেন, অবৈধ অভিবাসী ঠেকাতে গ্রেফতার প্রক্রিয়া মালয়েশিয়ান সরকারে নিয়মিত কার্যক্রম। এটা নিয়ে আমাদের ভয়ের কোনো কারণ নেই। সেখানে চার লাখ বাংলাদেশী কর্মী বৈধভাবে কর্মরত রয়েছে। তিনি বলেন, জি টু জি প্লাস শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ৫-৬ হাজার কর্মী গেছে। তবে জাভেদ আহমেদ স্বীকার করেন মালয়েশিয়ায় অবৈধ শ্রমিকের ডিমান্ড রয়েছে। একশ্রেণির প্রতারক চক্র অবৈধ শ্রমিক পাঠায় যাদের বৈধ কাগজপত্র থাকে না।

 

http://www.dailysangram.com/post/294548-