৩ আগস্ট ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৯:৫৬

অন্য দৃষ্টি

ক্ষমতার স্বাদ নিতে বেপরোয়া

জসিম উদ্দিন

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আঙিনায় ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক এখন তলানিতে ঠেকেছে। শিক্ষক-ছাত্রের বাইরে অভিভাবকেরাও কখনো কখনো এর সাথে দৃষ্টিকটুভাবে জড়াচ্ছেন। সৃষ্টি হয়েছে প্রধান শিক্ষকের কান ধরে উঠবসের ঘটনাও। এই নেতিবাচক ও লজ্জাজনক উদাহরণগুলোর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত হতে দেখা যায়। লাঞ্ছনা অনেক সময় সীমা ছাড়িয়ে মারধরের পর্যায়েও চলে যায়। তবে শনিবার যেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার উল্টো ঘটনা ঘটল। ছাত্রদের ওপর হামলা করলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক। ছাত্ররাও যেন এর ‘জবাব’ দিয়েছে একই কায়দায়। ক্ষমতার রাজনীতিচর্চা এতটাই নিচে নেমেছে যে শিক্ষক-ছাত্র সবাই কলুষিত হয়ে পড়ছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটের বিশেষ অধিবেশন আয়োজন করা হলো লুকোচুরি করে। তাতে ন্যূনতম সদস্য উপস্থিত হওয়ার নিয়ম রক্ষা করা হয়নি। সিনেটের শূন্য আসন কেন পূরণ করা হয়নি, এখন যেন সেটাও স্পষ্ট করে বোঝা গেল। ছাত্র প্রতিনিধিদের রাখা হয়নি অধিবেশনে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্যানেল গঠন হয়েছে তাই অনৈতিকভাবে। এই অবস্থায় অধিবেশন চলাকালে ছাত্ররা বিােভ প্রদর্শনের চেষ্টা করে। সেখানে কয়েকজন শিক্ষক অতি উৎসাহী হয়ে ছাত্রদের ওপর হামলা চালালেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক কেন গায়ে পড়ে ছাত্রদের সাথে হাতাহাতি করলেন তার উত্তর পাওয়া গেল দৈনিক যুগান্তরে। পত্রিকাটি লিখেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার আশায় বর্তমান উপাচার্যের মনোযোগ আকর্ষণ করতেই এই শিক্ষকেরা এমনটি করেছেন। হাতাহাতির ঘটনায় জড়ানো দুই শিক্ষক হলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রভাষক কাজী ফারুক হোসাইন এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মহিউদ্দিন মাহি।
ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় সহসভাপতি আবুল কালাম আযাদও সহপাঠীদের ওপর চড়াও হন বলে পত্রিকাটি জানায়। অথচ গত বছর উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি। এই নেতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের শিক্ষক হওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। যৌন হয়রানির দায়ে অভিযুক্ত একজন শিক্ষকও তাদের সাথে ছিলেন যাকে বিভাগীয় কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। যুগান্তর লিখেছে, উপাচার্যের ‘সুদৃষ্টি’ পেতে অতি উৎসাহ থেকেই তারা এমনটি করেছেন।
প্রথম আলো মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে মন্তব্য করেছে, যতসব অনিয়ম করা হয়েছে প্রফেসর আরেফিন সিদ্দিকের তৃতীয় মেয়াদে উপাচার্য নিয়োগ নিশ্চিত করার জন্য। যারা শিক্ষক হয়ে ছাত্রদের ওপর হামলা করলেন, তাদের কারো লক্ষ্য পদোন্নতি, কারো লক্ষ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পাওয়া। আর কেউ চাইছেন এই বিশৃঙ্খলার মধ্যে উপাচার্যের পক্ষাবলম্বন করে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পেশা বাগিয়ে নিতে। এমনকি, কেউ যৌন হয়রানির কাজ করে পার পেয়ে যেতে চান। অন্য দিকে কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হওয়ার জন্য এই সুযোগসন্ধানীদের ব্যবহার করতে চান। বিশ্ববিদ্যালয় যেন পুরোপুরিই অন্যায়কারী ও ছাত্রী লাঞ্ছনাকারীদের দখলে চলে গেছে।
