২ আগস্ট ২০১৭, বুধবার, ৯:৪৪

জাহাজজট নিয়েই ২৪ ঘণ্টা

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়ন : চট্টগ্রাম বন্দরে বিদেশি শিপিংয়ের জট মাশুল উসুল অব্যাহত : রফতানি শিপমেন্ট জটিলতা

আমদানি ও রফতানি পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের চাহিদা আর চাপ বেড়েই চলেছে। সেই তুলনায় দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রামে জেটি-বার্থ টার্মিনাল ইয়ার্ড সঙ্কট তীব্রতর হয়ে উঠেছে। কন্টেইনার ও খোলা পণ্য উঠানামার উপযোগী যান্ত্রিক সরঞ্জামের স্বল্পতা আরও প্রকট। সার্বিক অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম, সমন্বয়হীনতা এবং জবাবদিহিতার অভাবে দীর্ঘদিন যাবত ধুঁকছে বন্দর।
নৌ মন্ত্রণালয় ও বন্দর কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন অত্যাবশ্যকীয় প্রকল্প-পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সময়োচিত পদক্ষেপের পরিবর্তে ক্রমাগত সিদ্ধান্তহীতার কারণে চট্টগ্রাম বন্দর স্থবির হয়ে পড়েছে। বন্দরের দক্ষতা ও সক্ষমতার সবকটি সূচক গত কয়েক মাসে নেতিবাচক ধারায় নেমেছে। বন্দরে জাহাজজট ও কন্টেইনারের জট এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বন্দর-নির্ভর বেসরকারি আইসিডিগুলো (অফডক) চলছে চরম অব্যবস্থাপনার মধ্যদিয়ে। সব মিলে বন্দরজটের কারণে দৈনিক কোটি কোটি টাকা লোকসান দিচ্ছেন ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তাগণ। তবে ভোক্তা-ক্রেতাদের পকেটের টাকায় বর্ধিত মূল্যে নিত্য ও ভোগ্যপণ্য, সেবা বা সার্ভিস ক্রয় করে সেই লোকসানের খেসারত গুণতে বাধ্য হচ্ছেন দেশের জনসাধারণ। এহেন জটিল প্রেক্ষাপটে গতকাল (মঙ্গলবার) থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সপ্তাহের প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা (২৪/৭) চট্টগ্রাম বন্দর সচলের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার এক মাসের মাথায় বন্দর কার্যক্রম অবশেষে অবশেষে ২৪ ঘণ্টা সচল হলো। গত ১৯ জুলাই আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় ১ আগস্ট থেকে ২৪ ঘণ্টা চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টম হাউস সচলের লক্ষ্যে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা যায়, নৌ মন্ত্রণালয় ও বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা বন্দর সচলের কার্যক্রম গতকাল উদ্বোধন করতে চাইলেও বিদ্যমান বন্দরজটসহ আনুষঙ্গিক বেহাল অবস্থায় তিনি (প্রধানমন্ত্রী) এ ব্যাপারে সবুজ সঙ্কেত দেননি। বরং তিনি বন্দরজট অবিলম্বে নিরসনের জন্য নৌ-মন্ত্রী, অর্থমন্ত্রীসহ মন্ত্রী ও সচিবদের দায়িত্ব দেন। গত এক মাসে চট্টগ্রাম ও ঢাকায় শীর্ষ পর্যায়ে দফায় দফায় সভা-বৈঠক, বন্দর ব্যবহারকারীদের সাথে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ইতোমধ্যে প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে পরীক্ষামূলকভাবে বন্দর ও কাস্টমসের ২৪ ঘণ্টা কার্যক্রম শুরু করা হয়।
সপ্তাহে প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা (২৪/৭) চট্টগ্রাম বন্দর সচল এবং জট সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে কর্তৃপক্ষ জেটি-বার্থে জাহাজের কাট-অফ-টাইম নির্ধারণ, রাত্রিকালীন জোয়ারে (নাইট নেভিগেশন) শর্তসাপেক্ষে জাহাজ চলাচল, রাতের পালায় কাস্টম হাউসের পণ্য ছাড়করণ ও নাইট ডেলিভারি, বন্দর-কাস্টমস কার্যক্রমে যুক্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক রাতেও চালু রাখা, কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ে কাফকো জেটি ও অব্যবহৃত অবকাঠামো ব্যবহার, কাস্টমসে জনবল ঘাটটি পূরণ, নিলামযোগ্য ও ডেলিভারি না নিয়ে বন্দর এলাকায় পড়ে থাকা কন্টেইনার ও অন্যান্য মালামাল সরিয়ে নেয়া, সাধ্যমতো বেশি ড্রাফট ও আকারের জাহাজ ভিড়ার অনুমতিসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। আমদানি-রফতানিমুখী ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনায় সেবার মান বৃদ্ধি, এর পাশাপাশি রাজস্ব আদায় প্রক্রিয়াকে আরও সহজ ও গতিশীল করে বন্দর-কাস্টমস