২ আগস্ট ২০১৭, বুধবার, ১০:১৬

রায়ে অভিমত

অপসারণ ক্ষমতা সংসদে গেলে বিচারককে করুণায় চলতে হবে

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে বলা হয়েছে, বর্তমান ব্যবস্থায় জাতীয় সংসদ ও প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ সংসদ সদস্যদের একটি দলের (গ্র“প) হাতে। এ ব্যবস্থায় দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে সংসদে প্রশ্ন তোলার স্বাধীনতা নেই কোনো সংসদ সদস্যের। এমনকি তার দল যদি কোনো ভুল সিদ্ধান্ত বা নির্দেশনা দেয় তাহলেও তার বিরুদ্ধে ভোট বা মতামত দেয়ার সুযোগ নেই। তারা দলের নীতিনির্ধারক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হন। ৭০ অনুচ্ছেদ বলবৎ থাকাবস্থায় বিচারক অপসারণ মতা সংসদের হাতে গেলে একজন বিচারককে দলীয় নীতিনির্ধারকের করুণা অনুযায়ী চলতে হবে। এ অভিমত দিতে আমরা কোনো ভুল দেখি না।

রায়ে বলা হয়, বিচারক অপসারণ মতা যদি সংসদ সদস্যদের হাতে যায় তবে তার প্রভাব বিচার বিভাগে পড়বেÑএতে কোনো সন্দেহ নেই। এ ছাড়া দীর্ঘদিন সুপ্রিম জুডিশিয়াল ব্যবস্থা না থাকায় প্রধান বিচারপতির প্রশাসনিক পদপে গ্রহণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় কেউ কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারবে না যে আমাদের আদালতে একজন বিচারপতি কারনান (ভারতের বিচারপতি) নেই। যদি কোনো একজন বিচারক তার বিভাগের প্রধানের প্রতি দায়বদ্ধ না থাকে তবে ওই বিভাগ অকার্যকর হয়ে পড়তে বাধ্য। এ কারণে হাইকোর্ট যথাযথভাবেই এই সংশোধনীকে (ষোড়শ) সংবিধানপরিপন্থী ঘোষণা করেছে। এ সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে অন্য কোনো অভিমত দেয়ার কারণ খুঁজে পাই না।
রায়ে বলা হয়, হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, অধিকাংশ সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের নজির (রেকর্ড) এবং দেওয়ানি মামলাও রয়েছে। ষোড়শ সংশোধনীর দ্বারা তারাই কার্যত উচ্চ আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রক (বস্) হিসেবে স্বাধীন বিচারব্যবস্থার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছেন। এ ছাড়া সংসদ সদস্যদের মধ্যে শতকরা ৭০ ভাগই ব্যবসায়ী। এসব সংসদ সদস্য আইন প্রণয়নের সময় অধিকাংশ দিন সংসদে অনুপস্থিত থাকেন। তাদের করা আইন নি¤œমানের ও ত্র“টিপূর্ণ। তারাই সুপ্রিম কোর্টের বিচারক অপসারণ প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত হবেন। সংসদ সদস্যদের দায়িত্ব নয় একজন বিচারকের অসদাচরণ ও অযোগ্যতার বিচার করা।’
রায়ে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করার পে যুক্তি তুলে ধরে বলা হয়েছে, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো সংসদ সদস্য নিজ দলের বিরুদ্ধে ভোট দিলে তার সংসদ সদস্যপদ থাকবে না। এতে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে ৭০ অনুচ্ছেদ সংসদের স্থায়িত্ব ও দলের সদস্যদের মধ্যে শৃঙ্খলা ধরে রাখার জন্য একটা ব্যবস্থা মাত্র। এটা দেশের জাতীয় রাজনীতিকে রাজনৈতিক বেচাকেনা থেকে দূরে রাখার জন্য। রায়ে বলা হয়, একজন সংসদ সদস্য যদি দরকষাকষির সাথে জড়িয়ে পড়েন বা সন্দেহ হয় যে তিনি দরকষাকষির সাথে যুক্ত তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিধান সংবিধানে নেই। এ অবস্থায় তারা (সংসদ সদস্য) উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের মতা কিভাবে নিতে চান?
