২ আগস্ট ২০১৭, বুধবার, ১০:১৩

বেশির ভাগই ৫৭ ধারায়, ১৯ সাংবাদিক এর শিকার

ছয় মাসে আইসিটি আইনে দ্বিগুণ মামলা

ছয় মাসের ব্যবধানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনে মামলা দায়েরের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এসব মামলার বেশির ভাগই ৫৭ ধারার। এই সময়ে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধেও ১৯টি মামলা হয়েছে একই ধারায়।
সাইবার অপরাধ-সংক্রান্ত মামলার বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এ বছরের জানুয়ারিতে আইসিটি আইনে মামলা হয়েছে ৪২টি। জুনে এই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৭৯। এই ছয় মাসে মোট মামলা হয়েছে ৩৯১টি। এসব মামলায় আসামি ৭৮৫ জন, যাঁদের ৩১৩ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন।
এই ৩৯১টি মামলার বাইরে একই সময়ে সাইবার অপরাধের ঘটনায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে ৯৩টি এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ৮৫টি মামলা হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, আইসিটি আইনে থানা পর্যায়ে যত মামলা হচ্ছে, তার প্রায় সবই ৫৭ ধারায়। এটা নিয়ে পুলিশ সদস্যরাও বিরক্ত। এ বিষয়টি তাঁরা সদর দপ্তরকে জানিয়েছেন।
সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার খুলনায় আইসিটি আইনের ৫৭ ধারার মামলায় আবদুল লতিফ মোড়ল নামের এক সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়। ফেসবুকে একটি ছাগলের মৃত্যুর খবর শেয়ার করায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের মানহানি হয়েছে এই অভিযোগে মামলাটি করা হয়। মামলার বাদীও আরেক স্থানীয় সাংবাদিক সুব্রত ফৌজদার। এ নিয়ে চলতি বছরে ১৯ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় মামলা হলো। তাঁদের মধ্যে ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন স্থানীয় মন্ত্রী-সাংসদদের ঘনিষ্ঠজনেরা।
এ বিষয়ে প্রধান তথ্য কমিশনার গোলাম রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে এই ধারা প্রত্যাহারের পক্ষে। এই আইন করা হয়েছিল মানুষ যেন নিরাপদে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু আইনটি করার সময় প্রণয়নকারীরা অতি আবেগপ্রবণ হয়ে ধারাটিকে জামিন-অযোগ্য করেছেন। অতিরিক্ত রূঢ় হওয়ার জন্য এটির অপব্যবহারও হচ্ছে বেশি।’
সমালোচনা রয়েছে, আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা সংবিধানের ৩৯ ধারায় মতপ্রকাশের অধিকারকে খর্ব করে। এর কারণে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
যদিও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে এই আইনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ডিজিটাল সুরক্ষা আইন নামে নতুন আইন শিগগিরই পাস হবে। তখন এ সমস্যা মিটে যাবে।
জানা গেছে, আইসিটি আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারা প্রস্তাবিত ডিজিটাল সুরক্ষা আইনের ১৯ ধারায় থাকছে। তবে ডিজিটাল সুরক্ষা আইনের খসড়ায় এই বিষয়ে সাজা কমানো এবং মামলাটি জামিনযোগ্য করার প্রস্তাব রয়েছে।
৫৭ ধারা সম্পর্কে জাতীয় সংসদে ও মন্ত্রিসভার বৈঠকে দেওয়া বক্তব্য এবং বিভিন্ন মহলের প্রতিক্রিয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি।
বাংলাদেশের আইসিটি আইন প্রণীত হয় ভারতের ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যাক্টের আদলে। ভারতের ওই আইনে ৬৬(এ) ধারাটি ছিল বাংলাদেশের ৫৭ ধারার মতো। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ওই ধারাটি বাতিল করে দিলেও বাংলাদেশে আদতে তা বাতিল হবে কি না, হলেও অন্য আইনে থেকে যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলের।
যে কারণে মামলা ও হয়রানি বেশি
আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেউ পড়লে, দেখলে বা শুনলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হতে উদ্বুদ্ধ হতে পারেন অথবা যার কারণে মানহানি ঘটে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করতে পারে বা এ ধরনের তথ্য দিয়ে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানি দেওয়া হয়, তাহলে এই কাজ হবে একটি অপরাধ৷ কোনো ব্যক্তি এ ধরনের অপরাধ করলে সর্বোচ্চ ১৪ বছর এবং সর্বনিম্ন ৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবীরা বলছেন, আইনে যে শব্দগুচ্ছকে অপরাধ বলা হয়েছে, সেগুলোর কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা নেই। ২০১৩ সালে সংশোধনী যুক্ত করে অপরাধগুলোকে আমলযোগ্য ও অজামিনযোগ্য করা হয়েছে। শাস্তির পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে। সে জন্য এটির অপব্যহার বেশি হচ্ছে। এই আইনে মিথ্যা ও অশ্লীল, নীতিভ্রষ্টতা বা অসৎ, মানহানি, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানি—এই সাতটি শব্দকে অপরাধ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।
মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আইনে প্রতিটি শব্দের ব্যাখ্যা থাকা দরকার। আইন প্রয়োগকারীদের মধ্যে সুযোগসন্ধানী যারা, তারা এটির আরও বেশি অপপ্রয়োগ করে। এ কারণে আইনের যে দুর্বলতা আছে, সেগুলো দ্রুত শোধরানো দরকার। নইলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সুযোগ থেকে যাবে।
৫৭ ধারায় অপরাধ আমলযোগ্য হওয়ায় আসামিকে গ্রেপ্তারের আগে পুলিশকে আদালতের পরোয়ানা দেখাতে হচ্ছে না। তা ছাড়া ২০০৬ সালের আইনে সর্বনিম্ন কারাদণ্ডের সময়সীমা নির্দিষ্ট ছিল না। আগে কোনো কারণে কারও মানহানি হলে কতটা মানহানি হয়েছে, সেটা আদালত নির্ধারণ করতেন, সে অনুযায়ী শাস্তি হতো। কিন্তু সংশোধনী যুক্ত হওয়ায় কারও বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হলে তাঁকে কমপক্ষে সাত বছর সাজা খাটতেই হবে।
অবশ্য পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (মিডিয়া) মো. মহসীন বলেছেন, যেকোনো মামলার ক্ষেত্রেই গুরুত্ব বিবেচনা করে পুলিশ ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা হলেও একই পন্থা অনুসরণ করা হয়।
এ পর্যন্ত আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় হওয়া অন্তত ৫০টি মামলা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সাংবাদিক, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক, আইনজীবী, বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, মৎস্যজীবী ও শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আর এসব মামলার বাদীদের মধ্যে রয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-সাংসদদের ভক্ত-অনুরাগী, বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষক, পুলিশ, সাংবাদিক। ব্যক্তিগত ক্ষোভ মেটাতে, সংখ্যালঘুদের ভিটেছাড়া করতে বা স্রেফ হয়রানি করতেও এই ধারায় মামলা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
কয়েকটি ঘটনা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রসরাজ দাস আইসিটি আইনের ৫৭ ধারার অন্যতম শিকার। গত বছরের ২৯ অক্টোবর ফেসবুক ব্যবহার করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। তখন ওই জেলার নাসিরনগরে গুজব ছড়িয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, তাদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। পরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের ফরেনসিক ল্যাবে রসরাজের মুঠোফোন, মেমোরি কার্ড ও সিম কার্ড পরীক্ষা করে দেখা হয়। ল্যাবের বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত দেন, ফেসবুকে রসরাজ দাস এমন কোনো পোস্ট দেননি। কিন্তু তার আগেই রসরাজকে তিন মাস জেল খাটতে হয়।
পরে জামিনে মুক্তির পর আবারও পুরোনো মাছ ধরার পেশায় ফিরে গেছেন রসরাজ দাস। প্রয়োজন ছাড়া আর বাড়ি থেকে ভয়ে বের হন না। গতকাল তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি শুধু নাম সই করতে পারি। ভাইয়ের সঙ্গে বালিঙ্গা বিলে মাছ মারি। ফেসবুক চিনিও না।’
গত ১৩ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফাহমিদুল হকের বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় মামলা করেন একই বিভাগের অধ্যাপক আবুল মনসুর আহমেদ। স্নাতকোত্তর পরীক্ষার ফল প্রকাশে দেরি নিয়ে শিক্ষকদের দুই দলের মধ্যে বিরোধকে ঘিরে লেখালেখির জেরে মামলাটি হয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ এন্তাজুল হক একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কাজী জাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে একই আইনে মামলা করেন।
কাজী জাহিদুর রহমান এখন জামিনে আছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর তিনি ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেন্টারে নিয়োগ নিয়ে তুঘলকি কাণ্ড—জবাব দেবে কে?’ শিরোনামে একটি স্ট্যাটাস দেন। তিনি লেখেন, নিয়োগ পরীক্ষার মাত্র এক দিন আগে কার্ড পাঠানো হয়েছে। সরকারি বিধি মোতাবেক সাত দিন আগে কার্ড পাঠানোর কথা। বিশ্ববিদ্যালয় অভিযোগের সত্যতা খতিয়ে দেখেনি, উল্টো ৫৭ ধারায় মানহানির মামলা করেছে।
গত বছর কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র বন্ধুদের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ইমো’তে রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে ঠাট্টা করে মন্তব্য করেন। ওই মন্তব্যের কারণে ওই ছাত্রের বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় মামলা করেন তাঁরই এক বন্ধু। ওই ছাত্রকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
