৩ আগস্ট ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১০:১৮

আইনের শাসনের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রধান বিচারপতি

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ জাতীয় ইস্যুতেও যখন দেখি আইনজীবীরা বিভক্ত তখন বিষয়টি আমাকে উদ্বিগ্ন করে তোলে। আমরা আজকে রুল অব ল ভুলে গেছি। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ইস্যুতেও আইনজীবীরা এক হতে পারেন না। আইনজীবীরা আজ স্পষ্টত দ্বিধাবিভক্ত। একজন একপক্ষে কথা বললে অন্যপক্ষ তার বিপক্ষে কথা বলেন। এভাবে চললে আইনের শাসনের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি খুবই উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও বিচারককে ভালো রায় লিখতে আইনজীবীরা সাহায্য করবেন। কিন্তু সেই রকম আইনজীবী দিন দিন কমে যাচ্ছে। এটা খুবই উদ্বেগের। দেশে আইনের শাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে হলে আইনজীবীদের পথ প্রদর্শকের ভূমিকা পালন করতে হবে। তা না হলে যে সভ্যতা পেয়েছি, তা হারিয়ে মধ্য যুগের বর্বরতা ফিরে আসবে।

সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ এ বি মাহমুদ হোসেনের ৩৫তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন উপলক্ষে গতকাল বুধবার এক আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধান বিচারপতি। সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছির হোসেনের সভাপতিত্বে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ সভায় প্রখ্যাত আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, সাবেক রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জমির বক্তৃতা করেন। বিচারপতি সৈয়দ এ বি মাহমুদ হোসেন স্মৃতি সংসদ এ আলোচনাসভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, অষ্টম সংশোধনীর মামলায় আমরা দেখেছি দল-মত নির্বিশেষে গোটা আইনজীবী সমাজ আইনের শাসন রক্ষায় এক সাথে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। আজ আমরা সেই ভূমিকার কথা ভুলে যাচ্ছি। আমরা আইনের শাসনের কথা ভুলে যাচ্ছি। তিনি বলেন, লর্ড ডেনিং। একজন প্রখ্যাত বিচারপতি। তিনি নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় তার মতো লেকেরা ২০০ বা ২৫০ বছর আগে যে সাহসী ভূমিকা রেখেছিলেন, একাবিংশ শতাব্দীতে এসে আজ আমরা সে সাহস দেখাতে পারছি না। আজ সারা পৃথিবীতে উগ্রবাদ, ক্ষমতার লড়াই, ব্যবসা, টাকার পাহাড় গড়ায় ব্যস্ত। কেউ নিজের অবস্থান নিয়ে সন্তুষ্ট নই।
তিনি বলেন, ১৯৮২ সালের আগে যে সুপ্রিম কোর্ট দেখেছি, আজ সেই সুপ্রিম কোর্ট নেই। এ জন্য আইন পেশায় যারা আছেন, তারাই অনেকাংশে দায়ী। আজ সত্যিকারের দক্ষ আইনজীবী খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। দিন দিন দক্ষ আইনজীবী বিলীন হয়ে যাচ্ছেন। এক শ্রেণীর আইনজীবী আছেন, যারা শুধুই টাকার দিকে ছুটছেন। মক্কেলের কি হলো সেদিকে তাদের খেয়াল থাকে না। তাদের টাকা হলেই হলো। তাদের ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি। যেকোনোভাবে ক্ষমতায় যাওয়া বা টাকা কামানোর দিকে নজর। এ পথ পরিহার করে আইনজীবীদের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করার আহ্বান জানান প্রধান বিচারপতি। তিনি গরিব বিচার প্রার্থীদের পক্ষে বিনা টাকায় মামলা পরিচালনা করতে আইনজীবীদের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, শুধুই আইনজীবী নন, আজ দক্ষ বিচারপতিরও অভাব। আর ভালো আইনজীবী না হলে ভালো বিচারকও পাওয়া যায় না। কারণ বেশির ভাগ বিচারক নিয়োগ দেয়া হয় আইনজীবীদের মধ্য থেকে। তাই দক্ষ বিচারক তৈরির জন্য একটা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট করা দরকার।
আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, আগে কি সুন্দর পরিবেশ ছিল। কখনো আদালতে দলীয় চিন্তা ঢোকেনি। আগে জাজ নিয়োগ হতো পেশাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে। সেখানে কোনো দলীয় চিন্তা আসত না। তিনি বলেন, আইন, সংবিধান নিয়ে প্রশ্নে আমরা দল-মত নির্বিশেষে মোকাবেলা করেছি। তখন বার নির্বাচনে দলের আশীর্বাদ না নিয়েও সফল হওয়া যেত। এখন তা সম্ভব না।
ড. মোহাম্মদ জমির বলেন, বিচারপতি সৈয়দ এ বি মাহমুদ হোসেন নৈতিকতার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। তার মতো লোক হলে দেশের উন্নতি হবে। নৈতিক অবক্ষয় থেকে রক্ষা পাবো। দেশে রাজনৈতিক অবক্ষয়ের কারণে যে ক্ষতি হচ্ছে, তা থেকে রক্ষা পাবো।
বক্তারা সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ এ বি মাহমুদ হোসেনকে ধার্মিক, সৎ, ন্যায়পরায়ণ ও উদার মনসিকতার মানুষ হিসেবে উল্লেখ করেন। তারা বলেন, বিচারপতি সৈয়দ এ বি মাহমুদ হোসেন ধার্মিক ছিলেন। কিন্তু তার মধ্যে ধর্মীয় গোঁড়ামি ছিল না।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/241094