৩ আগস্ট ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১০:০৭

ঢাকায় পথচারীদের দুর্ভোগ সচিবালয়ে হাঁটুপানি

মামুন হাসান মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রশাসনিক কর্মকর্তা। অফিস শেষে বাসায় ফিরবেন। বারান্দায় দাঁড়িয়ে। কিন্তু হাঁটুসমান জলের কারণে বের হতে পাচ্ছেন না। পরে জুতা- মোজা খুলে প্যান্ট গুটিয়ে পথে নামেন তিনি। সচিবালয়ের বহু কর্মকর্তা আর কর্মচারীকে দেখা গেছে পানির কারণে অলস দাঁড়িয়ে থাকতে। কেউ কেউ ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন। আষাঢ় শেষ। শ্রাবণ মাস প্রায় প্রদিদিনই থেমে থেমে হচ্ছে ভারি বর্ষণ। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়, মতিঝিল, বঙ্গভবনের সামন, পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোড, জয়নাগ রোড, মগবাজার, শান্তিনগর, বাসাবো, যাত্রাবাড়ী, সূত্রাপুর, রামপুরা ও মিরপুরসহ নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক ও অলিগলিতে পানি থৈ থৈ করেছে। এছাড়া পল্টন, নয়াপল্টন, মৌচাক, মালিবাগ এলাকা তলিয়ে গেলো পানির নিচে। বনানী, মহাখালী এলাকাতেও অনেক স্থানে সড়কে পানি উঠে যান চলাচল ব্যাহত হয়। এদিকে বৃষ্টিতে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা- বিশেষ করে জাতীয় সংসদ, ও সুপ্রিম কোর্ট চত্বরও ছিল পানির নিচে। দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, বহুবার মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও কখনোই সচিবালয়ে এত বৃষ্টির পানি জমতে দেখেননি। তবে ভবিষ্যতে আর এ ধরনের দুর্ভোগের সৃষ্টি হবে না বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। গতকাল মাত্র অল্প সময়ের বৃষ্টিতেই হাঁটু পরিমাণ পানি জমে যায় প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ে। ফলে বিড়ম্বনায় পড়েছেন মন্ত্রী-সচিবসহ সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতেই বাণিজ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, অনেকবার মন্ত্রী ছিলাম কিন্তু সচিবালয়ে এত পানি দেখিনি। এর আগে বাণিজ্যমন্ত্রী বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত মাসাতো ওয়াটানাবেসহ সে দেশের একটি বাণিজ্য প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক অতিরিক্ত সচিব ইনকিলাবকে বলেন, প্রশাসনের প্রানকেন্দ্র সচিবালয় সেখানে প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিপরিষদের সকল মন্ত্রী অফিস করেন। তারপরও প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় যদি পানি জমে থাকে তাহলে অন্যান্য জায়গার কী অবস্থা?’ দুপুরের বৃষ্টির পর তিন ঘণ্টা পার হলেও পানি নামেনি সচিবালয় থেকে। যদি ওয়াসা থেকে বলা হয়েছিল, বৃষ্টির তিন ঘণ্টার মধ্যেই পানি নেমে যাবে। গতমঙ্গলবারও একই চিত্র দেখা গিয়েছিল প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্রে। সেদিন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে এক সভায় ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসকিন এ খান বলেন, ঢাকা যতো বৃষ্টিপাতই হোক তিন ঘণ্টার মধ্যে অধিকাংশ জায়গা থেকে বৃষ্টির পানি নেমে যাবে।’ কিন্তু সচিবালয় থেকে পানি নামেনি। এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি ওয়াসা। স্থানীয় সরকার বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, পানিতে পুরো সচিবালয়ে থৈ থৈ করছে। কীভাবে বের হবো চিন্তায় আছি। জুতা খুলে পুরো রাস্তায় খালি পায়ে হেঁটে যাওয়া ছাড়া উপায় নাই। তবে সচিবালয়ে বেশি ভোগান্তির মুখে পড়েছেন নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রতিবছল কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এই টাকা যায় কোথায়। কেন বার বার জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। গত মঙ্গলবার বিকালে সচিবালয়ে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সম্মেলন কক্ষে বর্ষা মৌসুমে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ এবং