২ আগস্ট ২০১৭, বুধবার, ১০:০৭

ছাগলের মৃত্যুর খবর ফেসবুকে ‘শেয়ার’ করায় খুলনায় সাংবাদিক গ্রেপ্তার

‘প্রতিমন্ত্রীর সকালে দেয়া ছাগল বিকালে মৃত্যু’ এই শিরোনামের সংবাদ অন লাইনে প্রকাশ হবার পর তা ফেসবুকে ‘শেয়ার’ করায় খুলনা থেকে প্রকাশিত দৈনিক প্রবাহের ডুমুরিয়া প্রতিনিধি আবদুল লতিফ মোড়লকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ৯টার দিকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের কাছের লোক হিসেবে পরিচিত সুব্রত কুমার ফৌজদারের মামলা দায়েরের মাত্র সাড়ে ৪ ঘণ্টার মাথায় তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গতকাল সকালে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় খুলনার সাংবাদিক সমাজ তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

সুব্রত কুমার ফৌজদারের দায়ের করা মামলার বিবরণে জানা যায়, প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ গত ২৯শে জুলাই ডুমুরিয়া প্রাণিসম্পদ অফিসের এফসিডিআই প্রকল্পের আওতায় সুফলভোগীদের মাঝে ছাগল, হাঁস, মুরগি বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন। এবং তিনজনের মাঝে ছাগল, হাঁস, মুরগি বিতরণ করেন। পরবর্তীতে প্রাণী সম্পদ অফিসের জেলাপর্যায়ের কর্মকর্তারা বাকিদের বিতরণ করেন। ৩০শে জুলাই রাত সাড়ে ১২টার দিকে জুলফিকার ঢালীকে দেয়া ছাগলটি মারা গেছে এই মর্মে প্রাণিসম্পদ অফিসের কর্মকর্তার মাধ্যমে জানতে পারেন। আব্দুল লতিফ মোড়লের ফেসবুক আইডিতে দায়িত্বহীনতা ও ‘প্রতিমন্ত্রীর সকালে দেয়া ছাগল রাতে মৃত্যু’ শিরোনামে মন্ত্রীর ফাইল ফটো আপলোড করে সংবাদ প্রকাশ করে। যা তিনি ৩১শে জুলাই বেলা আড়াইটায় ফেসবুক দেখে বিস্তারিত জানতে পারেন যে, ব্রেকিং নিউজ ডটকম ডট বিডি নামের অন লাইনে ছবিসহ সংবাদটি প্রকাশ করে। এতে তিনি বিস্মিত হন। আব্দুল লতিফ মোড়ল ইচ্ছাকৃতভাবে প্রতিমন্ত্রীর ভাবমূর্তিক্ষুণ্ন করার জন্য এই সংবাদটি প্রকাশ করেছেন এবং ইন্টারনেট, ওয়েব সাইট ও ফেসবুকে সরবরাহ করেছে। যাতে করে প্রতিমন্ত্রীর ব্যক্তিগত মর্যাদাহানী করা হয়েছে। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলা নং-৫২, তারিখ-৩১-০৭-১৭। রাত ৯টা ২৫ মিনিটে মামলাটি রেকর্ড হয়। এরপর রাত ২টার দিকে ডুমুরিয়া উপজেলা সদরের বাসা থেকে সাংবাদিক আব্দুল লতিফ মোড়লকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুকুমার বিশ্বাস বলেন, মামলার বাদী সুব্রত কুমার ফৌজদার। তার পিতার নাম মৃত মনোরঞ্জন ফৌজদার। তার বাড়ি গুটুদিয়ায়। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, প্রতিমন্ত্রীর বিতরণ করা ছাগল মারা যাওয়া সংক্রান্ত সংবাদ ফেসবুকে শেয়ার করেছেন আব্দুল লতিফ। এতে প্রতিমন্ত্রীর সম্মান ক্ষুণ্ন হয়েছে। তাই আব্দুল লতিফের বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় মামলা করেছেন তিনি।
ওসি সুকুমার বিশ্বাস আরো বলেন, মামলার সঙ্গে কিছু নথি জমা দিয়েছেন বাদী। তার জমা দেয়া নথিতে সংশ্লিষ্ট সংবাদ ফেসবুকে শেয়ার দেয়ার আলামত রয়েছে। মামলার পর প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে আসামি আব্দুল লতিফকে গ্রেপ্তার করা হয়। তদন্ত চলছে। সোমবার রাতে গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার সকালে লতিফকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আব্দুল খালেক বলেন, মামলার রেফারেন্সে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে।
আদালত পাড়ায় সাংবাদিক আব্দুল লতিফ মোড়লের সাথে কথা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পত্রিকায় প্রতিমন্ত্রীর কোনো বিকৃত ছবি প্রেরণ করা হয়নি। এখানে প্রতিমন্ত্রী, জেলা কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্যসহ বস্তুনিষ্ঠ সংবাদটি ‘ব্রেকিং নিউজ ডটকম ডট বিডি’ নামের অন লাইনে ছবিসহ প্রকাশিত হয়েছে। এই নিউজটি আমি ফেসবুকে শেয়ার করেছি মাত্র। মামলা করার কোনো কারণ এখানে উদ্ভব হয়নি।
সুব্রত কুমার ফৌজদার জানায়, ‘প্রতিমন্ত্রী একজন ভালো মানুষ। লতিফ কেন যে তার পিছনে লেগেছে, এটা সহ্য করা যায় না। ইতিপূর্বে আব্দুল লতিফ মোড়লকে প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কোন মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য বলা হয়েছিল। এরপরেও সে এই সংবাদটি ফেসবুকে শেয়ার করেছে। যে কারণে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছি।
প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের সঙ্গে কথা বললে তিনি বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘প্রত্যেকের উচিত সততার সঙ্গে চলা, বিষয়টি আমি দেখছি।’
এ ঘটনার পর খুলনার সাংবাদিক সমাজ তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। খুলনা প্রেস ক্লাবের সভাপতি এসএম হাবিব বলেন, একটি অন লাইন পত্রিকার সংবাদ শেয়ার করায় সাংবাদিক লতিফকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিতর্কিত এই ৫৭ ধারার বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা যখন ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করছে ঠিক সেই মুহূর্তে তার অপব্যবহার করে মামলা দিয়ে ব্যক্তিগত শত্রুতার প্রতিশোধ নেয়া হয়েছে। তিনি গ্রেপ্তারকৃত সাংবাদিক আবদুল লতিফের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানান।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=76760