সাংবাদিকদের হাঁসফাঁস অবস্থা
৫৭ ধারার প্রথম দিককার শিকার সাংবাদিক প্রবীর সিকদার। একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী ও তাঁর দুই সহযোগী হত্যার হুমকি দিচ্ছেন, এই অভিযোগ নিয়ে প্রবীর সিকদার থানায় জিডি করতে গিয়েছিলেন। পুলিশ জিডি নেয়নি। তিনি ফেসবুকে জিডির আবেদনটি তুলে দেন। এরপর প্রবীর সিকদারকে পুলিশ বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় এবং তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দেয়। দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার মুখে এক দিন রিমান্ডে থাকার পর জামিনে বেরিয়ে আসেন প্রবীর। তাঁর বিরুদ্ধে করা মামলাটি এখন বিচারাধীন।
২০১৬ সালে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল একটি প্রতিবেদনে ৩৫টি মামলার উল্লেখ করে। এর মধ্যে ৪টি মামলা ছিল সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে। এ বছরের প্রথম সাত মাসে মামলা ১৯টিতে দাঁড়িয়েছে। শুধু সংবাদ প্রকাশের জন্যই নয়, ফেসবুকে নিউজ শেয়ার দেওয়ার জন্যও ৫৭ ধারায় মামলা হয়েছে।
৩০ কোটি টাকার কাজ না করে বিল উত্তোলন-সংক্রান্ত প্রকাশিত একটি খবর ফেসবুকে শেয়ার করায় সকালের খবর-এর সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার আজমল হকের বিরুদ্ধে মামলা করেন পিরোজপুরের রুস্তম আলী ফরাজী কলেজের প্রভাষক ফারুক হোসেন। আজমল হকের প্রতি ফেসবুকে সমবেদনা জানানোয় আরও দুজনের বিরুদ্ধে গত শনিবার ৫৭ ধারায় মামলা হয়।
একই ধারায় করা মামলায় ১৮ দিন জেল খেটে গত ২৬ জুন বাড়ি ফেরেন দৈনিক হবিগঞ্জ সমাচারপত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক গোলাম মোস্তফা। সত্তরোর্ধ্ব এই সাংবাদিকের ‘অপরাধ’, তিনি তাঁর পত্রিকায় ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাচ্ছেন না এমপি আবদুল মজিদ খান’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলেন।
গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমন কিছু ঘটবে আমি ভাবতেও পারি না। রাত দেড়টার দিকে ওসি এসে থানায় নিয়ে গেলেন। থানায় গিয়ে দেখি, অনবরত কেউ একজন ওসিকে ফোনে মামলা নেওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করছেন। সকাল আটটায় আমার নামে মামলা হয়। তারপর থেকে ১৮ দিন আমি জেলে থাকি।’
একই ঘটনায় সাংসদ আবদুল মজিদ খানের ভাতিজা ও পুকুড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আফরোজ মিয়া পত্রিকাটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রাসেল চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক নিরঞ্জন সাহার বিরুদ্ধেও আইসিটি আইনে মামলা করেন।
১ মার্চ দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ-এর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মোস্তাফিজ, ২৫ মার্চ নারায়ণগঞ্জে যুগের চিন্তার সম্পাদক মোরসালিন বাবলা, ৩০ মার্চ কুষ্টিয়ায় বণিক বার্তার প্রতিনিধি হাসান আলী ওকুষ্টিয়া দর্পণ-এর স্টাফ রিপোর্টার আসলাম আলী, ১৪ এপ্রিল মাই টিভির মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি শেখ মো. রতন, ১ মে নতুন সময় ডট কমের নির্বাহী সম্পাদক আহমেদ রাজীব, ১৬ মে এশিয়ান এজ-এর দশমিনা প্রতিনিধি নিপুণ চন্দ্র দাস ও দৈনিক জনতার উপজেলা প্রতিনিধি সঞ্জয় ব্যানার্জি, ১৩ জুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক গোলাম মুজতবা, ২২ জুন দৈনিক সমকাল-এর চট্টগ্রাম ব্যুরোপ্রধান ও সিনিয়র রিপোর্টার তৌফিকুল ইসলাম, ৩ জুলাই যমুনা টিভির নাজমুল হোসেন, ৬ জুলাই সকালের খবর-এর সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার আজমল হক, ১৬ মে ও ৯ জুলাই প্রথম আলোর হাজীগঞ্জ প্রতিনিধি মো. শাহজাহানের বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় মামলা হয়।
আলোকিত বাংলাদেশ-এর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মোস্তাফিজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি নিয়েই পাঠক বেশি আগ্রহী। মামলা হওয়ার আগে আমি প্রতি মাসে এ ধরনের সাত-আটটি খবর পাঠাতাম। ছাপাও হতো। এখন রাজনীতির কোনো বিষয় থাকলে এড়িয়ে চলি। সব সময় মনের মধ্যে ভয় কাজ করে।’
সমকাল-এর প্রকাশক এ কে আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, সংবাদপত্রে প্রকাশিত কোনো প্রতিবেদনে কারও মানহানি হলে তিনি প্রতিবাদ করতে পারেন, প্রেস কাউন্সিলে যেতে পারেন, প্রচলিত ব্যবস্থায় প্রতিকার পেতে পারেন। কিন্তু এখন ৫৭ ধারা ব্যবহার করে সাংবাদিক, সম্পাদক, প্রকাশক সবাইকেই হয়রানি করা হচ্ছে। আমি মনে করি, এই ধারা স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে অন্তরায়।’

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1274331/