দুর্নীতির মামলায় রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আবদুল জলিল মিয়া বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। দুদকের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলার অভিযোগে বলা হয়, সাবেক উপাচার্য আবদুল জলিল মিয়ার যোগসাজশে আরো চার কর্মকর্তা মিলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশ লঙ্ঘন করে এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদন ছাড়াই ৩৪৯ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেন। অভিযোগে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, এদের বেতনভাতা দিতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় তথা সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। উপাচার্যরা এমন অনিয়ম এখন সাধারণভাবে করে থাকেন। রীতিমতো বিভাগ ও পদ তৈরি করা হয় নিজেদের লোক নিয়োগ দেয়ার জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয় লোকদের নিয়োগ দেয়া তাদের প্রধান কাজে পরিণত হয়েছে। অনেক সময় উপাচার্য এবং স্থানীয় ছাত্র সংগঠন মিলে পদ বিক্রির আয়োজন করছেন। সেই ক্ষেত্রে দলের দরিদ্র সদস্যরা এই অবৈধ সুযোগ নিতে পারেন না। সুযোগ নিচ্ছে যারা পয়সা জোগাড় করতে পেরেছে। বড় বড় অপরাধ করে ভিসিরা যখন পার পেয়ে যাচ্ছেন, তখন একজন ভিসির এভাবে ‘লালদালানে চালান’ হয়ে যাওয়া বিস্ময়কর।
উপাচার্য নিয়োগে যখন এক দিকে হাতাহাতি চলছে, অন্য দিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিরা ছাত্রদের পড়াশোনার উপযুক্ত পরিবেশ এবং শিক্ষার মান নিয়ে চিন্তার বদলে অর্থ কামিয়ে নেয়া ও প্রতিপত্তি বাড়ানোর নগ্ন চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন। এই অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কী করছে সেটাও আন্দাজ করতে পারা যায়। একেবারে আপাদমস্তক দলীয় অন্ধ সমর্থক চাটুকাররা এর প্রধান নিযুক্ত হচ্ছেন। তাদের নানা ফোরামে সরকারপ্রধানের উচ্চ প্রশংসা করতে দেখা যায় হরহামেশা। টিভি টকশোতে অংশগ্রহণ এবং সংবাদপত্রে লেখা কলামগুলোও একই উদ্দেশ্যে। তাদের অধীনে থাকা কর্মকর্তারা কী করছেন, তার পরিচয় পাওয়া গেল চুরির এক ঘটনায়।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সহকারী সচিব এম এ ওয়ারেছ হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি ডিউটি ফ্রি শপ থেকে টাকা চুরি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েছেন। মঞ্জুরি কমিশন তাকে এই অভিযোগে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে। এ ব্যাপারে নিজেরা তদন্ত কমিটি গঠন করে বিষয়টাকে কিছুটা ধামাচাপা দিলেও বিমানবন্দরে পুলিশি তল্লাশির সময় এটি নিশ্চিত হয়েছে যে, তিনি চুরি করেছেন। একই ধরনের ঘটনা তিনি আগেও একাধিকবার ঘটিয়েছেন। দুর্ভাগ্য হচ্ছে, অপরাধীদের প্রতিরোধ করার ক্ষমতা ভেতর থেকেই দুর্বল হয়ে আসছে। ফলে চুরি-ডাকাতির ঘটনা প্রকাশ্যে ঘটার পরও ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। তাহলে কি অন্যায় ও অপরাধ বোঝাপড়ার মাধ্যমে চলতে থাকবে?
