৩ আগস্ট ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১০:১৫

বন্দুকযুদ্ধ’ ও ‘ক্রসফায়ার’ চলছেই

৬ মাসে ১০৫টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড

‘বন্দুকযুদ্ধ’ ও ‘ক্রসফায়ার’ এ নিহতের ঘটনা চলছেই। প্রায়ই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিহতের ঘটনা ঘটছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্তাদের বক্তব্য নিহতরা অপরাধের সাথে জড়িত। তাদের মধ্যে পেশাদার সন্ত্রাসী, খুনি বা উগ্রবাদী সংগঠনের সদস্য রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাষ্যমতে বেশির ভাগ ঘটনা ঘটছে অপরাধীদের নিয়ে অভিযানের সময়। তাদের সহযোগীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর আক্রমণ করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও জান-মাল রক্ষার্থে পাল্টা আক্রমণ চালায়। তখনই এরূপ ঘটনা ঘটছে। গত সাত মাসে শতাধিক মানুষ এভাবেই নিহত হয়েছেন বলে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পরিসংখ্যান থেকে পাওয়া যায়। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) সম্প্রতি তথ্য প্রকাশ করেছে যে গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিচারবহির্ভূতভাবে ৯০ জন নিহত হয়েছেন। জুলাইয়ে আরো অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন।
গত ৩১ জুলাই রাতে ঢাকার কেরানীগঞ্জে মোক্তার হোসেন আমির ওরফে ল্যাংড়া আমির পুলিশের ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হয়। আমির আগেও একবার ক্রসফায়ারে পড়েছিল। সে যাত্রায় বেঁচে যায় আমির। তার বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, মাদক ব্যবসাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে বলে পুলিশ জানায়।
গত ২৬ জুলাই রাজধানী ঢাকা ও কুষ্টিয়ায় পুলিশের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ চারজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দু’জন ঢাকার মিরপুরের রূপনগর এলাকায় এবং অপর দু’জন কুষ্টিয়া সদর ও ভেড়ামারা উপজেলায় নিহত হয়েছেন। আশুলিয়ায় এএসপি মিজানুর রহমান হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত দু’জন নিহত হয়েছে মিরপুরে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, ‘রাজধানীর মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে দুই ছিনতাইকারী নিহত হয়েছে।’ ২৬ জুলাই ভোর ৫টার দিকে বেড়িবাঁধ পানি উন্নয়ন বোর্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দুই ছিনতাইকারীকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
সূত্রে আরো জানা যায়, মিরপুর বেড়িবাঁধ সড়কে সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এরই পরিপ্রেেিত ডাকাতদের ধরতে সেখানে অভিযান চালানো হয়। নিহত দু’জন ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য। অপর দিকে কুষ্টিয়া সদর ও ভেড়ামারা উপজেলায় পুলিশের সাথে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুইজন নিহত হয়েছেন। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়নুল আবেদীন ঘটনার পর সাংবাদিকদের জানান, ২৬ জুলাই ভোরে সদর উপজেলার বাড়াদী ও ভেড়ামারা উপজেলার দশমাইলে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, কুষ্টিয়ার কুমারখালীর মনোহরপুর এলাকার নূরউদ্দিনের ছেলে সোবহান আলী (৩৭) ও মেহেরপুর জেলার মনোহরদিয়া গ্রামের আলীম উদ্দিনের ছেলে হাসানুজ্জামান (৩৫)। পুলিশের দাবি সদর উপজেলার বাড়াদী ও ভেড়ামারা উপজেলার দশমাইলে সড়কে গাছ ফেলে ডাকাতি হচ্ছে বলে খবর আসে। জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও সদর থানার পুলিশ বাড়াদীতে আর ভেড়ামারা থানার পুলিশ দশমাইলে অভিযান চালায়। উভয় জায়গায় ডাকাতদল পুলিশকে ল্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশ পাল্টা গুলি করলে ডাকাত সোবহান ও হাসানুজ্জামান ঘটনাস্থলেই মারা যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশী পিস্তল, একটি দেশী শাটারগান, দু’টি গুলি ও করাত উদ্ধার করে।
পুলিশ বলেছে, নিহত সোবহানের বিরুদ্ধে কুমারখালী, রাজবাড়ী, ঈশ্বরদী, কুষ্টিয়া মডেল থানায় হত্যা ও ডাকাতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে আটটি, আর হাসানুজ্জামানের বিরুদ্ধে গাংনীসহ বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
গত ৩০ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কেরানীগঞ্জে ক্রসফায়ারে তিনজন নিহত হয়। এভাবেই একের পর এক ক্রসফায়ার ও বন্দুকযুদ্ধে নিহতের ঘটনা ঘটছে।
মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের প্রতিবেদন অনুযায়ী চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে ৭৯ জন। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ১৫ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৭ জন, মার্চে ১৯ জন, এপ্রিলে ৮ জন, মে মাসে ৮ জন এবং জুনে ১২ জন ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে। এই সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছে একজন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতনে নিহত হয়েছে চারজন এবং পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে একজনকে। তবে আসক-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী এর সংখ্যা ৯০ জন।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/240951