ভিত্তিক কর্মকান্ডে বিশ্বায়নের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২ জুলাই সচিবদের সভায় দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস ২৪ ঘণ্টা সচলের কার্যক্রম গ্রহণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন। এর মূল লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হচ্ছে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের মাধ্যমে দেশের ৯০ শতাংশ আমদানি-রফতানি বাণিজ্য সম্পন্ন হয়। যার বার্ষিক পরিমাণ বর্তমানে প্রায় ৩৪ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ। সময়ের প্রয়োজনে শিপিং বাণিজ্যে চাহিদা বেড়ে গিয়ে বিশেষত কন্টেইনারে পণ্য পরিবহনের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ১৪ শতাংশে রয়েছে এবং প্রতিবছরই তা বৃদ্ধির দিকে। ২৪ ঘণ্টা সচলতার অভাবে বন্দরজটের কারণ ঘটছে। ক্রমবর্ধমান এই চাপ ও চাহিদা সামাল দেয়ার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর সার্বক্ষণিকভাবে চালু থাকা জরুরি মনে করছে সরকার।
এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গত ১৯ জুলাই নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় ১ আগস্ট (গতকাল) থেকে চট্টগ্রাম বন্দর কার্যক্রম সাতদিনে ২৪ ঘণ্টা চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরজন্য সহায়ক বিভিন্ন গাইডলাইনও দেয়া হয়েছে বন্দর কাস্টমস শিপিং ও সেবাদান ও গ্রহণকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৪ ঘণ্টা চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টম হাউস চালু রাখার যে সিদ্ধান্ত প্রদান করেন একে দেশের ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তা মহল, বন্দর ব্যবহারকারী আমদানি-রফতানিকারকরা স্বাগত জানান। তারা বলেন, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর যদি সার্বক্ষণিক (২৪/৭) চালু থাকে তাহলে বিশ্বের অন্যান্য বন্দরের মতো একটি আন্তর্জাতিক সমুদ্র বন্দর হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দর ২৪ ঘণ্টা সচল রাখাই যুক্তিযুক্ত। এই সিদ্ধান্তের ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পের পরিচালনায় ব্যয় (কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস) হ্রাস পাবে। যার দেশের অর্থনীতির জন্যই কল্যাণ বয়ে আনবে।
রফতানি শিপমেন্ট জটিলতা
চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনারের স্বাভাবিক ধারণক্ষমতা হচ্ছে ৩৬ হাজার ৩৫৭ টিইইউএস। বর্তমানে স্তুপিকৃত রয়েছে ধারণক্ষমতার কিছু ঊর্ধ্বে। অথচ কোন সমুদ্র বন্দরে স্বচ্ছন্দে স্বাভাবিক গতিতে অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অন্তত ৩০ শতাংশ ধারণক্ষমতা ও অবকাঠামো খালি রাখার বিধি-বিধান অনুসরণ করা হয় ‘আঙ্কটাড’ ও বিভিন্ন পোর্ট-শিপিং কনভেনশন মাফিক। চট্টগ্রাম বন্দর পণ্যভারে উপচে থাকে বছরের অধিকাংশ সময়ই। সেই সাথে জাহাজের জট বন্দর কার্যক্রমকে থমকে দিয়েছে প্রায় দু’মাস ধরে। জেটি-বার্থে ভিড়ার জন্য বন্দরের বহির্নোঙরে অলস অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে কন্টেইনারবাহী জাহাজবহরকে। এই সংখ্যা গত দু’মাসে ছিল গড়ে ৮টি থেকে ১৬টি পর্যন্ত। এতে করে জাহাজের গড় অবস্থানকাল (টার্ন রাউন্ড টাইম) বেড়ে গেছে। চট্টগ্রাম বন্দরের যান্ত্রিক সরঞ্জামের স্বল্পতা, জেটি-বার্থসহ অবকাঠামোর ঘাটতি, সাম্প্রতিক ঘন ঘন দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, গত ২৫ জুন বিদেশী জাহাজের আঘাতে দু’টি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন বিধ্বস্ত হয়ে সিসিটির অর্ধেকে অচলাবস্থা এবং সর্বোপরি সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যাক্তিদের অদূরদর্শিতা, অদক্ষতার পরিণতিতে এবার বন্দরজট দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিয়েছে।