রায়ে বলা হয়, ৭০ অনুচ্ছেদ থাকার কারণে দলীয় নির্দেশনার বাইরে একজন সংসদ সদস্য স্বাধীন ও নিরপেভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। সেখানে বিচারক অপসারণের বিষয়ে তারা কিভাবে স্বাধীন ও নিরপেভাবে মত দেবেন। সেটাই প্রশ্নবিদ্ধ।
রায়ে বলা হয়, ৭ অনুচ্ছেদ সংবিধানের শ্রেষ্ঠত্ব নিশ্চিত করেছে। এতে সুপ্রিম কোর্ট শুধুই রাষ্ট্রের একটি স্বাধীন অঙ্গ নয়, সংবিধানের অভিভাবকও বটে। সংবিধানই কোনো আইনকে সংবিধানপরিপন্থী ঘোষণার এখতিয়ার সুপ্রিম কোর্টকে দিয়েছে।
রায়ে আরো বলা হয়, উচ্চ আদালত ও নি¤œ আদালতের শৃঙ্খলার বিষয়ে দেশে কোনো বিধান নেই যা বিচার বিভাগের জন্য আত্মঘাতী। এ েেত্র অ্যাটর্নি জেনারেলের অভিমত হলো নিয়োগকারী কর্তৃপই ব্যবস্থা নিতে পারবে। দেশের প্রধান আইন কর্মকর্তার কাছ থেকে এ জাতীয় মন্তব্য আদালত প্রত্যাশা করেনি। তার এ যুক্তি নির্বাহী বিভাগের বক্তব্যের প্রতিফলন।
রায়ে বলা হয়, অ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, দেশে বর্তমানে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ব্যবস্থা বলবৎ নেই। এ অবস্থায় ষোড়শ সংশোধনী বাতিল হলে একটি শূন্যতার সৃষ্টি হবে। তার এ যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ বর্তমান ব্যবস্থা বাতিল হলে আগের ব্যবস্থা অর্থাৎ সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ব্যবস্থা দ্রুত বলবৎ হবে। এখানে শূন্যতা সৃষ্টির কোনো সুযোগ নেই।
সংবিধানে সংসদের মতা নির্ধারণ করা আছে। কোন ধরনের আইন প্রণয়ন করতে পারবে তা বলা আছে। তারা যেটা সরাসরি করতে পারে না সেটা পরোভাবেও করতে পারে না।
রায়ে বলা হয়, সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে সংবিধান সংশোধন করার মতা জাতীয় সংসদকে দেয়া হয়েছে। তবে সে মতার সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
রায়ে বলা হয়, পঞ্চম সংশোধনী মামলায় এই আদালত মেনে নিয়েছেন যে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ব্যবস্থা অনেক স্বচ্ছ ও স্বাধীন বিচার বিভাগের জন্য রাকবচ। যা ৯৬ অনুচ্ছেদে সন্নিবেশিত হয়েছে। সেখানে বিচারকদের আচরণবিধি সম্পর্কে কিছু বলা নেই বলে যেটা বলা হচ্ছে সেটা সত্য নয়। বিচারকদের আচরণবিধি ছিল বলেই বিচারপতি সৈয়দ শাহিদুর রহমান সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে অপসারিত হয়েছেন। এ অবস্থায় এই আদালত ৪০টি নির্দেশনা জারি করছে যে বিচারকরা এই আচরণবিধি মেনে চলবে।
রায়ে আরো বলা হয়, জনগণ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক অপসারণ মতা সংসদকে দেয়নি। এটা সংবিধানের ৮৮(খ)((আ), ৮৯(১) এবং ৯৪(৪) অনুচ্ছেদে প্রতিফলিত হয়েছে।
সংবিধানের ৯৪(৪) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারক বিচারকাজ পরিচালনার েেত্র স্বাধীন থাকবেন। একইভাবে ১১৬(ক) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে বিচার-কর্মবিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিগণ এবং ম্যাজিস্ট্রেটগণ বিচারকাজ পালনের েেত্র স্বাধীন থাকবেন। কিন্তু সংবিধানে বলা হয়নি যে প্রজাতন্ত্রের অপর দু’টি অঙ্গ তাদের কাজে স্বাধীন থাকবে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য জনগণের দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস রয়েছে। তাদের মৌলিক অধিকার রা ও নির্বাহী বিভাগের দ্বারা অযাচিত মতা প্রয়োগের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে।
বিচারকদের ৩৯ দফা আচরণ বিধি
বিচারকদের আচরণবিধি নিয়েও রায়ে বলা হয়েছে। রায়ে ৩৯ দফা আচরণ বিধি নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। ওই ৩৯ দফা হলো
