২ আগস্ট ২০১৭, বুধবার, ১০:১৯

হজ্ব ব্যবস্থাপনায় বিশৃংখলা চরমে

চলতি বছরের হজ্ব ব্যবস্থাপনায় বিশৃংখলা চরমে পৌঁছেছে। প্রতিদিনই বাতিল হচ্ছে হজ্ব ফ্লাইট। মাত্র কয়েকদিনেই ১২টির বেশী হজ্ব ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবারই বাতিল হয়েছে ৫টি ফ্লাইট। আর এ সবগুলোই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের। পর্যাপ্ত যাত্রী না থাকায় বিমানের এসব ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে বলে বিমান অফিস থেকে জানিয়েছে। বিমানের এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে অন্তত ৪০ হাজার হজ¦যাত্রী পাঠানো নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বয়ং হজ্বযাত্রীদের পরিবহন ব্যবস্থার দায়িত্বে নিয়োজিত বিমান পরিবহন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। তবে সৌদিয়া এয়ারলাইন্স এখনো এ ধরনের সমস্যায় পড়েনি। তাদের যাত্রী কিছু কম থাকলেও তারা ফ্লাইট চালিয়ে যাচ্ছে। আর সৌদিয়া এয়ারের যাত্রীদের এ ধরনের কোন সমস্যায় পড়তে হবে না বলেও জানা গেছে।
এদিকে হজ¦ ফ্লাইট বাতিল হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আজ বুধবার জরুরি সভা ডেকেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। দুপুর পৌনে ১২টায় সচিবালয়ে বিমান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ সভা হবে। ‘জরুরি সভায় ধর্ম মন্ত্রণালয়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, হাবসহ (হজ¦ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। সভা শেষে বিমানমন্ত্রী প্রেস ব্রিফিং করবেন।’
সূত্রমতে, এ বছর বাংলাদেশ থেকে ১লাখ ২৭ হাজার ১৯৮জন হজ্বযাত্রী পবিত্র হজ্ব পালন করতে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে ৫০শতাংশ সৌদিয়া এয়ার আর ৫০ শতাংশ বাংলাদেশ বিমান পরিবহন করবে। সৌদিয়া এয়ারের যাত্রীর কিছুটা সংকট থাকলেও তারা হজ্ব ফ্লাইট চালিয়ে যাচ্ছে। অবশিষ্ট হজ্বযাত্রী প্রেরণে তাদের কোন অসুবিধা হবে না বলে জানা গেছে। তবে বাংলাদেশ বিমান যাত্রী সংকটের কারণে প্রায় প্রতিদিনই হজ্ব ফ্লাইট বাতিল করছে। গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ বিমানের ৫টি হজ্ব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এগুলো হলো বিজি ৫০৩১, বিজি ৭০৩১, বিজি ৩০৩৩, বিজি ৩০৩১, বিজি ১০৩১। এর আগে আরো এর আগে আরো ৭টি হজ্ব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। যাত্রী সংকটের কারণে এসব ফ্লাইট বাতিল করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এ অবস্থা চলতে থাকলে অবশেষে ফ্লাইট সংকটের কারণে হজ্বযাত্রীদের পরিবহন করা অনিশ্চিত হয়ে যাবে বলে আশংকা প্রকাশ করেছেন স্বয়ং বিমান পরিবহন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।
তিনি বলেন, ‘৪৫ হাজারের ভিসা হয়েছে; কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে এজেন্সিগুলো, তারা যাত্রী নিচ্ছে না। কেন? কারণ দেখা যাচ্ছে যে ওই ৪৫ হাজারের মধ্যে গ্রুপ যেটা আছে, সেই গ্রুপ হয়তো চারজনের গ্রুপ, সেখানে একজন নাই, সুতরাং তারা দিচ্ছে না। এটা তো বিমানের কিছু করার নেই। কারণ যাত্রী না পেলে তো কিছু করার নেই। টিকেট তো আমরা আগেই রেখেছি। আর এজেন্সিগুলোর এখনো অনেকেই বাড়িভাড়া করতে পারেনি বলে আমাদের কাছে খবর এসেছে।
বৈঠকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উদাসীনতা ও হাব কার্যালয়ের ধীরগতির সমালোচনা করেন রাশেদ খান মেনন। মন্ত্রী জানান, সব পক্ষের সমন্বয়ের মাধ্যমে এ সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব।
আগে হজ¦যাত্রীদের পাসপোর্টে সৌদী দূতাবাসের ইস্যু করা ভিসার স্টিকার লাগানো হতো। কিন্ত এবার ভিসা অনলাইনে করা হয়েছে। হজে¦ যাওয়ার সময় পাসপোর্টের সঙ্গে আলাদা কাগজে ই-ভিসার প্রিন্ট করা কপি সঙ্গে রাখা বাধ্যতামূলক। এই ই-ভিসা দেখে অনলাইনে চেক করে বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশ পাস দিচ্ছে। কিন্তু সার্ভারের সিস্টেম জটিলতায় অনেকের ভিসা প্রিন্ট হচ্ছে না।
ভিসার শেষ তারিখ ১৭ আগস্ট
চলতি বছের হজ ভিসার আবেদনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। আগামী ১৭ আগস্ট পর্যন্ত হজ¦ ভিসার জন্য আবেদন করা যাবে। চলতি বছর হজে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন এজেন্সির ক্ষেত্রে এই সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়। ওই সময়ের পর আর ভিসার আবেদন জমা নেবে না সৌদী দূতাবাস।