২৪ ঘণ্টা বন্দর সচলের পাশাপাশি বিরাজমান জাহাজজট সামাল দিতে গিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে এর অন্যতম হচ্ছে জাহাজের কাট-অফ-টাইম। অর্থাৎ কোন জাহাজের রফতানি পণ্য শিপমেন্টের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বন্দরে পণ্য পৌঁছাতে হবে। যার সর্বনিম্ন সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে ৬ ঘণ্টা পূর্ব পর্যন্ত। কিন্তু কাট-অফ-টাইমের কড়াকড়ি প্রয়োগে রফতানি শিপমেন্ট ব্যাপকভাবেই ব্যাহত হচ্ছে বলে তীব্র ক্ষোভ-অসন্তোষ প্রকাশ করেছে তৈরি পোশাক শিল্প মালিক ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ। এর পাশাপাশি শিপিং এজেন্টগণও তার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। গত এক সপ্তাহে অন্তত ৫টি জাহাজ কাট-অফ-টাইমের শর্ত পূরণ না হওয়ার কারণে রফতানি কন্টেইনার জাহাজীকরণ না করেই জেটি ত্যাগ করেছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, জাহাজের জট নিরসনে কাট-অফ-টাইম ছাড়া আপাতত বিকল্প নেই।
চিটাগাং চেম্বারের সাবেক পরিচালক ও বিজিএমইএ’র সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী এ বিষয়ে গতকাল ইনকিলাবকে জানান, বন্দরের জাহাজজটের সুরাহা আমরাও চাই। তবে রফতানিমুখী শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা দেশের অর্থনীতিরই ক্ষতি। বর্তমানে কাট-অফ-টাইমের কড়াকড়িতে গার্মেন্টস শিল্পের রফতানি খাতে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়েছে। কেননা সড়ক রাস্তাঘাটের যানজট, পরিবহনের সমস্যা, ট্রেইলার ট্রাক কাভার্ড ভ্যানের ঘাটতিসহ বিভিন্ন বাস্তব কারণে বন্দরে কাট-অফ-টাইমের মধ্যেই অনেক সময় রফতানি চালান পাঠানো কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু এসব সমস্যা বিবেচনায় না নিয়ে বন্দরে রফতানির জন্য আনীত পণ্য রেখেই জাহাজ জেটি ছাড়ার কারণে মূল মাদার পোর্ট বা ট্রানজিশনাল বন্দর সিঙ্গাপুর, কলম্বো কিংবা মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাংয়ে রফতানি চালান মাদার ভেসেলে গিয়ে ধরা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এতে করে স্টক লট ও রফতানি অর্ডার বাতিলের মুখে পড়েছে পোশাক শিল্প। তিনি যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য উপায়ে বন্দরজটের সমাধান খোঁজার তাগিদ দিয়ে বলেন, তড়িঘড়ি করে কোন সমাধান আসবে না।
বন্দর কর্তৃপক্ষ যখন জট পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমসিম অবস্থায় রয়েছে এবং জট সমস্যার উত্তরণ ও ২৪ ঘণ্টা সচলের জন্য তোড়জোড় করছে তখন চট্টগ্রাম বন্দরে বিদেশী শিপিং কোম্পানিগুলো জোটবদ্ধ হয়ে জটের বাবদ মাশুল বা দন্ডচার্জ উসুল অব্যাহত রেখেছে। এতে করে পণ্যসামগ্রীর আমদানি ও রফতানি ব্যয় ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। বিদেশী মেইন লাইন অপারেটর (এমএলও) সংশ্লিষ্টরা বলছে, চট্টগ্রাম বন্দরে চাহিদার বিপরীতে যান্ত্রিক সরঞ্জাম ও অবকাঠামোর তীব্রতর ঘাটতির জেরে বন্দরে অব্যাহতভাবে জাহাজজটের সমস্যা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় চট্টগ্রামমুখী জাহাজ পরিচালনায় সামগ্রিক ব্যয়ও বেড়ে গেছে। আর তা পুষিয়ে তুলতে বিভিন্ন নামে ও বিভিন্ন হারে গত সপ্তাহ থেকে কনজেশন সারচার্জ আরোপ করে তা আদায় করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দরমুখী কন্টেইনারপিছু বিভিন্ন হারে কনজেশন সারচার্জ আদায় করছে এমএলও’র সদস্যরা। আবার ভিন্ন নামে ইমার্জেন্সি কস্ট রিকভারি চার্জ আদায়ও করা হচ্ছে। যা গত ২৬ জুলাই থেকে কার্যকর করা হয়েছে। স্বাভাবিক ফ্রেইট চার্জের সঙ্গে প্রতিটি কন্টেইনারে ১৫০ মার্কিন ডলার হারে কনজেশন বা জটের মাসুল আদায় করা হচ্ছে। সিঙ্গাপুরভিত্তিক শিপিং কোম্পানিগুলোর সংগঠন এএফডিজি গত মাস থেকে ইমার্জেন্সি কস্ট রিকভারি সারচার্জ উসুল করছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং, কলম্বো বন্দরমুখী ও বহির্মুখী পণ্য ভর্তি ও খালি কন্টেইনারে সমানেই সারচার্জ আরোপ করা হয়েছে। পণ্য বোঝাই কন্টেইনার পিছু ১৫০ ডলার হারে এবং খালি কন্টেনার পিছু ৭৫ ডলার হারে আদায় করা হচ্ছে। তাছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের জটের অবস্থা পর্যালোচনা করে বিদেশী শিপিং কোম্পানি বা অপারেটররা আরও বিভিন্ন ধরনের সারচার্জ আরোপের অজুহাত এখন খুঁজছে।

 

https://www.dailyinqilab.com/article/90026/