তুরস্কের একটি প্রতিনিধিদলকে বিদায় জানাতে বিমানবন্দরে যান ওয়ারেছ। ফেরার পথে তিনি ডিউটি ফ্রি শপ থেকে টাকা চুরি করেন। সামান্য পরেই বিমানবন্দর পুলিশ তাকে এ অভিযোগে আটক করলে তিনি চুরির বিষয়টি অস্বীকার করেন। কিন্তু শরীর তল্লাশি করলে চুরি যাওয়া অর্থ বেরিয়ে আসে। ভিডিও ফুটেজে তার অর্থ চুরির প্রমাণ পাওয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের কর্মকর্তারা তাকে বিমানবন্দর থানা থেকে ছাড়িয়ে নেন। মঞ্জুরি কমিশনের আগের চেয়ারম্যান এ কে আজাদ চৌধুরীর ৫০ হাজার টাকা চুরি করেছেন তিনি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জিন্নাত রেহানার দফতর থেকে ফাইল চুরি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েন। এর পরেও তিনি মঞ্জুরি কমিশনের বড়কর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন! চোররা সাধারণত ধরা পড়ে একবার, চুরি করে শতবার। সেই ক্ষেত্রে এই চোরেরা জনগণের প্রতিষ্ঠানে আসলে কী করছেন বোঝা যায়।
‘আমার মৃত্যুর জন্য আলম দায়ী’
লাকসামের অশ্বতলা গ্রামের হতদরিদ্র বিল্লাল হোসেনের মেয়ে স্মৃতি আক্তার। স্থানীয় একটি হোটেলে বাবা বিল্লাল বয়ের কাজ করেন। সংসারের অভাব দূর হয় না, তাই মাকেও সামান্য একটি চাকরিতে নামতে হয়। স্মৃতি লাকসাম সরকারি কলেজের ছাত্রী। একই কলেজের ব্যবসায় বিভাগের ছাত্র আলম তার পেছনে লাগে। বাগে আনতে ব্যর্থ হয়ে স্মৃতির ছবি এডিট করে ফেসবুকে ছেড়ে দেয়। মেয়েটির কলেজে আসাই বন্ধ হয়ে যায়। আলমের পরিবারে ব্যাপারটি জানানো হলে ফল হয় উল্টো। সে ফেসবুকের সেই ব্যবহৃত কাটপিছ দিয়ে আক্রমণ আরো জোরালো করে। স্মৃতির ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয় অবৈধ সম্পর্কে সাড়া দেয়ার জন্য।
এই চাপ মোকাবেলা করা হতদরিদ্র বিল্লালের মেয়ে স্মৃতির জন্য অসম্ভব ছিল। কারণ আলম ছাত্রলীগের সক্রিয় সদস্য। তাকে মোকাবেলা করার মতো শক্তি সমাজে কারোর নেই। তাই স্মৃতি একমাত্র বিকল্প হিসেবে বেছে নেয় আত্মহননের পথ। মৃত্যুর পর স্মৃতির ব্যাগে পাওয়া যায় আত্মহননের বিষয়ে তার হাতে লেখা একটি চিরকুট। সেখানে লেখা ছিল, ‘প্রত্যেক মানুষ সম্মানের সাথে এ সুন্দর পৃথিবীতে বাঁচতে চায়। আমিও বাঁচতে চেয়েছিলাম; কিন্তু পারলাম না। অপবাদের বোঝা নিয়ে বাঁচার চেয়ে চলে গেলাম অনেক দূরে। আমি মরতে চাইনি। এ পরিস্থিতি আমাকে বাধ্য করেছে। আমার মৃত্যুর জন্য আলম দায়ী।’
বগুড়ায় কিশোরী ধর্ষণ
বগুড়ার কিশোরী ধর্ষক শ্রমিকলীগ নেতা তুফান সরকারের বিরুদ্ধে যেন এখন তুফানের গতিতে ব্যবস্থা চলছে। মা-বাবা-বোনসহ সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের নেয়া হয়েছে রিমান্ডে। পুলিশ প্রশাসনের তোড়জোড়ে মনে হচ্ছে, এরা সবাই ধর্ষক। বাস্তবে আইনের শাসন কার্যকর থাকলে এই কিশোরী ধর্ষিত হওয়ার সম্ভাবনাই ছিল না। তুফান আগে থেকেই বড় অপরাধী। পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি চলত তার নিয়ন্ত্রণে। তার অত্যাচারে এই সেক্টর ছিল অতিষ্ঠ। তার সন্ত্রাসী বাহিনীর তাণ্ডবে সবাই ছিল তটস্থ। সে শত শত অন্যায় ও অবৈধ কর্মকাণ্ড এতদিন ধরে করেছে। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন এসব অপরাধের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি, নিতে পারেনি।