চট্টগ্রাম মহানগরীসহ সংশ্লিষ্ট এলাকাসমূহে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে এক সভায় করা হয়। সভায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জ দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নগরী। দেশের প্রায় ৬০ শতাংশ অর্থনীতি এই তিন নগরীর উপর নির্ভরশীল। সাম্প্রতিক জলাবদ্ধতা এ নগরী গুলোর জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করেছে। জলাবদ্ধতা দূরীকরণে সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্থা গুলোকে পারস্পরিক দোষারোপ বন্ধ করে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করে সমাধান বের করতে হবে। গত কয়েকদিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টি নামছিল নগরজুড়ে। গতকাল বুধবার বিকালে প্রায় ২-৩ ঘণ্টা টানাবৃষ্টিতে জলজট আর যানজটে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে রাজধানীবাসী। রাজধানীর অধিকাংশ রাস্তা পানিতে থৈ থৈ করছে, শহরকে মনে হচ্ছে কোনো সমুদ্র সৈকত। কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও কোমর অবধি। জলজট-যানজটে অচল ঢাকা। ট্রাফিকিং ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। পানিবদ্ধতার ফলে রাজধানীতে আবশ্যিকভাবে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়। খানাখন্দকে ভরা সড়কে থৈ থৈ পানি। এতে যানবাহন খুব সাবধানে ধীরগতিতে চলাচল করে। এতে গাড়ির দীর্ঘ সারি তৈরি হয়। সামান্য দূরত্বের গন্তব্যে পৌছাতে ঘন্টার পর ঘন্টা পেরিয়ে যায়। পানিবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশন, ওয়াসা এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের সমন্বয়হীনতার বিষয়টি এখন সর্বত্রই অলোচিত হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠান পানিবদ্ধতার জন্য একে অপরকে দায়ী করে নিজেদের দায় এড়াতে চাচ্ছেন। নগর পরিকল্পনাবিদ বা পরিবেশবিদরা অবশ্য রাজধানীর বিীবন্ন খাল অবৈধভাবে দখল করে ভরাট করারকে পানিবদ্ধতার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন। নগরীর অনেক খাল ও নালা ছিল। সেগুলো ভরাট বা বেদখল হয়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক গতিতে পানি নামতে পারছে না। পানি নিষ্কাষণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড নগরীর চার পাশে জমে থাকা পানি পাম্প করে নদীতে ফেলে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন অবশ্য বলেছেন, নগরীতে পানিবদ্ধতার এই সমস্যা আগামী বছর আর থাকবে না। ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান জানিয়েছেন, নগরীর পানি ব্যবস্থাপনাকে একটি সংস্থার আওতায় এনে দায়িত্ব দেয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। আর সেই দায়িত্ব দেয়া হতে পারে ঢাকা ওয়াসাকে।
ভারী বর্ষণ হতে পারে
ময়মনসিংহ, রাজশাহী, রংপুর, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। গতকাল বুধবার সকাল ৯টা থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ কথা জানানো হয়েছে। এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আবহাওয়া অধিদফতর আরো জানায়, সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। ঢাকায় বাতাসের গতি ও দিক দক্ষিণ/দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ১০-১৫ কিলোমিটার । গতকাল সকাল ৬টায় ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আদ্রতা ছিল ৯৬ শতাংশ। ঢাকায় আজ সূর্যাস্ত সন্ধ্যা ৬টা ৪১ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ভোর ৫টা ২৮ মিনিটে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। আবহাওয়া চিত্রের সংক্ষিপ্তসারে বলা হয়েছে, মৌসুমী বায়ুর অক্ষ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, হিমালয়ের পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃৃত। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে দুর্বল থেকে মাঝারি অবস্থায় বিরাজ করছে।

 

https://www.dailyinqilab.com/article/90158/