গতকাল মঙ্গলবার হজ¦ অফিসের পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিভিন্ন হজ¦ এজেন্সিকে জরুরি ভিত্তিতে পাসপোর্ট জমা দিতে অনুরোধ করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও সৌদি সরকারের মধ্যকার হজ¦ চুক্তি অনুযায়ী ২০১৭ সালের হজ¦ কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী হজ¦ এজেন্সির মালিক/অংশীদারদের আগামী ১৭ আগস্ট পাসপোর্টে ভিসা প্রদানের সর্বশেষ দিন ধার্য করা হয়েছে। যেসব হজ¦ এজেন্সি ভিসার জন্য ঢাকা হজ¦ অফিসে পাসপোর্ট জমা দেয়নি, তাদের জরুরিভিত্তিতে ভিসার জন্য পাসপোর্ট জমা দিতে অনুরোধ করা হয়।
এদিকে অন্তত ২০ হাজার হজ্বযাত্রী নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। তারা এবার দ্বিতীয়বার হজ্ব করতে যাচ্ছেন। গত বছর সৌদী সরকারের নিয়ম ছিল ৫ বছরের মধ্যে কেউ দ্বিতীয়বার হজ্ব করতে পারবে না। কিন্তু এবার ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে হজ¦ করেছেন এমন ব্যক্তিদের ২০১৭ সালে হজ¦ পালন করতে হলে ভিসা আবেদনপত্রের সঙ্গে ২ হাজার সৌদী রিয়াল (বাংলাদেশী ৪৫ হাজার টাকা) জমা দিতে হবে, অন্যথায় ভিসা ইস্যু হবে না। রাজকীয় সৌদী সরকারের এ নিয়মের কারণে বাংলাদেশী ২০ হাজার ব্যক্তির হজ¦ পালন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এই নিয়ম চালুর কারণে হজ¦ ভিসা ইস্যু নিয়েও জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।
অপরদিকে ৯২টি এজেন্সির প্রায় ১৮ হাজার হজ্বযাত্রীর জন্য দ্বিগুণ মোয়াল্লেম ফি গুণতে হচ্ছে এজেন্সিদের। তারা ৭২০ রিয়ালের মোয়াল্লেম ফি সার্ভিসের জন্য চুক্তি করতে গিয়ে তা আর পারেননি। এ মূল্যের প্যাকেজ ফুরিয়ে যাওয়ায় ১৫০০ রিয়ালের সার্ভিস গ্রহণ করতে হয়েছে। এতে করে হজ্বযাত্রী প্রতি ১৫-১৬ হাজার টাকা বেশী খরচ করতে হবে এজেন্সিদের। তবে এ কারণে হজ্বযাত্রীদের কাছ থেকে কোন অতিরিক্ত ফি নেয়া হবেনা বলে জানিয়েছে হাব।
হাবের মহাসচিব মো. শাহাদাত হোসেন তছলিম বলেন, ২০১৭ সালের জন্য সরকার যে হজ¦ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, হজ¦যাত্রীরা ওই প্যাকেজ অনুযায়ী এজেন্সি মালিকদের কাছে হজে¦র টাকা জমা দেন। এ বছর হজ¦ ব্যবস্থাপনায় কাজ করছে ৬৩৫টি এজেন্সি। এসব এজেন্সির মালিক হজ¦যাত্রীর সৌদি আরবে বাড়িভাড়া, খাওয়া খরচ ও মুয়াল্লেম ফি বাবদ যে অর্থ লাগবে তা ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বরের (আইবিএএন) মাধ্যমে সৌদি আরব পাঠিয়ে দিয়েছে। এর পর এজেন্সি মালিকরা তাদের হজ¦যাত্রীর নামে ভিসার জন্য ই-হজ¦ সিস্টেমে লজমেন্ট করেছে। কিন্তু ভিসা ইস্যুর সময় দেখা যায়, একটি হজ¦ এজেন্সি যত হজ¦যাত্রীর ভিসার জন্য লজমেন্ট করেছে, ততজন হজ¦যাত্রীর নামে ভিসা হয়নি। কারণ যারা ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে হজ¦ করেছেন, তাদের ভিসার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ২ হাজার রিয়াল চায় রাজকীয় সৌদী সরকার। এখন ওই পরিমাণ টাকা তো হজ¦ এজেন্সির আইবিএএনে জমা নেই। ফলে ২০১৫ এবং ২০১৬ সালের হজ¦ পালনকারীদের ২০১৭ সালে হজ¦ ভিসা ইস্যু করা হচ্ছে না। সৌদী সরকার হঠাৎ করে এই নিয়ম চালু করায় বিপাকে পড়েছে এজেন্সি মালিক ও প্রায় ২০ হাজার হজ¦যাত্রী। এজেন্সি মালিকরা তার সব হজ¦যাত্রীর নামে ভিসা না হওয়ায় বিমানের টিকিট সংগ্রহ করছেন না। ফলে ফ্লাইট বাতিল হচ্ছে বারবার।
তিনি আরও বলেন, আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে বিষয়টি নিয়ে যেন সৌদি সরকারের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয়। সরকারের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়, তা হলে সংম্লিষ্ট হজযাত্রীরা দুই হাজার রিয়াল করে দিয়ে ভিসা পাবেন। সরকার কোনো বিজ্ঞপ্তি না দিলে হজযাত্রী টাকাও দেবে না।
হজ অফিসের পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ২০১৭ সালে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ বাংলাদেশি হজ পালনের জন্য সৌদি আরব যাবেন। এর মধ্যে সোমবার সকাল পর্যন্ত ৪১ হাজার ৭১৪ জনের নামে ভিসা ইস্যু করা হয়েছে। ভিসাপ্রাপ্তদের মধ্যে ২৩ হাজার ৫৬৯ জন সৌদি আরব গেছেন।

 

http://www.dailysangram.com/post/294313-