ক্ষমতার বিকৃত চর্চার যে মওসুম চলছে তাতে কারা সবচেয়ে অগ্রগামী, তুফানের কেইসটি থেকে অনুমান করা যায়। তুফানের ‘বিশেষ গুণ’ হচ্ছে, সে ঝড়ের বেগে অন্যায় ও অবৈধ কাজ করতে পারঙ্গম। সন্ত্রাস সৃষ্টি করার এমন নিকৃষ্ট টেকনিক সে আয়ত্ত করে নিয়েছিল, কেউ তার সাথে পেরে উঠত না। ফলে পরিবহন সেক্টরের সব চাঁদা তার পকেটে চলে আসত। এই অর্থ দিয়ে এরপর সবাইকে ম্যানেজ করত। তাই এতদিন তুফান ছিল সবার চোখে নির্দোষ। সবাই তাকে যথেষ্ট সম্মান করে চলত। জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে সে একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি। ধর্ষণের মামলায় আটকের পর জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের তার ব্যাপারে বিনম্র মন্তব্য দেখে সন্দেহের উপক্রম হবে। মনে হতে পারে ভুলক্রমে একটি খারাপ কাজ তুফান করে ফেলেছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জেলার শীর্ষ নেতৃত্বের কেউ কেউ অবশ্য মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
এতে অনুমান করা যায়, তুফানের ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে এমন চিন্তা এখনো দলটির নেতাদের অনেকে করছেন না। সে কারাগার থেকে বেরিয়ে এলে বরং কৃতিত্বের আরেকটি তিলক নতুন করে যোগ হতে পারে। এমনটা ক্ষমতাসীন দলের অনেক ক্যাডারের ক্ষেত্রে ঘটছে। তখন চাঁদাবাজির আগের রেট যেমন বাড়বে একইভাবে দলেও আগের চেয়ে কদর বাড়বে তার। ফলে তুফানের হাতে যে পরিমাণ ক্ষমতা কর্তৃত্ব জমা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাতে জেলার এসব নেতা উড়ে যেতে পারেন। উদীয়মান এক নেতার আশীর্বাদ থেকে তারা বঞ্চিত হতে চান না। তাই ঝড়ের সময় আপাতত এই নেতারা আগ বাড়িয়ে কোনো মন্তব্য করতে চান না। কারণ তাদের বিশ্বাস ক্ষমতার উপচে পড়া শক্তি একসময় ঠিকই তুফানের দিকে বইতে থাকবে। তখন থানা পুলিশ কোনো পাত্তাই পাবে না। নিকট অতীতে এমন উদাহরণ রয়েছে। বাংলাদেশে ধর্ষণ খুন হত্যা ইত্যাদি করে নায়ক হয়ে আছেন এমন অনেকে রয়েছে।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা জানিয়েছে, দেশে জুলাই মাসে ৮০ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ৩২টি শিশু রয়েছে। ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছে তিনজন। নারী নির্যাতনের ঝড় তুফানের এই মওসুমে বিশেষজ্ঞদের কারো কারো পরামর্শ হতাশ না করে পারবে না। তাদের মতে এ জন্য কিছু ব্যক্তি বিচ্ছিন্নভাবে দায়ী। কোনোভাবে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল দায়ী নয়।’ তাদের কেউ কেউ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ‘কঠোর’ হওয়ার পরামর্শ রাখছেন। কেউ বলছেন সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে। রাজনৈতিক স্বেচ্ছাচার যখন চরমে উঠে, এই ধরনের ঘটনা ঘটা স্বাভাবিক। এ জন্য সমাধানও দরকার রাজনৈতিকভাবে। প্রধানমন্ত্রী যতই কঠোর হোন, যত বেশি করে মৃত্যুদণ্ড সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে কার্যকর করা হোক কোনোভাবে ক্ষমতার বিকার থেকে জন্ম নেয়া ধর্ষণসহ নানামাত্রিক অপরাধ থামবে না।
মিডিয়া হয়ে উঠছে একমাত্র অবলম্বন
নির্যাতিত নিপীড়িতদের পক্ষে প্রশাসন কোনো কাজে আসছে না, বরং প্রশাসনের লোকজনই অসহায় হয়ে যাচ্ছেন। বরগুনার এক ম্যাজিস্ট্রেটের দুরবস্থা থেকে এটাই দেখা গেল। তুফান যে গতিতে চলছিল তার ‘ধরা খাওয়া’র কোনো সুযোগ ছিল না। ধর্ষণের পর পালানো দূরে থাক, উল্টো মা-মেয়ে উভয়ের মাথা কামিয়ে দিয়েছে সে। কত বেশি ক্ষমতাশালী হলে এমনটি সম্ভব। মিডিয়ায় সম্মিলিতভাবে খবর প্রকাশ স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতাধারীকে আপাতত পরাস্ত করতে সমর্থ হয়েছে। একইভাবে, স্মৃতি হত্যার খবরটি এক সময় গায়েব হয়ে যেত, যদি না কয়েকটি সংবাদমাধ্যম ফলাও করে এই খবর প্রকাশ করত। মিডিয়ায় গরম খবর হওয়ার কারণে অপরাধীরা শায়েস্তা হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। প্রবল প্রতাপশালী ক্ষমতাবানদের পাশবিকতার লাগাম টেনে ধরার কোনো সুযোগ অবশিষ্ট নেই, মিডিয়ায় খবর হওয়া ছাড়া!
jjshim146@yahoo.com

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/241067