১. বিচার বিভাগের সংরতি সততা ও স্বাধীনতা রার জন্য একজন বিচারকের উচ্চতর মান বজায় রেখে বিচারকাজে অংশগ্রহণ করা উচিত।
২. দেশের সংবিধান ও আইনের প্রতি সম্মান রেখে বিচারকের কাজ করা উচিত যাতে বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা বজায় থাকে।
৩. একজন বিচারকের রায় পারিবারিক, সামাজিক বা অন্যান্য সম্পর্কের দ্বারা প্রভাবিত হবে না। নিজের বা অন্য কারো ব্যক্তিগত স্বার্থে বিচারকাজ প্রভাবিত হবে না।
৪. আইনানুযায়ী একজন বিচারকের পেশাদারি যে এখতিয়ার বা মতা রয়েছে তা আইনের প্রতি সম্মান ও বিশ্বস্ততার সাথে প্রয়োগ করতে হবে। কোনো জনগণের দাবি বা সমালোচনার ভয়ে প্রভাবিত হওয়া যাবে না।
৫. প্রত্যেক বিচারকের বিচারকাজ পরিচালনায় ধৈর্যশীল হতে হবে। সম্মান, শ্রদ্ধাবোধ ও পপাতদুষ্টহীনভাবে আইনজীবী ও সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণের মাধ্যমে বিচারকাজ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
৬. ঘোষিত রায় বা আদেশ প্রকাশ করতে অযাচিত বিলম্ব করা উচিত নয়। দ্রুত নিষ্পত্তি করা উচিত। একটি রায় ঘোষণার পর ছয় মাসের বেশি সময় পর স্বার করা ঠিক নয়। তার আগেই স্বার করতে হবে।
৭. মুলতবি বা নিষ্পত্তির অপোয় থাকা মামলার েেত্র বিচারককে জন মন্তব্য এড়াতে হবে।
৮. বিচারকের নিরপেতা যদি ব্যাপকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয় তবে সেই মামলার বিচারের েেত্র নিজেই নিজেকে অযোগ্য ঘোষণা করা উচিত।
৯. কোনো ঘটনার প্রত্যদর্শী, কোনো মামলার সাথে আগে সম্পর্ক ছিল বা আগে ওই মামলায় তিনি আইনজীবী হিসেবে লড়েছেন বা মামলার কোনো পরে সাথে বা প্রতিষ্ঠানের সাথে তাঁর সম্পর্ক ছিল এই েেত্র ওই মামলার বিচারকাজে তিনি নিজেকে অযোগ্য ঘোষণা করবেন।
১০. একজন বিচারক ওই বিষয়ে শুনানি গ্রহণ করবেন না যেটায় তার স্ত্রী বা সন্তানেরা ও আত্মীয়স্বজন কোনোভাবে জড়িত থাকেন। অথবা এমন কোনো ব্যক্তি জড়িত থাকেন যার দ্বারা বিচারক প্রভাবিত হতে পারেন।
১১. বিচার বিভাগীয় ব্যবস্থায় নিরবচ্ছিন্নতা ও বিচার বিভাগীয় কার্যালয়ের শপথ রার সনদ থাকতে হবে একজন বিচারকের।
১২. বিচার কার্যালয়ের মর্যাদার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ আচরণ অনুশীলন করতে হবে বিচারককে।
১৩. একজন বিচারক প্রত্য বা পরোভাবে নিজে বা কোনো সংগঠন বা সমিতির সাথে ব্যবসায় জড়িত থাকতে পারবেন না।
১৪. বিচারকের কার্যালয়ের সম্মানহানি হয় জনগণের অপ্রত্যাশিত এমন কোনো কাজ বিচারক করবেন না। অবশ্যই তাকে সচেতন থাকতে হবে যে তিনি জনগণের নজরদারির মধ্যে আছেন।
১৫. দেশ-বিদেশের কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে কোনো বিচারক জড়িত থাকতে পারবেন না।
১৬. একজন বিচারকের সম্পদ ও দায়-দায়িত্ব নিয়ে প্রধান বিচারপতির কাছে জবাবদিহিতা থাকতে হবে।
১৭. শুধু বিচার করলেই হবে না। দৃশ্যমান হতে হবে যে একজন বিচারক ন্যায়বিচার করেছেন। উচ্চ আদালতের বিচারকের জনগণের বিশ্বাসকে বিবেচনা করতে হবে। নিরপেতার সাথে তা করতে হবে।
১৮. আইনজীবী সমিতির কোনো সদস্যের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে এমন কেউ তার আদালতে মামলা পরিচালনা করলে সেটা পদোষে দোষী হবে।
১৯. একজন বিচারকের স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে, শ্যালক, শ্যালিকা বা ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজন যারা আইনজীবী সমিতিতে অনুশীলন করেন তাদের কাউকে তার আদালতে মামলা পরিচালনার অনুমতি ওই বিচারক দেবেন না।
২০. পরিবারের সদস্য নয়, কিন্তু আইনজীবী সমিতির সদস্য এমন কোনো ব্যক্তিকে কোনো বিচারক তার বাসস্থানে রাখতে পারবেন না।
২১. একজন বিচারক জন বিতর্কে অংশ নিতে পারবেন না। প্রকাশ্যে কোনো রাজনৈতিক বিতর্কেও অংশ নিতে পারবেন না। এমনকি বিচার বিভাগে মুলতবি রয়েছে এমন কোনো বিষয়েও বিতর্কে জড়াতে পারবেন না।
২২. একজন বিচারক রায় দেবেন, নিজেদের মধ্যে কথা বলবেন। কিন্তু কোনোভাবেই গণমাধ্যমে সাাৎকার দেবেন না।
২৩. বিচারক যদি কোনো মামলায় সিদ্ধান্ত দিতে অম হন তাহলে তিনি ওই মামলা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেবেন।
২৪. একজন বিচারক নিজেই যুক্তিসঙ্গত পর্যবেণ দ্বারা নির্ধারণ করবেন যে তার আচরণ বা তিনি যা করছেন তা সঠিক।
২৫. একজন বিচারককে তার আচরণ ও কাজ দিয়ে বিচার বিভাগের মর্যাদা ও জনগণের বিশ্বাস অর্জন করতে হবে।
২৬. অসদাচরণ ও অযৌক্তিক কার্যাবলি থেকে একজন বিচারক সব সময় বিরত থাকবেন।
২৭. সাধারণ জনগণের কথা বিবেচনা করে ন্যায়বিচারের স্বার্থে একজন বিচারকের ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতা গ্রহণ করে কাজ করা উচিত।
২৮. জজ আদালতে অনুশীলন (মামলা পরিচালনা করেন) করেন এমন কোনো নিকটাত্মীয়কে বিচারকের এড়িয়ে চলা উচিত; যাতে কোনো প্রকার পপাতিত্বের সন্দেহ কেউ করতে না পারে।
২৯. বিচারকের পরিবারের কোনো সদস্য যদি কোনো মামলার কোনো পরে প্রতিনিধিত্ব করে তাহলে ওই বিষয়ে বিচারক অংশ নিতে পারবেন না।
৩০. আইন পেশায় জড়িত রয়েছেন এবং মক্কেল গ্রহণ করেন এমন কোনো ব্যক্তিকে বিচারকের বাসস্থানে স্থান দেবেন না।
৩১. একজন বিচারকের পরিবারের কোনো সদস্যকে তার আদালতের কোনো বিষয়ে সামাজিক বা অন্য কোনো সম্পর্কের দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার অনুমতি দেবেন না।
৩২. একজন বিচারক কারো সম্পদ ব্যবহার করতে পারবেন না বা কারো কাছ থেকে ঋণ নিতে পারবেন না যে ব্যক্তির দ্বারা বিচারকাজে প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পরিবারের সদস্যদেরও এমন কাজ থেকে বিরত রাখবেন।
৩৩. বিচার বিভাগে কর্মরত থাকা অবস্থায় একজন বিচারক ব্যক্তিগত চেম্বার ব্যবহার করতে পারবেন না বা আইন পেশায় অংশ নিতে পারবেন না।
৩৪. বিচারক বা বিচারকের পরিবারের সদস্যরা বিচার বিভাগীয় দায়িত্ব পালনের জন্য কোনো উপহার চাইবেন না, উপহার গ্রহণ করবেন না বা কোনো ঋণ গ্রহণ করবেন না।
৩৫. একজন বিচারক শালীনতা বজায় রেখে আদালতে উপস্থিত বিচারপ্রার্থী তথা সাী, আসামি, বাদি, বিবাদি, আইনজীবী, আদালতের কর্মচারীদের নিয়ন্ত্রণ করবেন। প্রত্যেকের সাথে সদ্ব্যবহার করবেন।
৩৬. একজন বিচারক বিচার বিভাগীয় দায়িত্বের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ কোনো আচার-আচরণ করবেন না।
৩৭. প্রধান বিচারপতি কর্তৃক বেঁধে দেয়া সময় অনুযায়ী একজন বিচারক এজলাসে উঠবেন ও নামবেন। দৈনন্দিন কার্যতালিকায় থাকা বিচারকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি আদালতের সময়সীমার আগে এজলাস ত্যাগ করতে পারবেন না।
৩৮. কোনো বিচারকের অসদাচরণ বা বিচারকাজের অযোগ্যতা সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে বা অন্য কোনো সূত্রে যদি প্রধান বিচারপতি জানতে পারেন, এই অভিযোগ তদন্তে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগে তার পরবর্তী দুইজন সিনিয়র বিচারপতিকে নিয়ে কমিটি করবেন। চূড়ান্ত তদন্ত হওয়ার পর প্রধান বিচারপতি অভিযুক্ত বিচারপতিকে অপসারণের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবেন।
৩৯. উপরোক্ত আচার আচরণ মেনে না চললে একজন বিচারক অসদাচরণ করেছেন বলে গণ্য করা হবে।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/240849